প্রেমের সাতকাহন পর্ব ১৩ || emotional love story

প্রেমের সাতকাহন পর্ব ১৩
সুমাইয়া জাহান

আননোন নাম্বার থেকে আসা কল টা রিসিভ করতেই ওপাস থেকে একজন খুব ধমক দিয়ে বলে উঠলো,

—- তোকে আমি কতোবার বলেছি বাড়ি ফিরলেই আমাকে একটা ফোন করে জানাবি।আর এখন দুপুর ঘরিয়ে রাত বিকেল শেষ হতে লাগলো অথচ তুই একটা মেসেজ দেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করলি না।তুই জানিস আমি কতোটা টেনশনে ছিলাম৷তা জানবি কেন তুই তো পারিস শুধু কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমোতে!
অপমান! ঘোর অপমান করলো ব্যাট!আমার ঘুমকে নিয়ে এতো অপমান?এখনো ঘুম ভালো করে কাটেনি তাই বুঝতেই পারছি লোকটাকে।কন্ঠ টা তো নীরের মতোই লাগছে আর কথা গুলোও।কিন্তু এই নাম্বার টা তো নীরের বলে মনে হচ্ছে না।তাও আরেক বার ভালো করে ফোনের স্কিন থাকা নাম্বার টা দেখে নিলাম।নাহ এইটা তো নীরের না।তাই ফোনটা ফট করে কেটে দিলাম।যাগগে যার খুশি নাম্বার হোক তাতে আমার কি! আমি তো এখন শুধু ঘুমাবো।
তারপর আবার শুতে যাওয়ার আগেই ওই নাম্বার থেকে আবারও ফোন আসলো।মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেলো।একেতো কাঁচা ঘুম টা ভাঙ্গিয়ে আমার ঘুমের অপমান করছে তারউপর বারবার ফোন করেই যাচ্ছে। যেন আমি উনার বাপের সম্পত্তি। আর কিছু না ভেবে ফোনটা একদম ওফ করে দিয়েছি।দে এবার যতো খুশি ফোন দে!হাই তুলতে তুলতে আবারও বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলাম। আর সাথে সাথেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলাম।

আমি এখন এমন এক দেশে আছি যেখানে খাবার গাছে গাছে ঝুলছে। আবার খাবারের ইয়া বড়ো বড়ো পাহাড়ও আছে।চারিদিকে শুধু খাবার আর খাবার।কোনো গাছে আইসক্রিম ঝুলছে তো কোনো গাছে ফুচকা ঝুলছে।বলতে গেলে এখানে আমার সব প্রিয় খাবার গুলোই আছে।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় আমার সব প্রিয় খাবার গুলো আমার সামনে পরে আছে তাও আমি কিছুই খাচ্ছি না।শুধু হেঁটেই চলেছি সামনের দিকে।একটু ছুঁয়েও দেখছি না খাবার গুলোতে।যতো সামনে এগোচ্ছি ততোই খাবার দেখতে পাচ্ছি।তাই মনে মনে এই জায়গাটার নাম ঠিক করলাম “খাদক রাজ্য”।নামটা জায়গাটার সাথে দারুণ মানিয়েছে।এখানে হাজার রকমের খাবার থাকা সত্বেও কোনো কিছু যাওয়ার ইচ্ছে হয় না।প্রচন্ড খাদক লোকজনও এখানে আসলে কিচ্ছুই খেতে চাইবে না।যাইহোক আমি আরো একটু সামনে এগোতেই একটা কালো নদী দেখতে পেলাম।দেখ মনে হচ্ছে এটা কোনো চকলেটর নদী।নদীর তীরে একটা নৌকা বাঁধা। আমিও আস্তে আস্তে নৌকায় গিয়ে উঠলাম।আর আমি নিজে থেকেই নৌকার বইঠা দিয়ে নৌকা চালানো শুরু করলাম।কিছুদূর যেতেই হঠাৎ করে আমার উপর গরম কিছু পরতে লাগলো।আমার দম আটকে যাচ্ছে।বইঠা ছেড়ে আমি বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিয়ে উঠতেই দেখতে পেলাম নীর আমার দিকে ঝুকে আছে।আর ঝুকে থাকার কারণে ওর গরম শ্বাস আমার উপর পরছে।না পারছি উঠতে না পারছি এইভাবে থাকতে।তাই চোখ বন্ধ করে মিহ সুরে বললাম,

