অপ্রিয় সেই প্রিয়জন গল্পের লিংক || Ishita Rahman Sanjida

অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ১
Ishita Rahman Sanjida(Simran)

বাড়িতে প্রবেশ করতেই নিজের স্ত্রীকে শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে রুম থেকে বের হতে
দেখে থমকে দাঁড়ায় ইফাজ। কিন্তু সবচেয়ে বেশি অবাক হয়‌ ওর স্ত্রীর পিছন থেকে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে একজন পুরুষ কে বের হতে দেখে। সেই পুরুষ টা আর কেউ নয়। ইফাজের স্ত্রী পিহুর চাচাতো ভাই নেহাল। পিহু দরজা দিকে তাকাতেই থমকে গেল ইফাজকে দেখে। ইফাজ অশ্রুসিক্ত নয়নে পিহুর দিকে তাকিয়ে আছে। রাগে তার মুখে লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে। হাতের মুঠো শক্ত হয়ে গেছে।এসব আর সহ্য করতে পারলো না ইফাজ।

ঝড়ের গতিতে এসে পিহুর গালে সর্বশক্তি দিয়ে থাপ্পর বসালো। টাল সামলাতে না পেরে পিহু দু’কদম পিছিয়ে গিয়ে নেহালের সাথে ধাক্কা খেলো। নেহাল পিহুকে ধরতেই পিহু নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। চোখে থেকে তার পানি বের হচ্ছে। গালে হাত দিয়ে পিহু ইফাজের দিকে তাকালো। ইফাজ আবার পিহুর হাত ধরে টেনে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে বলল,

‘ছিঃ তুমি এতোটা খারাপ আমি আগে ভাবিনি। আন্টি ঠিকই বলেছিল যে এই নেহালের সাথে তোমার সম্পর্ক আছে কিন্তু আমি তা বিশ্বাস করিনি। এতোটাই ভালোবেসেছি তোমাকে। আর তুমি আমার ভালোবাসাকে শেষ করে দিলে?? ছিঃ আমার ভাবতেও ঘেন্না হচ্ছে।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইফাজের কথা শুনে পিহু বাকহীন হয়ে গেছে। মুখ থেকে কথা বের করার চেষ্টা করেও পারছে না। ইফাজ আবার বলল,’তোমার জন্য আমি আমার সবকিছু ছেড়ে এখানে এসেছি। তোমার জন্য আমি আমার বাবা মা’কে ত্যাগ করেছি। আমার বাবার বিশাল সম্পত্তি ছেড়ে ছোটখাটো চাকরি নিয়েছি। শুধু মাত্র তোমাকে ভালোবাসি বলে‌। আর তুমি!! আমার ভাবতেও অবাক লাগছে পিহু। কি আছে এই নেহালের মধ্যে যা আমার মধ্যে নেই??হা,বলো??’

পিহু কম্পিত কন্ঠে বলল,’ইফাজ তুমি একবার আমার কথাটা শোন।’
পিহুর কথা শুনেই ইফাজ ধমকে উঠলো, ‘চুপপ আর একটাও কথা বলবে না তুমি।’
ইফাজের ধমকে পিহু কেঁপে উঠলো। ইফাজের দিকে তাকিয়ে অনবরত চোখের পানি ফেলতে লাগল। ইফাজ তাচ্ছিল্য করে হেসে বলল,’তুমি কি ভেবেছে তোমার কান্না আর মন গলানো কথা শুনে আমি গলে যাব?? কখনোই না। একটা কথা মনে রেখ ভালোবাসলে যেমন সবটা দিয়ে ভালোবাসতে

পারি আর ঘৃণা করলেও সবটা দিয়ে ঘৃণা করতে পারি। আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা তোমাকে ভেবেছিলাম। কিন্তু তুমি আমার সেই প্রিয়জন নও। আমি মিথ্যে ছিলাম। তুমি আমার অপ্রিয় ছিলে সেটা আজকে বুঝতে পারলাম। এইজন্য তুমি আমাদের সাথে ঘুরতে যাওনি। বাহানা দেখিয়ে বাড়িতে থেকে গেছো তাই তো??’

কথা বলতে বলতে ইফাজের গলা ধরে এসেছে। খুব ভালোবাসতো সে পিহুকে কিন্তু সেই পিহু তার সাথে আজ এতবড় প্রতারণা করলো??পিহু ইফাজের দিকে তাকিয়ে কেঁদেই চলেছে। পিহু বলল,’প্লিজ ইফাজ সবটা চোখের দেখায় বিচার করাটা ঠিক না। একবার আমার কথা,,,,’
‘কি শুনবো তোমার কথা?? সবটাই তো নিজের চোখেই দেখে নিলাম। এতদিন মানুষের কাছে শুনেছি কিন্তু বিশ্বাস করিনি আজতো নিজের চোখে দেখলাম অবিশ্বাস করি কিভাবে??’

