রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ৫ || লেখিকা : স্বর্ণা সাহা

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ৫
লেখিকা : স্বর্ণা সাহা

—না পারছি না, এখন স্পষ্ট করে বলুন আপনি কে?
—আমি…….গেস করুন দেখি
নীলাদ্রি রেগে গিয়ে বললো,
—আপনি আপনার ফালতু প্যাচাল বাদ দিয়ে কি বলবেন আপনি কে?
—-আরে আরে আপনি তো রেগে যাচ্ছেন,, আচ্ছা বলছি আমি কে
—হ্যাঁ আপনি কে সেটা বলে আমাকে কৃতার্থ করুন
—আমি নিরা
—কোন নিরা?
—সেকি এরই মধ্যে ভুলে গেলেন, আমি দিশানী বৌদির ননদ
—ওহ আচ্ছা, চিনতে পেরেছি
—যাক চিনতে পারলেন তাহলে, আমি তো ভাবলাম আপনি এবারেও চিনতে পারবেন না
—কিন্তু আপনি ফোন করেছেন কেনো আমাকে?
—কেনো ফোন করতে পারিনা নাকি, আমি যেহেতু আপনার পেসেন্ট তাই ফোন করতেই পারি
—আমিও আপনার ডক্টর আপনার তেমন গুরুতর কিছু হয়নি যে আপনার আমাকে ফোন করতে হবে।

—আমি তো পেসেন্ট জন্য আপনাকে ফোন করিনি, আমি তো অন্য কারণে আপনাকে ফোন করেছিলাম
—কি কারণ?
—বলছি যে আপনি তো আনম্যারেড তাইনা?
নীলাদ্রি বিরক্ত হয়ে বললো,,
—হ্যাঁ, এটা আপনার আমাকে এতো রাতে আমাকে ফোন দেওয়ার কারণ লাইক সিরিয়াসলি?
—না না, এটাও আসল কারণ না
—এই আপনার সমস্যা কি বলুন তো, যা বলতে চান বলে দেন নাহলে আমি ফোন রাখছি
—না না ফোন রাখবেন বলছিলাম যে আপনি আমার বৌদি মানে দিশানীর সাথে মিশবেন না বা কথা বলবেন না বুঝেছেন, ও মানুষের জীবনের খুব বড় একটা সমস্যা, মানুষের জীবনে শুধু জটিলতা তৈরি করে, তাই আপনার ভালোর জন্যই বলছি ওর সাথে মিশবেন না তাতে কিন্তু আপনারই ভালো
নীলাদ্রি রেগে গিয়ে বললো,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—আপনি কি বলছেন,আপনার মাথা ঠিক আছে তো?
—ঠিকই বলছি আমরা খুব ভালো করে চিনি বৌদিকে
—আচ্ছা সে ভালো কথা, কিন্তু আপনার কথা শুনে আমার আপনাকে একজন মানসিক রোগী বলে মনে হচ্ছে, তাই আমি আপনাকে একটা এডভাইস দিচ্ছি, আমি যেহেতু মেন্টাল রোগীদের ডাক্তার নই তাই আমি আপনার চিকিৎসা করতে পারবো না এজন্য আপনি একটা সাইক্রিয়াটিস্ট দেখান, ওনার পরামর্শ নিন তাহলে আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন।

এই কথা বলেই নীলাদ্রি চুপচাপ ফোন রেখে দিলো, এতে নিরা কিছুটা অপমানিত বোধ করলো।
নীলাদ্রি ফোন কেটে দিয়ে একটা জিনিস ভাবতে বসলো,, খুব মন দিয়ে ভাবছে ও এই কথাটা। নিরা এটা কেনো বললো যে দিশানী শুধু সমস্যা তৈরি করে? আচ্ছা নিরা কি দিশানী কে সহ্য করতে পারেনা? আর আমাকেই বা কেনো মেয়েটা ফোন দিয়ে এসব জানালো?

নিরা রাগে গজগজ করছে আর বলছে,
“এইভাবে অপমান? ছেলেরা আমার সাথে কথা বলার জন্য সুযোগ খোঁজে আর উনি আমাকে পাগল বললো?চেম্বারে সারাটা সময় বৌদির দিকে তাকিয়ে থাকলো, আমার দিকে ফিরেও তাকালো না,, বৌদির ওই তো চেহারার ছিঁড়ি,তবুও আমার দিকে না তাকিয়ে বৌদির দিকে তাকালো কেনো সেটা কি আমি বুঝিনি,, বৌদির সাথে তোমার কি সম্পর্ক আমি তা জেনে ছাড়বো আর যদি আমি যা ভাবছি সেইরকম সম্পর্ক হয় তাহলে তা আমি ভাঙবো,,, কারণ তোমাকে যে আমার খুব ভালো লেগেছে নীলাদ্রি।এর আগেও আমি তোমার কাছে চেক-আপের জন্য গেছিলাম আমার তো সেদিনই তোমাকে ভালো লেগে গেছিলো। আর আজ যখন বৌদির সাথে এতো ভালো করে কথা বললে আমার তখন জাস্ট গা জ্বলে যাচ্ছিলো।

পরেরদিন,
দিশানী ভোর ৫.৩০ টায় ঘুম থেকে উঠলো, তারপর সবগুলো ঘর পরিষ্কার করে স্নান ছেড়ে রান্নাঘরে আসতে আসতে ৬.৩০ বেজে গেলো ।সুজাতা দিশানীর কাছে এসে একের পর এক একেকজনের খাবারের ফরমায়েশ দিয়ে চলে গেলেন। সুজাতা দিশানী কে শুধু ফরমায়েশই দিতে পারে আর চ্যাটাং চ্যাটাং কথাই বলতে পারে, দিশানী কে কোনো সাহায্য করেনা। শুধু মহারানীর মতো বসে থাকে।দিশানী সবাইকে মানে যারা যারা ঘুম থেকে উঠেছে তাদের চা দিয়ে এসে সকালের রান্না আরম্ভ করলো।

