বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ২৬ || Writer Nondini Nila

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ২৬
Writer Nondini Nila

এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে যে আমি শ্বাস নিতে পারছি না। জরোসরো হয়ে ভাইয়া বুকে নিজের নাক ঠেকিয়ে আছি। শরীর একটু ও ধরাতে পারছি না কি শক্ত করে ধরেছে।
হঠাৎ পায়ের শব্দ শুনে ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
আমি ছাড়া পেয়ে যেন বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলাম। উফ আর একটু হলে নিশ্চিত দম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম। আব্বু আম্মু এসেছে। ভাইয়া তাদের সাথে কথা বলছে সহজ ভাবে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
রাতে আর ওইবাসায় থাকলাম না চলে এলাম সবাই।
পরদিন কলেজে থেকে এসেই ভাইয়া দের বাসায় চলে এলাম। সাজানো হয়েছে বাসা দরজার কাছে এসেই ভাইয়ার উপর নজর পরলো ভাইয়া কাজ পরছে। ঘেমে একাকার হয়ে গেছে আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
তারপর আমি সোজা ভাইয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

“কি হয়েছে সামনে এসে দাড়ালি কেন? দেখতে পাচ্ছিস না আমি কাজ করছি।”
আমি চোখ ছোট করে বললাম,,
“আমি কি বলেছি তুমি কাজ করছো না? আর আমি কানা না যে দেখতে পাব না।”
“তাও ভালো এমন ভাবে আসছিলি কানাই ভাবছিলাম।”
গাল ফুলিয়ে বল্লাম, কি বললে?
ভাইয়া বলল, কানা না বুঝলাম বয়রা কড়ে থেকে হলি।”
“ঝগড়া করছো কেন? গার্লফ্রেন্ড এর সাথে কেউ ঝগড়া করে বুঝি।”
অভিমানী হয়ে।
“আচ্ছা ঝগড়া করে না তো কি করে।”
“সুন্দর করে কথা বলতে হয়।
“আমার কথা তোর সুন্দর না লাগলে আমি কি করবো।”
“তুমি সুন্দর করে বললে কোথায় খালি তো খোঁচা মারলো? আমাকে ইনসাল্ট করলা।”
“তো তুই কি চাইছিল আমার কাছে।”
বলেই ভাইয়া আমার কোমর জড়িয়ে ধরলো। আমি বড় বড় চোখ করে ফেললাম,
“কি করছো?”
বলেই এদিক ওদিক তাকাতে থাকলাম। তাও ভালো এখানে কেউ নাই।
তুই তো এসব‌ই চাস। বলেই আমাকে একদম নিজের কাছে নিয়ে ডান হাত উঁচু করে কপালে থেকে চুল সরিয়ে কানে গুঁজে দিল। আমি ভাইয়ার স্পর্শ পেয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি বুকের ভেতর হাতুড়িপেটা হচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে ভাইয়া কাছে আসলি ইদানিং আমার সাথে ঘটছে এইসব। ভাইয়া আমার একদম মুখের কাছে এসে তারপর বলল,,