পিহু অবাক হয়ে গেল। কে ইফাজকে ওর নামে উল্টাপাল্টা খবর দিলো?? পিহু কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইফাজ পিহুর দুবাহু শক্ত করে ধরলো। ব্যথায় পাচ্ছে পিহু কিন্তু আজকে এই ব্যথা যেন কিছুই নয়। এর থেকে হাজার গুণ বেশি ব্যথা ওর বুকে হচ্ছে। ইফাজ পিহুকে ঝাঁকিয়ে বলল,’কেন এমন করলে?? একবার ও ইশানের কথা ভেবে দেখনি??’

ইফাজের কথায় পিহুর ঘোর কাটে। ইফাজের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দরজার দিকে তাকায়। বড় টেডি বিয়ার আর রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে ইশান। পিহু আর ইফাজের একমাত্র ছেলে ইশান। বয়স মাত্র দশ। ইশান হাতের খেলনাগুলো আঁকড়ে ধরে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। পিহুর বুকটা ধক করে উঠল। ইশান ও কি তার বাবার মতো তাকে ভুল বুঝবে??আম্মু বলে কি আর ডাকবে তাকে?? বুকের ভেতর জ্বলছে খুব। আগে ইফাজকে সবটা বোঝাতে হবে। পিহু আবার ইফাজের দিকে তাকিয়ে বলল,’ইফাজ আমার কথা শোনো।’

ইফাজ আবার হাত ওঠালো পিহুকে থাপ্পর মারার জন্য। পিহু চোখটা খিচে বন্ধ করে ফেলল। কিন্তু যখন দেখলো যে ইফাজ ওকে আঘাত করছে না তখন চোখ মেলে তাকালো।নেহাল ইফাজের হাতটা ধরে রেখেছে। ইফাজ ক্রোধ নিয়ে নেহালের দিকে তাকাতেই নেহাল ধাক্কা মেরে ইফাজকে সরিয়ে দিলো। তারপর বলল,’অনেক হয়েছে আপনার বলা। এবার থামুন।’
ইফাজ রাগে গজগজ করতে‌ করতে বলে,’তুই কে আমাদের মাঝে কথা বলার??আমি আমার স্ত্রীকে মারব তুই বলার কে??’

বলেই নেহালের হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে দিলো। নেহাল বলল,’কিন্তু এখন তো বুঝতে পারছেন যে পিহু আপনাকে চায় না। তাহলে আপনি আমাদের মাঝে দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন কেন??’
নেহালের কথা শুনে পিহু রাগন্বিত স্বরে বলে, ‘নেহাল।’
‘প্লিজ পিহু আজকে আমাকে বাধা দিও না। দেখুন পিহু আপনার সাথে হ্যাপি নয়। কি নেই আমার গাড়ি বাড়ি টাকা পয়সা সব কিছু আছে। আর আপনার থেকেও নেই। কি জন্য পিহু আপনার সাথে থাকবে বলুন তো। তাই আপনি আমাদের মাঝে আর থাকবেন না। চলে যান তাহলে আপনি ও হ্যাপি আর আমরাও হ্যাপি।’

কথা শেষ হতেই পিহু নেহালের গালে থাপ্পড় মারলো। নেহাল নিচের দিকে তাকালো। ইফাজ পিহুর হাত ধরে বলল,’তোমাদের এই মোলড্রামা বন্ধ করো। অনেক হয়েছে আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তুমি হ্যাপিনেস চাও তো??তাই হবে আমি আমার ছেলেকে নিয়ে চলে যাব। তোমরা তোমাদের মতো করে সুখে থেকো।’

ইফাজ পিহুর হাত ছেড়ে রুমে চলে যায়। পিহু কড়া নজরে নেহালের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আগে ইফাজকে সবটা বোঝাই তারপর তোমাকে দেখছি।’ বলেই পিহু ইফাজের পিছু পিছু রুমে যায়। নেহাল বাকা হেসে বের হয়ে যায়। ওর কাজ শেষ এখানে আর থাকা চলবে না।
ইফাজ রুমে গিয়ে নিজের জামাকাপড় গোছাচ্ছে আর পিহু বারবার বাধা দিচ্ছে কিন্তু ইফাজ কোন কথা শুনতে চাইছে না। পিহুকে বারবার ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু পিহু তাতে দমছে না। বারবার ইফাজের সাথে কথা বলতে চাইছে কিন্তু ইফাজ কিছুই শুনছে না।

