Happily Married part 14 || Writer: Shaanj Nahar Sanjida

Happily Married part 14
Writer: Shaanj Nahar Sanjida

আলিফ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই দেখে হিয়া একটা বড়ো বাক্স এনে ঐটা ভ্রু কুঁচকে এক দৃষ্টিতে দেখেই যাচ্ছে।দেখছে তো দেখছে আবার একবার ঘাড় এদিকে ঘুরায় তো আর একবার ওদিকে।আলিফের সন্দেহ হলো হিয়া মনোযোগ দিয়ে যেহেতু বক্সটা দেখছে নিশ্চয়ই গন্ডগোল আছে বা এই মেয়ে গন্ডগোল লাগাবে।বক্সের চারপাশ ভালো করে দেখে হিয়া একটা হাতুড়ি দিয়ে যেই তার তালা ভাঙতে যাবে ওমনি পেছন থেকে আলিফ ধরে বললো,,
কি করছো?
বক্সের তালা খুলছি।(আমি)
তাতো আমিও দেখতে পাচ্ছি।কিন্তু কেনো?(আলিফ)

এইটার মধ্যে বাবার গুপ্তধন আছে।বাবা কোনো দিন এটাকে আমায় ছুঁতেও দিতো না।লুকিয়ে রাখতো।আজ বাবার ঘরের আলমারি খুলতেই এইটা পেলাম।আজ আর এইটা খোলার সুযোগ হাত ছাড়া করছি না।
বলেই আবার হাতুড়ি দিয়ে তালা ভাঙতে যাবো তখনই আবার আলিফ হাত ধরে বললো,,
অনুমতি ব্যতীত অন্যের জিনিস দেখা ভালো না হিয়া!
আমি কি অপরিচিত মানুষের জিনিস হাত দিচ্ছি নাকি?এইটা আমার বাবার উত্তরাধিকার সূত্রে এইটাতে আমারও অধিকার আছে।(আমি গর্ব করে)

তাও এইসব ঠিক না।হতে পারে এতে উনার পার্সোনাল জিনিস আছে!(আলিফ)
এই জন্যই তো আমার কৌতূহল।আরেকটা কথা এই সেন্টু গেঞ্জি আর লুঙ্গিতে আপনাকে পুরাই বাঙ্গালী জামাই লাগছে।(আমি চোখ টিপ মেরে)
ফর ইউর কাইন্ড ইনফর্মেশন।আমি বাঙালি জামাই।(আলিফ?)
না কোনো দিন আপনাকে এই বেশে তো দেখিনি তাই বলছিলাম আর কি?শশুর মশাইয়ের লুঙ্গি পরে কেমন লাগছে!(আমি মজা নিয়ে)

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

খুবই ভালো। তবে এইসব কথা বলে আমাকে রাজি করাতে পারবে না।আমি তোমাকে অন্যর ব্যাক্তিগত জিনিসে হাত দিতে দেবো না।(আলিফ বুকে হাত বাজ করে দাঁড়ালো)
তাহলে দোষ আপনার!(আমি রেগে)
কেনো?আমি কি করেছি?(আলিফ অবাক হয়ে)

আপনিই তো বললেন বাবার আলমারি থেকে আপনার জন্য কাপড় চোপড় এনে দিতে আপনি ফ্রেশ হবেন।আমি যদি আপনার জন্য আলমারি না খুলতাম তাহলে এই বক্সটাও পেতাম না।আর আমার ইচ্ছেও জাগতো না এইটা খুলে দেখার।
বলেই আমি আলিফের দিকে কিউট ফেস করে তাকালাম।
আলিফ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
আলিফ,আমি জানি আপনারও ইচ্ছে করছে এইটার মধ্যে কি আছে খুলে দেখতে?(আমি বাকা চোখে আলিফের দিকে তাকিয়ে)

ভুলেও না।আমি তোমার মতো না।আমার কিছু আদর্শ আছে।(আলিফ ভ্রু কুঁচকে)
দূর আজকে আদর্শ গুলোকে গুলি মারেন তো।
বলেই আমি আলিফকে আমার পাশে বসিয়েই হাতুড়ি দিয়ে এক বারি মেরে তালা ভেঙ্গে ফেললাম।
তোমার জন্য আমাদের কোন দিন জেলে যেতে হয়!(আলিফ হতাশ হয়ে)
ব্যাপার না দুজন মিলে যেখানে যাবো সেখানেই খুশি থাকবো।
বলেই বক্স খুললাম।