আরও গল্প পড়তে ভিজিট করুন

“ইদানিং তুই আমাকে একটু ও ভয় পাচ্ছিস না খুব ভার বেড়েছিস।আর এই অসভ্যতামি করার জন্য আমার কাছে ঘেষলে চরিয়ে দাঁত ফেলে দেব।”
আমি হাঁ করে ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম ভাইয়ের স্পর্শে আমার সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে যাচ্ছি মনে হয়। তখনই হুট করে ভাইয়া আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিজে থেকে সরিয়ে দিল।
ভাইয়া আবার ধমক দিয়ে বলল,, কি হলো যা এখান থেকে।
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে বললাম,,” গরিলা একটা এইভাবে আমার সুন্দর মুহূর্তটাকে নষ্ট করে দিল।”
ভাইয়াকে চোখ পাকাতে পাকাতে আমি পেছাতে লাগলাম তখনই কারো সাথে ধাক্কা খেলাম জোরে। পেছনে তাকিয়ে চমকে উঠলাম তিথি দাঁড়িয়ে আছে।
আমাকে দেখে একটা মুখ বিকৃতি অবস্থা করে আবার তাতে হাসি ফোটালো। আমি ব্রু কুঁচকে একবার তিথি দিকে তাকিয়ে ভাইয়া দিকে তাকালাম।
“হাই দোলা, কেমন আছো?
আমি ছোট ছোট করে দিয়েছি দিকে তাকিয়ে আছি।
“আরে দোলা কথা বলছো না কেন ?আমার সাথে কথা বলবা না নাকি? এখনো মাইন্ড করে আছো?
“মাইন্ড কেন করবো আপনি না ওই দিন কলেজ এসে সরি বললেন?
আমার কথা শুনে তিথি মুখে ভয়ের আবাস দেখতে পেলাম তারপর হেসে বলল,,
“ও হ্যাঁ আমার তো মনে ছিলো না দোলা কি মন ভুলা আমি।”
ও।

আদনান ভাই এগিয়ে এসে বলল,
“তুই দোলার কলেজে গেছিলি?
শক্ত মুখ করেই বললো আদনান ভাই।
ভয়াত মুখ করে বলল তিথি,, “ওই হ্যাঁ গেছিলাম আসলে ওই দিক দিয়ে চাচ্ছিলাম তাই আর কি?
“ওই দিক দিয়ে তুই কোথায় যাচ্ছিলে?
“ওই একটা দরকারে চাচ্ছিলাম এখনও মনে পড়ছে না আমিতো ওইটাই ভুলে গেছিলাম।”
ভাইয়ের সন্দেহের চোখে তিথি দিকে তাকিয়ে আছে তিথি হেসে হেসে কথা বলছে সাথে ভয় ও মুখে।
আমি চলে এলাম দুজনকে একা ছেড়ে দিয়ে তিথি আবার এই বাড়িতে কি করছে? ভাইয়া কি আবার নিয়ে এসেছে ওকে।
মন খারাপ করে মামনি কাছে এসে দাঁড়ালাম। তিথি টাকে আমার একদম সহ্য হচ্ছে না। মেয়েটা আদনান ভাইয়ের গায়ে পড়া পড়া ভাব। ভাইয়া তো আমাকে ভালোবাসে তবুও মেয়েটার ভাব ভঙ্গি ভালো লাগেনা।
মামনি আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি মন খারাপ করে আছো কেন?
আমি কিছু বললাম না।
চলে এলাম ভালো লাগছে না। হঠাৎ কে যেন আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। ভালো করে তাকিয়ে দেখি আদনান ভাই। ভাই আমাকে সোজা নিজের রুমে নিয়ে এসে দরজা আটকে দিল।
আমি মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছি।
‘কি হয়েছে মুখটা এমন বাংলার পাঁচের মতো করেছিস কেন?”
আমি চুপ করে ভাইয়া কে জরিয়ে ধরলাম শক্ত করে।ভাইয়া চমকে উঠলো,,
‘আবার শুরু করলি।

ছারাতে চেয়ে। আমি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম।
“হুম করলাম। আর করবোই আমার মা ইচ্ছে তাই করবো তুমি মানা করতে পারবে না।”
‘ওরে বাবা তাই এতো অধিকার।”
“হুম অনেক। তুমি ওই তিথি ফিতি কে এনেছো কেন”
এনেছি‌ তো কি হয়েছে?
কেন আনবে ওকে আমার একটু ও ভালো লাগে না।
তোর না ভালো লাগুক আমার তো লাগে।
কথাটা শুনেই আমার চোখ জ্বলে উঠলো আমি ভাইয়াকে ছেড়ে শার্টের কলার শক্ত করে ধরলাম।
“কি বললে তোমার ভালো লাগে।”
নাক ফুলিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে।
“আরে কি করছিস কলার ছার!”
হতদম্ব হয়ে ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
“ছারবো না কি করবে ধমকাবে ধমকাও। কিন্তু ছারবো না তুমি ওই মেয়েকে ভালো লাগে বললে কেন? তোমার শুধু আমাকে ভালো লাগবে আর কাউকে না।”
বলেই ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি ভাই আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।আমি ভাইয়ার নিরব নেশাতুর চোখের দিকে তাকিয়ে শার্টের কলার ছেড়ে দিলাম।