ছোট্ট মীরা দরজার পর্দা ধরে তাকিয়ে আছে পিহু আর ইফাজের দিকে। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে সব দেখেছে। পাঁচ বছর বয়সী মীরা কিছু বুঝতে পারছে না। ছোট একটা টেডি বিয়ার কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে তো ঘুমিয়ে ছিল। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে তার ঘুম ভেঙেছে। তারপর যেসব কান্ড ঘটছে তা ওর ছোট্ট মাথায় ঢুকছে না। তবে সে এটুকু বুঝতে পারছে যে ইফাজ আর ইশান চলে যাবে। মীরা চোখ ঘুরিয়ে ইশানের দিকে তাকালো। ইশান এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। মীরা আস্তে আস্তে ইশানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় বলে,’ইশান ভাইয়া তুমি আর ভালো আব্বু কি চলে যাবে??’
ইশান মীরার দিকে তাকালো। এতক্ষণ সে মা বাবার রুমের দিকে তাকিয়ে ছিলো। মীরার প্রশ্নে সে চকিতে তাকিয়ে বলে,’হুম মীরা। এই নে তোর বড় টেডিবিয়ার।’

ইশান টেডিবিয়ারটা মীরার দিকে এগিয়ে দিলো। মীরা নিলো না বলল,’তোমরা চলে যেও না ইশান ভাইয়া। আমার খুব খারাপ লাগছে। আমি আর তোমার সাথে দুষ্টুমি করব না তবুও যেও না।’
ইশান মীরার হাতে টেডিবিয়ার দিয়ে মীরার মাথায় হাত রেখে বলল,’চিন্তা করিস না মীরু আমি বড় হলে তোকে একদিন নিয়ে যাব আমার কাছে।’
মীরা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,’আর মনি’মা কে নেবে না??’
সাথে সাথে ইশান রেগে গেলো বলল,’নাহ আমার মা খুব খারাপ মীরু। মা আমার বাবাকে একটুও লাভ করে না।’
‘না ইশান ভাইয়া মনি’মা খুব ভালো। ওই আঙ্কেলটা খুব পঁচা।’

‘তুই এখন ছোট মীরু তাই কিছু বুঝতে পারছিস না। বড় হলে ঠিকই বুঝবি।’
মীরা নাক ফুলিয়ে বলল,’তুমি বুঝি বড়??মনি’মা তো সবসময় বলে তুমিও ছোট।’
ইশান কিছু বলার আগেই ইফাজ ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে সাথে পিহু ও। পিহু কাঁদতে কাঁদতে বলল,’প্লিজ ইফাজ রাগের মাথায় কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিও না। সব চোখের দেখা সত্যি হয় না।’

ইফাজ পিহুর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে,’সব চোখের দেখা যেমন সত্যি হয় না। তেমনি সব চোখের দেখা মিথ্যা ও হয় না। আমি নিজের চোখে না কোন মিথ্যা দেখেছি আর না শুনেছি।’
পিহু এবার ঝেড়ে গলায় বলল,’তুমি এভাবে ইশানকে নিয়ে যেতে পারো না। ইশান আমারও ছেলে। তোমার যেমন ইশানের উপর অধিকার আছে তেমনি আমার ও আছে।’
ইফাজ সহজ গলায় বলল,’ওহ আচ্ছা?? তাহলে ইশানকে জিজ্ঞাসা করো সে কার সাথে থাকতে চায়??’

পিহু ইশানের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওর হাত ধরে বলল,’ইশান তুমি প্লিজ মা’কে ভুল বুঝো না। সত্যি তোমার মা কিছুই করেনি। তুমি যেও না ইশান। তোমাকে ছাড়া মা থাকতে পারবে না। প্লিজ তোমার আব্বুকে একটু বলো।’
ইশান পিহুর থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ‘আমি ছোট নই আম্মু আমি সবটা বুঝি। তুমি কেন করলে এরকম আম্মু?? আব্বু তো তোমাকে কতো লাভ করে তারপরও তুমি কেন এমন করলে??আই হেট ইউ আম্মু আই হেট ইউ। আমি আব্বুর সাথে চলে যাবো। তোমার সাথে থাকবো না।’

