এক মুঠো কাঠগোলাপ পর্ব ২ || তানজিল মীম

এক মুঠো কাঠগোলাপ পর্ব ২
তানজিল মীম

“অবাক চোখে তাকিয়ে আছি আমি আর রিয়াদ স্যার ওদের দিকে’!!যেন এই মাএ কি হলো সব মাথার উপর দিয়ে গেল’!!আমাদের দুজনকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওঁরা ঘাবড়ে গিয়ে বলে উঠলঃ
——–“ইয়ে না মানে কিছু না স্যার আমরা তো একটু তানজুকে দেখতে এসেছিলাম…
“বলেই চারজন একসাথে দৌড়ে পালালো’!!ওদের এইভাবে দৌড়াতে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম আমি’!!মুখ থেকে অটোমেটিক বেরিয়ে আসল আমারঃ
———“যা বাবা ওঁরা দৌড়ালো কেন?আর কান পেতে কি বা শুনছিল….
“আমার কথা শুনে পিছন থেকে রিয়াদ বলে উঠলঃ
———-“কি শুনছিল তা গিয়ে তোমার বন্ধুদের জিজ্ঞেস করো….
“আচমকা স্যারের মুখে এমন কথা শুনে হকচকিয়ে উঠলাম আমি’!!তারপর একবার রিয়াদ স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে হন হন করে বেরিয়ে আসলাম রুম থেকে’!!
“রুমের বাইরে যেতেই জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে শুরু করলাম আমি’!!যেন সিংহের রাজ্য থেকে প্রান ফিরে বেরিয়ে আসলাম আমি’!!বাবা গো বাবা কি ভয় টাই না পেয়েছিলাম’!!
“এখন সবার আগে দিহাইনয়া শয়তানডারে খুজতে হবে তারপর বাকিগুলারে’!!

——–“ওই দিহাইনরা বাচ্চা দাঁড়া বলতাছি আজকে তোরে একবার সামনে পাই তোর মাথার সব চুল ছিঁড়মু আমি’!!
“ভার্সিটির মাঠে দৌড়াতে দৌড়াতে কথাগুলো বললাম আমি’!!আর আমার কথা শুনে দিহান সবার সামনে থেকে ঝড়ের বেগে দৌড়াতে লাগলো’!!আর বললোঃ
———“আমি কি করছি যা করার তো তুই করছো…
———“আমি করছি মানে যা হয়েছে সব তোর জন্য হয়েছে….
———“আমি কি করলাম আমার দোষ কোথায়….
———“তোর দোষ হলো তুই রিয়াদ স্যারের আগে কেন রুমে ঢুকোস নায়….
———-“আরে আমি কি করে জানবো যে আমার আগেই রিয়াদ স্যার ঢুকে পড়বে…
———-“তুই জানবি না কেন…
———-“এ্যাঁ….
———“আজকে যদি তোরে ওই পুকুরের পানি না খাওয়াইছি তাইলে আমার নাম ও “তানজিল মীম” ওরোফে “তানজু” নয় হুহ…
“এই বলে পুরো ভার্সিটিতে দৌড়াতে লাগলাম আমি আর দিহান’!!পুরো ভার্সিটির ছেলেমেয়েরা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে’!!

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

“আরেকজন রিয়াদ দু-তালার উপর থেকে তানজু আর দিহানের এমন কান্ড দেখে বলে উঠলঃ
——-“মেয়েটা আসলেই একটা পাগলী….
“বেশকিছুক্ষন পর…..
“হাঁপাতে হাঁপাতে আমি আর দিহান দাঁড়িয়ে পরলাম ভার্সিটির পিছনে থাকা একটা ছোট্ট পুকুরের সামনে’!!দিহান হাঁপাতে হাঁপাতে বললোঃ
——–“দোস্ত আর দৌড়াস না আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে এইবারের মতো মাফ করে দে…
——–“ঠিক আছে মাফ করতে পারি তবে আমার একটা শর্ত আছে….
——–“কি শর্ত….
———“তোকে ৫০বার কান ধরে উঠ বস করতে হবে….
———-“কি….??(চেঁচিয়ে)
———“চেঁচাস ক্যান শর্ত পছন্দ হয় নি…
———“দোস্ত এইটা ছাড়া অন্যকিছু করা যায় না….
———-“না…..
———-“তুই না আমার বন্ধু একটু ডিসকাউন্ট দে প্লিজ….
———“আচ্ছা ঠিক আছে তোর জন্য চৌএ মাসের ৫০% ডিসকাউন্ট দিলাম যা, ২৫ বার কান ধরে উঠ বস করবি সাথে ভার্সিটির ক্লাস শেষে দু-প্লেট ফুচকা খাওয়াবি…..
———“এই তোর ডিসকাউন্ট…..
———-“বেশি বকলে কিন্তু আবার বৈশাখের শুরুতে চলে যাবো,অফার টা নিবি কিনা বল তা না হলে…

