শেহজাদী গল্পের লিংক || Arishan Nur || রোমান্টিক গল্প

শেহজাদী পর্ব ১
Arishan Nur
দরজার সঙ্গে আমাকে  চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন ইমান ভাইয়া। ফেমাস আরজে ইমান খান! যাকে দেখলে মেয়েরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। আমি থরথর করে সমানে কেঁপে যাচ্ছি।কিছু বুঝে উঠার আগেই বেশ শব্দ তুলে ইমান ভাইয়া আমার গালে পরপর দুটো বেশ জোড়েই থাপ্পড় বসালেন৷ উনার হাতে থাপ্পড় খেয়ে আমি চোখে সরিষা ফুল দেখতে লাগলাম।
 ইমান ভাইয়াকে আমি জমের মতো ভয় পাই। তাকে দেখলেই  হাত-পা বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। অথচ এই ছেলেটাকেই নাকি বিয়ে করতে হবে আমাকে!
যাকে দেখলে আমার  মুখে কোন বুলি ফুটে না সেই ব্যক্তি স্বয়ং রাগান্বিত অবস্থায় আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আর আমি! আমি যেন ওনার দু’চোখের বিষ! কোন কারণ ছাড়াই উনি আমাকে সহ্যই করতে পারেননা । ঠিক কি করে উনি আমাকে হেইট করেন তা আমি কেন পৃথিবীর কেউই বুঝি জানে না! আমার তো মনে হয়, উনি নিজেও জানে না কেন সে আমাকে দু’চোখে দেখতে পারেন না!
ভাইয়া প্রচন্ড রেগেমেগে আমাকে যখন  দরজার সঙ্গে চেপে ধরলেন তখন মাত্র আমি ঘুম থেকে উঠেছি কেবল। কাজেই ঘুমু ঘুমু অবস্থায় কিছুই আমার মাথায় ঢুকছে না কিন্তু এতোটুকু বুঝতে বাকি নেই যে আমার কপালে আজকে শনি আছে । আমার  খুব করে হাতে ব্যথা লাগলেও  ভয়ের চটে ইমান ভাইয়াকে সরে যেতে বলতেও পারছি না।
ইমান ভাইয়া আচমকা গমগমে আওয়াজ তুলে হুংকার দিয়ে বলে উঠে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—  তুই নাকি বিয়েতে রাজী না! তোর সাহস তো দেখি হিমালয় ছুঁইছুঁই।আমাকে বিয়ে করার জন্য কত মেয়ে পাগল আর তুই কিনা আমাকে বিয়ে করবি না!  শোন মিরা! তোকে বিয়ে করছি শুধুমাত্র পারিবারিক চাপে পড়ে তা নাহলে এই ইমান খানের বউ হওয়ার যোগ্যতা তো অনেক দূর আমার পায়ের নখের ও সমান না তুই !  তোমার মতো দশটা মিরা ইমান খান প্রতিরাতে কিনে এনে পরের দিন বেচে দিতে পারে। বুঝলি?
আমি  ইমান ভাইয়ার  দিকে ভয়ে তাকাচ্ছি না।যতোটা সম্ভব নিজের মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলাম নতজানু হয়ে কিন্তু যেই না তার মুখ থেকে বিয়ে শব্দটা শুনলাম তখনি পিলে চমকে উঠি। তার মানে বিয়েটা হবেই হবে! আমি আরো ভেবেছিলাম ইমান ভাইয়া বিয়ের কথা শুনে বাসা মাথায় তুলে ফেলবেন কিন্তু উনি তো শান্তই আছেন! শুধু দু’টো থাপ্পড় খেতে হলো আমাকে। তার মানে কি সত্যি সত্যি আমার বিয়েটা হবে ওনার সঙ্গে? ভাবতেই লজ্জায় আমি মিইয়ে যাই। ইশ! ওনার দিকে তাকাতেও কেমন যেন লাগছে।
বুকের হৃদপিন্ড এতোক্ষন আস্তে আস্তে উঠানামা করলেও ওনার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে এটা ভাবতেই বুক জোড়ে জোড়ে উঠানামা করা শুরু করলো।
ইমান ভাইয়া আচমকা আমার দিকে তেড়ে এসে আমার  দুইবাহু শক্ত করে খাঁমচে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে আমার বাহুদ্বয়ে তার নখের আঁছড়ের দাগ লেগে যায়। আমি ব্যথায় কুকিয়ে উঠে নিচু গলায় বললাম,”আউউ”
  আমার মুখ থেকে শব্দ শুনে সে বিষ্ফরিত চোখে আমার দিকে তাকালো।আমিও এই প্রথম সাহস করে  ইমান ভাইয়ার  দিকে তাকালাম। তার দিকে তাকাতেই বুক ছ্যাত করে উঠলো ভয়ে৷ ইমান ভাইয়ার  চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে। ঈষৎ লাল বর্ণ ধারণ করা ওই চোখের মণির দিকে তাকাতে দ্বিতীয়বার  সাহস পাচ্ছি না আমি।
উনি গমগমে সুরে বলে উঠে,  তোর নাকি কলেজের লাফাঙ্গা এক সিনিয়রের সঙ্গে  সেই গভীর প্রণয়?