ইশান দৌড়ে ইফাজকে জড়িয়ে ধরলো। ইফাজ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,’দেখলে তো এইটুকু ছেলেও সব বোঝে। তুমি সত্যি খারাপ মা। আর একজন খারাপ মায়ের কাছে আমি আমার ছেলেকে রেখে যেতে পারি না। বাড়ি গাড়ি টাকা পয়সার প্রতি যে তোমার এতো লোভ তা আমি আগে জানতাম না। আমার কি কম ছিল পিহু?? জীবনে কি টাকা পয়সা সব?? ভালোবাসার কোন মূল্য নেই তোমার কাছে??তাই তো আজ নেহালের টাকার প্রতি তুমি আকৃষ্ট হয়েছো। তবে তাই হোক। তুমি নেহালের সাথেই থাকো। আমি বাঁধা দেব না।

আর হ্যা ডিভোর্স পেপার শিঘ্রই পেয়ে যাবে। তারপর তোমার সব রাস্তা পরিষ্কার। আর কেউ তোমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।’
ইফাজ ইশানের হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। পিহু মেঝেতে বসে চিৎকার দিয়ে কাঁদছে আর বলছে,’এভাবে ইশানকে আমার থেকে নিয়ে যেও না ইফাজ। তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। সব চোখের দেখা সত্যি হয় না। একবার আমার কথা শুনে যাও ইফাজ।’

ইফাজ ততক্ষণে চলে গেছে। ছোট্ট মীরা ও এবার কাঁদছে পিহুর কান্না দেখে। দৌড়ে এসে সে পিহুর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লো। পিহু তখন জোরে জোরে কাঁদছে আর বিলাপ করছে। বারবার ইফাজকে ফিরে আসতে বলছে। মীরা পিহুর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,’তুমি কেঁদো না মনি’মা। আমারও খুব কান্না পাচ্ছে। একবার আমার আম্মু ফিরে আসুক তারপর দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। আম্মুকে বলে ইশান ভাইয়া আর ভালো আব্বুকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো দেখো। তুমি কেঁদো না। তুমি কাঁদলে আমার খুব কষ্ট হয়।’

মীরার কথা পিহুকে আরও দূর্বল করে দিলো। বুকের মাঝে শক্ত করে চেপে ধরলো মীরাকে। মীরাকে ধরেই সে কাঁদতে লাগলো। ছোট্ট মীরা পিহুর কষ্টটা বুঝলো কিন্তু ওর স্বামী আর ছেলে তা বুঝলো না। এতে পিহুর আরো কষ্ট হচ্ছে। মীরাও সমান তালে কেঁদে চলেছে পিহুর সাথে। পনেরো বছরের সম্পর্ক এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল।

ইফাজ আর পিহু ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। পিহু ছিল নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাবা ছোটবেলায় মারা গিয়েছে। মা গার্মেন্টসে চাকরি করে পিহুকে মানুষ করেছে। পিহুও দমে যায় না নি। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করতো। তারপর কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে চাকরি নিয়ে নিজের পড়াশোনা আর সংসার চালাতে লাগলো। ভার্সিটিতে পা দিয়ে তার ইফাজ খানের সাথে পরিচয় হয়। ইফাজ পিহুর সিনিয়র ছিলো। পিহুর সৌন্দর্য আর সাধারণ চলাফেরা ইফাজকে মুগ্ধ করে।

একটা সময় ইফাজ পিহুকে প্রপোজ করে। কিন্তু পিহু রাজি হয় না। কারণ ইফাজ অনেক বড় ঘরের ছেলে। ইফাজের বাবার বড় বড় ব্যবসা আছে দেশে বিদেশে। পিহুর মতো সামান্য একটা মেয়ের সাথে ইফাজের যায় না। কিন্তু ইফাজের পাগলামির কাছে হার মানে পিহু। বাধ্য হয় ইফাজের প্রেমে সাড়া দিতে। ওদের ভালোবাসা আস্তে আস্তে গভীর হয়ে যায়। ভার্সিটিতে ওরা বেস্ট কাপল হিসেবে আখ্যায়িত হয়। তবে কিছু কিছু মেয়েরা পিহুকে হিংসা করতো। কারণ ইফাজ খান এতো সুন্দর স্মার্ট হয়ে কিভাবে এরকম নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হলো।

