এক মুঠো কাঠগোলাপ পর্ব ২১ || তানজিল মীম

এক মুঠো কাঠগোলাপ পর্ব ২১
তানজিল মীম

——–“এটা কিন্তু ঠিক না স্যার….
“একপ্রকার হতাশ হয়ে কথাটা বলে উঠলাম আমি রিয়াদ স্যারকে’!!কারন উনি আমার সাথে মাথায় ব্যাথা পাওয়ার মিথ্যে নাটক করেছেন’!!কিছুক্ষণ আগে যখন দেখলাম রিয়াদ স্যার মাথায় হাত দিয়ে বসে পরেছেন আমি তো ঘাবড়ে গিয়ে দৌড়ে আসলাম ওনার কাছে’!!আর কাছে আসতেই খপ করে ধরে ফেললেন উনি আমায়’!!
———“কি যেন বলেছিলে তুমি আমায়…
“রিয়াদ স্যারের কথা শুনে অবাক হয়ে বলে উঠলাম আমিঃ
———“কি বলেছি আমি!
——–“তোমায় আমি ধরতে পারবো না সেই তো ধরে ফেললাম “লাউডস্পিকার”…
———“এটা ঠিক না আপনি চিটিং করছেন…
———“হুস! (ঠোঁটে হাত দিয়ে)
“রিয়াদ স্যারের কাজে অবাক চোখে তাকালাম আমি রিয়াদ স্যারের দিকে’!!

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

“এদিকে রিয়াদ তানজুর দিকে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে’!!এক অদ্ভুত ফিলিংস, এক অদ্ভুত মায়া,যে মায়া কাটানোর ক্ষমতা রিয়াদের নেই’!!অপলকভাবে তাকিয়ে আছে রিয়াদ তানজুর দিকে’!!
———“কি হলো স্যার আপনি এইভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন…
“রিয়াদ চুপ!
“হুট করেই রিয়াদ তানজুর কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে’!!
“এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে তানজুর ভিতর’!!রিয়াদের কাজে শকট তানজু’!!জীবনে প্রথমবার কোনো ছেলের সংস্পর্শে আসলে যা হয় আর কি’!!দুজনই দুজনের দিকে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে’!!যেন হারিয়ে গেছে দুজন দুজনের চোখের মাঝে চারিদিকে সমুদ্রের পানির শব্দ,চারপাশের গাছের পাতার সংমিশ্রণে ফুড়ফুড়ে বাতাস, সাথে খোলা আকাশের হাতছানি!সব মিলিয়ে অসাধারণ একটা মোমেন্ট!যে মোমেন্টে হারিয়ে যাচ্ছে “রিয়াদ-তানজু”!!একটু একটু করে রিয়াদ এগিয়ে যাচ্ছে তানজুর দিকে’!!যেন এক ঘোর লাগানোর মুহূর্তে আঁটকে গেছে সে…..

“জলন্ত আগুনের দুপাশে বসে আছি আমি আর রিয়াদ স্যার’!!লজ্জায় একদম মাথা কাটা যাচ্ছে আমার’!!কয়েক মুহূর্ত আগে ছিঃ ছিঃ
“অন্যদিকে তানজুর লুকিং এ ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড মজা পাচ্ছে রিয়াদ’!!অবশ্য দোষ তারই ছিল’!!তারপরও এই মুহুর্তে প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে রিয়াদের’!!
——–”সত্যি সত্যি এই মেয়েটা পাগল বানিয়ে দিয়েছে আমাকে(মনে মনে)
”আবারো হাসলো রিয়াদ’!!
“হুটহাট রিয়াদ স্যারকে এতো হাসতে দেখে কিছুটা গম্ভীর আওয়াজে বলে উঠলাম আমিঃ
———“এত হাসার কি আছে স্যার…
“আচমকা তানজুর মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠে রিয়াদ’!!তারপর বলে উঠল সেঃ
———-“অনেক কিছু আছে তুমি বুঝবে না….
———-“কেন বুঝবো না…
———-“কারন তুমি এখনো ছোট….
———“আমি অর্নাস থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট আর আপনি আমায় এখনো ছোট বলছেন…
———“থার্ড ইয়ারে পড়লেই বুঝি বড় হয়ে যাওয়া যায়….
———-“যায় না….(অবাক হয়ে)
“হাসলো রিয়াদ!!
———“আপনি কথায় কথায় এত হাসেন কেন স্যার…
———“ভালো লাগে তাই….
———“ধুর ভালো লাগছে না স্যার,কবে বাসায় যাবো আমার রুমটা একা একা কাঁদছে খুব….
———“কি…
———“আপনার মাথা!
———“কি বললে তুমি….
———“কিছু না!
———-“গান শুনবে…..
———-“আপনি গান গাইতে পারেন স্যার(অবাক হয়ে)
——–“একটু-আকটু…
——–“তাহলে শুনান স্যার এমনিতেও ভালো লাগছে না….
——–“ঠিক আছে….
– তারপর ছোট্ট এক শ্বাস ফেলে গাইতে শুরু করলেন উনিঃ….

