এক মুঠো কাঠগোলাপ পর্ব ৩ || অনেক কষ্টের গল্প

এক মুঠো কাঠগোলাপ পর্ব ৩
তানজিল মীম

“ভয়ে কাচুমাচু হয়ে তাকিয়ে আছি আমি রিয়াদ স্যারের দিকে’!!আর উনিও চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে’!!আমি শুকনো ঢোক গিলে বললামঃ
———“প্লিজ স্যার লাস্ট বারের মতো সরি বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নি…
———“শ্যাট আপ ইডিয়েট একটা একদম কথা বলবে না তুমি(ধমক দিয়ে)
“রিয়াদ স্যারের ধমক শুনে মুখে হাত দিলাম আমি’!!উনি আবারো বলে উঠলঃ
———“সবসময় এত বক বক করো কেন তুমি মিস “লাউডস্পিকার” সব সময় কথা কম বলবা!সারাদিন শুধু পারে লাফালাফি করতে আর বক বক করতে আর যেখানে সেখানে পড়ে যেতে হরিন একটা….
”বলেই জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করেন উনি’!!হয়তো রাগ কমানোর চেষ্টা’!!আশ্চর্য এতো রেগে যাওয়ার কি আছে আর আমি কি বলছিলাম নাকি পিছন ধরতে আমায়’!!নিজেই এসে ধরবে আবার নিজেই কথা শুনাবে আস্ত একটা হনুমান হুহ (মনে মনে)
“কিছুক্ষণ পর….
“হর্ঠাৎই বলে উঠলাম আমিঃ

——–“বলছিলাম কি স্যার….
———“তুমি আবার কথা বলছো “লাউডস্পিকার”…
———“আরে আমার কথাটা তো শুনবেন….
———“তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না আমি…
———-“আরে স্যার….
———“জাস্ট শ্যাট আপ লাউডস্পিকার….
“মুহূর্তের মধ্যে রেগে গেলাম আমি’!!একটু উচ্চ স্বরে বলে উঠলামঃ
———-“কি কতক্ষণ যাবৎ লাউডস্পিকার লাউডস্পিকার করে যাচ্ছেন আপনি, আমার নাম তানজু ওই নামে ডাকবেন আমায়, আর কথাটা হলো আমায় এখনও কোলে তুলে আছেন স্যার নামাবেন না…
.
“তানজুর কথা শুনে হকচকিয়ে উঠলো রিয়াদ’!!আসলেই সে ভুলে গেছে সে যে কাউকে কোলে তুলে আছে’!!দ্রুত নামিয়ে দিলো রিয়াদ তানজুকে’!!তারপর কিছু না বলেই লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে গেল সে’!!
.
“রিয়াদ স্যারের কাছ থেকে ছাড়া পেতেই নিচে বসে সব কাগজগুলো উঠাতে লাগলাম আমি’!!এমন সময় লাইব্রেরির দরজার সামনে এসে হাজির হলো রিতু’!!আমাকে নিচে বসে কাগজ কুড়াতে দেখে বলে উঠল সেঃ
——–“হায় রে লাইব্রেরির কি অবস্থা করেছিস তুই,এগুলো কেমনে হলো….
———“ভূমিকম্প হইছিল তাই এমনটা হয়েছে এখন বক বক না করে হেল্প কর আমায়….
———হুম…
“তারপর দুজন মিলে সব কাগজগুলো উঠিয়ে নিয়ে চললাম নিজেদের গন্তব্যে….

“দু সিঁড়ি টপকে নিচে নেমে নিজের রুমের দিকে পা বাড়াচ্ছে রিয়াদ’!!এমন সময় অর্নাস থার্ড ইয়ারের একটা মেয়ে নাম তুলি’!!ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললোঃ
———“আসসালামু আলাইকুম স্যার….
———-“ওয়ালাইকুম আসসালাম…
———“আজকে ক্লাস করাবেন না স্যার…
———“আজকে আমার ক্লাস নেই তো….
———“ওহ…
———-“হুম….
“বলেই রিয়াদ চলে গেল’!!আর এদিকে তুলি এখনও রিয়াদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে’!!সেই প্রথম দিন রিয়াদকে দেখার পর থেকেই রিয়াদকে ভালো লাগে তার’!!সব চেয়ে বেশি ভালো লাগে তানজুকে অনেক বকে উনি’!!যেটা তুলির কাছে খুবই ভালো লাগে’!!এসব ভাবতে ভাবতে তুলি এগিয়ে গেল হল রুমের দিকে’!!

