Happily Married last part || Writer: Shaanj Nahar Sanjida

Happily Married last part 
Writer: Shaanj Nahar Sanjida

দেখতে দেখতে তিন মাস হয়ে গেলো আমার আর আলিফের বিয়ের।হাসি খুশিতে কাটলো আমার এই তিন মাস।বাবা মায়ের সম্পর্কও খুব ভালো গতিতেই এগুচ্ছে।মা আমার সাথেও ভাব করার চেষ্টা করছে।আমি আমার যথা সম্ভব চেষ্টা করছি কিন্তু এতো বছরের জমে থাকা অভিমান ভাঙ্গা আমার পক্ষে একটু কঠিন।তবে সময় সব ঠিক করে দেবে এইটাই আমার মনে হয়।ভার্সিটিতেও আমার পড়াশুনা ভালো চলছে।এখন আর আলিফ আমাকে পড়ায় না আমি নিজে থেকেই পরি।আলিফ সত্যিই অনেক কেয়ারিং হাসব্যান্ড।আমার বা এই পরিবারের অনেক খেয়াল রাখে ও।সেদিন বৃষ্টিতে আমার কাছ থেকে ও প্রথম একটা জিনিস চেয়েছিল আর সেটা ছিলো আমি যেনো ওকে তুমি করে বলি।ভাবা যায়?আমার আর ওর মধ্যে এখনও কোনো শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়নি।তবে এ নিয়ে আলিফ কোনো দিন আমাকে কোনো কথা বলেনি।উল্টো যদি আমি ওকে কিছু বলি ও আমাকে বলে সারাজীবন নাকি পরে আছে আমাদের। ও কোনো প্রকার জোর করবে না। তবে তা শুধু এই ছয় মাস পরে নাকি আমি চাইলেও উনি আমাকে নিজে থেকে দূরে রাখবে না।ভাবা যায় মানুষটা কেমন?

এখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল।আমি পড়ার টেবিলে বসে বসে আমার গত তিন মাসের কথা ভাবছি।
তখনই মামনি আমাকে ডেকে পাঠালো।আমিও তার কথা শুনে নিচে নেমে আসলাম।
মামনি আমাকে ডেকেছো?(আমি রান্না ঘরে গিয়ে)
হুম মা।সরি তোমার পড়ার সময় ডাক দিলাম।(আলেয়া বেগম)
না,মা।সমস্যা নেই।তুমি বলো তোমার কি সাহায্য লাগবে?(আমি)
একটু সবজি গুলো কাটতে হবে।আমি রান্না বসিয়ে দিয়েছি কিন্তু সবজি কাটাই হয়নি।(আলেয়া বেগম)
আচ্ছা।দাও আমি কেটে দেই।
বলেই আমি সবজি কাটতে লাগলাম।
মা। আলিশাকে দেখছি না?(আমি)
ওর কথা আর বলো না। ও যে সেই কলেজে থেকে এসেছে।এসেই রুমএর দরজা বন্ধ করে বসে আছে।আমি অনেক বার ডাক দিয়েছি।খুলেনি।বলেছে ওর সামনে HSC এক্সাম ওকে পড়তে হবে।(আলেয়া বেগম)
হুম।হতে পারে।সামনেই তো পরীক্ষা।তাই মনোযোগ দিয়ে পড়ছে হয়তো।(আমি)
তাই বলে খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে?(আলেয়া বেগম)
থাক।রাতের খাবারের সময় ডাক দেবো।(আমি)
হুম।(আলেয়া বেগম)