দিশানী রান্না করছে তখনি নিরা ডাক দিয়ে বললো,,
—বৌদি আমার গ্রিন টি দিয়ে যাও তো।
নিরা এখনই ঘুম থেকে উঠলো। দিশানী গ্রিন টি বানিয়ে নিরার কাছে নিয়ে গেলো।নিরা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,,
—আজকের গ্রিন টি টার টেস্ট একদমই বাজে হয়েছে,ঠিক করে বানাবে তো
দিশানী মুচকি হেসে জবাব দিয়ে বললো,,
—গ্রিন টি-র টেস্ট টা আগের মতোই আছে,, তোমার মুখের টেস্ট দিন দিন বাজে হয়ে যাচ্ছে তাই খেতে খারাপ লাগছে।

—কি বললে তুমি?? তোমার সাহস অত্যধিক বেড়ে যাচ্ছে দাঁড়াও মা আর দাদা কে বলছি।
—কি শান্তি পাও বলোতো আমার পেছনে লেগে? আর সবসময় মা কে আর দাদা কে বলবো এই কথাটাই বা কেনো বলো, কালকে তুমি তোমার দাদা কে কি বলেছো, আমার সাথে এরকম ব্যবহার করে কি লাভ তোমার, কি মজা পাও তুমি?
—-এখান থেকে এখন যাও তো তুমি, আমার অনেক কাজ আছে।
দিশানী কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।

ব্রেকফাস্টের সময়,,
সবাই ব্রেকফাস্ট করছে, নিরা কিছুক্ষন পর বললো,,
—মা তোমার বৌমা বলেছে আমার মুখ নাকি তেতো, দাদা তোর বউয়ের মুখ সামলে রাখতে বলবি, আমাকে যেনো এসব কথা না বলে
সুজাতা দিশানী কে বললো,,
—আমার মেয়েকে নিয়ে তোমার সমস্যা কি বলোতো? এমন ব্যবহার করো কেনো আমার মেয়ের সাথে, কি করেছে ও তোমার সাথে?
নিরা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,,

—মা জানো আমি বৌদিকে তেমন কিছুই বলিনি, শুধু বলেছি গ্রিন টি-র টেস্ট টা আজ ভালো হয়নি তাতেই এতো কথা শুনিয়ে দিলো
নির্ঝর রাগী চোখে দিশানীর দিকে তাকিয়ে বললো,,
—আমার বাড়িতে থাকতে হলে আমার বোনের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে নাহলে আমার বাড়ি থেকে তুমি বের হয়ে যাবে।
দিশানী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,,

—বাহ্, কি সুন্দর বিবেচনা,নিরাকে আমি কি বলেছি তা নিয়ে সবার এতো মাতামাতি, আমি নিরার সাথে কেমন ব্যবহার করি সেটা নিয়ে সকলের মাতামাতি কিন্তু আমি কেনো নিরা কে এসব বলেছি তা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই তাইনা? শুধু একপাক্ষিক কথা শুনে বিচার-বিবেচনা করা দেখছি তোমাদের স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই স্বভাব পাল্টাও,, আর মানুষকে কখনো বেশি ঘাঁটিয়ো না, লেবু চিপতে চিপতে যেমন তেতো হয়ে যায় তেমনি মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে মানুষও প্রতিবাদী হয়ে ওঠে,, আর সেই প্রতিবাদকে দমন করা কিন্তু কঠিন হয়ে ওঠে, এটা ভুলে যেও না। আর নিরা তোমাকে একটা বলছি শোনো,, মন দিয়ে শুনবে কিন্তু,,

“সারাজীবন তো আর বাপের বাড়িতেই পড়ে থাকবেনা একদিন তোমারও বিয়ে হবে,, তখন দেখো শশুরবাড়িতে গিয়ে যেনো তোমার আবার আমার মতো অবস্থা না হয়,, আর ননদ হিসেবে যেনো আবার নিজের কোনো প্রতিচ্ছবি না পাও ”
দিশানী কথাগুলো বলে নিজের রুমে গেলো,, আজকে কিভাবে দিশানী এতো জোর পেলো সেটা ও নিজেও জানেনা,, কিন্তু এটা শুধমাত্রই ক্ষনিকের প্রতিবাদ,, ক্ষনিকের প্রতিবাদই সই নিজের ভেতরে চেপে রাখা কথাগুলো তো বলতে পেরেছে এটাই আনন্দের।

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ৪

খাবার টেবিলে,,,
নিরা সবার উদ্দেশ্যে বললো,,
—দেখলে তোমরা কিভাবে আমার ক্ষতি চেয়ে গেলো,কি ধরণের মানুষ দিশানী বৌদি সেটা শুধু একবার চিন্তা করে দেখো তোমরা, এরকম করলে তো আমার এই বাড়িতে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে দেখছি।
সুজাতা নিরাকে শান্তনা দিয়ে বললো,,

—চিন্তা করিস না নিরা,, শকুনের দোয়ায় কখনো গরু মরে না।আর নির্ঝর তুই এখন একটা ব্যবস্থা কর, এভাবে আর কতদিন?
নির্ঝর উত্তর দিলো,,
—আমি আজকেই উকিলের সাথে কথা বলবো তুমি টেনশন কোরোনা

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ৬