আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ১২ || লিখা: জাহান আরা

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ১২
লিখা: জাহান আরা

য়ে হলুদের রাতে শবনম এক বিষম খেলো যখন দেখতে পেলো শ্রাবণী আর প্রলয় ম্যাচিং করে শাড়ি পাঞ্জাবী পরেছে।
শবনমের বুকের ভিতর তখন ঝড় বয়ে যাচ্ছে।সেই ঝড়ে লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে শবনমের তিলে তিলে গড়া সব স্বপ্ন।
নিজেকে শবনমের মনে হচ্ছে পরাজিত সৈনিক বলে।
নিজেকে নিজের জুতাপেটা করতে ইচ্ছে করছে শবনমের প্রলয়ের কথাতে রাজি হয়েছে বলে।
কেনো রাজি হলো সে প্রলয়ের কথায়?

না হয় না পেতো প্রলয় কে।তবুও তো সান্ত্বনা ছিলো এক ছাদের নিচে আছে দুজন।
কিন্তু এখন কি হবে?
শ্রাবণীর দিকে বিষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শবনম। মুনিঋষির যুগ হলে শবনমের এই তাকিয়ে থাকা শ্রাবণী কে ভষ্ম করে দিতো।
শবনমের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কে আরো বাড়িয়ে দিতেই যেনো শ্রাবণী আর প্রলয় একসাথে স্টেজে এসেছে শবনম কে হলুদ লাগাতে।
শবনমের ইচ্ছে হলো লাথি মেরে সব ফেলে দেয়।ভাঙচুর করে সব কিছু।
কি পেলো এই জীবনে সে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

খুব ছোটবেলায় তো বাবা ছেড়ে চলে গিয়েছে তাদেরকে।
না পেলো বাবার আদর,না পেলো মায়ের আদর।
মা’কে তো শবনম কাছেও পায় নি খুব একটা।সেই সাত সকালে মা বেরিয়ে পরতো গার্মেন্টের উদ্দেশ্যে, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতো ক্লান্ত হয়ে।তবুও মায়ের কোনো অবসর ছিলো না।বাসায় ফিরেই ব্যস্ত হয়ে যেতো কাঁথা সেলাই করতে।
শবনম বড় হয়েছে একা একা।

ভালোবাসা কি শবনম জানে না।কলেজে পড়ার সময় অনেকে প্রস্তাব দিয়েছিলো কিন্তু শবনম পারে নি তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করতে।
কেউই প্রলয়ের মতো এরকম করে শবনমের মন চুরি করতে পারে নি।
অথচ ভাগ্যের কি ফের!
নিজের ভালোবাসার মানুষটা তাকে অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছে।
পাশে বসা শ্রাবণের দিকে তাকালো শবনম। কি আনন্দিত এই ছেলেটা!
উচ্ছ্বাস যেনো ঠিকরে পড়ছে।শ্রাবণী শবনম কে হলুদ লাগালো প্রথমে।তারপর প্রলয়।
শবনম শিউরে উঠলো প্রলয়ের স্পর্শ পেয়ে।মনেমনে প্রার্থনা করলো সময়ের চাকা থেমে যাক এখানে। প্রলয় এভাবে ছুঁয়ে থাকুক তাকে আজীবন।একফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো শবনমের চোখ বেয়ে।

সময় থেমে থাকে নি,শবনমের ইচ্ছে পূর্ণ হয় নি।প্রলয় চলে এলো স্টেজ থেকে।
প্রলয়ের হাতে শবনমের একফোঁটা চোখের জল।
নিজের রুমে এসে প্রলয় একটা জিপলক ব্যাগে একফোঁটা জল সংরক্ষণ করলো।
দরজা বন্ধ করে শুয়ে রইলো কিছুক্ষণ। বুকের ভিতর এক অজানা ঝড় উঠেছে প্রলয়ের। একটা পাগলা ঘন্টা একটানা বেজেই চলেছে।ব্যথায়,যন্ত্রণায় প্রলয়ের দম আটকে আসতে লাগলো।
বিছানায় সোজা হয়ে বসলো প্রলয়। কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে তার?
শবনমের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে তার কি সমস্যা।

নিজেকে নিজে যতোই বুঝানোর চেষ্টা করছে প্রলয় পারছে না মন কে মানাতে।
মন বারবার প্রলয় কে তিরস্কার করে বলছে,”পারলে না প্রলয়,যাকে ভালোবাসো তাকে পারলে না নিজের করতে।কাপুরুষের মতো অন্যের হাতে তুলে দিলে নিজ উদ্যোগে।
ভালোবাসার অপমান করলে তুমি।এখন কেনো হারানোর ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছো ক্ষণেক্ষণে?”
অবুঝ মনের সাথে তর্ক জুরে দিলো প্রলয়ের বিবেক। মনকে বললো,”তাকে ভালোবাসি বলেই তো তার সুখ চাই।আমি আর কয়দিন এই পৃথিবীতে?