– ???? ????? ???, ??? ???????..
????? ?? ????? ????? ???????… (2)
– ???? ???????? ???? ??? ????
?? ????? ???? ????? ??? ??????…
– ??? ?????? ???, ????? ????….
– ??? ????? ????? ???? ??? ?????
??? ????? ????? ??? ?????…(2)
– ??? ???? ?? ?????? ??? ?? ???…
– ??? ????? ????? ???? ???
“?????”….?

[বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন..?]
“এক ধ্যানে রিয়াদ স্যারের গান শুনছি আমি’!!যেন গানের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছি আমি’!!রিয়াদ স্যার এত সুন্দর গান গায় আগে জানলে তো আরো আগেই শুনতাম!!গালে হাত দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমি ওনার দিকে’!!এক অদ্ভুত মায়া কাজ করছে আমার ভিতর, সাথে এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে খুব!!আচমকা এমনটা হওয়ার কোন কারনই তো খুঁজে পাচ্ছি না আমি!!তাহলে কি আমি রিয়াদ স্যারকে…
——–“না না কিসব উল্টো পাল্টা ভাবছিস তুই “তানজু”, আর ভুলে যাস না স্যারের গার্লফ্রেন্ড আছে(মনে মনে)

“আর একটা সকাল…..
“একপ্রকার মন খারাপ নিয়ে বসে আছি আমি সমুদ্রের কাছেই থাকা একটা বড় পাথরের উপর’!!বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে খুব’!!
——-“কবে আসবে ভাইয়া তুমি আমায় নিতে’!!
– সকালের এই সময়টা আরো বেশি উজ্জ্বল আর সাচ্ছন্দ্য মনে হচ্ছে আমার সমুদ্রটাকে,তার সাথে ফুড়ফুড়ে ঠান্ডা বাতাস’!!চোখ বন্ধ করে পুরো মোমেন্টটার মজা নিচ্ছে আমি’!!
——“আশ্চর্য চোখ বন্ধ করলেই রিয়াদ স্যারের ফেসটা ভেসে আসছে খুব কিন্তু কেন??
“প্রশ্নগুলো মাথায় এসে জোট পাকাচ্ছে খুব’!!এমন সময় কাঁধে হাত রাখলো কেউ’!!অবশ্য তাকে না দেখেই বলা যেতে পারে এটা রিয়াদ স্যার’!!এর প্রথম কারন এই দ্বীপে রিয়াদ স্যার ছাড়া কেউ নেই,আর দ্বিতীয় ওনার স্পর্শ এখন আমার চেনা’!!আনমনেই হাসলাম আমি’!!
———“এখানে বসে কি করছো তুমি?…
———-“তেমন কিছু নয়….
———-“মন খারাপ….
———“একটু….
———“আমি জানি আমরা যে পরিস্থিতিতে রয়েছে তাতে মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক কিন্তু তারপরও বলবো মন খারাপ করো না সব ঠিক হয়ে যাবে….
——–“প্রথম দিন থেকেই তো শুনছি স্যার সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু আজ চারদিন হলো, কিছু ঠিক তো হলো না কবে ফিরবো আমরা বাড়ি না জানি বাড়িতে সবাই কতটা টেনশন করছে তার সাথে ভাইয়া না জানি আমায় ছাড়া কতটা কষ্টে আছে….