আলিফ হিয়ার কথা শুনে মুচকি হেসে ভাবলো,,
সত্যিই তোমার সাথে আমি সব জায়গাতেই যেতে পারবো,হিয়া।
বক্স খুলে কৌতূহল নিয়ে আমি আর আলিফ তার ভিতরের জিনিস গুলো দেখে অনেক অবাক হয়ে গেলাম,,,
আলিফ দেখেন!এইটা বাবা আর পিয়াস ভাইয়ার ফুপির বিয়ের ছবি।আমি আগে কোনদিন দেখিনি।বাবা এখানে লুকিয়ে রেখেছিল!।(আমি আলিফকে ছবি দেখিয়ে)

উনি পিয়াস ভাইয়ার ফুপি আর সাথে তোমার মাও।(আলিফ আমার হাত থেকে ছবিটা নিয়ে)
আলিফ,আমি আপনার কথায় উনাকে একটা সুযোগ দিয়েছি।কিন্তু ক্ষমা এখনও করিনি। যাই কারণ থাকুক উনার এইসব করার পেছনে তা আমার কাছে কিছুই না।উনি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল এইটাই আমার কাছে সব চেয়ে বড় বিষয়।আমি কোনো দিন ভাবি নি উনাকে সুযোগ দেবো।তবে যাই হোক সুযোগ দেয়ার কথা বলেছেন,দিয়েছি।কিন্তু এখন ক্ষমা করার কথা বলবেন না।আমি অতটাও মহান নেই যে উনার মত মানুষকে ক্ষমা করতে পারবো।(আমি নিচের দিকে তাকিয়ে)

যদি উনি সুযোগে তোমার মন গলাতে পারে তাহলে?(আলিফ আমার মাথায় হাত দিয়ে)
আপনি আমার সাথে এতো ভালো ব্যবহার করেন।এখনও কি আমার মন গলাতে পেরেছেন?আপনি আমাকে ভালোবাসেন,কিন্তু সত্যি করে বলুন তো,আপনি জানেন কি না আমার মনে আপনার জন্য কি আছে?(আমি আলিফের দিকে তাকিয়ে)
আলিফ আমার কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো।

আমি আপনার মনে কষ্ট দিতে চাইনি।আপনি আমার অনেক খেয়াল রাখেন,আমার কথা বুঝতে পারেন,আমার সব কাজে আপনি সাহায্য করেন,আমাকে ভালোবাসেন।তাই আমি নিজেকে পরিবর্তন করে আপনার ওইসব জিনিস গুলোতে সাড়া দিতে চাই।কিন্তু পারি না।মনের কোণে যে ভয় এতো বছর ধরে জমেছে ওইসব এতো সহজে আমার পেছো ছাড়বে না।আর এই ভয় গুলো আমার মনে ঢুকিয়েছে উনি।তাহলে বলুন উনাকে কি এতো সহজে ক্ষমা করা যায়?আমার জীবন স্বাভাবিক হয়ে উঠুক তা আমিও চাই।কিন্তু আমি পারিনা।উনাকে আমিও ক্ষমা করতে পারবো না।আর সুযোগটা উনি কিভাবে কাজে লাগবে আমি জানি না।শুধু এইটা জানি আমার পক্ষে এখন অসম্ভব।হা, তবে এইটা বলতে পারি আমি উনাকে আগে যতটা ঘৃনা করি ততটাও ঘৃনা করবো না।(আমি মুচকি হেসে)
আর বাবার ক্ষেত্রে?(আলিফ)

বাবা!উনার প্রতি আমার আগে যতটুকু রাগ ছিল এখন তা আর নেই।কারণ উনি সব সময় আমার পাশে থেকেছেন।উনি কোনো দিনও চান নি আমার এরকম অবস্থা।তাই তো ধরে বেধে আপনার সাথে বিয়ে দিয়েছে।তবে যাই হোক উনি উনার রাগে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার জন্য একটু হলেও আমার কষ্ট পেতে হয়েছে।তাই উনাকেও একটু আমার রাগ সহ্য করতে হবে।বাবা মা হওয়া সহজ না।এইটা উনাদের বুঝতে হবে।যতক্ষণ না তারা এইটা বুঝতে পারছে ততক্ষণ আমিও হাল ছাড়ছি না।(আমি দীর্ঘ্য শ্বাস নিয়ে)
আমার কথা শেষ হতে না হতেই আলিফ আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,,
হিয়া প্রমিজ করো!তুমি আমাকে ভালো না বাসলেও, আমাকে তোমায় ভালোবাসা থেকে কখনও দূরে সরিয়ে রাখবে না।