———-“না না না করছি…..
“বলেই যেই না দিহান কানে হাত দিতে যাবে সাথে সাথে বলে উঠলাম আমিঃ
———-“দাঁড়া এখানে না ওই গাছের আড়ালে চল কেউ দেখবে না বা তোর পেসটিজ গেলে আমার সামনে যাবে বাকিদের সামনে নয়…
“তানজুর কাজে হাসলো দিহান…
“দিহান ৫বার উঠবস করেই বললোঃ
——–“দোস্ত পা ব্যাথা হয়ে গেছে তো…
———“তুই ঠিক মতো ১০বার উঠবস করোস নাই আর এখনই পা ব্যাথা হয়ে গেছে মজা নেস আমার সাথে,বেশি করলে কিন্তু আরো ৫০ বারিয়ে দিবো…
———“না না না এটাই ঠিক আছে….
“তারপর আর কি দিহান গুনে গুনে পঁচিশ বার উঠ বস করলো’!!
____________________
——“যাই বলিস দোস্ত স্যার কিন্তু তোর নামটা খুব সুন্দর দিয়েছে “লাউডস্পিকার”…
“ভরা ক্যান্টিনে বসে কথাটা বলে উঠল হৃদয় আর ওর এমন কথা শুনে হকচকিয়ে উঠলাম আমি’!!অবাক হয়ে বললামঃ
———–“তার মানে তোরা সব শুনেছিস….
———–“না সব শুনিনি শুধু নামটাই শুনেছি, তা কি করেছিল স্যার তোর সাথে আমাদেরও তো বল…
———–“কি আর করবে আমাকে তো বিরিয়ানি অফার করেছিল তার গায়ে পানি দেওয়ার জন্য’!!কিন্তু আমি বললাম না স্যার বিরিয়ানি খাবো না…
“আমার কথাশুনে আরিফা অবাক হয়ে বললোঃ
———-“কি সত্যি স্যার তোকে এসব বলেছে…
“ওর কথা শুনে হাসলো সবাই’!!হৃদয় বলে উঠলঃ
———“উড়ে মাথামোটা ও আমাদের সাথে মজা করছে…
———–“তুই আমায় মাথা মোটা বললি (আরিফা)
———–“মাথা মোটাকে মাথা মোটা বলেছি এতে না বলার কি আছে…(হৃদয়)
————“কি আমি মাথামোটা দাঁড়া তাহলে বলে টেবিলের উপর থাকা পানির গ্লাসের পানি ছুঁড়ে মারলো আফিয়া হৃদয়ের দিকে’!!আচমকা এমনটা হওয়াতে পানি গিয়ে পরল হৃদয়ের মুখে হৃদয় আবার রেগে পানি মারলো আরিফা গায়ে’!!তারপর শুরু হলো পুরো হল্লা পাট্টি….

“এমন সময় ক্যান্টিনে উপস্থিত হলো রিয়াদ স্যার আর পিন্সিপাল’!!ওনারা দুজনে হলেন বাবা ছেলে’!!ওনাদের দেখে আমরা সবাই একদম হতভম্ব হয়ে গেলাম’!!অবশ্য আমি কিছু করি নি যা করার ওরাই করেছে’!!তাই আমি এই মুহুর্তে প্যারা নাই চিল মুডে আছি…
“পিন্সিপাল অবাক হয়ে বললোঃ
——–“এই তোরা এগুলো কি করছিস….
——–“ইয়ে না মানে স্যার কিছু করছিলাম না তো ওই একটু মজা করছিলাম….
——–“এই একটু মজা করছিলি চেহারার কি অবস্থা করেছিস তোরা….
——–“সরি স্যার(সবাই মাথা নিচু করে)
“আর ওদের কাজে আমি মিটমিট করে হাসছি’!!বেশ হয়েছে আমায় নিয়ে মজা করা হচ্ছিল না’!!একদম বেশ হয়েছে….
———“ফের যদি দেখেছি তোরা এমব করছিস তাহলে কিন্তু….
——–“আর হবে না স্যার….
——–“ঠিক আছে আর হ্যাঁ সবার মনে আছে তো ভার্সিটির নবীন বরন অনুষ্ঠানের কথা এ বছর কিন্তু নবীব বরনের সব দায়িত্ব তোদের পালন করতে হবে’!!
———“একদম স্যার পুরো ভার্সিটি কাঁপিয়ে ফেলবো….(দিহান)
———“বেশি কাঁপালে কিন্তু আমিও তোরে কাঁপিয়ে দিবো মনে থাকে যেন…
——–???
“হাসলো সবাই’!!
“সারাদিন হাসাহাসি আর আড্ডায় কেটে গেল আমাদের’!!তারপর ভার্সিটি শেষে দিহানের দেওয়া ফুচকার ট্রিটটা নিয়ে বাড়ি চলে এলাম আমি’!!