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

“সারাদিনে প্রচুর কাজ করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরলাম আমি’!!চোখ মুখে রয়েছে ক্লান্তির ছাঁপ’!!সোফায় বসে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ দুটো বুঝিয়ে নিলাম নিমিষেই’!!এমন সময় পাশে বসে মাথায় হাত রাখলো অপূর্ব’!!আচমকা কারো হাতের স্পর্শ পেতেই হকচকিয়ে উঠলাম আমি’!!টিপটিপ চোখে তাকাতেই ভাইয়াকে দেখে হাল্কা হাসলাম আমি’!!ভাইয়া মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠল আমায়ঃ
———“কি খুব ক্লান্ত লাগছে বুঝি…
——–“আর বলো না ভাইয়া কালকে ভার্সিটিতে প্রথম বর্ষদের নবীন বরন অনুষ্ঠান’!!আর তুমি তো জানো প্রতি বছর থার্ড ইয়ারদের উপর সব দায়িত্ব পড়ে’!!আর এ বছর তো আমরা থার্ড ইয়ারে তাই এ বছরের সব দায়িত্ব আমাদের উপর আর তার জন্য ভার্সিটি সাজাতে সাজাতে পুরো ক্লান্ত হয়ে গেছি আমি’!!
———“ওহ এইবার বুঝলাম…
———“তা তুমি যাবে তো ভাইয়া কালকে…
——–“আমার সময় হবে না মনে হয় বোনু অফিসে অনেক কাজ আছে….
———“ওহ ঠিক আছে…(মন খারাপ করে)
———“মন খারাপ করিস না সময় হলে আমি গিয়ে তোকে নিয়ে আসবো…..
——–“ঠিক আছে ভাইয়া তাহলে আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি….
———“ঠিক আছে যা আর শোন রাতে আইসক্রিম খেতে নিয়ে যাবো…
“সাথে সাথে খুশি হয়ে বললাম আমিঃ
———-“লাভ ইউ ভাইয়া….
———“হুম বুঝতে পারছি যা এখন….(হেঁসে)৷

“রাত_৯ঃ০০টা…..
“ব্যস্ত রাস্তায় হেঁটে চলেছি আমি আর ভাইয়া’!!কিছুটা দূর যেতেই ভাইয়া বলে উঠলঃ
———“তুই দাঁড়া আমি এখনই আইসক্রিম নিয়ে আসছি….
“আমিও খুশি মনে বলে উঠলামঃ
———“ঠিক আছে ভাইয়া….
“কিছুক্ষণের মধ্যেই অপূর্ব ভাইয়া দুটো কোন আইসক্রিম নিয়ে এসে দিলো আমার হাতে’!!আমিও খুশি হয়ে আইসক্রিম হাতে নিয়ে খেতে শুরু করলাম’!!
“অন্যদিকে…..
“এমন সময় সেই রাস্তা দিয়ে গাড়ি করে বাড়ি যাচ্ছিল রিয়াদ’!!হর্ঠাৎই তার চোখ যায় তানজুর দিকে’!!এতরাতে তানজুকে ব্যস্ত রাস্তায় দেখে অবাক হয় সে’!!পিছন থেকে দেখছে রিয়াদ যার কারনে স্পষ্ট ভাবে ছেলেটির চেহারা দেখতে পেল না রিয়াদ কিন্তু তানজুর মুখ স্পষ্টই দেখতে পেয়েছে সে’!!হর্ঠাৎ তানজুর পাশে থাকা ছেলেটি হাত দিয়ে তানজুর ঠোঁটে থাকা আইসক্রিম মুছে দিল’!!যেটা দেখে রিয়াদ প্রচন্ড রেগে যায়’!!রেগে গিয়ে মনে মনে বলে সেঃ
——–“কালকে একবার দেখা হোক তোমার সাথে তারপর মজা দেখাবো “লাউডস্পিকার”…..
“ভেবেই রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে গাড়ি করে চলে গেল সে’!!

