যুগলবন্দী পায়রা পর্ব ৫ || সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

যুগলবন্দী পায়রা পর্ব ৫
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

মেয়েটিকে ঘর থেকে বের করে দেয়ার পর ইয়ামিন লক্ষ করলো তার মন খারাপ লাগচ্ছে।ভিষন রকম খারাপ। অথচ মন খারাপ লাগার মতো কোনো কারণ ছিলো না। বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ইয়ামিন তার হল রুমের বড় কাঁচের জানালার সামনে এসে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরিয়েছে। নিকোটিনের কালো ধোয়া টান দিয়ে নাক, মুখ দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে ইয়ামিন। মেয়েটিকে সে এক রাতের জন্যই আশ্রয় দিয়ে ছিলো। সকাল হয়েছে সে চলে যাবে এটাই স্বাভাবিক! কিন্তু মেয়েটির সাথে সেই রূঢ় ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিয়েছে তাই কি খারাপ লাগচ্ছে? ইয়ামিন সিগারেটের আরেক টান দিলো।

বৃষ্টির ঝাপটা আসচ্ছে আধো খাওয়া সিগারেট ভিজে যাচ্ছে। তাতেও তারা নেই ইয়ামিনের। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাহিরে। অথচ তার দৃষ্টি কোথাও স্থীর নেই। চোখে ভাসচ্ছে সকালে টেবিলে বসে খাবার খেতে থাকা মেয়েটি।গোল-গাল একটি পরিচিত মুখ। যেন মনে হচ্ছে কত চেনা? অথচ ইয়ামিন জানে? তা সম্ভব নয়। তবুও মনের মাঝে প্রশ্ন উদ্বেগ হয়, কেন-ও নয়?মনের এই অসংখ্য প্রশ্ন এক পর্যায় জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে জানালা বন্ধ করে দেয়। হয়তো তার ধারণা মনের দুঃখ, কষ্ট সে এই মুহূর্তে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে বাহিরে। ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো ইয়ামিন। সোফায় বসে আরেকটি সিগারেট ধরিয়ে টিভি ওন করলো। সাথে সাথে ভেসে উঠলো চট্টগ্রামের সাথে বিছিন্নর খবর। ইয়ামিন কি ভেবে উঠে দাঁড়ালো। সিগারেট এস্টে মারিয়ে অস্থির হয়ে বেড়িয়ে গেলো। এত ব্যাকুলতা কেন হচ্ছে ইয়ামিনের?

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

কার্যকরণ ছাড়া পৃথিবীতে কিছুই হয় না!সে কি কার্যকারণ ছাড়াই মেয়েটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে?নিশ্চয়ই না?আবার হয়তো আছে? যা ইয়ামিন স্বীকার করতে চাইছে না? মেয়েটি দু হাত মুখ চেপে কাঁদচ্ছে বসে। যতবার মেয়েটিকে দেখে তার বুক ধকধক করে। মনে হয় তার মেহুলের কথা! কি অসম্ভব মিল তাদের! এলো মেলো কেশ বাতাসের সাথে উড়চ্ছে। ইয়ামি তার কাছে গেলো।
“এক্সকিউজ মি মিস?”
পরিচিত এক কন্ঠে চট করে তাকালো মহুয়া মনের ভয় ভীতি ঠেলে ইয়ামিনকে জড়িয়ে ধরলো। হাউমাউ করে কেঁদে দিল বুকে মুখ গুঁজে। বেচারা ইয়ামিন হতবিহ্বল ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো। কি আশ্চর্য? মেয়েটি কাঁদলেও মেহুলের মতো মনে হয়। শরীর কাঁপতে লাগে ইয়ামিনের! একরকম চেহারার মানুষ অনেকেই আছে এ পৃথিবীতে। মিল থাকা কি অস্বাভাবিক কিছু?
“আপনি ঠিক আছেন? কাঁদচ্ছেন কেনো মিস?”
মহুয়া নাক টানলো। ইয়ামিনের বুক থেকে মাথা তুলে কোঁদন রত কন্ঠে বলল,,
” আমি বাসায় যেতে পারবো না! এখানেও কাউকে চিনি না! কোথায় যাবো ভেবে পাচ্ছি না। যার জন্য এত দূর এসেছি তার ঠিকানা হারিয়ে ফেলেছি। কি করবো বুঝতে পাড়ছি না। আপনাকে দেখে আর কান্না আটকাতে পারিনি৷ মনে হচ্ছিলো আপনি আমার শেষ ভরসা!”
আবার কেঁদে উঠলো মহুয়া। ইয়ামিন বলল,,
“কাঁদবেন না মিস! আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন!”
মহুয়া কিছু বলল না তাকিয়ে রইলো ইয়ামিনের গম্ভীর দাম্ভিকতাপূর্ন মুখ পানে।