“কলিংবেল টিপতেই আম্মাজান এসে দরজা খুলে দিল’!!দরজা খুলতেই হন হন করে রুম ভিতর ঢুকে গেলাম আমি’!!
__________________________________________
_______________________
“পরের দিন ভার্সিটিতে আসতে লেট হয়ে গেছে আমার’!!শালার এই ঘুমটা যে কবে কমবে আমার কে জানে’!!আজকে আবার টাকলা স্যারের ক্লাস সবার আগে না জানি আমায় ঢুকতে দিবি কি না দিবে’!!এসব ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছি আমি’!!হর্ঠাৎই পা ছিলিপ কেটে পড়ে যেতে নিলাম আমি’!!এমন সময় পিছন থেকে কেউ ধরলো আমায়’!!ঘটনাটা হুট করে হয়ে যাওয়াতে আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম’!!
“কিছুক্ষণ পর….
“আস্তে আস্তে চোখ খুললাম আমি!!চোখ খুলে রিয়াদ স্যারকে দেখে আরো ভয়ে ঘাবড়ে গেলাম আমি’!!ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলাম আমিঃ
———“সরি স্যার বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নি….
——–“চোখ কোথায় থাকে তোমার ইস্টুপিট কোথাকার,এখনই তো একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যেত,ঘোড়ার মতো শুধু সারাদিন দৌড়ায়,ইডিয়েট গার্ল…..
“ধমকের স্বরে কথাগুলো বলেই হন হন করে চলে গেলেন উনি’!!আর আমি হা হয়ে জাস্ট তাকিয়ে রইলাম’!!
———“আমি ঘোড়া,, কালকে লাউডস্পিকার আর আজকে ঘোড়া বললো আমায় ঠিক আছে স্যার আমিও পড়ে দেখে নিবো আপনায় হুহ..?
“হর্ঠাৎই মনে পরলো আমি কেন দৌড়াচ্ছিলাম’!!হায় রে আমার ক্লাস’!!

“ক্লাস রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম আমিঃ
———“স্যার আসবো….
“সাথে সাথে পুরো ক্লাসের স্টুডেন্টরা আমার দিকে তাকালো’!!টাকলা স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললোঃ
———“আসো মা এতক্ষণ তোমার অপেক্ষায় ছিলাম তা এত তাড়াতাড়ি চলে আসলে যে…
——–“সরি স্যার আসলে….
———“এই নিয়ে কতবার সরি বলেছিস তুই তার হিসাব আছে….
———“এই লাস্ট বার স্যার আর দেরি হবে না….
“তারপর এক গাধা বক বক করে ভিতরে ঢুকতে দিলো আমায় উনি’!!সকাল সকাল টাকলা স্যার মেজাজটাই বিগড়ে দিল’!!এই একজন স্যার যার ক্লাস কোনোদিনও ঠিক টাইমে আসতে পারি না আমি’!!রোজ ওনার বক বক শুনে ক্লাস শুরু করতে হয়’!!তারওপর আজকে আবার রাক্ষস স্যারের মুখ দেখা লাগলো সবার আগে না জানি কেমন কাটে আজকের দিনটা……

এক মুঠো কাঠগোলাপ পর্ব ১

“লাইব্রেরিতে দাঁড়িয়ে আছি আমি’!!উদ্দেশ্য হচ্ছে কিছু রঙিন কাগজ খোঁজা’!!দিহান ওরা বলেছে কাগজ গুলো নাকি আলমারির উপরে থাকা একটা কার্টুনের বাক্সের ভিতর আছে’!!
“হর্ঠাৎই চোখ গেল আলমারির উপরে থাকা একটা বড় বাক্সের দিকে’!!হয়তো ওইটার কথাই ওঁরা বলেছিল আমায়’!!
——-”কিন্তু ওগুলো তো অনেক উচুতে এখন কি করি….
“অনেক ভেবে চিন্তে একটা চেয়ারের উপর উঠে বাক্সটা নামাতে লাগলাম আমি’!!কিন্তু বাক্সটা এতটাই উঁচুতে যেখানে আমার হাত পৌঁছাচ্ছে না’!!
।।
“লাইব্রেরির পাশ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছিল রিয়াদ’!!হর্ঠাৎই তার চোখ গেল লাইব্রেরির ভিতরে থাকা তানজুর দিকে’!!রিয়াদ বুঝতে পেরেছে এ মেয়ে আবার একটা এক্সিডেন্ট ঘটাতে চলেছে’!!এই ভেবে লাইব্রেরির ভিতরে ঢুকলো সে’!!

“হর্ঠাৎই পা পিছলে চেয়ার থেকে পড়ে যেতে নিলাম আমি’!!সাথে সাথে আবারো কেউ পিছন থেকে ধরলো আমায়’!!আর হাতে বেজে উপর থেকে বাক্সের ভিতর থাকা সব কাগজ এসে পরলো আমার মাথার উপর’!!ভয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলাম আমি’!!পরিবেশ শান্ত হতেই চোখ খুলে তাকাতেই আবারও রিয়াদ স্যারকে দেখে ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আমার……
———“হায় রে আজকে কি দেখে সকালে খুব থেকে উঠেছিলাম আমি বার বার খালি পড়ে যাই আর এই স্যার এসে ধরে না জানি এখন আবার কি নতুন নাম দেয় আমার……

এক মুঠো কাঠগোলাপ পর্ব ৩