——–“বনু তুই কি এখনও বাচ্চা আছিস বল তো এইভাবে কেউ মুখ মেখে আইসক্রিম খায়….
“বলেই আমার মুখ মুছে দিল ভাইয়া’!!ভাইয়ার কাজে হাসলাম আমি’!!তারপর বলে উঠলামঃ
——–“এইভাবে আইসক্রিম খেতে মজা ভাইয়া তুমি বুঝবে না….
——–“হুম সব তো তুই একাই বুঝিস…
——–“হি হি,?
———“হইছে এখন চল তাহলে না হলে আম্মু বকবে আর এমনিতেও কালকে তো আবার তোকে তাড়াতাড়ি ভার্সিটি যেতে হবে….
———“উহু ঠিক বলেছো ভাইয়া চলো তাড়াতাড়ি….
“তারপর দুই ভাইবোন মিলে হাঁটা দিলাম বাড়ির পথে’!!প্রায় রাতেই ভাইয়া আমায় নিয়ে আইসক্রিম খেতে আসে’!!এটা আমার খুবই ভালো লাগে’!!
_______________
“সকালে…..
“মুখে পানি পরতেই লাফ মেরে উঠলাম আমি’!!সামনে রিতু আর আরিফাকে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমার’!!দুটোতে পুরো আটা ময়দা মেখে পুরোই ময়দা সুন্দরী হয়ে গেছে’!!আমি অবাক হয়ে বললামঃ
——-“ওই ভুতনী দুইটা এই ভাবে পানি মেরে ঘুম থেকে উঠালি কেন আমায়’!!আর তোদের তো হেব্বি লাগছে রে….
——–“কয়টা বাজে হিসাব আছে….(রিতু)
———“কয়টা…..
———“৯ঃ০০টা বাজে….
———“কি…..
———“হুম সেই কখন থেকে তোকে ডাকছি বলতো এখন তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে(আরিফা)
———“জাস্ট দুই মিনিট আমি এখনই আসছি….
“বলেই ওয়াশরুমের দিকে দৌড়ে পালালাম আমি’!!
“কিছুক্ষণ পর….
“ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে বললামঃ
———“এখন বল কি পড়বো আমি…
———“কি পড়বি মানে শাড়ি পড়বি….(আরিফা)
———“শাড়ি….
———“হুম,আমরাও পড়ছি তুইও পড়বি…
———“আচ্ছা ঠিক আছে……
“এই বলে আলমারি থেকে একটা কলা পাতা রঙের শাড়ি বের করলাম আমি’!!তারপর আম্মু শাড়ি পড়িয়ে দিল’!!আজকে চুলগুলো খুলে দিয়েছে’!!গলায় ভাড়ি নেকলেস আর ঝুমকো, হাতে মুঠো ভর্তি কাঁচের চুরি,চোখে কাজল আর হাল্কা মেকাপ ব্যস তৈরি আমি’!!তারপর সবার কাছ থেকে বিদায় জানিয়ে চললাম আমরা তিনজন ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম…..

“পুরো ভার্সিটি আজকে খুব সুন্দর করে সাজানো’!!তার সাথে সেজেছে ভার্সিটির নতুন পুরাতন সব সদস্যরা’!!সবাই রঙ বেরঙের শাড়ি পড়েছে’!!সাথে অনেকেই চুলে দিয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুলের মালা’!!সবাইকেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে’!!সাথে পরিবেশটাকেও খুব সুন্দর লাগছে’!!আমরা তিনজন একসাথে হেঁটে চলে গেলাম ভার্সিটির মাঠের দিকে’!!মাঠের কাছে যেতেই দেখা হয়ে গেল বাকি শয়তানদের সাথে হৃদয় আর দিহান ওরাও আজকে সেজেছে’!!ওদের সামনে গিয়ে আমার তিনজন একসাথে দাঁড়িয়ে বললামঃ
———“আমাদের কেমন লাগছে……
“ওরা দুজন কিছুক্ষণ হা হয়ে তাকিয়ে থেকে বললোঃ
———-“ওরে দোস্ত ওদের তো একদম পেত্নীর মতো লাগছে….
“ওদের কথা শুনে আমরা তিনজনই রেগে গিয়ে চেঁচিয়ে বললামঃ
———-“কি….
“সাথে সাথে দুজনই কানে হাত দিল!!
!!
“ভার্সিটির গেটের সামনে এসে থামলো রিয়াদের গাড়ি’!!ব্লাক শার্ট, সাথে ব্লাক জিন্স, হাতে ব্যান্ডেড ঘড়ি, চুলগুলো জেল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো’!!সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে’!!ভার্সিটির অর্ধেক মেয়েরাই রিয়াদকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে’!!তুলি তো মনে হয় রিয়াদকে দেখেই অজ্ঞান হয়ে যাবে’!!হা হয়ে সবাই চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে তাকে’!!
“আর রিয়াদ একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সামনে এমনটা নয় যে সে বুঝতে পারছে না সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে’!!এই মুহূর্তে তার সেদিকে কোনো হুস নেই সে তো চাচ্ছে কখন তানজুর সাথে দেখা হবে আর কড়া করে কতক্ষণ বকে দিবে’!!কাল সারারাত ঘুম হয় নি তার’!!আশেপাশে চোখ বুলালো সে’!!হর্ঠাৎই চোখ গেল তার থেকে কিছুটা দূরেই কলাপাতা রঙের শাড়ি পড়ে হৃদয় দিহানদের সাথে হাসাহাসি করছে তানজু’!!আবারো মেজাজ বিগড়ে গেল তার’!!সে বুঝে উঠতে পারে না’!!এই মেয়েটা এতো কি নিয়ে হাসে’!!