যেকোনো সময় চলে যাবো,তখন আমার শবনম কে দেখবে কে বলো?
ও বেচারি আমাকে হারালে নিজেও মরে যেতো।আমার ভালোবাসা অন্যের কাছে ভালো থাকুক রে বোকা মন,তুমি বুঝবে না আমার হিসেব।আমি মনের কথা মতো চলি না।”
মন প্রলয়ের বিবেক কে আবার তিরস্কার করে বললো,”বিবেক!
কিসের বিবেক তোমার?
ভালোবাসা মানে কি জানো তুমি?
ভালোবাসা একটা ঝড়,একটা প্রলয়। তোমার নাম প্রলয় হতে পারে কিন্তু প্রলয়ের মতো করে তুমি পারো নি নিজের ভালোবাসা কে ছিনিয়ে নিতে।তোমার ভালোবাসার শবনম কে তুমি বলে দেখতে সে কি চায়।

ভালোবাসাহীন মানুষের সাথে তোমার ভালোবাসার মানুষ ১০০ বছর কাটানোর চাইতে তোমার সাথে ১০ দিন কাটাতে পারলে সুখি হতো।তুমি পাষণ্ড দুঃখীনি মেয়েটাকে আরো দুঃখ দিলে।”
নিজের মনের এরকম তিরস্কার প্রলয়ের সহ্য হলো না।একবার ভাবলো ছুটে যায় ছাদে।চিৎকার করে বলে,”যা করেছি সব ভুল,যা বলেছি সব ভুল।আমি শবনমকে ভালোবাসি,শবনম শুধু আমার।”
কিন্তু পারলো না প্রলয়। মাথাব্যথা এসে চেপে ধরলো প্রলয়কে।তীব্র মাথাব্যথা প্রলয় কে মনে করিয়ে দিলো,”তুমি দুদিনের অতিথি মাত্র,ব্রেইন ক্যান্সার তোমাকে সেই সুযোগ দিবে না।তোমার সময় আর বড়জোর ২৫ দিন বেঁধে দিয়েছে ডাক্তার।এই মুহুর্তে এসে কেনো একটা মেয়েকে আজীবনের জন্য কাঁদাবে তুমি?

তোমার ২৫ দিনের ভালোবাসা তো মেয়েটার বাকী জীবনের সঙ্গী হতে পারবে না।ও বেচারি তখন কি করবে।”
অযু করে এসে প্রলয় সিজদা তে লুটিয়ে পড়লো।সিজদা তে গিয়ে বারবার আল্লাহকে বলতে লাগলো,”আমার মন কে শান্ত করো প্রভু,আমাকে সাহস দাও,আমাকে শক্তি দাও।আমি যাতে ঈমানের সাথে বাকি দিনগুলো কাটাতে পারি।

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ১১

মুছে দাও আমার মন থেকে শবনমের চিন্তা।আমাকে তোমার ইবাদতে মশগুল করে দাও।”
প্রলয় চলে যাওয়ার পর শ্রাবণী চেয়ারে বসে একনজরে তাকিয়ে রইলো ভাই,ভাবীর দিকে।
শ্রাবণী মনে মনে ভাবছে,”আমার বোকা ভাই,তুই কখনো জানতে ও পারবি না প্রলয় ভাই তোর জন্য নিজের ভালোবাসা ও ত্যাগ করে গেছে।তোর জন্য ভাবীর মনে আল্লাহ ভালোবাসা দিক।অনেক অনেক ভালোবাসা দিক।যাতে কখনো তুই কষ্ট না পাস,ভালোবাসার অভাবে যাতে তোকে আমার মতো হায় হুতাশ করতে না হয়।”

কাঁদছে শ্রাবণী নিরবে।কিভাবে কি হয়ে গেলো।সব কেমন এক নিমিষে বদলে গেলো।সেদিন প্রলয় ভাইকে যখন শ্রাবণী জানালো সে তাকে ভালোবাসে প্রলয় ভাই জবাব দিয়েছিলো,তার পক্ষে ভালোবাসা সম্ভব না।ভালোবাসায় সে বিশ্বাস করে না।যদি করতো তবে শবনমকেই নিজ থেকে ভালোবাসি বলতো।
শ্রাবণী আকুল হয়ে কেঁদে বলেছিলো,সেই ছোটবেলা থেকে কি ভীষণ ভালোবাসে প্রলয় কে।
জবাবে প্রলয় বলেছিলো,সেই ছোটবেলা থেকেই শ্রাবণীকে প্রলয় বোন ভেবে এসেছে।বন্যা আপার মৃত্যুর পর শ্রাবণীর মাঝে বোনের ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছে।যদি আগে বুঝতো প্রলয়কে নিয়ে শ্রাবণীর মনের এরকম মনোভাব,তবে কিছুতেই শ্রাবণীদের বাসায় যেতো না।শ্রাবণীর মুখদর্শন ও করতো না জীবনে।

কি ভীষণ কষ্ট পেয়েছে সেদিন শ্রাবণী।গুমড়ে মরেছে নিজের মধ্যে নিজে কাউকে জানতে দেয় নি।
শ্রাবণীর এই গুটিয়ে যাওয়া শ্রাবণ লক্ষ করেছে।বারবার জিজ্ঞেস করেও ব্যর্থ হয়েছে জানতে।
অনেকদিন পার হয়ে গেছে।শ্রাবণী নিজেকে সামলে নিয়েছে ধীরে ধীরে,তবুও আজ প্রলয় কে দেখে শ্রাবণী ঠিক থাকতে পারে নি।প্রলয়ের সাথে ম্যাচিং করে ড্রেস পরার রিকুয়েস্ট করে।
বিনা প্রতিবাদে প্রলয় রাজি হয়।

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ১৩