 ওনার বলা কথাটা কর্ণপাত হওয়ার সাথে সাথেই আমার  চোখ মার্বেলের মতো গোল হয়ে এলো। উনি এই কথা কিভাবে জানলো? কে বললো ওনাকে এই কথা?এই ব্যাটা বজ্জাতের তো  এটা জানার কথা না!  বাসায় তো মা বাদে একথা কেউ জানে না। আমি ভয়ে ভয়ে  ঢোক গিললাম। বাবা জানতে পারলে আমাকে আস্ত রাখবে না! ভয়ে আমার হাত-পা দ্বিগুণ গতিতে কাঁপতে লাগলো।
চোখে এখনো আমার ঘুম লেগে আছে পারলে এক্ষুনি এই মূহুর্তে ঘুমিয়ে পড়ি আমি!কিন্তু উনি থাকায় তা আর হচ্ছে কই? আমি প্রাণপণে চাচ্ছি সে চলে যাক।  ঠিক সেই মূহুর্তে উনি  আমার আরেকটু কাছে এসে দাঁড়ালেন। আচমকা উনি নিজের মুখটা ঠিক আমার মুখ বরাবর এনে থামলো। আমাদের মধ্যে দূরত্ব আনুমানিক দুই ইঞ্জির! আমি অস্বস্তিতে উশখুস করতে করতে ওনাকে দূরে সরানোর চেষ্টা করার জন্য নিজের দুই হাত দিয়ে তার বুকে চাপ দিলাম। উনি খপ করে আমার হাত দুটো নিজের হাতে ধরে ফেলে বলে উঠেন, এই নরম হাত দিয়ে তুই আমাকে সরাবি? হাউ ফানি। মিরা আমি ডাম সিউর তোর এই নরম হাতে মশাও মরবে না! এতো নরম কেন রে তোর হাত?
আমি চমকে উঠি তার স্পর্শে। আশ্চর্য উনি আমার হাত কেন ধরেছেন। আমি মিনমিন সুরে বলি, আমার হাত ছাড়ুন!
— না ছাড়লে কি করবি?
— বড় আব্বুকে ডাক দিব কিন্তু বলে দিলাম।
ইমান ভাইয়া ডাম কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন, যা ডাক দে! তোর বাপ-চাচাদের আমি ভয় পাই না।
আমি চুপ মেরে গেলাম গেলাম। উনি উচ্চ আওয়াজে বলে উঠে, কি হলো ডাক তোর চৌদ্দ গুষ্টিকে! ডাক না! আমিও বললো তাদের আদুরে মেয়ে কলেজে না গিয়ে প্রেম করে বেড়ায়। ডাক!
শেষের কথাগুলো উনি হুংকার দিয়ে বলায় আমি ভয়ের চোটে কেদে দিয়ে বলে উঠলাম, ভাইয়া আমার ভুল হয়ে গেছে। মাফ করে দাও!
— প্রেম করার কোন ক্ষমা হয় না রে। প্রেম করা হচ্ছে শাস্তিযোগ্য অপরাধ!
উনার ফালতু কথাগুলো গায়ে না  মাখিয়ে বলে উঠি, বাবাকে প্লিজ কিছু বলবেন না দোহাই লাগে আপনার!
এবারে ওনার ঠোঁটে বাঁকা হাসির রেখা ফুটে ওঠে। উনি আমার আরো নিকটে এসে দাঁড়ালো এবং নিজের দুই হাত দরজার দুইপাশে ভর দিয়ে রাখল। আমি তার বলিষ্ঠ দুই হাতের মাঝে অবস্থান করছি। নিজেকে এই মূহুর্তে বন্দী পাখি লাগছে৷ আমি কাদো কাদো মুখ করে ওনার দিকে তাকালে বুঝতে পারলাম, সে আমার এই অবস্থা দেখে বেশ মজা পাচ্ছে। উনি আমার কানের কাছে নিজের মুখ এনে তার থুতনিটা আমার কাধে রেখে বলে উঠে, শিয়ালের সামনে মুরগি এন বলবি আপনি মুরগিকে খাবেন না শিয়াল ভাই! তা কি সম্ভব?
আমি কিছু না বুঝে ফ্যাল ফ্যাল করে তার দিকে তাকালাম। তার চোখে মুখে দুষ্টুমির ছায়া। উনি আমার মুখে ফুক মারলো। তার মুখ ও নাকের গরম নিশ্বাস আমার মুখ বরাবর আছড়ে পড়তেই লজ্জায় আমার পেট কামড় মেরে উঠলো! এই মূহুর্তে আমার জন্য শ্বাস নেয়াটাও দায়। মনে হচ্ছে, ওনার কাছ থেকে আগত কার্বন ডাই অক্সাইডের জন্য আমার চারপাশে অক্সিজেনের ঘাটতি পড়েছে !