এক মুঠো কাঠগোলাপ পর্ব ২

হর্ঠাৎই আমার চোখ গেল রিয়াদ স্যারের দিকে’!!উনি হেঁটে এদিকেই আসছে’!!ওনাকে দেখেই হাসাহাসি বন্ধ করে দিলাম আমরা’!!মিষ্টি হেঁসে বলে উঠলাম আমিঃ
——–“গুড মনিং স্যার…
“কিন্তু উনি কোনো জবাব না দিয়েই হন হন করে হেঁটে গেল’!!বিষয়টা একটুও ভালো লাগলো না আমার’!!স্যারের জবাব না দেওয়াতে ওঁরা বলে উঠলঃ
———“কি হলো বলতো স্যার কথা বললেন না কেন তোর সাথে….
———“আমি কি জানি ধুর বাদ দে তো ভালো লাগে নি তাই হয়তো কথা বলেন নি….
———-“তবে যাই বলিস স্যারকে দেখতে কিন্তু হেব্বি লাগছে(রিতু)
———-“আমি তো ক্রাশ খাইছি দোস্ত (আরিফা)
———-“তুই তো যারে দেহো তার উপরই ক্রাশ খাও কয়েকদিন পর তো রাস্তায় পাগল দেখলেও বলবি ক্রাশ খাইছি দোস্ত(হৃদয়)
“হৃদয়ের কথা শুনে হাসলাম আমরা’!!আমাদের হাসি দেখে আরিফা রেগে গিয়ে হৃদয়ের মাথায় একটা চাটি মেরে বললোঃ
——–“তুই কোনোদিন ভালো হবি না….
———“এত ভালো হয়ে কি লাভ….
———“শয়তান….
———“তোর দাদুর নয় ঠ্যাং….
———-“তোর দাদুর….
“এই নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া লেগে গেলো’!!আর আমরা ওদের ঝগড়া দেখে হাসতে হাসতে শেষ’!!ওঁরা দুজন এমনি মিনিটে মিনিটে শুধু ঝগড়া করে’!!

“অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে স্যারদের বক বক স্টুডেন্টদের নাচ গান দেখেই কেটে গেল আমাদের’!!কিন্তু এই মুহুর্তে প্রচুর বিরক্ত লাগছে আমার কারন ওই টাকলা স্যারের পাক্কা দেড় ঘন্টা যাবৎ ভাষন দিয়ে যাচ্ছে’!!একরাশ বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালাম আমি’!!একটু ফুড়ফুড়ে বাতাস খেয়ে আসা যাক….
.
“এদিকে অন্য আরেক জন তানজুকে উঠতে দেখে নিজেও উঠে দাঁড়ালো’!!হয়তো এখনই সুযোগ তানজুকে বকে দেওয়ার জন্য’!!
“আনমনে ভার্সিটির নিচতলার রুমের পাশ দিয়ে হাঁটছি আমি’!!এমন সময় পিছন থেকে পিছন থেকে কেউ মুখ চেপে ধরে একটা অন্ধকার রুমে নিয়ে গেল’!!ঘটনাটা হুট করে হয়ে যাওয়াতে ভয়ে ঘাবড়ে গেলাম আমি…..

এক মুঠো কাঠগোলাপ পর্ব ৪