রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ২০ || লেখিকা : স্বর্ণা সাহা

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ২০
লেখিকা : স্বর্ণা সাহা

—তুমি যদি এখন ভেঙে না পড়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করো, নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলো তাহলে সেটাই তোমার শ্রেষ্ঠ প্রতিবাদ হবে। তখন তারা বুঝতে পারবে ওরা কি রত্ন হারিয়েছে।এক মাস প্রতিবাদ করেও যখন ওরা সোজা হয়নি ওরা সোজা হবে বলে আমার আর মনে হয়না। ওরা এখন পশুতে পরিণত হয়ে গেছে, ওদেরকে নিজে থেকেই নিজের ভুল বুঝতে শিখতে হবে। তুমি যদি নিজেকে যোগ্য বানাও তাহলেই এটা সম্ভব।

—আমি পারবো কি?
—অবশ্যই পারবে!নিজের ওপর বিশ্বাস রাখলে মানুষ কি না পারে। আমরা সবসময় তোমার পাশে আছি। তোমাকে পারতেই হবে। আমরা যে তোমার পাশে আছি এই পাশে থাকার সম্মান দেবে না? পারবে না নিজেকে গড়ে তুলতে?
—চেষ্টা করবো। আমি মনপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করবো।
নীলাদ্রি মেঘার দিকে তাকিয়ে বললো,
—আর মেঘা এখন তো প্রায় দুপুর হয়ে এসেছে। দিশানীকে তুমি খাইয়ে দাও।আমি কিছু ওষুধ নিয়ে আসছি ওর জন্য।
মেঘা উত্তর দিলো,

—হ্যাঁ আমি ওকে এখুনি খাইয়ে দিচ্ছি।
নীলাদ্রি ওষুধ আনতে বাইরে গেলো।আর মেঘা খাবার এনে দিশানীকে খাওয়াতে নিলো। যেহেতু ডান হাত টা পুড়ে গেছে তাই দিশানীর একা একা খাওয়া সম্ভব না, তাই মেঘা ওকে খাইয়ে দিতে লাগলো। দিশানী প্রথমে বলেছিলো যে খেতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু মেঘা দিশানীকে ধমক দিয়ে খাইয়ে দেয়।
মেঘা দিশানীকে খাওয়াতে খাওয়াতে দিশানীর সব দস্যিপনাগুলো বলতে থাকে যাতে দিশানী এই ভয় কাটিয়ে উঠতে পারে।
দিশানীর খাওয়া শেষ হওয়ার আগে আগেই নীলাদ্রি ওষুধ নিয়ে চলে আসে। দিশানীও একটু স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দিশানীর খাওয়া শেষ হলে নীলাদ্রি দিশানীকে ওষুধ দেয়।
দিশানী এখন একটু স্বাভাবিক হয়। নীলাদ্রি দিশানীকে বলে,
—মনে আছে তো কালকে ফর্ম জমা দিতে যাবো?
—হুম আছে।
—কালকে পুরো ভার্সিটিটা ঘুরে দেখবো ঠিকাছে?
—আচ্ছা
—কি হুম আচ্ছা লাগিয়ে রেখেছো বলোতো, কথা বলছো না কেনো ঠিক করে।
মেঘা বিরক্তি নিয়ে বললো,
—এই তোর কথার রেকর্ডার কি নষ্ট হয়ে গেছে নাকি যে চুপচাপ বসে আছিস, কোনো কথা বলছিস না।

—কি বলবো? তোদের কথার তো উত্তর দিচ্ছিই আমি।
নীলাদ্রি বললো,
—বলছিলাম কি একটা পুলিশ কমপ্লেইন করলে হতো না, তোমার হাতটার যে এই অবস্থা করলো ওরা?
—আমি আর এসবের মধ্যে জড়াতে চাইছি না, ওরা ঠিকই কোনো না কোনো ভাবে ছাড়া পেয়ে যাবে।কিন্তু কথায় আছে না রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার। ওরা ওদের শাস্তি ঠিকই কোনো না কোনো ভাবে পাবে।
—তবুও আমার মনে হয় একটা পুলিশ কমপ্লেইন করা দরকার, তুমি চাইলে ডিভোর্স এর পর কেস তুলে নিও।আমার মনে হয় তোমার পুলিশ কমপ্লেইন করে বোঝানো উচিত তুমি হেরে যাওনি।
দিশানী কিছুক্ষন ভেবে বললো,