দূরে সরে দাঁড়াতে গেলাম পারলাম না ভাইয়া আমার কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। আমি থমকে গেলাম ভাইয়া আমাকে একদম কাছে নিয়ে নেশা নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে র‌ইলো আমার মুখের দিকে আমি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে ভাইয়া নিজের মুখ আমার দিকে এগিয়ে আনছে আমি ভোট গিলছি ভাইয়ার প্রতিটা নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে।
ভাইয়া নিজের কপাল আমার কপালের সাথে ঢেকিয়ে দিলো আমি সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি চোখ খুলে রাখতে পারছি না। ভাইয়া এবার নরম কন্ঠ বলতে লাগলো,,
“তুই আমাকে এতো ভালোবাসিস দোলা রানী। আমি বিশ্বাস করতে পারছি আমার এসব সপ্ন লাগছে যেন আমি একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখছি যেখানে আমার দোলার রানী আমাকে পাগলের মত ভালবাসে। জোর করে আমাকে ভালোবাসে যেটা আমি দশ বছর ধরে একা বেসে আসছি।না প্রকাশ করতে পারছি না সইতে পারছি দুকেদুকে ভালোবাসাটা নিজের মাঝে লুকিয়ে রেখেছি।আর মনে মনে সব সময় চেয়েছি আমার দোলা রানী আমি যেন আমাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে। কারো সাথে যেন সহ্য করতে না পারে যেমন টা আমিও পারিনা।আজ কয়েকদিন ধরে আমি তার পাগলামো ভালোবাসা দেখছি আর ভাবছি এটা কি সত্যি মনের অনুভূতি ভালোবাসা নাকি শুধুই তার পাগলামো। যা আবার সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যাবে আমার ভয় হয়

দোলা রাণী এমন হবে না তো।তুই আমাকে সত্যিই ভালবাসিস তো আবার অস্বীকার করবি নাতো।”
আমি ভাইয়ের কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছি।
“কখনো না ভাই‌য়া।”
ভাই বলল,,এতো ভালো কবে থেকে বাসা শুরু করলি।
সে তো অনেক দিন। কিন্তু বলার সাহস পায়নি যদি বকো তাই।
কতো দিন।
দু বছর।
বলিস কি এতো দিন।
হুম কিন্তু তোমার থেকে কম।ভাইয়া তুমি লুকালে কি করে বলো? আমি একটু ও বুঝতে পারি না তাহলে এতো দিন লুকাতাম না আগেই বলে দিতাম
আমি আরো কতো কি ভাবতাম।
কি ভাবতি?
অনেক কিছু তুমি আমকে মারবে বকবে এসব ভেবেই তো বলবো না ভেবেছিলাম কিন্তু আমার ফ্রেন্ড রা বলল তুমি নাকি আমাকে ভালোবাস।
ওরা বুঝলো কি করে?
তা তো জানি।

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ২৫

তা জানবি কি করে? খালি জানো আকাম করতে।
হুম তাইতো জানতে পারলাম আমার গরিলা ভাইটা আমাকে কতো ভালোবাসে।
বলেই ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম।
আরে কি করছিস ছার।
না ছারবো না। এতো ছার ছার করো কেন ধরো ধরো করতে পারো না আনরোমান্টিক একটা।
ভাইয়াও আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,
“কি বললি আমি আনরোমান্টিক একবার বিয়ে হতে দে দেখিয়ে দেব।”
এখন দেখাও।
মাথা উঁচু করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম।ভাইয়া আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল।
হ্যাত আমি হারাম কাজ করি না।

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ২৭