সন্ধ্যার আজান দিচ্ছে। মহুয়াকে নিয়ে বের হয়েছে ইয়ামিন। না চাইতেও সে চাইছে মহুয়ার সাহায্য করতে। কিন্তু মেয়েটিকি পাগল? এত দূর এক ধোঁয়াশার পিছনে ছুটে আসচ্ছে মহুয়া?
“তো আপনি আপনার চিঠি প্রেমিক খুজতেই এত দূর চলে এলেন?আদো তার অস্তিত্ব আছে কি না? ভেবেছেন কখনো?এটা পাগলামি ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না মিস মহুয়া!”
মহুয়া গাড়ির জানালা ভেদ করে বাহিরে তাকিয়ে আছে। পড়নে তার কলাপাতা রঙ্গের সুতি জামা। বড় চুল গুলো আজ খোঁপা করা৷ সামনের ছোট চুল গুলো বাতাসের তালে তালে নড়ছে।মহুয়া ডান হাতে চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিলো। ঠোঁটে দেখা গেল চকচক হাসি। বৃষ্টি নেই অন্ধকার স্থীর চারিদিক। মহুয়া বলল,,
“ভালোবাসা মানেই তো পাগলামি! আজ যদি তার সাথে শুধু প্রেমের সম্পর্ক থাকতো? তাহলে হয়তো ভুলে যেতাম৷ কিন্তু তার সাথে আমার অন্তরের সম্পর্ক, আত্মার সম্পর্ক।”
ইয়ামিন হাসলো, কিশোরী তরুণী মেয়েদের এসব বিষয়ে বুঝি ঝোঁক বেশি থাকে? এরা দুনিয়ার কালো কুৎসিত অন্ধকার ভয় পায় না? ভালোবাসায় এত শক্তি? তাহলে ইয়ামিনের সাথে এমন কেন হলো? মুহুর্তে ইয়ামিন বুঝতে পারলো তার বিরক্তি লাগচ্ছে। এই ভালোবাসা নামক বস্তু তার বিরক্তি বাড়চ্ছে। ইয়ামিন অকপটে বলল,,

যুগলবন্দী পায়রা পর্ব ৪

“এসব গল্প, কথা, কাল্পনিক। বাস্তবতায় ভিত্তিহীন!”
মহুয়া কঁপাল কুচকে ইয়ামিনের দিক তাকালো। বিজ্ঞ মানুষদের মতো বলল,,
“মোটেও নয়। ভালবাসা পবিত্র। ভালোবাসা আছে বলেই এ পৃথিবী টিকে আছে!”
“তা আছে। কিন্তু চিঠি, ফিঠির প্রেম এসব বাচ্চামো!”
“নব্বই দশকের মানুষ গুলো কিন্তু এমন বাচ্চামো করতো সাহেব! ”
“তখনের বিষয় বস্তু আলাদা ছিলো মিস মহুয়া। আর এখন ছেলে, মেয়ে ঘন্টায় ঘন্টায় প্রেম করে। আর সেখানে আপনার পায়রা প্রেমিক খুঁজে পাওয়া কি ধোয়াশা নয়?”
মহুয়ার কান্না পেলো। চোখ দুটি বাহিরে নিবদ্ধ করলো। মিনমিন করে বলল,
” সে আছে। আমি জানি আছে। আমি যেমন তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি? সেও খুঁজে বেড়াচ্ছ। আমার মন বলছে সে আছে!”
মহুয়ার ভাবনা তড়াক করে বেঘাত ঘটলা মহুয়ার ফোনের রিং টোন। কিছুক্ষণ আগেই ফোন ওন করেছিলো সে। বাসায় বার কয়েক কল দিয়েও কোনো লাভ হয়নি মহুয়ার কেউ ফোন তুলে নি। কিন্তু মহুয়া অবাক। বাসা থেকে কল এসেছে দেখে। চোখ দেখে জলের ফোয়ারা। ফোন তুলতেই ওপাশ থেকে ভেসে উঠলো খড়খড়ে কন্ঠ,
” আমাকে অযথা ফোন দিয়ে বিরক্ত করবে না তুমি। আমি ভেবে নিয়েছি আমার এক মেয়ে মরে গেছে। এর পর ফোন দিলে আমার আর তোমার মায়ে মরা মুখ দিখবে!”

মহুয়ার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। ওপাশ থেকে ফোন কেঁটে যেতেই হু হু করে কেঁদে উঠলো মহুয়া। বাবার বলা প্রতিটি কথা বুকে সুইয়ের মতো বিদ্ধ করতে লাগলো।ইয়ামিন মহুয়ার দিক তাকিয়ে রইলো। তার বুকে কেমন জানি লাগচ্ছে মেয়েটিকে কাঁদতে দেখে। মনে হচ্ছে দুনিয়ার সব বাঁধা পেরিয়ে খুশি গুলো মহুয়ার পায়ের নিচে রাখতে। কিন্তু এমন কেন লাগচ্ছে ইয়ামিনে? কেন মন চাইছে? মেয়েটিকে বুকের সাথে শক্ত করে ঝাপটে ধরতে?”
মহুয়ার সাথে ইয়ামিনের দৃষ্টি মিলন হলো। কিছুক্ষন আগের সেই হাসতে থাকা মেয়েটি এখন কতটা না মলিন? ইয়ামিনের সইতে ইচ্ছে করলো না। মহুয়ার হাতে ইয়ামিন আড়ষ্টতার সাথে ধরলো। মহুয়া তাকাতেই ইয়ামিন বলল,,
“মিস মহুয়া এক জায়গায় যাবেন?দেখবেন আপনার মন বালো লাগবে!”
মহুয়া মাথা নাড়লো। সে যাবে। মনের কষ্ট থেকে কিছুটা হলেও দূরে থাকা যাবে!

যুগলবন্দী পায়রা পর্ব ৬