রাতের খাবারের সময়
আম্মু, আলিশা কোথায় ও খাবে না?(আলিফ)
আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করছিলাম।খাবে না বলেছে।(আমি)
এই মেয়ের আবার কি হলো?(রামিম সাহেব)
বলছে পড়তে বসেছে।(আলেয়া বেগম)
তাই বলে খাবে না?(রামিম সাহেব ভ্রু কুঁচকে)
আমি তো তাই বলছিলাম!(আলেয়া বেগম হতাশ হয়ে)
চিন্তা করো না আম্মু। ক্ষুদা লাগলে এমনি খাবে!(আলিফ)
সবাই আর কিছু বললো না।চুপচাপ খেয়ে নিলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমাদের রুমে
আলিফ।কিছু হয়েছে তোমার?অনেকক্ষন থেকে লক্ষ্য করছি তুমি বার বার চোখের পলক ফেলছো?(আমি ভ্রু কুঁচকে)
না আসলে আজকে অফিসে একটু বেশিই কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেছিলাম।তাই মাথাটা একটু ব্যাথা করছে।(আলিফ মাথায় হাত দিয়ে)
অনেক কাজ করতে হয় তাই না?(আমি)
তুমি চিন্তা করো না।ঔষুধ খেয়ে ফেলেছি।ঠিক হয়ে যাবে।(আলিফ মুচকি হেসে)
এদিকে এসো।
বলেই আলিফকে টেনে বিছানার কাছে এনে ওর মাথা আমার কোলে দিয়ে দিলাম।আর সাথে হাতে তেল নিলাম।
কি করছো?(আলিফ আমার কোলে শুয়ে)
আমার বরটাকে একটু আরাম আয়েশ দিচ্ছি।তুমি আমার কোলে মাথা দাও।আমি তোমার চুলে আস্তে আস্তে তেল দিয়ে চুল গুলো টেনে দেই।মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে তুমি ঠিক ঘুমিয়ে যাবে।(আমি)
কিন্তু তোমার তো কষ্ট হবে।(আলিফ)
আমার কষ্টের কথা তোমার চিন্তা করতে হবে না।এখন চুপ করো তো।
বলেই আমি আলিফের মাথায় তেল দিয়ে চুল গুলো আস্তে আস্তে টেনে মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম।

আলিফ চোখ বন্ধ করে বললো
আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না,হিয়া!
কি বিশ্বাস হচ্ছে না?(আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
তুমি আমার এতো যত্ন নিচ্ছ!তুমি তো সব সময়ই বলতে তুমি কোনোদিন কারো কেয়ার করো না।কিন্তু আজ আমার এভাবে যত্ন নিচ্ছ।সত্যিই বলতে আমার খুব ভালো লাগছে,হিয়া।তুমি আমার যত্ন নিচ্ছ বলে।(আলিফ)
বিয়ের দিন বাবা আমাকে বলেছিল।আমি মালিক হবো নাকি রানী।উনি বলেছিলো রানীরা নাকি নিজের জন্য না পরিবারের জন্য বাঁচে,পরিবারের খেয়াল রাখে,এইরকম আরো অনেক বলেছিলো।কিন্তু আমি সেদিন বলেছিলাম আমি রানী না মালিক হাওয়া পছন্দ করবো।কোনো দিন কারো কেয়ার আমি করিনি আর করবোও না।কিন্তু নিজের অজান্তেই,,,
কথাটা শেষ না করতেই আলিফ মাঝ পথে বলে মনে,,
কিন্তু নিজের অজান্তেই কখন যে এই বাড়ির রানী হয়ে গেছো খেয়ালই নেই,তাই না?(আলিফ চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে)
আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম।
আলিফ মুচকি হেসে আমার পেটের দিকে মুখ ঘুরিয়ে আমাকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইল।আমিও আপন মনে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম।

সকালে,,
আলিফ,,(আমি চিৎকার দিয়ে)
আলিফ চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বললো,,
কি হলো হিয়া?চিৎকার চেঁচামেচি করছো কেনো?
তুমি আবারও আমার পা বেঁধে রেখেছো?(আমি রেগে)
কি করবো?তুমি তো ফুটবল খেলো!(আলিফ)
এই নিয়ে এই সপ্তাহে তুমি চারবার আপনার পা বেঁধে রেখেছো।(আমি রেগে)
ওয়াও।খুব ভালো হিসেব রাখো তো দেখছি।(আলিফ ভ্রু কুঁচকে)
তোমার মত মানুষের সাথে হলে হিসেব রাখতেই হয়।এখন তোমারও অভ্যাস করতে হবে!(আমি)
আমি চাই তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর অভ্যাস করতে।তুমিই তো দাও না।(আলিফ বাচ্চাদের মত ঠোঁট ফুলিয়ে)
হয়েছে তোমার। যাও গিয়ে ফ্রেশ হও।আজকে আমার শেষ এক্সাম ভুলে গেছো?(আমি)
ও শিট।তাহলে তুমি আগে ওয়াশরুমে যাও।পড়ে আমি যাবো।(আলিফ আমাকে তাড়া দিয়ে)
আচ্ছা।যাচ্ছি।
বলেই আমি মুচকি হেসে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।

ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আলিফ বললো,,
আমি ফ্রেশ হয়ে আসতে আসতে সব কিছু রিভিশন দাও।আমি ধরবো।(আলিফ)
ঠিক আছে।এতো তাড়া দিও না তো।(আমি আলিফকে ঠেলে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে)
পরেই আমি আর আলিফ তৈরি হয়ে সবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে বের হলাম।

দুপুরের পর
রামিম সাহেব হন্তদন্ত হয়ে আলিফের রুমে ঢুকলো।
আলিফ চলো বাসায় যেতে হবে?(রামিম সাহেব)
কেনো বাবা?কিছু হয়েছে!(আলিফ চিন্তিত হয়ে)
চিন্তার কিছু না। গেলেই দেখতে পারবে।
বলেই রামিম সাহেব আলিফকে টেনে তুললো।আর সাথে নিয়েই যেতে শুরু করলো।

চৌধুরী বাড়িতে
আলিফ গিয়েই দেখলো সোফায় আলেয়া বেগম আর রিয়া বেগম বসে আছে তাদের মাঝখানে হিয়া বসে বসে আপেল খাচ্ছে।আর মুচকি মুচকি হাসছে। তা দেখেই আলিফ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো
কি হয়েছে?
আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোদের বৌভাত করতে?আর হিয়া মাও এতে শায় দিয়েছে।(রামিম সাহেব)
কি? কিন্তু বৌভাত তো ছয় মাস পরে করার কথা ছিল?(আলিফ অবাক হয়ে)
যে বৌভাত ছয় মাস পরে করার কথা বলেছে সেই বলেছে এখনই বৌভাত করতে।(মাঝখান থেকে আলিশা বলে উঠলো)
কিহ?(আলিফ আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে)
সারপ্রাইজ।(আমি এক গাল হেসে)
কিন্তু তোমার পরীক্ষা?(আলিফ)

ভুলে গেছো?আজকে আমার শেষ পরীক্ষা ছিলো!(আমি নাক ফুলিয়ে)
ও আচ্ছা।আমি তো ভুলেই গেছিলাম। তা তোমরা যখন এইটাই চাও তাহলে করো।(আলিফ মাথা চুলকাতে চুলকাতে)
তারমানে তুই চাস না ভাই?বাবা,মা,আংকেল,আন্টি বৌভাত করতে হবে না।উনি তো চায় না বৌভাত।তাহলে আর কি করার?তোমাদের কষ্ট করে করতে হবে না!(আলিশা মজা নিয়ে)
এই পাকা মেয়ে তোর না পরীক্ষা!কালকে না খেয়ে পড়তে বসে ছিলে এখন তা হাওয়া হয়ে গেছে যা পড়তে বস।(আলিফ আলিশাকে ধমক দিয়ে)
ভাবী কিছু বলো!(আলিশা আমার পেছনে লুকিয়ে)
আহা ছাড়ো না।বৌভাত করবে না?ওইটার প্রস্তুতি নাও।(আমি)
হুম।
বলেই আলিফ আবার মাথা চুলকাতে চুলকাতে শুরু করলো।

বৌভাতের দিন
আমি আজকে নিজে থেকেই সেজেছি।পিউ আপুর পার্লারের লোক গুলো আজ শান্তি মতো আমাকে সাজাতে পেরেছে।প্রথমে তো তারা আসতেই চাইনি।যখন শুনেছে আমাকে সাজাতে হবে।পড়ে তাদের অনেক বুঝিয়ে আনানো হয়েছে।আমি সেজে রুমে বসে আছি তখনই পিয়া রুমে ঢুকলো।
ও হিয়া!তোকে খুব সুন্দর লাগছে একদম পরির মত।(পিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে)
থ্যাঙ্ক ইউ। তোকেও খুব সুন্দর লাগছে।পিয়াস ভাইয়া তোকে দেখে একদম ফিদা হয়ে যাবে।(আমি পিয়ার গাল টেনে)
হিয়া,আমি আর তোর পিয়াস ভাইয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিয়ে করবো?(পিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে)
আলহমদুলিল্লাহ।এইটা তো খুব ভালো খবর।আমি তোর জন্য অনেক খুশি।
বলেই আমি পিয়াকে জড়িয়ে ধরলাম।
কিছুক্ষণ পর আলিশা আসলো,,
ভাবী তোমাকে নিচে যেতে বলছে।
চলো।
বলেই আমি,পিয়া আর আলিশা নিচে নামলাম।