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

—- আমার মুখের উপর থেকে সর!
ও আমাকে ওই ভাবে আরো কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষন করে একটু পর সরে গেলো।ও সরতেই আমি জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে লাগলাম।বুকের ভিতর যেন হাতুড়ি পিটাচ্ছে।তারপর নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে ওর দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বললাম,
—- একটু হলেই তো দম বন্ধ হয়ে মারা যাচ্ছিলাম।কারো ঘরে আসতে হলে নক করে আসতে হয় জানিস না।আমার খাদক রাজ্যের চকলেট নদীতে নৌকা চালানো থেকে হঠাৎ করে এভাবে নিয়ে এলি কেন?
আমার কথা শুনে আমার দিকে ভ্রু উঁচু করে তাকালো নীর।ওর চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে।বোঝাই যাচ্ছে ভিষণ রেগে আছে।কিন্তু আমি কি করেছি যাতে ও এমন রেগে বোম হয়ে আছে?…..ও নো ও তো আমাকে সকালে বলেছিলো বাড়ি এসেই যেন ফোন করি।কথাটা আমি কি করে ভুলে গেলাম।এবার তো আমি শেষ!যা রেগে আছে চোখ দিয়েই তো আমাকে ভস্ম করে দিচ্ছে। আমি বোকা হেঁসে বললাম,

—- হে হে হে হে কখন এসেছিস তুই? আমাকে ডেকে দিলেই তো হতো!তা এখন চা খাবি না কফি খাবি?দুই মিনিট বস আমি চা কফি কিছু একটা বানিয়ে আনছি।
চা কফি তো জাস্ট একটা অযুহাত। আমি তো এখন এখান থেকে মানে মানে কেটে পরার ধান্দায় আছি।একবার এই ঘর থেকে বেরোতে পারলে সোজা মামনীর ঘরে দৌড়ে চলে যাবো আজকে আর ওই ঘর থেকে বেরোবোই না।তাই পা টিপে টিপে দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম যেই না আমি দরজা খুলো ঠিক তখনই ঝড়ের গতিতে নীর আমাকে দরজার উপর আমার দুই সাইডে ওর দুই হাত দিয়ে আঁটকে দিলো।ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো যে আমার পুরো ব্যাপার টা বুঝতে পুরো দুই মিনিট লেগে গেলো।ভিষণ রেগে নীর বলতে লাগলো,

—- সবসময় নিজের খামখেয়ালিতে চলিস কেন?নিজের যা খুশি তাই করে বেড়াস!কখনো অন্যের কথার মুল্য তোর কাছে নেই? অন্যরা যে তোর চিন্তায় পাগল হয়ে যায় সেদিকে কোনো খেয়াল রাখিস না।তা রাখবি কেন নিজের কথাই তো তোর কাছে বড়ো।অন্য পাগলের তোর জন্য চিন্তা করতে থাকুন তাতে তোর কি?তুই নিজের ইচ্ছা মতোই চল।সেই দুপুর থেকে কতোটা চিন্তায় ছিলাম তোর কোনো ধারণা আছে?তোর একটা ফোনের জন্য দুপুর থেকে অধির অপেক্ষায় ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।ভেবেছি তুই হয়তো একটু ব্যস্ত আছিস তাই এখন ফোন করতে পারছিস না।বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেও যখন তোর থেকে কোনো ফোন আসেনি তখন আমিই ফোন করতে গিয়ে দখি ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছে।পরে একজনের একটা থেকে তোকে ফোন করি আমি কয়েকটা কথা বলারই ওপাস থেকে তুই কিছু না বলেই ফোন টা কেটে দিলি।আবার ফোন করতেই তুই ফোনটাই বন্ধ করে দিলি।আমি তখন খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম তখন।বারবার একটাই কথা মনে হচ্ছিলো তুই ঠিক আছিস তো!পরে আবার মায়ের কাছে ফোন করে জেনেছি তুই ঠিক ভাবেই বাড়ি ফিরেছিস।তারপরও মনকে কিছুতেই বোঝাতে পারছিলাম না।বারবার শুধু মনে হচ্ছিলো তুই ঠিক আছিস তো!আর তুই এখানে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিস!

