জল ফড়িঙের খোঁজে গল্পের লিঙ্ক || লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ১
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

কুয়াশা আচ্ছন্ন জ্যামহীন রাস্তা দিয়ে সাদা রঙের একটা গাড়ি চলছে মধ্যম গতিতে। S.R. ফোন হাতে নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা পড়ছে । হঠাৎ একটা জায়গায় তার চোখ আটকে যায়,
” I want to have a relationship, But I am not ready for any commitment. মানে সিরিয়াস কিছু না। শুধু এক্সপিরিয়েন্সের জন্যে। কিন্তু এসব শুনে কেউ আসতে রাজিই হয়না। প্লিজ হেল্প মি।”

গাড়িতে বসে কিছু করার ছিলোনা, তাই ফোন স্ক্রোলিং করেছিল ও। গত অডিও লাইভের শো তে মেসেজে যেসব প্রশ্ন করেছিল লিসেনার্সরা, সেগুলো এমনিই পড়ছিল। কিছু করার না থাকলে এটাই করে ও। কিন্তু এই মেসেজটা আবার চোখে পড়তেই আর মেসেজ দেখার ইচ্ছে রইলনা। আজকাল সম্পর্ক, প্রেম, ভালোবাসা এগুলো কে কতটা সস্তা করে তুলেছে এরা? সবটাই এদের কাছে খেলা? রিডিকুলাস! তবে মেসেজের ব্যাক্তিটির বলার ধরণটা অনেকটা আলাদা মনে হল S.R. এর কাছে। অতি স্বাভাবিক একটা মেসেজের মধ্যেও অস্বাভাবিক কিছুতো একটা আছে। এসবে আর মনোযোগ না দিয়ে গাড়ির গ্লাসটা খুলে দিলো S.R.। সাথে সাথেই ঠান্ডা হাওয়ায় ভরে উঠল গাড়ির ভেতরটা। এই ঠান্ডা হাওয়া অদ্ভুতরকম ভালো লাগতে শুরু করল ওর কাছে। একরাশ ভালোলাগা নিয়ে দেখতে লাগল কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ।

ভোরের হালকা কুয়াশায় চাদরে চারপাশ ঢেকে আছে। জানুয়ারি মাস। শীত যাবো করেও গেলো না, হঠাৎ করে আবার জেকে বসল। এই শীতের সকালে কেউ আলসেমির চাদরে জড়িয়ে নিজেকে কম্বলের নিচে রেখে দিয়েছে, কেউ এখনও ঘুমোচ্ছে, কেউ বা একপ্রকার বাদ্ধ হয়েই সমস্ত আলসেমি ছেড়ে দিয়ে উঠে বেড়িয়ে পরেছে নিজের কাজের উদ্দেশ্যে। এই ব্যস্ততম শহরে এই শীত, কুয়াশা, আলসেমি সবকিছু উপেক্ষা করে তাদের ছুটতে হয় জীবিকার জন্যে। কত বিচিত্র মানুষের জীবন, তার চেয়েও বিচিত্র মানুষের জীবনযাত্রা। বাইরের পরিবেশ দেখতে দেখতে রেডিও স্টেশনের সামনে গাড়ি এসে থামল। S.R. সরাসরি গাড়ি থেকে নামতেই ওকে নিতে দুজন লোক এলো। ওনারা S.R. কে নিয়ে ভেতরে গেলেন। S.R. গলায় আইডি কার্ড ঝুলাতে ঝুলাতে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে সবার সাথে কুশল বিনিময় করতে করতে নিজের রুমে ঢুকে বসলো। ঢোকার সময় ওর হাতে একজন স্ক্রিপ্টের কাগজ ধরিয়ে দিল। S.R নিজের চেয়ারে বসে স্ক্রিপটা টেবিলের একপাশে রেখে দিল। আরেকটা লোক দ্রুতপদে এসে একটা ধোঁয়া ওঠা কফির মগ টেবিলে রেখে দিয়ে গেল। হেডফোন কানে নিয়ে, প্রয়োজনীয় সুইচগুলো অন করে কাচের দেয়াল দিয়ে বাইরে তাকালো। ওপরপাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি থামস্আপ দেখাতেই S.R. মাইকটা নিজের ঠোঁট বরাবর ধরে বলতে শুরু করল,

