আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ৪ || লিখা: জাহান আরা

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ৪
লিখা: জাহান আরা

রাহেলা বানু নাতনীদের স্কুলে নেয়ার রেডি হয়ে বের হয়ে এলেন,ড্রয়িং রুমে এসে অশ্রু,বিন্দু বলে ডাক দিতেই দুই বোন হুড়মুড় করে ছুটে এলো।নানীর হাতে স্কুল ব্যাগ দেখে একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগলো।তারপর আবার চিৎকার করে বললো,”আজ আমাদের স্কুল বন্ধ,আজ আমাদের আনন্দ নানী।”

“কে বললো স্কুল বন্ধ? ”
“শ্রাবণ মামা বলেছে আজকে বন্ধ,আমরা আজকে যাবো না।”
রাহেলা বানু হা করে তাকিয়ে রইলেন।দুই বোন তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আবার দৌড় লাগালো নিজেদের রুমের দিকে।
শ্রাবণ প্যান্ট শার্ট পড়ে,গায়ে বডি স্প্রে মেখে রুম থেকে বের হতেই রাহেলা বানুর মুখোমুখি হয়ে যায়।

“তুই নাকি বলেছিস আজকে স্কুল বন্ধ?”
গাল চুলকাতে চুলকাতে শ্রাবণ বলে,”আসলে হয়েছে কি খালা,আমি এরকম কিছু বলতে চাই নাই,কিন্তু কেমনে জানি আমার মুখ দিয়ে বের হইয়া গেছে।আমি অনেক চিন্তাভাবনা করেও ভেবে পাচ্ছি না কেমনে এই কথা বললাম আমি ওদের।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাহেলা বানু বললো,”শ্রাবইন্না,চাপা একটু কম মারিস বাপ,আর বলিস না মিথ্যা কথা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

একগাল হেসে শ্রাবণ খালার দিকে তাকায়।শ্রাবণ জানে হাসি দেখলে খালা আর কিছু বলতে পারবে না।
শ্রাবণের পকেটে ফোন বেজে উঠলো। স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে শ্রাবণীর নাম।রিসিভ করবে নাকি করবে না ভাবতে ভাবতে ফোন কেটে গেলো।শ্রাবণী শ্রাবণের ছোট বোন,ভীষণ জেদি মেয়ে,অসম্ভব মেধাবী ও বটে।

শ্রাবণের ভাবনাচিন্তার মধ্যেই আবারও ফোন দিলো শ্রাবণী।
ফোন রিসিভ করতেই শ্রাবণ শুনতে পেলো ওপাশ থেকে চিৎকার শোনা যাচ্ছে,নিরাপদ দূরত্ব রেখে ফোন কানের কাছে নিতেই শুনতে পেলো,”শ্রাবইন্নার বাইচ্চা,তিন কোনাইচ্চা,তুই আবারও আমার পার্স থেকে টাকা নিছস?
বুইড়া দামড়া পোলা,তোর শরম করে না?
তোর কি টাকার অভাব পড়ছে রে উল্লুক,এতো অভাব হইলে তুই তিন রাস্তার মোড়ে গিয়া বস বাটি নিয়া,ছ্যাচড়া কোনাহানের,এই তুই কেমনে টিচার হইছস বল তো আমারে,এখনো যে পোলা ছোট বোনের পার্সের টাকা চুরি করে সে আর স্টুডেন্ট কে কি শিক্ষা দেয় আল্লাহ জানে,তুই বাসায় আসিস আজকে,আব্বা তোর জন্য শলার ঝাড়ু রেডি রাখছে।”

শ্রাবণীর সব কথা শোনার পর শ্রাবণ একটা হাই তুললো তারপর গলা যথেষ্ট খাদে নামিয়ে বললো,”আমি এখন খালার বাসায় আছি বুঝলি ফ্যাচফ্যাচানি,খালা কইলো শুনলাম প্রলয়রে নাকি বিয়া করাইবো….”
প্রলয়ের নাম শুনতেই শ্রাবণী চুপসে গেলো।মিনমিন করে বললো,”প্রলয় ভাই….আমার কি তাতে?”
“তুই কি ভাবছস আমি বুঝি না কিছু,বইখাতা সব কিছুতে যে P+S লিখে রাখছস,তা কি এমনি এমনি?

যাই হোক,আমার কাছে একটা ডায়েরি ও আছে তোর,আমি ভাবছি আজকে বাড়ি গেলে সসম্মানে সেটা আম্মার হাতে তুলে দিবো,ধর বেলুন,মোমবাতি,তারাবাতি হাবিজাবি যা আছে তা দিয়ে বাসাটা সাজাইলাম,তারপর একটা অনুষ্ঠানের মতো করে ডায়েরিটা আম্মার হাতে তুলে দিলাম। আম্মা ডায়েরি মোড়ক উন্মোচন করবে,আমরা সবাই হাত তালি দিবো।আম্মার এক পাশে থাকবে বেত,অন্যপাশে থাকবে ডালঘুটনি।একপাতা করে আম্মা পড়বে,আমি হাত তালি দিবো।তোর কি হাল হবে তা আর না বলি,সাক্ষাতে সেটা বলা হবে।হাজার হোক আম্মা ঘরের কর্ত্রী।এরকম একটা ইমপোর্টেন্ট কাজ আম্মা অতি উৎসাহের সহিত করবে।