একনাগাড়ে কথাগুলো বলেই একটা শ্বাস নিয়ে আমাকে দরজার সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজেই দরজা খুলে হনহন করে চলে গেলো।আমি ওর যাওয়ার দিকে বোকার মতো শুধু তাকিয়েই রইলাম।শুধু একটা ফোনের জন্য এতো চিন্তা করেছে।কিন্তু কেন?সবাই আমাকে নিয়ে এতো কেন দুশ্চিন্তা করছে আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না।দুত ভালো লাগে না।এক মিনিট নীর শেষে আমাকে কি যেন বললো?আমি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলাম!অনেক সহ্য করেছি আর না।ওই সময় আননোন নাম্বার দিয়ে কল করেও আমার ঘুম নিয়ে অপমান করেছে এখন আবারও করলো। এর শোধ আমি তুলবোই তুলবো!নাহলে আমিও তূবা না হুম!

নীর এতোক্ষণে যেন প্রানটা ফিরে পেলো।ভার্সিটির যে রাতুলের তূবা দেখা হয়েছে নীরের লোকেরা নীরকে খবরটা দিয়েছিলো তখন।তখন থেকেই নীর খুব ভয় পেয়ে আছে তূবা যদি রাতুলের কোনো কথায় নীরকে ভুল বোঝে!তাই তখন থেকে তূবার সাথে ওমন ব্যবহার করেছে।কিন্তু না তূবার ভিতর কোনো পরিবর্তনই নীর দেখতে পায়নি।তাই নীরের বুঝতে বাকি নেই তূূবা রাতুলের কথায় নীরকে অবিশ্বাস বা কোনো রকম ভুল বোঝেনি।নীর নিজের ঘরে এসে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিয়ে নিজে নিজেই বলতে লাগলো,
—- আজ আমি ভিষণ খুশি। তূবা আমাকে কারো কথায় বিন্দু মাত্র ভুল বোঝেনি।এতোদিন যেই ভয়টা আমি পাচ্ছিলাম আজ আর সেই ভয়টা নেই। মনি তোমাকে দেওয়া কথা আমি খুব তাড়াতাড়ি পূরণ করবো ইনশাআল্লাহ। তূূবাকে ফিরিয়ে দেবো সব সুখ। শুধু তোমাকে ছাড়া মনি!আজ যদি তুমি থাকতে তাহলে আমাদের সবাইকে এতো কিছু সইতে হতো না মনি।কেন চলে গেলে এভাবে তুমি?ওদের ছাড়বো না কিছুতেই ছাড়বো না।শুধু প্রমাণ গুলো একবার হাতে পেতে দেও। তারপর প্রত্যেক কয়টা কে ভয়ংকর মৃত্যু উপহার দেবো কথা দিলাম।
কথাটা বলতেই নীরের মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো।

তাঁরা ভরা আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তূর্য।ছোট্ট বেলায় যখন মায়ের কথা খুব মনে পরতো তখন তাঁরা আকাশে কোনো এক তাঁরায় মাকে খুঁজে বেড়াতো।আজও তূর্যের মায়ের কথা খুব মনে পরছে তাই এই হাজারও তাঁরা মধ্যে মাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। তূবাকে দেখতে অনেক টাই ওর মায়ের মতো তাই আগে তূবা কে দেখেই মায়ের অভাব টা পূরণ করতো। তূবা দেখলেই মনে হতো
কিন্তু আজ তো আর তূবা নেই তাই এই তাঁরা গুলোর মাঝেই মাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। বড্ড মনে পরছে আজ মাকে।ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর পরিহাস এক মাকে এই পৃথিবী থেকে চিরকালের জন্য নিয়ে গেছে।আরেক মা বেঁচে থাকতেও তার কাছে যেতে পারছে না।তার কোলে মাথা রাখার সুযোগ টুকুও নেই।এসবই ভাবছে তূর্য পাশে থাকা ফোনটা বেজে উঠতেই আকাশের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফোনের স্কিনের দিকে তাকালো।একটা মেকি হাসি দিয়ে ফোনটা রিসিভ করে বললো,

