বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ২৭ || Writer Nondini Nila

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ২৭
Writer Nondini Nila

মুচকি মুচকি হাসছি সোফায় বসে। খুশিতে আমার হাত পা তুলে নাচতে ইচ্ছে করছে। ফাইনালি ভাইয়া ভাইয়া ভালোবাসি স্বীকার করলো।ও গড এতো খুশি আমি রাখবো কোথায?
ভাইয়া কোন এক কাজে বাসার বাইরে গেছে তখন থেকে আমি এখানে বসে মুচকি মুচকি হাসছি।
এদিকে তিথি আমাকে ভাইয়ার সাথে ভাইয়ার রুমে যেতে দেখেছিল। ও রাগে গজগজ করতে করতে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। এখন দুতালায় দাঁড়িয়ে আমার দিকে আছে। আমার তো আর সেদিকে খেয়াল নেই।
তিথি রেগে তাকিয়ে আছে ওর মন চাইছে দোলা কে খুন করে ফেলতে নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে অন্য কাউকে দেখা কতো কষ্ট এর ও জানে।
এই সব কিছুর জন্য দায়ী ওই দোলা ওর জন্য আদনান আমাকে বার বার না করেছে।

ওকে আমার ছারবো না ভাইয়ার ভরসা করলে কিছু হবে না যা করার আমি করবো।
রাগে গজগজ করতে করতে দোলার পাশে এসে বসলো।
আমি ভাইয়ার কথা ভাবছিলাম তখন মনে হলো কেউ আমার পাশে বসেছে তাকিয়ে দেখি তিথি রেগে তাকিয়ে আছে।আমি রাগ দেখে ভয় পেয়ে গেলাম।
মাথা সোজা করে উনার দিকে তাকালাম,
“আপনার কি হয়েছে এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন?”
আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে বললাম,
আমার কথা শুনেই মুখে হাসি ফুটিয়ে তুললো। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি।
“কি করছো দোলা? আর তোমাকে এতো খুশি পাস দেখাচ্ছে যে?”
মুখে হাসি নিয়ে বললো কিন্তু তার এই হাসিটা আমার একদম‌ই সত্যি লাগছে না মনে হচ্ছে দেখানে একটা মেকি হাসি।
তবুও কিছু বললাম না,,
“বসে আছি দেখতে পারছো না।”
“হুম তা দেখছি। আচ্ছা তুমি এখন ও আমার সাথে রেগে আছো?”
আমি বললাম, ” না তো রেগে কেন থাকবো?”
“রেগে নাই তাহলে কথা বলতে এতো সংকোচ করো কেন?”
“ওই আপনাকে ভালো করে চিনি না তো তাই।”
“চেনো চিনি নাও। আমি তো তোমার আপুর মতো তাই না।”
আমি বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছি তাও বললাম,
“হুম। আচ্ছা আমি আসি আপনি থাকেন?”

আরও গল্প পড়তে ভিজিট করুন

বলেই উঠে দাঁড়ালাম।তিথির দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে গটগট করে চলে এলাম। বাসায় এসে থপ করে বিছানায় শুইয়ে পরলাম।
নেহা ইলমা সুমাইয়া সবাই কে কনফারেন্স এ কল করলাম তারপর সব বলে দিলাম।সব শুনে তো ওরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল।কথা শেষ হতেই আমি আজকে কোন ড্রেস পরবো সেটা দেখতে লাগলাম।
আলমারী থেকে সব ড্রেস বের করে সব আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছি কোন টা পরবো। একটা দেখছি আর ফেলে আরেকটা সব ড্রেস সুন্দর কিন্তু আমার ভালো লাগছে না মনে হচ্ছে আরো সুন্দর দরকার। আজকে ভাইয়া আমাকে ভালোবাসি বলেছে আজকে আমার ভাইয়ার মন মতো সাজা উচিত।
ড্রেস বিছানায় রেখে চুপ করে বসে আছি গালে হাত দিয়ে।
বিকেলে ভাইয়া আমার জন্য ড্রেস পাঠালো। রুমে এসে প্যাকেট খুলে চমকে উঠলাম অনেক সুন্দর ড্রেস। কালো গাউন।ভাইয়ার পছন্দ আছে বলতে হয় আমার খুব পছন্দ হয়েছে আমি ওই ড্রেসটাই পরলাম।
পছন্দ না হলেও আমি এইটাই পরতাম কারণ ভাইয়া দিয়েছে। সন্ধ্যার পর রেডি হয়ে আসলাম এই বাসায় লোকজন এর অভাব নাই।
এতো মানুষ দেখে কিছু টা নার্ভাস ফিল হচ্ছে আব্বু আম্মু পেছনে আছি আমি।তারা চলেই গেছে আমি ভাইয়াকে খুঁজছি চারপাশে। এমন সময় তিথি আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।

