এক মুঠো কাঠগোলাপ পর্ব ১০ || অনেক কষ্টের গল্প

এক মুঠো কাঠগোলাপ পর্ব ১০
তানজিল মীম

“কুটকুটে নীরবতা বিরাজ করছে পুরো রুমে’!!কারো মুখে কোনো কথা নেই চুপচাপ বসে আছি আমরা সবাই’!!ভাইয়াও কিছু বলছে না, কি হবে না হবে কিছু বুঝতে পারছি না’!!এই একটা বিষয় নিয়ে আমার ফেমিলিকে ভালো লাগে না আমার কারন এঁরা কোথাও যেতে দিতে চায় না আমায়’!!এই মুহূর্তে প্রচন্ড বেগে কষ্ট হচ্ছে আমার’!!সবাই যাবে অথচ আমি যেতে পারবো না বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে আমার’!!আমি ছলছল চোখে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলামঃ
———“কি হলো ভাইয়া কথা বলছো না কেন?প্লিজ ভাইয়া আমি যেতে চাই ওদের সাথে তুমি প্লিজ একটু বোঝাও আম্মুকে….
“অপূর্ব এতক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলঃ
———“ঠিক আছে দেখছি আমি….
“ভাইয়ার মুখে এতটুকু কথা শুনে মুখে হাসি ফুটে উঠলো আমার’!!হুট করেই ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বললাম আমিঃ
———“থ্যাংকু ভাইয়া….
———“হু বস এখানে আমি এখনি আসছি….
“বলেই ভাইয়া চলে যায় আম্মু যেখানে আছে সেখানে’!!
“আমরাও চললাম চুপি চুপি ভাইয়ার পিছনে’!!

“বিছানায় চুপটি করে বসে আছে আম্মু’!!এমন সময় দরজায় নক করে ভাইয়া বলে উঠলঃ
——–“আম্মু আসবো…
——–“হুম আয়…
“আম্মুর কথা শুনে ভাইয়া রুমে ঢুকে বিছানায় বসতে যাবে এর আগেই আম্মু বলে উঠলঃ
———“তুই যদি তানজুর যাওয় নিয়ে কথা বলতে আসিস তাহলে বলবো কোনো লাভ হবে না….(রেগে)
“আম্মুর কথা শুনে ভাইয়া হাল্কা হেঁসে বলে উঠলঃ
———-“আরে আম্মু এতো রেগে যাচ্ছো কেন বলো তো…
———-“রাগবো না এই বৃষ্টির সিজনে জঙ্গলে তারওপর নদীর মাঝখান দিয়ে লঞ্চে করে সুন্দরবন যেতে চাইছে ওঁরা যদি কিছু একটা হয়ে যায় তখন…
———-“আরে আম্মু তুমি আগেই এত উল্টো পাল্টা ভাবো কেন বলো তো….
———“কি বলতে চাইছিস তুই…..
———-“এটাই বলতে চাচ্ছি তুমি যেমনটা ভাবছো তেমনটা কিছুই হবে না আর দু’দিনের ব্যাপার তো দেখতে দেখতে কেটে যাবে’!!আর তানজু তো একা যাচ্ছে না আম্মু আরো কত মানুষ যাবে, আর তার চেয়ে বড় কথা দিহান ওঁরাও তো যাবে বলো আর সবাই তানজুর খুব ভালো খেয়াল রাখবে কিছু হবে না তানজুর’!!