আমিও উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,
ভুল বলছেন।আপনি প্রমিজ করুন।আমার মন থেকে এই সম্পর্কের ভয় দুর আপনি আমায় ভালোবাসতে বাধ্য করবেন।আমি আপনাকে ভালোবাসতে চাই।আমি ওইসব কিছু করতে রাজি আছি যা দিয়ে আমি আপনার ভালোবাসার মায়ায় পড়বো।
আলিফ আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে আস্তে করে বললো,,
তুমি ঠিক বলেছো।আমি প্রমিজ করছি এমনটাই হবে।
আচ্ছা চলুন অনেক হয়েছে ওইসব কথা এখন বাবার গুপ্তধনে দেখি কি কি আছে?
বলেই আমি আবার বক্সে হাত দিলাম।
আলিফও অনেক ইচ্ছা নিয়ে বক্সে ঘাটাঘাটি করছে।
আপনি না আদর্শ ছেলে?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

যখন লাইফ পার্টনার হয়ে গেছি ক্রাইম পার্টনার হতে সমস্যা কি?(আলিফ চোখ টিপ মেরে)
আমি এক গাল হাসি দিলাম আলিফের দিকে তাকিয়ে।

আলিফ এই দেখুন।এইটা আমার পুতুল,বাবা নিজের হাতে কাপড় আর তুলো দিয়ে বানিয়ে দিয়েছিল।(পুতুল দেখিয়ে)আসলে আমার একটা দোকানের পুতুল দেখে খুব ভালো লেগেছিলো।কিন্তু ওই দোকানে একটাই ঐরকম পুতুল ছিলো।আর আমরা যাওয়ার আগেই কেউ একজন এসে পুতুলটা কিনে নিয়ে গেলো।তাই আমি অনেক কান্নাকাটি করেছিলাম।বাবা বলেছিলো অন্য রকম পুতুল কিনে নিতে কিন্তু আমি ছিলাম জেদী,ওই পুতুল আমার লাগবেই।তাই বাবাই কোনমতে আমার জন্য এমন একটা পুতুল বানিয়েছে।যদিও এই পুতুল ওই পুতুলের ধারের কাছেও যায়নি।তবুও এইটা আমার কাছে স্পেশাল কারণ বাবা এইটা আমার জন্য বানিয়েছে।ভাবছিলাম এইটা হয়তো আমি হারিয়ে ফেলেছি।কিন্তু ভাবতে পারিনি বাবা এইটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছে।(আমি পুতুলটাকে জড়িয়ে ধরে)
বাহ!ভালো তো।কিন্তু আমি তার থেকে ভালো কিছু পেয়েছি।(আলিফ একটা ছবি দেখিয়ে ডেভিল হাসি দিয়ে)
কি এইটা!(আমি সন্দেহ দৃষ্টিতে)

কেউ একজন খালি গায়ে মাটিতে বসে ভে করে কান্না করছে,নাক গিয়ে সর্দিও পড়ছে।আর এমন স্বরনীয় দৃশ্যটাকে একটা ফ্রেমে বন্দী করে রাখা হয়েছে।আর এখন সেটা আমার হাতে।(আলিফ?)
আলিফ খুব খারাপ হয়ে যাবে।এইটা তো ফেলে দিয়েছিলাম।এখানে আসলো কি করে?বাবাও না।যা খুশি এনে রেখে দিয়েছে।আলিফ দেন এইটা আমার কাছে!(আমি আলিফের কাছ থেকে ছবিটা নেয়ার চেষ্টা করে)
না না।ভুলেও দেবো না।আগেই বলছি অন্যর পার্সোনাল জিনিসে হাত দিতে না।এখন দেখলে নিজের পার্সোনাল জিনিস বেরিয়ে আসলো।এইটাকে তো আমি ফ্রেমে বন্দী করে বাঁধিয়ে রাখবো।(আলিফ হাসতে হাসতে)
আলিফ দিন বলছি।

বলেই আমি আর আলিফ ধস্তাধস্তি করতে লাগলাম।
ধস্তাধস্তি করতে করতে আমি গিয়ে আলিফের বুকে পড়লাম।আলিফ এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।আমিও উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।উনার চোখে একটা নেশা রয়েছে।একবার তাকিয়ে থাকলে তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে।আলিফ আসতে করে আমার কপালের চুল গুলো কানের পেছনে গুজে দিল।আর ঠোঁট জোড়া খুব কাছাকাছি নিয়ে আসলো আর তখনই আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।চোখ বন্ধ করার পর বুঝতে পারলাম উনি আমার কপালে চুমু দিলো।আমি চোখ খুলতেই উনি কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,,

ভালোবাসার পরশ কপালেই সুন্দর।by the way তুমি কি অন্য কিছু ভাবছিলে? ইশ!কি লুচ্চু তুমি,হিয়া!
আমি তাড়াতাড়ি উনার উপর থেকে উঠে নাক ফুলিয়ে বললাম,,,
যার মনে যা লাফ দিয়ে উঠে তা।
আলিফও হাসতে হাসতে উঠলো।পরেই আলিফের চোখ গেলো বক্সে থাকা একটা সাদা কাগজে।
এইটা কি?(আলিফ কাগজটা হাতে নিয়ে)
আমিও কৌতূহল নিয়ে কাগজের দিকে তাকালাম।কাগজটা দেখেই আমাদের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।
আমি আর আলিফ একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি।

কিছুক্ষণ পর
আমি বেলকনিতে দাড়িয়ে আছি।আলিফ আমার পাশেই দাড়িয়ে আছে।
তাহলে তাদের ডিভোর্স হয়নি?(আলিফ আকাশের দিকে তাকিয়ে)
আমি চুপ করে আছি।
আসলে কাগজটা ছিলো বাবা আর মার ডিভোর্স পেপার।সেখানে মা স্বাক্ষর করেছে কিন্তু বাবা করেনি।বাবা হয়তো দেখতে চেয়েছিলো ডিভোর্স পেপার মার সামনে দিলে উনি কেমন রিয়েক্ট করে।যেহেতু উনি কিছু না বলেই স্বাক্ষর করে দিয়েছে এতে বাবাও হয়তো অবাক হয়ে গেছে।কিন্তু ভালোবাসার মানুষটাকে দূরে সরিয়ে দিলেও ডিভোর্স পেপার এ স্বাক্ষর করার শক্তি বাবার হয়ে উঠে নি।সবাইকে বাবা জানিয়েছে উনাদের ডিভোর্স হয়েছে।কিন্তু আসল কথা তাদের কোনোদিন ডিভোর্স হয়নি।কারণ বাবা তাতে স্বাক্ষর করে নি।

Happily Married part 13

আমি স্থির দাড়িয়ে আছি।
আলিফ আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,,
হিয়া কিছু বলো?
তারা একে অপরকে ভালোবাসে!তবুও তারা একে অপরের সাথে থাকতে পারলো না।এতই কষ্ট!ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকা!মাঝে মধ্যে মনে হয় সম্পর্ক কতো সহজ আবার মাঝে মধ্যে মনে হয় এগুলো এতটাই ভারী যে বয়ে নেয়াই অসম্ভব।(আমি নিচের দিকে তাকিয়ে)
এখন তুমি কি করবে?(আলিফ)
আমি আলিফের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে,,,

তুমি চিন্তা করো না।ওইটা উনাদের মধ্যের কথা।আমি উনাদের মধ্যে পড়তে চাইনা।আমিও তোমার মত দর্শক।আমি শুধু দেখবো ভাগ্য আমার মা আর বাবাকে কোথায় নিয়ে যায়?(আমি আলিফের গালে হাত দিয়ে)
তবে একটা কথা!আর যাই হোক আমাদের সম্পর্ক আমি কিছুতেই উনাদের মত হতে দেবো না।ভালোবাসি কি বাসি না,জানি না।তবে আপনার থেকে কখনও দূরে যাবো না।আজকের পর থেকে না এই বিয়ে থেকে না আপনার থেকে, কারো থেকে পালাবো না।আমি কিছুতেই আমার বাবা মার মতো হবো না।আমার সম্পর্ক আর ভাঙবে না।তাই আলিফ?(আমি কাদতে কাদতে)
আলিফ আমার গালে হাত রেখে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,,
হুম।আমাদের সম্পর্ক কখনই উনাদের মত হবে না।

Happily Married part 15