তিথির দিকে তাকিয়ে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। তিথির দিকে তাকিয়ে আশেপাশে তাকালাম সব ছেলেরা হুমকি খেয়ে পরছে ওর উপর। আর পরবেই না কেন পরছে কি অসভ্য ড্রেস ছিঃ আমার তাকিয়ে লজ্জা লাগছে।
তিথি লাল টকটকে গাউন পরেছে হাতা কাটা। গলার দিকে বেশি নামানো, আবার এদিকে হাঁটু উপর পর্যন্ত শুধু পেট ঢাকা। ঠোঁটে লাল টকটকে লিপস্টিক দিয়েছে চুল ফুলিয়ে উপরে খোঁপা করা কি বাজে লাগছে আমি নাক ছিটকে তাকিয়ে আছি।আর ছেলেরা চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।
তিথি এসবে মজা পাচ্ছে মনে হচ্ছে সবার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে আমাকে বলল,
‘হাই দোলা লেট করে এলে দেখছি।”
‘হুম আমার রেডি হতে সময় লেগেছে।”
“পার্লারে যাও নাই।”
‘না।”
“ও এজন্যই তোমাকে ভালো লাগছে না।আর চুল ছারছো কেন? কেমন জানি লাগছে ঠোটেও লিপস্টিক দাও নাই। কিন্তু ড্রেসটা সুন্দর এটা তোমার থেকে আমাকে বেশি মানাতো।”
ভাব নিয়ে বলল।

তিথি রীতিমতো আমাকে অপমান করছে তাও কিছু বলছি না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। চোখে আমার জল চিকচিক করছে সত্যি কি আমাকে খারাপ লাগছে। ভাইয়া তো বেশি সাজ পছন্দ করে না আর চুল খোলা রাখাটাই ভাইয়া পছন্দ করে এজন্য তো আমি এভাবে এসেছি।
” আচ্ছা মন খারাপ করো না নেক্সট আমি তোমাকে শিখিয়ে দেব কিভাবে সাজ গোজ করতে হয়।তুমি তো বাচ্চা পারবে কি করে দেখ সবাই আমার দিকে কি ভাবে তাকিয়ে আছে আর তোমার দিকে কেউ তাকাচ্ছে না।”
বলেই আশেপাশে তাকালো।
আমি সবার দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে তখন কোথা থেকে ভাইয়া চলে এলো। আর আমার পাশে দাঁড়িয়ে এক হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো,,
ভাইয়ার জরিয়ে ধরাতে আমি চমকে তাকালাম, ভাইয়া আমার দিকে না তাকিয়ে তিথির দিকে নিজের দৃষ্টি রেখে বলল,

“তোর মতো নিজের শরীরের অংশ অন্যকে দেখিয়ে নিজের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে না আমার দোলা। তাই নিজের সাথে দোলাকে মিলাতে আসবি না। আর কি বলেছিলি সবাই তোকে খেয়াল করছে এটা ভুল সবাই তোকে না তোর শরীর খেয়াল করছে। যে ড্রেস পরেছিস এটা পরার থেকে না পরা বেটার ছিলো আর এসব বাজে পোশাক সাজগোজ আমাদের বাড়ির মেয়েরা করে না।”
বলেই আমার দিকে তাকালো আমার গভীর ভাবে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।আমার চোখে এখনো পানি আছে ভাইয়া বাম হাত বাড়িয়ে আমার চোখের জল মুছে দিলো।
আর বল্ল,,
” ইডিয়ট ওর কথায় কাঁদছিলি। একটু তেই এতো কাদিস কেন বলতো।”
তিথি রেগে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।তারার কটমট করে বলল,,
” তুই আমাকে এভাবে অপমান করতে পারলি এই মেয়েটার সামনে।”
ফুঁসে উঠলো।

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ২৬

“এই মেয়ে না দোলা বলবি।চাইলে ভাবিও বলতে পারিস।”
তিথি রেগে ফুসফুস করতে করতে চলে গেল আমাদের সামনে থেকে।
আমি ভাইয়ার দিকে অভিমানী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
‘ভাই আমাকে সত্যিই কী বাজে লাগছে দেখতে?”
ভাইয়া আমাকে ছেড়ে হাতের বাহু শক্ত করে ধরে এক সাইটে নিয়ে এলো।
তারপর আমার কোমর শক্ত ধরে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল,
‘দাঁড়া ভালো করে দেখে বলি।”
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
” আমাকে দেখতে বাজে লাগছে তাই না। তিথি আপু ঠিকই বলছি।”
মন খারাপ করে। ভাইয়া আমার দিকে এক দিকে তাকিয়ে আছে কি বলছে না?
আমার ভ্রু কুঁচকে বললাম,
” কি হলো কথা বলছো না কেন?”
ভাইয়া চোখের পলক ও ফেলছে না।
ভাইয়া নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
“দোলা রানী তুই আজ আমার মন মতো সেজেছিস আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না।”
‘কেন বিশ্বাস না করার কি আছে? ”
ভাইয়া আমার চুল কানে গুঁজে দিয়ে আদুরে গলায় বলল,
“ভালোবাসি দোলা রানী।”
আমি ভাইয়া মুখে ভালোবাসি দোলা রানী শুনে স্তব্ধ হয়ে হয়ে তাকিয়ে আছি।কথাটা আমার কানে বাজছে শরীর কাঁপছে আমার ভাইয়ার এতো আবেগ মাখা কন্ঠ শুনে আমি খুশি বাকবাকুম হয়ে গেলাম।

খুশির ঠেলায় ভাইয়ার গালে চুমু একে দিলাম।আমি চুমু দিয়ে নিজেই বোকা বনে গেলাম অতি আনন্দে কি করে ফেললাম লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম। ভাইয়া স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি কোমরে রাখা হাত আলগা হয়ে গেছে। আমার এমনটা হয়তো আশা করে নি।
আমি লজ্জা মাথা নিচু করে আছি একবার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দৌড়ে চলে এলাম ছিঃ কি করে ফেললাম এখন ভাইয়ার সামনে যাব কি করে?

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ২৮