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

———-“আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না অপূর্ব, আমি জানি ওঁরা খুব ভালোভাবেই খেয়াল রাখবে তানজুর কিন্তু তারপরও আর তোদের বাবা বাড়িতে নেই উনি জানলে কি বলবে আমায় না না তানজুর কোথাও যাওয়া হবে না….
———-“আরে আম্মু আব্বু তখনই জানবে তাই না যখন আমরা তাকে বলবো…
———-“কি বলতে চাইছিস তুই অপূর্ব….
———-“এটাই বলতে চাইছি আম্মু আগামী দু’দিন আব্বুকে আমরা এই বিষয় নিয়ে কিছু বলবো না তানজু ফিরে এলেই সব বলবো…..
———–“না সেটা হয় না আমি তোদের আব্বুকে মিথ্যা বলতে পারবো না…..
“অপূর্ব ছোট্ট একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আম্মুর দিকে ঘুরে আম্মুর হাত ধরে বলে উঠলঃ
———-“একটা কথা বলি আম্মু,তুমি যখন তানজুর জায়গায় ছিলে তখনও তোমার আব্বু আর মানে নানা-নানু যখন তোমায় বারন করতো তখন তোমার কেমন লাগতো বলো….
———-“অনেক খারাপ লাগতো আমার সব বন্ধুরা যেত ঘুরতে কিন্তু আমি যেতে পারতাম না বড্ড অভিমান হতো আব্বুর উপর আম্মু যেও রাজি হতো আব্বুর জন্য তাও বারন করতো,এমনও হয়েছে আমি রাগ করে দু’দিন খাবারও খাই নি কিন্তু…
“হর্ঠাৎই চুপ হয়ে গেল আম্মু মুখে হাত দিয়ে মিন মিন কন্ঠে বললো সেঃ

———-“কথার জালে ফাঁসাচ্ছিস আমায়…
———-“ফাঁসাচ্ছি না জাস্ট বলছি তোমায়,, এখনই তো ঘোরাঘুরি করার সময় বল আম্মু তারপর তো ওর বিয়ে হয়ে গেলে আর কিছুই হবে না সেই তোমার মতো সারাদিন কাজকর্ম আর স্বামী সংসার নিয়েই কেটে যাবে…
“এতটুকু বলে থেমে যায় অপূর্ব….
“তারপর আবারো বললোঃ
———“একটু ভেবে দেখো আম্মু,
“বলেই চলে যেতে নেয় অপূর্ব!আর নীরবে বসে রয় আম্মু…..
!!
“দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলাম আমরা’!!ভাইয়ার কথাগুলো শুনে কেন জানি না প্রচন্ড কষ্ট হতে লাগলো আমার’!!যদি বিয়ে হয়ে যায় তাহলে আমার সব স্বাধীনতা চলে যাবে….
.
“এদিকে অপূর্ব কিছু দূর যেতেই আম্মু বলে উঠলঃ
——–“কবে যাবে ওঁরা, ব্যাগ কি আমি গুছিয়ে দিবো নাকি ওহ নিজেই গুছিয়ে নিবে….
“আম্মুর কথা শুনে ভাইয়া কি বলবে তার আগেই দরজার কাছ থেকে লাফ মেরে ভিতরে ঢুকে বলে উঠলাম আমিঃ
———–“তুমি দিবে আম্মু…..
“বলেই দৌড়ে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম আমি’!!

“অন্যদিকে দিহান, হৃদয়, রিতু, আরিফা ওরাও খুশি শেষমেশ তাহলে রাজি হলো তানজুর আম্মু…?
__________________
“অপূর্বের রুমে লাগাতার ফোন বেজে চলেছে তার’!!একরাশ বিরক্তমাখা মুখ নিয়ে আবারো অপর পাশের ব্যক্তি ফোন করলো অপূর্বকে’!!এমন সময় খুশি মনে হাসতে হাসতে রুমে প্রবেশ করলো অপূর্ব’!!নিজের ফোন বাজছে দেখেই চটজলদি ফোনটা হাতে নিয়ে বলে উঠল সেঃ
———-“হ্যালো….
“অপূর্বের হ্যালো শুনেই অপর পাশের ব্যক্তি কর্কশ কন্ঠে বলে উঠল সেঃ
———–“ওই শালা তোকে কখন থেকে ফোন দিচ্ছি ধরছিলি না কেন,রুমে বসে কি কাবাডি খেলছিলি নাকি…..
“আচমকা কারো রাগান্বিত কথা শুনে চমকে যায় অপূর্ব’!!পরক্ষণেই কন্ঠটি কার বুঝতে পেরে বলে উঠল সেঃ
———-“সরি দোস্ত আসলে ফোনের কাছে ছিলাম না…..
———-“ফোনের কাছে ছিলি না তো কোথায় ছিলি…
———–“আর বলিস না বোনটা আমার সুন্দরবন যাবে কিন্তু আম্মু রাজি হচ্ছিল না তার জন্যই আম্মুকে রাজি করাতে ছিলাম আর কি?
———–“ওহ বলিস কি সুন্দরবন যাবে আমিও তো যাচ্ছি…..
———–“কি তুই সুন্দরবন যাচ্ছিস আর আমায় বলিস নি….
———-“আরে হুট করেই ঠিক হয়ে গেছে তবে আমরা ফ্রেন্ডরা নয় ভার্সিটি থেকে শিক্ষা সফরে যাচ্ছি দোস্ত…..
———“ওহ তোর প্রিয়সীও বুঝি যাচ্ছে সাথে…
———“হয়তো….
———“মানে…
———-“জানা হয় নি আমার….
———-“ওহ….
———-হুম…
———–“আচ্ছা তুই যেন কোনো ভার্সিটির টিচার…