নিচে নামতেই দেখলাম
আলিফ গোল্ডেন কালার এর শেরওয়ানি পড়েছে।কোনো রাজকুমার থেকে কম না লাগছে না তাকে।
অন্যদিকে
আলিফ হা করে হিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।হিয়া গোল্ডেন কালার লেহেঙ্গা পড়েছে।যা ওর মা বানিয়ে দিয়েছে।খুবই হালকা সাজ দিয়েছে।মাথায় বেলী ফুল দিয়ে চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছি।ওকে কোনো এক অপ্সরী লাগছে।
এইভাবে হা করে থাকলে লোকে খারাপ বলবে আলিফ রায়হান ভাই।(পিয়াস ভাইয়া টিটকারি মেরে)
আলিফ নিজেকে সংযু্ত করে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।আমিও ওর হাত ধরে স্টেজে উঠলাম।
স্টেজে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখলাম।সবাই সবার রঙের রঞ্জিত।মা বারবার বাবার কাছে কি মানা করছে এতো তেলযুক্ত খাবার না খেতে।আর বাবা তর্ক করে যাচ্ছে তার শরীর স্বাস্থ্য অনেক ভালো তাই এইসব খেলে তার করা কিছুই হবে না।
অন্যদিকে

Happily Married part 15

পিয়াস ভাইয়া আমাদের লজ্জাবতী পিয়াকে আরো লজ্জা দিচ্ছে।মাঝে মধ্যে হাত ধরছে,সবার সামনে হটাৎ গালে বা হাতে চুমু খাচ্ছে।এইসব দেখে অজান্তেই মুখ থেকে হাসি বেরিয়ে গেলো আমার।
পাশেই আরেকটা কলির মত জুটি দেখতে পাচ্ছি।যেটা মাত্র ফুটার চেষ্টা করছে।আর সেই জুটিটা আকাশ আর আলিশার।
আকাশ কিছুক্ষণ পর পর গেন্দা ফুল ছুঁড়ে মারছে আলিশাকে অ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য।কিন্তু কিছুই পাচ্ছে না।তাই আরো অনেক রকম ফুল ছুড়ে মারছে।আলিশা বিরক্ত দেখলেও মনে মনে খুশি হচ্ছে তা দেখাই যাচ্ছে।
আর আমার বাবাই আর মামনি।উনাদের ভালোবাসার তো কোনো কমতি কখনও ছিল না।সময় যেনো শুধু তাদের বয়স নয় ভালোবাসাকেও বাড়িয়ে দিয়েছে।তারাও আজ খুব খুশি।
আমি সবাইকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করছি তখনই আলিফ বলে উঠলো।
হিয়া,বসো।(আলিফ)
হুম।

বলেই আমি আলিফের পাশে গিয়ে বসলাম।
আলিফের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম।সম্পর্কের কতো রঙ হয়,কতো রূপ হয়। তবে মানুষের উপর নির্ভর করে সে কোন রঙ বেছে নিতে চায়।আমি সম্পর্কের যেই রঙ বেছে নিয়েছিলাম।সে রঙ আমার জীবন বেরঙ করে দিত।কিন্তু আলিফ যেই রঙের আমার জীবনে এনেছে সেই রঙের কারণে আজ আমার জীবন রঙিন।আজ আমি বলতে পারি আমি Happily Married?

……..THE END……..

গল্পটা আরো বড়ো করতে পারতাম।কিন্তু অযথা কাহিনী টেনে সিরিয়াল বানাতে চাইনি।আলিফ আর হিয়ার লাভ স্টোরি এখানেই শেষ।
তারা Happily Married?
নেক্সট গল্প কবে নিয়ে আসবো ঠিক নেই।অনেক গুলো থিম মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।এখন দেখা যাক কোনটা নিয়ে আসি প্রথমে।
ততদিন আল্লাহ হাফেজ,টাটা,bye bye, সায়োনারা??‍♀️

1 COMMENT

Comments are closed.