রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ১৭ || লেখিকা : স্বর্ণা সাহা

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ১৭
লেখিকা : স্বর্ণা সাহা

দিশানী এসব বলে নিজের রুমে চলে গেলো।
দিশানী রুমে যাওয়ার পর পরই সুজাতা নির্ঝর কে বললো,
—দেখলি কি তেজ!কি বেয়াদব মেয়ে।ওই মেয়ে বলে কিনা আমাকে থাপ্পড় মারবে?ওর সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। নির্ঝর তুই একটা ব্যবস্থা কর।
নিরাও সুজাতার কথার সাথে তাল মিলিয়ে নির্ঝরকে বললো,
—মা ঠিক কথা বলেছে দাদা। তুই একটা ব্যবস্থা কর। এরপর না জানি আমাদের সাথে কি করে বসবে বৌদি

নির্ঝর রাগে ফুসতে ফুসতে বললো,
—আমি ওর বাড়িতে ফোন করছি, দেখি ওনারা কি বলে।
নিরা বললো,
—ওদের বলে কি আদৌ কোনো লাভ হবে, ডিভোর্স এর কথা তো ফোন দিয়ে জানিয়েছিলি কোনো আগ্রহই তো দেখায়নি।
সুজাতা মুখ বেঁকিয়ে বললো,
—পরিবারটাই যেখানে এরকম মেয়ে আর কেমন হবে!হুঁহ!

দিশানী বিছানায় বসে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। আসলে প্রতিবাদ করার পরে যেমন আনন্দ পাওয়া যায়, তেমনি খারাপও লাগে। নিঃশাস ভারী হয়ে আসে। দিশানীরও ঠিক তেমনি হচ্ছে। এই প্রতিবাদটা দরকার ছিলো। যখন কোনো নারীকে কোনো কারণ ছাড়াই “নষ্টা মেয়ে” উপাধি দেওয়া হয়, তখন যদি সে মেয়ে প্রতিবাদ না করে তাহলে সে নিজেই নিজের কাছে অপরাধী।আজকাল যে নিজে নিজের জন্য প্রতিবাদ করতে পারে না,তার কোনো মূল্যই থাকেনা।দিশানী মনে মনে নিজেই নিজেকে অভিবাদন জানাচ্ছে। কারণ সে পেরেছে, সে আজ তার প্রতি হওয়া অন্যায়ের যোগ্য জবাব দিয়েছে।আজ দিশানীর জন্য সবচেয়ে আনন্দের দিন, আবার সেরকমই বেদনারও দিন।নিজের স্বামীর কাছে এসব শুনে কি কোনো নারী আনন্দ পায়?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দিশানীর ফোন বেজে উঠতেই ও চোখ খুলে।ফোন হাতে নিয়ে দেখে মেঘা কল করেছে। দিশানী কল ধরতেই ওপাশ থেকে মেঘা বলে,
—কিরে বাড়িতে পৌঁছে গেছিস?
—হুম!একটু আগেই পৌঁছালাম।
—ওহ!শোন একটা কথা বলবো তোকে।
—বল!
—ডিভোর্স এর পরে তুই আমাদের বাড়িতে এসে উঠবি আর এখান থেকেই ভার্সিটিতে যাতায়াত করবি বুঝতে পেরেছিস?

—না রে!আমি হোস্টেলে উঠবো। অযথা তোদের ঝামেলা বাড়াতে চাইনা আমি!
—এক থাপ্পড়ে তোমার গাল লাল করে দেবো আমি।তুমি নিজেকে আমাদের ঝামেলা মনে করছো? তোমার খুব সাহস বেড়ে গেছে তাইনা? আমরা তো তোমার পর। তুমি তো আমাদেরকে নিজের লোক মনেই করোনা তাই তো এসব বলছো।
—তুই আমাকে ভুল বুঝছিস আমি ওভাবে বলতে চাইনি।

—তো ঠিক কিভাবে বলতে চেয়েছো তুমি? দেখ দিশু বান্ধবী হয়ে যদি বান্ধবীর কোনো উপকারেই না লাগতে পারি তাহলে কিসের বান্ধবী হলাম বলতো?আমাকে এভাবে পর করে দিস না।
—তোদের মতো বন্ধু পেতে ভাগ্য লাগে।সত্যি আর কিছু না হোক অন্তত আমি বন্ধু পাওয়ার দিক দিয়ে অনেক ভাগ্যবতী। কিন্তু তবুও তোর বাড়িতে থাকবো কেমন একটা দেখায় না?