—- আজ কি চাঁদ সূর্য উল্টো দিকে উঠেছে নাকি?নাকি আমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি?হাতে একটা চিমটি কেটে দেখি তো!
রিমি আজ খুব সিরিয়াস মুডেই ফোনটা দিয়েছে কিন্তু এমন কথায় সব সিরিয়াস মুডই ফুস হয়ে আকাশে উড়ে গেছে। তাই মুখ ফুলিয়ে বললো,
—- তুমি রাখো তো তোমার কথা!খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছি।
তারপর রিমি দুপুরের সব ঘটনা গুলো বলতে লাগলো।তূর্য ঘটনা গুলো শুনেও অনেকটা শান্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়েই বললো,
—- তো পরী কি বললো?
রিমি তূর্যের এমন শান্ত ভঙ্গিতে কথা বলা দেখে অবাক হয়ে বললো,
—- তুমি জানতে তূবা ছেলেটার কথায় নীর ভাইয়াকে ভুল বুঝবে না?
—- এরকম হাজারও পরিস্থিতির সামনে পরীকে পরতে তা আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম। তাই ওকে আমি ছোট থেকে সেই ভাবেই বড়ো করেছি।ওকে ভুল বোঝানো এতো সহজ না!ওকে ভুল বোঝাতে হলে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে।

প্রেমের সাতকাহন পর্ব ১২

কথাটা বলেই একটা বাঁকা হাসি দিলো তূর্য। কিন্তু রিমি ফোনের ওপাসে থাকায় সেই দেখতে পেলো না।
—- তোমাদের ভাই বোন দুইজন কেই আমি বুঝতে পারি না।দুজনকেই আমার অদ্ভুত লাগে।আর তুমি তো আছোই মাশাআল্লাহ!জীবনে তোমাকে আমি কোনোদিন বুঝতে পারবোই না।
—- সে যাইহোক আমার সাথেই তোমায় সারাজীবন থাকতে হবে।
—- আচ্ছা শোনো কাল ভার্সিটিতে নবীন বরণ অনুষ্ঠান আছে কাল কি আসবে একবার ভার্সিটি!
—- কেন আমায় কি কাল খুব মিস করবে নাকি?মিস করলেও লাভ নেই জান কাল আমার প্রচুর কাজ আছে তাই একমিনিটের জন্যও লড়তে পারবো না।কি করা যায় বোলো তো!
—- তুমি থাকো তোমার কাজ নিয়ে!
রেগে কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো রিমি।ফোন কাটতেই তূর্য হো হা হাসতে লাগলো।তূর্যের রিমিকে রাগাতে ভিষণ ভালো লাগে। তবে শুধু অল্প অল্পই বেশি রাগালে তো আবারৃু রাগিনী থেকে বাঘিনী হয়ে যাবে।তখন আবার হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।তাই তূর্য অল্পই রাগায় তার রাগিনীকে।

এদিকে একজন রাগে ফেটে যাচ্ছে। রাগ তার আজ ৩৬০°। আজও তার প্লান ফেল হয়ে গেছে।নীর যবে থেকে চৌধুরী প্রুফে ওনার হয়ে বসেছে তবে থেকেই একের পর এক প্লান গুলো ফেল হয়ে যাচ্ছে। আজ ভেবেছিলো তূবাকে নীরের বিরুদ্ধে নিয়ে তূূবাকে ব্যবহার করে নীরকে শেষ করবে।কিন্তু তূবার মনে নীরের জন্য বিন্দু মাত্রও ঘৃণা ডোকাতে পারলো না।দিনেদিনে তাদের কালো ব্যবসা ডুবে যাচ্ছে। আর সেটার কারণও যে নীর তা খুব ভালো ভাবেই জানে।তাই নীরকে যে করেই হোক এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে হবে।কিন্তু কিছুই করতে পারছে না।তাই রাগে সামনের টেবিল টা লাফি মেরে ফেলে দিলো।এতেই যেন সামনে থাকা ছেলেটার জান চলে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে গেছে।ভয়ে ভয়ে বললো,

—- বস এতো হাইপার হবেন না।আজকের প্লান টা ফেল হয়েছে তো কি হয়েছে! কালকের জন্য একটা ধামাকা প্লান করেছি।কালকে আর হান্ডেট পার্সেন্ট সিউর কাল আমরা সাকসেসফুল হবোই।
ছেলেটার কথায় ঘাড় ঘুরিয়ে ভয়ংকর দৃষ্টিতে থাকালল লোকটা।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
—- কি প্লান??

প্রেমের সাতকাহন পর্ব ১৪