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

” গুড মর্নিং ঢাকা। কেমন আছেন সবাই? আমি বেশ আছি। এই স্নিগ্ধ সকাল ,বাইরের আবছা কুয়াশা, কনকনে হাড় কাঁপা শীত, একটু আলসেমি, এই ধোঁয়া ওঠা কফির মগ আর তার সাথে আছি আমি আর.জে, S.R., হাজির হয়েছি আপনাদের সবার প্রিয় শো ‘প্রভাতের আলো’ নিয়ে। তো এই শীতের সকালে কেউ কম্বলের নিচে গুটিয়ে আছে, কেউ আলসেমি ঝেড়ে সবে উঠেছেন, কেউ কফির মগে চুমুক দিয়ে এই শীতের সকাল উপভোগ করছেন, কেউ কাজে যাচ্ছেন, আবার কেউ ঠিক কাজে চলে এসছেন আমারই মত। কী আর করার? রোজগার করে তবেই তো খেতে হয়। তবে যাই বলেন, শীতের এই সকালটা শীতে কাঁপিয়ে কষ্ট দিলেও এক অদ্ভুত মিষ্টটা নিয়ে আসে। শীতকালের ভোরবেলা কোন নিরব জায়গায় গিয়ে দুহাত মেল প্রকৃতিকে অনুভব করে দেখবেন। হৃদয় জুড়িয়ে যাবে।”

সমস্ত শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনছে। আরো কিছুক্ষণ কিছু কথা বলে শুরু করল প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। শ্রোতারা নিজের জীবণ, জীবণের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করবে আর S.R. তার উত্তর দেবে। অলমোস্ট সব রেডিও প্রেমিদের প্রিয় শো এটা, যতটা না প্রিয় এই শো তারচেয়েও প্রিয় এই শো যে করছে সেই মানুষটি। অস্বাভাবিকভাবে S.R এর শো গুলোর শ্রোতা বহুগুণ বেশি হয়। সবার প্রিয় আর.জে. সে। কিন্তু তাকে আজ অবধি তারা কেউ দেখেও নি আর না তো কেউ চেনে। শুধু কন্ঠস্বর আর নামটাই জানা সকলের। অথচ সে অনেক মেয়ের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে বসে আছে। শুধু কন্ঠ, বচনভঙ্গি আর কথার মাধ্যমেই জয় করে নিয়েছে হাজার হাজার মন। শ্রোতাদের কাছ থেকে একটা একটা করে কল আসছে আর S.R তাদের প্রশ্নের বা সমস্যার খুব চমৎকারভাবে সমাধান করছে। হঠাৎ একটা কল রিসিভ করার পর মেয়েলি কন্ঠে কেউ বলে উঠল,

” হাই S.R?”
S.R. মুচকি হেসে বলল,
” জি, হাই । কাইন্ডলি আগে আমাদের আপনার নামটা বলুন?”
মেয়েটা অধৈর্য হয়ে বলল,
” আরে নাম ছাড়ুন। আমার প্রবলেমটা আগে শুনুন। আসলে আমার রিলেশনশীপ এর একটা এক্সপিরিয়েন্স চাই। মানে বাকি সবার মত আমিও রিলেশনশীপে যেতে চাই, কিন্তু কোন কমিটমেন্ট করতে পারবোনা। শুধুই ব্যাপারটার একটা এক্সপিরিয়েন্স নেওয়ার জন্যে, বুঝলেন?”
মেয়েটার কথা শুনে অবাকের চরম সীমায় পৌছে গেলো S.R.। কথাগুলো শুনেই আগের শো এর মেসেজের কথা মনে পরল। তারমানে ঐ মেসেজটা এই মেয়েটাই করেছিল। শুধুমাত্র এক্সপিরিয়েন্স এর জন্যে কেউ রিলেশনশীপে যেতে চায়? আর সেটাও যে এভাবে বড় করে এনাউস করা যায় সেটা ভাবতে পারেনি ও। নিজেকে সামলে একটু গলা ঝেড়ে বলল,
” সরি?”