“অপর পাশের ব্যক্তি কিছু বলবে এর আগেই টুং করে ফোনটা কেটে যায়’!!অপূর্ব কিছুক্ষণ হ্যালো হ্যালো করেও কোনো উওর না পেয়ে ফোনটা রেখে যায় টেবিলের উপর….
__________________________________________
_______________________
“পরেরদিন ভার্সিটিতে….
“রিয়াদ স্যারের ক্লাসে চুপচাপ বসে ছিলাম আমরা’!!এমন সময় আমাদের পিন্সিপাল আর কিছু টির্চাসরা আসলো রুমে’!!তাদের সবাইকে দেখে দাঁড়িয়ে পরলাম আমরা’!!স্যাররা আমাদের বসতে বললেন’!!আমরা চুপচাপ বসে পরলাম’!!তারপর পিন্সিপাল বলতে শুরু করলেনঃ
——–“তোমরা সবাই হয়তো জানো এ বছর শিক্ষা সফর উপলক্ষে আমরা সবাই সুন্দরবন যেতে চাইছি’!!আশা করি তোমরা অনেকেই এ বিষয়ে আগ্রহী আছো’!!যারা আগ্রহী তারা সবাই তোমাদের রিয়াদ স্যারের কাছে নাম লিখিয়ে দিয়ে যাবে’!!আর হ্যাঁ আমরা কিন্তু রাতের বাসে খুলনা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সারারাত খুলনার বাসে কাটিয়ে ভোরে সূর্যের আলোর রশ্মির সঙ্গে তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য!!আশা তোমাদের সবার অনেক ভালো লাগবে বিষয়টা’!!আর আগামী দু-দিনের মধ্যেই আমরা আমাদের সফর শুরু করবো আশা করি তোমরা এই সফরে অনেক কিছু শিখতে পারবে তার সাথে অনেক মজাও করতে পারবে’!!আর একটা কথা আমাদের সফর কিন্তু দু-রাত তিনদিনের….
“বলেই চলে গেলেন উনি’!!আর স্যারেরা যেতেই সবাই আনন্দে মেতে উঠলো’!!সবার চেঁচানো শুনে রিয়াদ স্যার বলে উঠলেনঃ