উনি আমার কানে কানে বলতে লাগলেন, আমি এক্ষুনি তোর বাবাকে গিয়ে জানাব তার মেয়ে কলেজে পড়তে না গিয়ে প্রেম-মোহাব্বত করে। শুধু তাই না! দরকার হলে মসজিদ থেকে মাইক ভাড়া করে এনে এলাকায় মাইকিং করব। তারপর এক দন্ড কি যে  ভাবলেন, এরপর বলে উঠলেন, ইউটিউব এ ভিডিও ছাড়ব। শিরোনাম হবে, দেখুন পুরান ঢাকার সূত্রাপুরেরব মেয়ে কি ঘটিয়ে দিল,,,
আমি ওনাকে শেষ না করতে দিয়ে বলে উঠি, আপনি খুব খারাপ ইমান ভাইয়া। অসহায়ত্বের সুযোগ নেন সবসময়ই।
ইমান ভাইয়া তার ডান হাত আমার কোমড়ে নিয়ে গিয়ে ঠেকলেন এরপর শয়তানী হাসি হেসে বলে, সুযোগ তো নিব এখন। শোন মিরা তুই যদি আমাকে বিয়ে না করিস তাইলে আমি তোকে আর তোর প্রেমিকবাবুকে সারা দেশবাসীর কাছে ভাইরাল করে দিব৷
আমি চোখ মুখ খিঁচে বলে উঠলাম, কখনই আপনার মতো বেয়াদব লোককে আমি বিয়ে করব না!
উনি হো হো করে ঘর কাপিয়ে হেসে বললেন, শুধু বিয়ে? তুই আমাকে বিয়েও করবি আবার আমার সঙ্গে হানিমুন ও করবি৷
আমি ওনার দিকে তাকালাম।তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে উনি আমাকে চোখ মারলো। আমার মুখ আপনা-আপনি হা হয়ে গেল। কি ছেলে রে বাবা! আমাকে আমার এক ফ্রেন্ড বলেছে, যে ছেলেগুলো হানিমুন- হানিমুন করে তাদের চরিত্র ভালো হয় না।
আমি বিড়বিড় করে বললাম, আপনি আস্ত এক বজ্জাত! আপনাকে বিয়ে করে  বজ্জাতরাণী হওয়ার শখ নেই। আমি বুড়িগঙ্গায় ডুব দিতে রাজী আছি কিন্তু আপনাকে মরে গেলেও বিয়ে করব না! বলে দিলাম! আমি এক কথার মানুষ!
উনি আমার কথা শুনেছেন কিনা জানি না তবে হুট করে উনি আমার কোমড় খুব শক্ত করে চেপে ধরে আমার ডান গালে শব্দ করে চুমু খেয়ে বলে, আমাকে বিয়ে করলে তুই হবি শেহজাদী বুঝলি?
ততোক্ষনে আমার অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা! ছিঃ! কি অশ্লীল তিনি! ফেমাস মানুষজন বুঝি এমনই অসভ্য হয়!
এবারে উনি তার হাত পকেটে গুটিয়ে নিয়ে বলে উঠে, তোর ছেলে বন্ধু কয়টা রে?
— ক্লাসের সবাই আমার ফ্রেন্ড।
— তোদের ক্লাসে ছেলে কয়জন?
— পঁচিশ জন।
— এক কাজ কর তুই কানে ধর।
আমি যে আকাশ থেকে পড়লাম। বলে উঠলাম, কেন?
— প্রেম করার শাস্তি। মেয়েরা বিয়ের আগের দিন মেহেদী পড়ে আর তুই বিয়ের আগের দিন কানে ধরে উঠ-বস করবি। কি হলো কানে ধর!
আমি তেজি গলায় বলি, পারব না!
উনি ধমক দিয়ে বলে, কানে ধর!
উনার ধমক শুনেই আমার অন্তর কেঁপে উঠে। ভয়ে দেহ থেকে আত্মা বের হয়ে আসলো যেন। আমি সময় অপচয় না করে কান ধরলাম।
উনি বলে বলে, গুড গার্ল!
দুই হাতে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই উনি পুনরায় আমার কাছে এসে দাঁড়ালেন।নিজের মুখটা আমার ঠোঁটের কাছে আনার আগেই আমি পাশের টেবিলে রাখা কাঁচের জগ হাতে নিয়ে তার মাথায় আঘাত করি।
ভারী।জগের আঘাত পেতেই উনার মুখ ব্যথায় লাল হয়ে যায়। আমি ভয় পেয়ে যাই। উনি যদি মারা যান তাহলে আমার কি হবে? পুলিশ এসে কি আমাকে জেলে নিয়ে যাবে?
উনি ব্যথিত গলায় বলে উঠে, আহাম্মক! নিজের হবু বরকে মেরে ফেলে কি তুই বিধবা হতে চাচ্ছিস?

শেহজাদী পর্ব ২