—আচ্ছা করবো!কিন্তু ডিভোর্স এর পর কেস তুলে নেবো। কারণ ওরা এতে কোনো শাস্তি পাবে না বরং জামিনে ছাড়া পেয়েই যাবে। কিন্তু ওরা বুঝতে পারছে না ওদের জন্য এর চেয়ে আরো বড় শাস্তি আছে সামনে।
—এইতো এটাই তো চাইছিলাম।
বিকালবেলায় দিশানী, নীলাদ্রি আর মেঘা থানায় গেলো।
থানায় যাওয়ার পর দিশানী পুলিশকে প্রমাণ দেখিয়ে পুলিশের কাছে কমপ্লেইন করলো।পুলিশ গিয়ে নির্ঝরকে এরেষ্ট করে নিয়ে এলো।সুজাতা আর নিরাও সাথে এলো আর নির্ঝরের বাবাকে ফোন দিয়ে উকিল নিয়ে আসতে বললো।
নিরা দিশানীর কাছে গিয়ে বলে,

—বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসেও আমাদের শান্তিতে থাকতে দিলে না।
দিশানী কিছু বললো না। প্রায় অনেক্ষন পর নির্ঝরের বাবা উকিল আনলো।উকিল আনার পর সব নিয়মকানুন মেনে নির্ঝরের জামিন হলো কিন্তু ওকে কেস না ওঠা অবধি থানায় হাজিরা দিতে হবে।
নির্ঝরের উকিল দিশানীকে বললো,
—ম্যাম আপনাদের তো ডিভোর্স হচ্ছেই তাহলে অযথা কেসটা রেখে কি লাভ হবে, এতে মিছেমিছি সময় নষ্ট হবে।তার চেয়ে বরং কমপ্লেইন টা আপনি তুলে নিন।
দিশানী উত্তর দিলো,

—কমপ্লেইনটা আমি ডিভোর্স হলেই তুলবো।
নির্ঝরের বাবা দিশানীর কাছে এসে বললো,
—তুমি সত্যি সত্যি কমপ্লেইনটা তুলে নেবে তো?
—হুম নেবো। আমি আমার কথার নড়চড় করবো না।

দিশানী আর নীলাদ্রি গিয়ে আজ ফর্ম জমা করে এলো। আর ক্লাস শুরুর ডেট জেনে এলো।এখন দিশানী মেঘার বাড়িতেই থাকে। মাঝে মাঝে নীলাদ্রি ওদের বাড়িতে আসে।
এভাবেই দেখতে দেখতে দুই মাস কেটে যায়।
আজ দিশানী আর নির্ঝরের ডিভোর্স হবে। আর দিশানী নির্ঝরের বিরুদ্ধে করা কমপ্লেইন তুলে নেবে।আজকে নির্ঝরের সাথে নির্ঝরের বাড়ির সবাই আর দিশানীর সাথে নীলাদ্রি,মেঘা আর সৌম্য কোর্টে এসেছে।

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ১৯

অবশেষে সব নিয়ম-কানুন মেনে একদম পুরোপুরি ভাবে দিশানী আর নির্ঝরের ডিভোর্স ঘোষণা করা হলো। ডিভোর্স পেপারে প্রথমে নির্ঝর সই করলো তারপর দিশানীকে সই করার জন্য কাগজটা দিলো। ডিভোর্স পেপারে সই করার সময় দিশানীর চোখটা ছলছল করছিলো।একটা মেয়ের কাছে ডিভোর্সটা কতটা যন্ত্রনার তা শুধু সেই মেয়েটাই বুঝতে পারবে যে এই সময়টা ফেস করেছে। কিন্তু ওই যে কথায় আছে না কিছু পেতে গেলে কিছু ছাড়তে হয়। হয়তো দিশানীর জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে আবার হয়তো না। দিশানীর ভালো-খারাপ একদম এখন দিশানীর নিজের উপর নির্ভর করছে। দিশানী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডিভোর্স পেপারে সই করে দিলো। তারপর নির্ঝরের ওপর থেকে কেস তুলে নিলো। অবশেষে নির্ঝর আর দিশানী আইনগত ভাবে আলাদা হলো। ওদের মাঝে আর কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন নেই।
নিরা নির্ঝরকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে বললো,

—কংগ্রাচুলেশনস দাদা!অবশেষে এই বোঝা আমাদের ঘাড় থেকে নামলো।এখন তোর বিয়ে খাবো। আমার যে কি আনন্দ লাগছে না তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।
দিশানী একদম শান্ত হয়ে আছে। বাড়ি ফিরে ও ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। কেউ ওকে ডিস্টার্ব করলো না।কারণ কাঁদলে মন শান্ত হয়। হতেই তো পারে হয়তো এটাই ওর শেষ কান্না।দিশানী নিজেকে শান্ত করে রাতে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো এক নতুন উদ্যোমে।
পুরোনো কিছু মুছে গিয়ে এখন হয়তো নতুন কিছুর সূচনা হতে যাচ্ছে।

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ২১