———“সাইলেন্ট সবাই….
“সাথে সাথে সবাই চুপ’!!সবাই চুপ হয়ে যেতেই রিয়াদ স্যার তুলিকে দায়িত্ব দিলো’ যারা যাবে তাদের লিস্ট তৈরি করার’!!তুলি তো মহা খুশি রিয়াদ স্যারের কাজে….
||
“চুপচাপ বসে আছে রিয়াদ টেবিলে,দৃষ্টি তার তানজুর দিকে’!!কারন সে অতি আগ্রহে আছে তাদের সাথে তানজু যাবে কি যাবে না’!!না গেলে রিয়াদের মটেও ভালো লাগবে না’!!তারপর টানা ধরতে গেলে তিনদিন দেখা হবে না রিয়াদের সাথে তানজুর’!!ভাবতেই রিয়াদের বড্ড খারাপ লাগছে’!!একে একে সবাই নিজেদের নাম লিখতে ব্যস্ত’!!তুলি সবার নাম লিখে ফেলেছে প্রায়’!!দিহানদের কোনো হেলদোল না দেখে মনে মনে বড্ড খুশি হচ্ছে সে’!!সে ভেবেছে হয়তো তানজুরা যাবে না’!!
.
“অন্যদিকে রিয়াদ হতাশ হয়ে বসে আছে,,হয়তো সত্যি সত্যি তিনদিন দেখা হবে না তানজুর সাথে’!!
“এমন সময় তানজু তুলির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলঃ
——–“যাচ্ছো কোথায় আমাদের নাম লিখবে কে…
“খুশি মনে তানজুদের সামনে থেকে হেঁটে যাচ্ছিল তুলি’!!এমন সময় তানজুর মুখে এমন কথা শুনে মুহূর্তেই খুশি মাঝে ব্যাঘাত ঘটলো তার’!!একটু বিগড়ে যাওয়া মেজাজে বলে উঠল সেঃ
———-“যাবি তোরা…
———-“আরে আমরা না গেলে শিক্ষা সফর জমবে নাকি….?
“তানজুর কথা শুনে তুলি ইচ্ছে না থাকা সত্যেও নাম লিখলো ওদের সবার!
……
“অন্যদিকে তুলি অখুশি হলেও অন্য আরেকজন তো মহা খুশি’!!যেন এতক্ষণ পর প্রান খুলে শ্বাস নিতে পারছে সে’!!…..

এক মুঠো কাঠগোলাপ পর্ব ৯

“২ দিন পর……
“রাত_১০ঃ০০টা……
“বিছানায় বসে জামাকাপড় গোছাচ্ছে আম্মু’!!আর বলছেঃ
———-“একদম বেশি লাফালাফি করবি না,সবসময় দিহান ওদের সামনাসামনি থাকবি,জঙ্গলের ভিতরে যখন যাবি সবাই একসাথে থাকবি একা কোথাও যাবি না,অচেনা কেউ কিছু দিলে একদমই খাবি না, নিজের খেয়াল রাখবি আর পানি থেকে দূরে দূরে থাকবি লঞ্চের একদম কিনারে যাবি,এমনিতেই তুই সাঁতার জানিস না তাই সবকিছুতেই সাবধান’!!স্যারদের আশেপাশে থাকবি বুঝতে পেরেছিস…
———–“হুম আম্মু বুঝতে পেরেছি আর এত চিন্তা করার কিছু নেই দেখো কিছু হবে না আমি এই ভালোভাবে যাবো আবার ভালোভাবে ফিরেও আসবো….
“বলেই কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে নিলাম আমি’!!আজকে একটা নীল রঙের চুড়িদার পড়েছি, চুলগুলো খোলা চোখে হাল্কা কাজল আর হাতে ব্যাচ দিয়ে আমি তৈরি’!!কারন আর কিছুক্ষনের মধ্যেই সুন্দরবন যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবো আমরা’!!এমন সময় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠল ভাইয়াঃ
———“কি হলো তুই তৈরি তো…
———-“হুম ভাইয়া আমি তৈরি চলো তাহলে যাওয়া যাক…..
———-“হুম চল আর হ্যাঁ ক্যামেরা নিয়েছিস তো…
———–“উফ দেখছো আসল জিনিসটা নিতেই ভুলে গেছি এই সব হয়েছে আম্মুর ভাষন শোনার জন্য….
———–“হুম আমি তো শুধু ভাষনই দেই(আম্মু)
“আম্মুর কথা শুনে কিছুটা খারাপ লাগলো আমার’!!আমি আম্মু জড়িয়ে ধরে বললামঃ
———-“আরে আম্মু আমি তো মজা করে বলেছিলাম তুমিও না খালি রাগ করো না….
“বলেই আম্মুর গালে চুমু একে দিলাম আমি’!!আম্মু কিছুটা শান্ত হয়ে বললোঃ
———-“সাবধানে থাকিস….
———-“অবশ্যই আম্মু চিন্তা করো না তুমি!
– এই বলে ক্যামেরাটা ব্যাগে নিয়ে আম্মুকে বিদায় জানিয়ে ভাইয়ার বাইকে করে রওয়ানা দিলাম ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্যে’!!কারন ভার্সিটির সামনেই আমাদের খুলনা যাওয়ার বাস অপেক্ষা করছে………

এক মুঠো কাঠগোলাপ পর্ব ১১