আর এতে হয়তো প্রলয়ের আমাদের বাসায় আসা যাওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে,যাকগা,আমার কি!
তোর টাকা দিয়ে দিবো আজকেই বাসায় এসে।”
শ্রাবণী ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো,”ভাই,ভাই,ভাই না আমার,তোর বিকাশ একাউন্ট আছে না,আমি এখনই আরো ১৫০০ টাকা পাঠাচ্ছি ভাইয়া,আমরা ভাইবোন,আমাদের প্রব্লেম আমরা সলভ করবো,আব্বা আম্মা কেনো আসবে এসবের মাঝে বল?”
শার্টের কলার উঁচু করতে করতে শ্রাবণ বললো,”তাইলে আরো ৫০০ লাগবে।”
“ঠিক আছে ভাইয়া দিচ্ছি।”
“সাথে বিকাশ চার্জ ও লাগবে।”

দাঁত কিড়মিড়িয়ে শ্রাবণী বলে উঠলো,”তাও দিবো রে মীরজাফর ভাই আমার,মনে রাখিস এই দিন তো দিন না,আরো দিন আছে,এই দিনরে লইয়া যাইবো সেই দিনের কাছে।”
শ্রাবণ কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে খটাস করে শ্রাবণী ফোন কেটে দিলো।শ্রাবণ বসে মুচকি হাসতে লাগলো।

খালার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শ্রাবণ চলে গেলো,ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে তার।যাবার আগে ভেবেছিলো একবার শবনমের কাছে যাবে কিন্তু লজ্জায় যেতে পারে নি।
শবনম কে অশ্রু বিন্দুর কাছে রেখে রাহেলা বানু মর্জিনাকে নিয়ে শপিংয়ে বের হলেন।
সোফায় বসে শবনম নখের শেইপ ঠিক করছে নেইল কাটার দিয়ে।
কলিং বেল বেজে উঠতেই শবনম গিয়ে দরজা খুলে দিলো।

গলায় মাফলার পেঁচিয়ে হাতে বক্স,পেঁটরা নিয়ে,টকটকে লাল পাঞ্জাবি পরা একটা ছেলে প্রবেশ করলো বাসায়।শবনম কিছুটা অবাক হলো এরকম বেশভূষা দেখে ছেলেটার।এই প্রচন্ড শীতেও ছেলেটা একটা পাঞ্জাবি পরে আছে,আর গলায় একটা মাফলার।মুখ ভর্তি দাড়ি-গোঁফ। মাথার চুল লম্বা হতে হতে ঘাড় বেয়ে নেমে গেছে।অনেকটা বনমানুষের মতো লাগছে ছেলেটাকে।
মনে মনে শংকিত হয়ে উঠলো শবনম,এই লোক কে?
বলা নেই,কওয়া নেই,হুট করে বাসায় ঢুকে গেলো।ঢুকলো তো ঢুকলো,একেবারে সোফায় বসে গেছে গিয়ে!

শহরে বদ লোকের অভাব নেই,কে জানে কি মতলব এই লোকের।
শবনম কিছু বলার আগে ছেলেটা বললো,”নতুন বুয়া না-কি?
যাও তো,কড়া লিকারের এক কাপ চা খাওয়াও আমাকে।আমি একটু আরাম করে বসি এখানে।”
লোকটার কথা শুনে শবনমের চক্ষু চড়কগাছ!
বলে কি লোকটা?
তাকে বুয়া বলছে!
আবার চা বানিয়ে খাওয়ানোর ফরমায়েস ও দিচ্ছে?

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ৩

রাগে শবনমের গা জ্বলতে লাগলো।কিন্তু কিচ্ছু না বলে কিচেনের দিকে গেলো।আর যাই হোক শবনম বুঝতে পেরেছে ছেলেটা এই বাসার কেউ অথবা এদের আত্মীয় কেউ।আদা দিয়ে চমৎকার এক কাপ চা বানিয়ে এনে শবনম টেবিলের উপর রাখলো।একটু জোরে শব্দ করেই পিরিচটা রাখলো।
প্রলয়ের হালকা চোখ লেগে এসেছে,ঠাস করে শব্দ শুনে চমকে উঠে সোফায় বসলো প্রলয়।তারপর শবনমের দিকে তাকিয়ে বললো,”ভেরি ব্যাড,নেক্সট টাইম এরকম করবে না আর।আমার ঘুমের সময় কোনো শব্দ না,পিনপতন নিরবতা চাই আমার।মা কী তোমাকে এসব আগে বলে দেয় নি?”
শবনমের ইচ্ছে করছে কাপের সবটুকু চা লোকটার গায়ে ঢেলে দিতে,দাঁত কামড়ে ধরে রাগ সামলায় শবনম।

চা’য়ে চুমুক দিয়ে প্রলয় শবনমের দিকে তাকায়।তারপর বলে,”চা ভালো হয়েছে।শুধুমাত্র এই কারণে তোমার আজকের ভুল ক্ষমা করে দিলাম আমি বুয়া।
রাগে শবনমের গাল,কান লাল হয়ে উঠলো। এই অপমানের প্রতিশোধ নিবেই নিবে শবনম।

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ৫