—আচ্ছা তুই কি সৌম্যকে নিয়ে টেনশন করছিস? সৌম্য কি বলবে সেটা নিয়ে? আরে টেনশন করিস না,সৌম্যর তোর আমাদের বাড়িতে থাকা নিয়ে কোনো আপত্তি নেই।আমি আজকে আমাদের বাড়িতেই তোকে এই কথা বলতে পারতাম কিন্তু তুই সামনাসামনি আরো রাগারাগি করতিস তাই ফোন দিয়েই বললাম।শোন তুই সিদ্ধান্ত নে, তবে উত্তর যেনো হ্যাঁ হয়। এখন রাখছি আমি।
মেঘা ফোন কেটে দিলো।দিশানী ফ্রেশ হতে গেলো।

সকালবেলা নির্ঝর দিশানীর বড় ভাই দিব্যকে ফোন করলো।সাথে নিরা আর সুজাতাও ছিলো।ওরা দুজন দিব্য আর নির্ঝরের কথা শোনার জন্য নির্ঝরের ফোন লাউড স্পিকারে দেয়।দিব্য ফোন ধরতেই নির্ঝর বললো,
—আপনার বোনের ব্যবহার অতি নিম্নমানের হয়ে গেছে। দিশানী আমাদের অতিষ্ট করে দিচ্ছে। কালকে আমাকে থাপ্পড়ও মেরেছে।

—কি করেছিলে দিশুর সাথে যে তোমাকে থাপ্পড় মেরেছে?
—সেটা আপনার জানার দরকার নেই। আপনি আপনার বোনকে এসে নিয়ে যান।
—শোনো বিয়ে করেছো তুমি!আর ডিভোর্স হতেও এখনো দুই মাস বাকি আছে তাই আমার বোনের সব দায়িত্ব তোমার।আমি ওকে নিয়ে আসতে পারবো না, রাখছি!
দিব্য এসব বলেই ফোন কেটে দিলো।
পেছন থেকে দিশানী বললো,
—কি আমার দাদাকে ফোন করে কোনো লাভ হলো না তো?

দিশানীর কথা শুনে নির্ঝর, সুজাতা আর নিরা পেছনে তাকালো।দিশানী এতক্ষন পেছনে দাঁড়িয়ে থেকে নির্ঝর আর দিব্যর কথা শুনছিলো। ফোন লাউড স্পিকারে দেওয়ার জন্যই দিশানী দুজনের কথোপকথন শুনতে পায়। দিশানী আবার বললো,

—দাদা কে ফোন দিয়ে কোনো লাভ হবে না। আমার দাদাও তোমাদের সবার মতোই স্বার্থপর। যার আমার জন্য কোনো মায়া নেই।তুমি ভাবলে কি করে দাদা আমাকে ওর বাড়ি নিয়ে যাবে? যে আমাকে নিজের বোঝা মনে করে তোমার সাথে বিয়ে দিলো সে কখনো আবার সেই বোঝাকে ঘরে তুলবে?আমাকে আবার পালতে গেলে তো ওর খরচ বাড়বে, যে আগেই আমাকে পালতে পারলো না সে এখন আমাকে পালবে তোমার মনে হয়?আমার আপনজনগুলোই কেমন যেনো আমার পর হয়ে গেছে আর পররাই আপন হচ্ছে।
নিরা বললো,

—এই আবার শুরু করলে তুমি বৌদি?
—আচ্ছা নাও বাদ দিলাম। আগে বলো কালকে মেয়ে কেমন দেখলে? পছন্দ হলো?
নিরা উত্তর দিলো,
—তোমার থেকে অনেক ভালো। শান্ত-শিষ্ট, মিষ্টি মেয়ে। তোমার মতো মুখে মুখে তর্ক করে না।
দিশানী উত্তর দিলো,,
—ভুল বললে নিরা।আমি তো তর্ক করিনা আমি তো প্রতিবাদ করি। তর্ক আর প্রতিবাদের মধ্যে যে একটা পার্থক্য আছে সেটা বুঝতে শেখো।
সুজাতা বললো,

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ১৬

—এলিনা অনেক ভালো মেয়ে, দেখেই বোঝা যায়। ভদ্রও বটে।আর বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে।
দিশানী জিজ্ঞেস করলো,
—বাবাহ!বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে অথচ মেয়েকে একটা ডিভোর্সি ছেলের সাথে বিয়ে দিচ্ছে?ভাবার বিষয়!
সুজাতা বললো,
—সে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।
নিরা সুজাতাকে বললো,

—আরে মা বুঝতে পারছো না কেনো!বৌদির হিংসা হচ্ছে। নতুন বৌদি যে বৌদির থেকে সব দিক দিয়ে ভালো এটা বৌদি সহ্য করতে পারছে না।
দিশানী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
—বেশি ভালো ভালো না।আপনারা যা ডেসক্রিপশন দিলেন তাতেই বুঝে গেছি আপনাদের কপালে দুঃখ আছে, কিন্তু আপসোস এটা বোঝবার ক্ষমতা আপনাদের মধ্যে নেই। এই মেয়েই আপনাদের সোজা করে দেবে। কথায় আছে না লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ১৮