এবার মেয়েটা বিরক্ত হলো। ভীষণভাবে বিরক্ত হলো। এতো গুলো শব্দ খরচ করে, ভোকাল কর্ডের চার্জ নষ্ট করে, এতকিছু বলল এখন কী না বলছে ‘সরি’ ? সবার বাংলা বুঝলো ওরটাই বুঝলো না? চোখ বন্ধ করে দুটো শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে বলল,
” আই মিন আই ওয়ান্ট টু হ্যাভ আ রিলেশনশীপ। বাট আ’ম নট রেডি ফর কমিটমেন্ট। কিন্তু ছেলেরা যাও একটু ইন্টারেস্ট দেখায় এই কথা শুনে সবগুলো ইউটার্ন মারে। কিন্তু আমি রিলেশন করব, মানে করবই। নাও ইউ সাজেস্ট মি হোয়াট শুড আই ডু?”
S.R কী বলবে সেটাই ভাবছে। এমন কথার উত্তরে বলা যায়? এটা কেমন সমস্যা? আর এই সমস্যার সমাধানই বা কেমন হতে পারে? আগের শো তে মেসেজটা দেখেও ইগনোর করে গেছে। কিন্তু এখন কীকরে এড়াবে? সকলের সামনেই তো বলে ফেলেছে মেয়েটা। কিন্তু কিছু যে বলবে এই কথার পিঠে, বলার মত কোন কথাও পাচ্ছেনা ও। ওপাশ থেকে মেয়েটা বলল,

— ” আরে! সাইলেন্ট হয়ে গেলেন কেন? কিছু কী বলবেন নাকি রাখব?”
যেই S.R এর ঠোঁটের ডগায় সব প্রশ্নের উত্তর থাকে, সে কোন প্রশ্নে চুপ হয়ে গেছে। ভাবা যায়? S.R. লাইনটা কেটে দিয়ে ডিসকানেক্ট হয়ে গেছে বলে কোন রকমে সবটা ম্যানেজ করে নিলো। তারপর শো কন্টিনিউ করল। শো টা শেষ করে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে হেডফোন নামিয়ে চেয়ারে হেলান দিলো ও। মেয়েটার কথা ভাবতেই অবাক লাগে। কী ভয়ংকর মেয়ে? তবে কন্ঠটা চমৎকার। যে মেয়ের কথাতেই এত তেজ সে মেয়ে বাস্তবে কতটা তেজস্বীনী হবে? নিজের অজান্তেই এসব চিন্তায় বিভোর হয়ে গেল S.R.।

এদিকে মেয়েটা ফোনটা রেখে মুখ ফুলিয়ে ‘অ‍্যাহহ’ টাইপ শব্দ করে ফোনটা বেডে ছুড়ে রাখল। কিছুক্ষণ চোখ মুখ ফুলিয়ে বসে থেকে ‘রিখু’ বলে চেঁচিয়ে চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পরল। মেয়েটার নাম ‘তুর্বী আহমেদ’। পেশায় একজন জুনিয়র আর্কিটেকচার। পড়াশোনা শেষ করে সদ্যই চাকরি জয়েন করেছে। জীবণ নিয়ে সবরকমের এক্সিপিরিমেন্ট করতে চায় ও। ওর মতে যতক্ষণ বাঁচব প্রাণখুলে বাঁচব। কালকে কী হবে কে জানে? তবে ইদানিং কিছুই ওর ভালো লাগছে না। ওর মনে হচ্ছে ওর লাইফটা বোরিং হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য এক্সাইটিং কিছু একটা করতে চাইছে যাতে লাইফের এই বোরনেস কেটে যায়। তাইতো রিলেশনশীপের একটা এক্সিপিরিয়েন্স চাই ওর। ওর মতে এক্সাইটিং হবে ব্যাপারটা। তবে সেটা শুধুই এক্সপিরিমেন্টের জন্যে। মোটেও সিরিয়াস কিছু না। প্রেম, ভালোবাসা নিয়ে ভাবার অত সময় নেই ওর। কিন্তু কোন ছেলে যখনই তুর্বীর কাছ থেকে এসব শোনে তখন তাড়া সবাই উল্টো দৌড় মারে। মারারই কথা এরকম রিলেশনশীপে কে থাকতে চায়? তাইতো ওর বেস্ট ফ্রেন্ডের সাজেশন অনুযায়ী S.R. এর কাছে সাজেশন চেয়েছিল কিন্তু সেতো প্রশ্ন শুনেই ইউটার্ন মারলো। লাইফটা এক্সাইটিং করতে না পারার দুঃখে তুর্বী এখন ফলস্ ডিপ্রেশনে ভুগতে ভুগতে শুয়ে বুটভাজা চিবোতে লাগল, আর কারো আসার অপেক্ষা করতে লাগল।

অনেকটা বেলা হয়েছে, কুয়াশা কেটে সূর্যের আলো উঁকি দিতে শুরু করেছে চারপাশে। সবাই বেড়িয়ে পরেছে। ব্যস্ততম শহর তার ব্যস্ততা দেখাতে শুরু দিয়েছি। সকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে মাসিক বাজার সেড়ে নিল রিখিয়া। বাজার সেড়ে শপিং মলে ঢুকলো একটা শাওয়ার জেল আর একটা ঘড়ি কিনতে হবে। শপিং মলে ঢুকে শাওয়ার জেলটা কিনলেও ঘড়ি পছন্দ করতে পারছেনা। যার জন্যে ঘড়ি কিনবে সে একটু ডার্ক আর বয়েস্ টাইপ ঘড়িই পছন্দ করে। কিন্তু সেভাবে মিলিয়ে পাচ্ছে না। এই শীতেও অনেকটা ঘেমে গেছে ও। ওপরে ভালো মানের ঘড়ি পাওয়া যায় তাই রিখিয়া লিফটের সামনে গেল। লিফটের বাটন প্রেস করে দাঁড়িয়ে আছে, আর নাকের নিচটা মুছছে। লিফট এসে খুলতেই ও ভেতরে যেতে নিয়েও সামনে তাকিয়ে থমকে গেল। এমন কিছু দেখবে ভাবেবি ও। ফিল্মে এসব হতে দেখে আল নাক ছিটকায়। কিন্তু বাস্তবেও যে এমন কিছু দেখবে ভাবতে পারেনি। লিফটের ভেতরের ছেলেটা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

” এইযে মিস? হয় ভেতরে আসুন নয় বাইরে যান? মাঝখানে ঝুলে আছেনকেন?”
রিখিয়া একটু হকচকিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। ছেলেটা রিখিয়াকে আগাগোড়া একবার স্কান করল। লম্বা সাদা কুর্তি, নীল জিন্স, আর গায়ে মার্জিতভাবে নীলওড়না জড়িয়ে রাখা। বারবার ইতস্তত করে তাকাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটা অনেকটা ভদ্র আর ক্লাসিক টাইপ। এই শীতেও হালকা ঘামে ভেজা মুখটায় অজস্র মায়া খুঁজে পেলো ছেলেটা। ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল বাঁকা হাসি। ছেলটার গলা জড়িয়ে রাখা মেয়েটা ন্যাকাস্বরে বলল,
” বিহান, কী হলো বেবী? ওদিকে কী দেখছ?”
বিহান মেয়েটার কোমর জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বলল,
” তোমাকে ছাড়া আমি আর অন্যকিছু দেখতে পারি বেবী?”

বলে আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরল বিহান। রিখিয়া হাত ভাজ করে ভ্রু কুচকে অন্যদিকে তাকাল। কী নির্লজ্জ? ও যে এখানে দাঁড়িয়ে আছে তাতে কিছু যায় আসছেনা দুজনের? এসব ন্যাকামো কোনকালেই ভালো লাগেনা ওর। এইটুকু সময়ের মধ্যেই রিখিয়া বুঝে ফেলল ছেলেটা প্লে-বয় টাইপ। ভালোবাসা খুব পবিত্র জিনিস। কোন একজনকেই সবটা উজার করে নিজের ভালোবাসা দেওয়া উচিত। রিখিয়াতো এটাই মানে। অথচ এরা কী করে এসব? ছিঃ। রিখিয়ার মতে এরা খুবই জঘন্যতম মানুষের কাতারে পরে। একদমই জঘন্য। ও শুধু অপেক্ষা করছে কখন লিফট থেকে ও বেড়োতে পারবে। এসব যে ওর বড্ড বেশি অসহ্য লাগে। রিখিয়ার ইচ্ছাটা পূরণ হল নিজের কাঙ্ক্ষিত ফ্লোরে পৌছে এদিক ওদিক না তাকিয়েই বেড়িয়ে গেল ও। কিছুদূর যেতেই পেছন থেকে একজন ‘এইযে মিস’ ডেকে উঠল। রিখিয়া পেছনে তাকিয়ে দেখে সে আর কেউ নয় একটু আগের সেই ছেলেটা মানে বিহান। বিহান ঠোঁটে সেই বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে এগিয়ে এসে পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল,

” কী নাম তোমার?”
রিখিয়া খুব শান্ত একটা মেয়ে। তর্ক করতে পছন্দ করেনা, করেও না। তাই মনে মনে বিরক্ত হলেও নরম কন্ঠে বলল,
” রিখিয়া। রিখিয়া ইসলাম।”
“ওয়াও, সো কিউট। আচ্ছা..”
বিহানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল রিখিয়া। বিহান ডেকেও সাড়া না পেয়ে বিড়বিড় করে বলল,
” যাহ! চলে গেল।”
ওপরে এসে একটা দোকানে শেষমেশ একটা ঘড়ি ওর পছন্দ হল। একদম ও যেমন চাইছিল আরকি। ও সেলস্ বয়কে জিজ্ঞেস করল,
” কত দাম এটার?”
“এক হাজার টাকা।”
ঘড়িটার দাম শুনেই মুখ কালো হয়ে গেল রিখিয়ার। এতটা বাজেট তো ওর নেই। তাই ও ছোট মুখেই জিজ্ঞেস করল,
” একটু কম হবেনা?”
” কত দিতে চান আপনি?”
রিখিয়া ইতস্তত করে বলল,
” চারশ?”
সেলস্ বয় হেসে দিয়ে বলল,
” সরি ম্যাম, হবেনা।”

বেশ মন খারাপ নিয়েই দোকান থেকে বেড়িয়ে হাটা দিলো রিখিয়া। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর পেছন থেকে সেই সেলস্ বয় ডাকল ওকে। ও অবাক হয়ে আবার গেল ওখানে। সেলস্ বয় রিখিয়াকে সেই ঘড়িটাই চারশ টাকায় দিতে রাজি হয়ে গেল। রিখিয়া প্রথমে অবাক হল, কিন্তু নিজের প্রিয় মানুষটার জন্যে নেবে তাই খুশি হয়ে কিনে নিল। যদিও খটকা রয়েই গেছে ওর মনে। তবে ঘড়িটা কিনতে পেরে খুব খুশি হয়েছে ও। কারণ যাকে ঘড়িটা দেবে সে ঘড়িটা পেয়ে খুশি হবে। তাই খুব খুশি মনেই রওনা হলো ফ্লাটের উদ্দেশ্যে।

বিহান শপিং মল থেকে বেড়িয়ে ওর সেই সো কলড গার্লফ্রেন্ড কে বিদায় দিয়ে রওনা হলো নিজের প্রাণপ্রিয় মানুষটার সাথে দেখা করতে। পনেরো দিন পর আজ দেশে এলো। কতদিন দেখা হয়না নিজের প্রাণপ্রিয় বন্ধু সৌহার্দ্যর সাথে। এখন সৌহার্দ্যর সাথে দেখা করাই ওর কাছে প্রধান কাজ।

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ২