যুগলবন্দী পায়রা পর্ব ১৩ || সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

যুগলবন্দী পায়রা পর্ব ১৩
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

প্রতিবারের মতোই সেদিনও চিঠি লিখে পায়রার মাঝে বেঁধে উড়িয়ে দিয়ে ছিলো ইয়ামিন । প্রায়ই করতো৷ উত্তর মিলতো না কখন-ও। কিন্তু একদিন সব পালটে গেল। আকাশসম বিস্ময় নিয়ে ফিরে এলো উড়ো চিঠির উত্তর। সেদিন ইয়ামিন কিছুক্ষণ থম মেরে বসে ছিলো। উত্তেজনায় হাত পা কাঁপছিলো।গলা শুকিয়ে কাঠ। ইয়ামিন চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ সিলিং এর দিক তাকিয়ে লাফিয়ে উঠে। চিঠিটি কাছে টেনে বার কয়েক পড়ে ফেললো। মরীচিকা নামের চিঠি মিতা তার চিঠি সঙ্গী হয়ে যায়। ধীরে ধীরে হতে থাকে গভীর। দু ধারেই চলতে থাকে ভাসমান স্রোত। ইয়ামিনের গভীর মন দ্বিতীয় বার প্রেমে পরে গেলো। অনুভূতি দোটানা পিছনে ফেলে লিখে ফেললো একখানা রঙ্গিন চিঠি।
মরিচীকা,

আমি হয়তো কখনো কোনো রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতে পারবো না তোমাকে। দামি কিছু উপহার দিতে না পাড়লেও উপহার হবে বেলিফুলের মালা, হাত ভর্তি কাঠ গোলাপ বা কখনো একটি টকটকে লাল গোলাপ। আমি নিজ হাতে গুজে দেবো তোমার খোপায়। তোমার বড় কোনো আবদার পুরন করতে হয়ত অক্ষম হবো আমি। কিন্তু কোনো এক শেষ বিকেলের, সিঁদুর রাঙ্গা মেঘের আলোয় কোনো এক পথ ধরে হাটবো আমরা। হাতে থাকবে ভাজা বাদামের ঠোঙ্গা। একটা একটা করে ছুলে আমি তোমার সামনে ধরবো বলবো,,
“আমার স্বপ্নের রানী গ্রহন করুন”
তুমি হয়তো হাসবে। ভাববে তোমার নিশ্চুপ পাগলাটে প্রেমিক বুঝি সত্যি পাগলো। সত্যি বলি? হে পাগল আমি পাগল, সেই না দেখা, না ছোঁয়া মানুষটির জন্য পাগল।
ইতি
নিশ্চুপ পাগল প্রেমিক।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

এর পরবর্তী কোনো উত্তর আসেনি। এসেছিলো একটি লকেট। মাঝে হার্ট এর ভিতরে একটি পায়রা, যার ঠোঁটে একটি চিরকুট। ইয়ামিন সেদিন খুশিতে চোখের জল ছেড়ে দিয়েছিলো। এর পর তারা ঠিক করলো তারা দেখা করবে। কিন্তু সেদিন সব পাল্টে গেলো। তার মরীচিকা এলো না। ঘন্টার পর ঘন্টা ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো। কিন্তু যখন এলো তখন জানালো তার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে। সে যেন আর তার জন্য অপেক্ষা না করে।
এটুকু বলেই থামলো ইয়ামিন। চোখের জল বন্যা রূপ নিলো। মহুয়াও কাদতেছে। মুখ চেপে কাঁদছে। ভাগ্য তাকে চিঠি প্রেমিকেরই দোরগোড়ায় এনে দাঁড় করিয়েছে। অথচ সে? পুরো দুনিয়া খুঁজে বেড়াচ্ছে। পরক্ষণেই মাথায় ঘন্টি বাজিয়ে যাচ্ছে, কার সাথে ইয়ামিন সেদিন কথা বলেছিলো? সেদিন মহুয়া আসতে চেয়েও পারেনি তার বাবার এক্সিডেন্ট হয়েছিল সেদিন। তার পরই তো তাকে খুঁজতে এত দূর আসা। মহুয়া কান্না থামাতে ঢুক গিললো। ইয়ামিনের সামনে তুলে ধরলো সেইম লকেট৷ ইয়ামিন অশ্রু বিদ্ধ চোখে হতবিহ্বল হয়ে চেয়ে রইলো। ইয়ামিন হাটু মুড়ে ফ্লোরে বসেছিলো। মহুয়ার তার কাছে এসে বলল,
“আমি সেদিন আসতে চেয়ে ছিলাম ইয়ামিন। কিন্তু সেদিন আমার আব্বুর চাকরি চলে যায়। আব্বু টেনশনে বাসায় ফিরার সময় এক্সিডেন্ট হয়। আমাকে বাসা থেকে কল করাতে যেতে হয় সেখানে। কিন্তু আমি তো আমার এক বান্ধবীকে পাঠিয়েছিলাম আপানাকে জানাতে।”

ইয়ামিন এখনো ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে। মাথা ফাকা ফাকা লাগচ্ছে, তার ফিলিংসের সাথে মেয়েটি কি খেলা করছে? কে এসে বলে সে চিঠি মিত্র তার বিয়ে ঠিক, আর ফেলে চলে গেলো। আর আজ যাকে বিয়ে করেছে? সেও দাবিদার। ইয়ামিনের এবার নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে। পুরো পৃথিবী জালিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। কি পেয়েছে সবাই? তার অনুভূতি, ভালবাসা এতটাই তুচ্ছো? ইয়ামিনের মুখের রং মুহূর্তেই পাল্টে গেলো। রাগে কাপচ্ছে তার শরীর। মহুয়া এক ধাক্কা মেরে গগনবিদারী এক চিৎকার করে বলে উঠলো,,
“আমার ভালোবাসা, অনুভূতি এতো টাই ঠুনকো? যে যখন যা ইচ্ছে এসে বলে যাবে? নো! আই উইল নেভার দেট হ্যাপেন্ড। ”

মহুয়া ইয়ামিনের ধাক্কা সামলাতে না পেরে ফ্লোরে বসে ফুপাচ্ছে। কি ভাবে সে বিশ্বাস করাবে? সেই তার পত্র প্রেমিকা? মহুয়া কিছু একটা ভাবলো। তার পর উঠে দাঁড়িয়ে ইয়ামিনের কাছে গেলো। ইয়ামিন তখন বাহিরের পানে চেয়ে। মহুয়া দু হাত মুচরাতে মুরাতে মিনমিন করে বলল,,
“মনে পরে কি আপনার? আপনার বোনের সম্পর্কে আপনি আমাকে চিঠিতে কি লিখে পাঠিয়ে ছিলেন?”
ইয়ামিনের বুকে ধক করে উঠলো। মহুয়ার দিক ফিরে জিজ্ঞেস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। মহুয়া তখনো থুতনি বুকে সাথে লাগিয়ে আছে। মহুয়া বলল কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
“আপনার বোন আপন ছিলো না আপনার। সে আপনার বাবার অবৈধ সন্তান। ”
ইয়ামিন নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো। পর মুহূর্তেই তাচ্ছিল্যের সাথে বলল,

“হতেই পারে তুমি আমাকে ধোকা দেয়ার চোষ্টা করছো। হতে পারে এসব তোমার সাজানো নাটক। হতে কেন আমি সিউর তুমি মিথ্যা বলছো! জীবন টা সিনেমেটিক নয়। যা বললে তাই হয়ে গেলো।আমার এসবে এখন বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে সব কিছু থেকে। প্লিজ আমাকে একা থাকতে দাও আমি নিতে পারছি না। প্লীজ।”
শেষ কথাটি ইয়ামিন জোরেই বলল। কেঁপে উঠলো মহুয়া। ছলছল চোখে রুম থেকে নিঃশব্দে বের হয়ে গেলো।
ইয়ামিন সেখানেই ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো। জীবন তার সাথে আর কত মজা করবে ভেবেই পাচ্ছে না। রাত থেকে ভোর হয় ইয়ামিনে ভাবনা শেষ হয় না। সে দুরের আকাশের সূর্যের হাসি উদয় হতে দেখলো। রাতে ঘন আকাশের আধার কাটিয়ে আলোকিত করে তুললো, এক মুঠো রোদ। দরজা খটখট করে শব্দ হতেই ইয়ামিন বিরক্ত হয়। মহুয়া এসেছে ভেবেই রেগে বলে,

যুগলবন্দী পায়রা পর্ব ১২

” আমি এখন কোনো কথা বলতে চাইছি না!”
তখনি ভেসে উঠলো চিকন কন্ঠ। দরজা ঠেলে ঢুকলো আয়দা, মন খারাপ করে একটি কাগজ এগিয়ে দিলো ইয়ামিনের দিক।
“এটা কি?”
“তোমার চিঠি!”
ভ্রুকুচকায় ইয়ামিন। বলে,
“কিসের চিঠি!”
আয়দা বলল,
“ভাবি চলে গেছে!”
ইয়ামিনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
“চলে গেছে মানে? তোরা আটকাস নি!”
আয়দা সুপ্তপর্ণে শ্বাস ছাড়লো। বলল,
“আমরা কেউ ঘুম থেকে উঠে ভাবিকে পায়নি। আমার রুমেই ছিলো রাতে। সকালে এ চিঠি পাই। আর… জানতে পারি সে চলে গেছে!”

ইয়ামিনের কি করবে ভেবে পেলো না। দাঁড়িয়ে ছিলো সে। বসে পড়লো। হাতের চিঠি মেলে ধরলো। থক করে উঠলো বুক, সেই লেখা, সেই ঘ্রাণ, সেই যেন পরিচিত অনুভূতি। ইয়ামিন চিঠিতে চুমু খেলো। বুকে চেপে ধরে বসে রইলো। হুট করে উঠেই বেরিয়ে গেলো মহুয়াকে খুঁজতে। কিন্তু হয়! সে আজ-ও ধরা দিলো না। গাড়ির সিটে হেলে পড়লো ইয়ামিন। চোখের সামনে ভেসে উঠলো জঙ্গলে কাঁটানো মহুয়ার বাচ্চা বাচ্চা মুখ খানি। ইয়ামিন হারিয়ে গেলো। চোখের সামনে ঘোলা হয়ে গেলো। দূর থেকে ভেসে এলো চিৎকার, চেচামেচির শব্দ। ইয়ামিন জ্ঞান হারালো।

যুগলবন্দী পায়রা পর্ব ১৪