———“সবই বুঝতে পারছি “লাউডস্পিকার” কিন্তু কি করবো বলো কিছুই তো করার নেই….
———“কিছুই করার নেই স্যার….
———“চলো কিছু খেয়ে নেবে…
——–“খিদে নেই আমার…
“বিনিময়ে রিয়াদ ও আর কিছু বলতে পারলো না’!!
“বেশকিছুক্ষন পর…..
“রিয়াদ আবারো বলে উঠলঃ
——–“আর কতক্ষণ বসে থাকবে তার চেয়ে চলো একটু হাঁটি….
———“ভালো লাগছে না স্যার…
———-“আরে আসো না ভালো লাগবে….

“বলেই আমার হাত ধরে হাঁটা শুরু করল রিয়াদ স্যার’!!আমিও চুপচাপ তার পিছন পিছন হাঁটা শুরু করলাম’!!খুব একটা বড় নয় দ্বীপটা’!!মাঝ সমুদ্রের মাঝখানে ছোট্ট একটা দ্বীপ!যার পুরোটা জুড়েই রয়েছে সুন্দর সুন্দর গাছ পালা আর পাহাড়ি ঝর্না..
“জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়…
“হর্ঠাৎই মাথা একটা শয়তানি বুদ্ধি আসলো আমার’!!আমি নিচে থাকা এক মুঠো বালি হাতে নিয়ে রিয়াদ স্যারের মাথায় দিয়ে দিলাম’!!

“এদিকে আচমকা মাথায় কিছু পরা অনুভব করতেই চমকে যায় রিয়াদ’!!পরক্ষণেই সবটা বুঝতে পেরে বলে উঠল সেঃ
——–“এটা কি করলে তুমি…
———“যা করেছি বেশ করেছি কালকে আপনি আমায় উল্লু বানিয়ে ছিলেন না তার শাস্তি সরূপ এই বালি আপনার মাথায়…
“বলেই আমি দৌড়!!আর রিয়াদ স্যার আমায় দৌড়াতে দেখে বলে উঠলেনঃ
——–“তবে রে দাঁড়াও বলছি আজকে তোমার একদিন কি আমার একদিন…
“বলেই রিয়াদও দৌড়াতে লাগে তানজুর পিছন পিছন!!আবারো শুরু হয় দুজনের মধ্যে ছুটাছুটি…..

“এমন সময় চিরচেনা কন্ঠে বলে উঠল কেউঃ
———“বোনু….
“আচমকা কারো মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠলাম আমি’!!সামনেই অপূর্ব ভাইয়াকে দেখে অসম্ভব খুশি হয়ে ছুটে চলে গেলাম আমি অপূর্ব ভাইয়ার দিকে’!!
“আমি দৌড়ে গিয়ে অপূর্ব ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলামঃ
———“ভাইয়া তুমি এসেছো আমি জানতাম তুমি আসবে….
———-“শান্ত হ এই তো আমি চলে এসেছি এখন সব ঠিক হয়ে যাবে….
“অন্যদিকে রিয়াদ দূর থেকে এমন দৃশ্য দেখে খুশি হলেও সাথে একটু মন খারাপও লাগছে তার, আর তাঁরা একসাথে থাকতে পারবে না’!!এমন সময় তার দিকে ছুটে আসলো আফরিন’!!তাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল আফরিনঃ

———-“ভাই কেমন আছিস তুই….
———“আপু ভালো আছি তুই কেমন আছিস….
———“তোকে ছাড়া কি করে ভালো থাকি,তুই জানিস তোর চিন্তায় বাবা মা কতটা টেনশনে আছে আম্মু তো অসুস্থ হয়ে পড়েছে এখন বাড়ি ফিরে চল ভাই….
——–“হুম যাবো তো…
“অন্যদিকে দুই জুটির দুই ভাই বোনের ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে দিহান,হৃদয়, আরিফা আর রিতু’!!আজকে সবাই খুশি অবশেষে দেখা পেলো “রিয়াদ-তানজুর”!!সকাল হতেই অপূর্ব একপ্রকার সবাইকে জোরজবরদস্তি করে এই দ্বীপে আসার জন্য’!!কারন কাল থেকেই তার মন বলছিল রিয়াদ-তানজু এই দ্বীপেই আছে’!!আর তাই হলো’!!অপূর্বের মনের কথাই সত্যি হলো তাহলে…..

———“এসব কি ভাই তোর মাথায় এত বালি আসলো কোথা থেকে….
“একপ্রকার চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠল আফরিন রিয়াদকে’!!আর রিয়াদ আফরিনের কথা শুনে তাকালো তানজুর দিকে……
“এদিকে রিয়াদ স্যারের হুট করে আমার দিকে তাকাতে দেখে ঘাবড়ে গেলাম আমি’!!
——-“হায় রে এখন সবার সামনে সত্যিটা বলে দিবে নাকি..(মনে মনে)
“রিয়াদ একটু চেঁচিয়ে বললোঃ
——–“আসলে হয়েছে কি আফরিন ওই যে,…
———“হায় রে সত্যি বলে দিবে মনে হয় “টিউবলাইট”….?
———“কি হলো বলছিস না কেন(অপূর্ব)
———“আসলে কি হয়েছে অপূর্ব…
———–“কি কতক্ষন যাবৎ আসলে আসলে করছিস (আফরিন)
———“না ওই একটু বালি হাতে নিয়েছিলাম আর তখনই কিভাবে যেন মাথায় লেগে গেছে আর কি…
“রিয়াদ স্যারের কথা শুনে ছোট্ট শ্বাস ফেললাম আমি!
———-“তুই কি তানজুর মতো বাচ্চা হয়ে গেলি নাকি (অপূর্ব)
———“ওই মনে কর তেমনই কিছু….
“হাসলো সবাই!!আর আমি মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে আছি,,
– সবাই আমায় নিয়ে মজা নিচ্ছে হুহ..?

এক মুঠো কাঠগোলাপ পর্ব ২০

“অবশেষে দুপুর পেরিয়ে বিকেলবেলা আমরা সবাই মিলে বাড়ির ফেরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো’!!আজকে সারাদিন আমরা সবাই মিলে অনেক মজা করেছি ভাইয়াও বাসায় ফোন করে বলে দিয়েছে আমাদের খুঁজে পেয়েছে’!!
–“অবশ্য আইডিয়াটা আমারই ছিল এখানে বিকেল পর্যন্ত থাকার’!! দ্বীপটা এতটাই সুন্দর যে ছোট খাটো পিকনিক করলে মন্দ হয় না’!!
“সবাই খুব খুশি এখন, সাথে আমরাও….
“এসব ভাবতে ভাবতে হর্ঠাৎই পিছন থেকে বলে উঠল কেউঃ
——–“তুমি তানজু তাই না…
“পিছন ঘুরে রিয়াদ স্যারের বোনকে দেখে হাল্কা হেঁসে বলে উঠলাম আমিঃ
———“জ্বী আপু আর আপনি রিয়াদ স্যারের বড় বোন তাই না….
———“বড় নাকি ছোট সেটা তো আমি নিজেও জানি না…
“আফরিন আপুর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললামঃ
———“মানে…..
———“মানেটা হচ্ছে আমরা টুইন ভাইবোন..
——–“আপনারা জমজ…?
——–“তেমনটাই অবশ্য আম্মু বলেছিল আমি বড় তাই সবাই জানে আমি বড়….
———“ওহ..
——–“হুম….
“এমন সময় ডাক পড়লো আমাদের সবার’!!কারন এখনই আমরা বের হবো বাড়ির ফেরার উদ্দেশ্যে…!!অপূর্ব ভাইয়ার ডাক শুনে আফরিন আপু বলে উঠল আমায়ঃ
———-“চলো তাহলে যাওয়া যাক…
———-“অবশ্যই আপু চলুন।
“তারপর আমার সবাই একে একে উঠে বসলাম ট্রলারে’!!বাই বাই জানালাম এই অজানা দ্বীপকে….
[–” এখন তাহলে আপনারাও বা এই দ্বীপে থেকে কি করবেন চলুন তাহলে ফেরা যাক ঢাকার উদ্দেশ্যে’!!]

এক মুঠো কাঠগোলাপ পর্ব ২২