এতে ইফাজের কোন মাথাব্যথা ছিল না।
তবে সমস্যা হলো ইফাজের পরিবার নিয়ে। ইফাজের বাবা মা কিছুতেই পিহুর সাথে তাদের ছেলেকে বিয়ে দেবেন না। ইফাজ তাদের একমাত্র সন্তান। তারা তাদের ছেলেকে অনেক বড় ঘরে বিয়ে করাবেন। মেয়েও ঠিক করে ফেলেছিলেন। কিন্তু ইফাজের জেদের কাছে তাদের সিদ্ধান্ত কিছুই না। অতিরিক্ত বদমেজাজি আর জেদি ছেলে ইফাজ। যা বলে তাই করে ছাড়ে। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। পিহুর হাজার বারণ সত্ত্বেও তাকে বিয়ে করে নিয়ে এসে হাজির হয় বাড়ির কাঠগড়ায়।

পিহুকে সে এক প্রকার জোর করেই বিয়ে করছে। পিহু ইফাজের কথা ফেলতে পারেনি। ভালোবাসা তার এতই গভীরে গিয়ে পৌঁছেছিল যে ইফাজের প্রতিটা কথা শুনতে সে বাধ্য।
কিন্তু দুঃখের বিষয় যে খান বাড়ি থেকে সেদিন ইফাজ আর পিহু ফিরে এসেছিল। কারণ ইফাজের বাবা তাদের ঢুকতে দেয়নি খান বাড়িতে। বলেছিলেন যদি ইফাজ পিহুকে ছেড়ে দেয় তবেই সে খান বাড়িতে যেতে পারবে। কিন্তু জেদি ইফাজ তা করেনি। পিহুকে নিয়ে ওর বাসায় চলে আসে।
তারপর থেকে ইফাজ আর পিহুর ছোট্ট সংসার শুরু হয়। কষ্ট হলেও মানিয়ে নেয় পিহু।

ইফাজ কয়েকমাস চেষ্টা করে ছোট একটা চাকরি পায়। আর পিহু তো স্কুলে চাকরি করে। কোনমতে চলে যায় ওদের। দিনশেষে যখন ইফাজ ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে ফেরে পিহু তখন নিজ হাতে ঠান্ডা পানি এগিয়ে দেয়। সযত্নে ইফাজের ঘাম মুছে দেয়।ইফাজের বুকে মাথা রেখে শান্তি পায় পিহু। ইফাজও নিজের প্রেয়সিকে জড়িয়ে ধরে রাত পার করে দেয়।

ওদের জীবনে আরেক খুশির খবর আসে যখন পিহু প্রেগন্যান্ট হয়। ইফাজ সেদিন খুব খুশি হয়েছিলো। একদফা পিহুক কোলে নিয়ে ঘুরেছিল। বাবার হওয়ার খুশিতে সবাইকে মিষ্টি মুখ করিয়েছিলো। সবসময় পিহুর যত্ন করতো ইফাজ। তাছাড়া পিহুর মা তো আছেই।
যেদিন পিহুর ভেলিভারি হলো সেদিন হসপিটালের করিডোরে দাঁড়িয়ে ছিল ইফাজ। সর্বপ্রথম ইফাজ ইশানকে কোলে তুলে নিয়েছিল। ইশানকে কোলে রেখেই পিহুর কপালে গভীর চুম্বন করেছিলো।
ওদের বিয়ের সাড়ে এগারো বছর আর প্রেমের সম্পর্ক ছিল সাড়ে তিন বছর। এই নিয়ে মোট পনেরো বছরের সম্পর্ক ওদের। আর আজ এক নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেছে।

এসব ভাবতে ভাবতেই পিহুর চোখে পানিতে ভরে গেল। এখনো সে দরজার সামনে বসে আছে। এই বুঝি ইফাজ ইশানকে নিয়ে ফিরে আসবে। এই বুঝি ইশান আম্মু আম্মু বলে ঝাঁপিয়ে পড়বে ওর কোলে। কিন্তু ওর ভাবনা সত্যি হলো না। ইফাজ এলো না ইশানকে নিয়ে।

ছোট্ট ইশান মাকে ছাড়া থাকবে কিভাবে??পিহু সেসব ভেবেই কাঁদছে। এমন সময় এক জোড়া পা এসে থামল পিহুর সামনে। বুট পরা পায়ের মালিকের দিকে তাকালো সে। মালিককে দেখেই রাগে কাঁপতে লাগলো পিহুর সারা শরীর। নেহাল হেসে তাকালো পিহুর দিকে। তারপর এক ঝটকায় পিহুর হাত ধরে দাঁড় করালো। পিহুর কোল থেকে ছিটকে দূরে পড়ে গেল মীরা। পিহু সেদিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল,,,,,,

এই গল্পটি ভিডিও দেখতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন

অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ২