শেহজাদী পর্ব ৩০ || Arishan Nur || রোমান্টিক গল্প

শেহজাদী পর্ব ৩০
Arishan Nur

মিরা বিকেলে ড্রয়িংরুমে বসে সবেমাত্র একটা কালোজাম মিস্টি মুখে পুড়ে নিয়েছে৷ এমন সময় বাসার দরজায় একটানা চার-চারবার বেল বেজে উঠল। তার বুক ধক করে উঠে। মিস্টি নাকে-মুখে উঠে গিয়ে কাশি হতে লাগে। মিরা মনে মনে ভেবেই নিয়েছে, বাসায় নিশ্চয়ই ডাকাত পড়েছে৷ তাদের সবকিছু লুট করে ডাকাতদল ভেগে যাবে।

তখন টিভিতে ক্রিকেট হাইলাইটস চলছে। মাত্রই তামিম আউট হলো। একই ফুটেজ ক্লোজ করে দেখানো হচ্ছে বারবার । পাকিস্তান বনাম বাংলাদেশের খেলার হাইলাইটস চলছে ।
আম্মু হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো রান্নাঘর থেকে। এসেই বাজখাঁই গলায় বলে, কে এসেছে? এতোবার বেল দিচ্ছে কেন?
মিরা কাশতে কাশতে জবাব দিলো, জানি না কে এসেছে৷
ততোক্ষণে ইরা বাদে বাড়ির সবাই ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হয়েছে। সোনালী আপা এই ভারী পেটেও রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে।

বড় আব্বু গেলেন গেট খুলতে। মিরা টিভি দেখায় মনোনিবেশ করলো৷
বড় আব্বু দরজা খুলেই তব্দা খেলেন। ইমান দাঁড়িয়ে আছে দরজার ওপাশে, সঙ্গে একজন অপরিচিত লোক । ইমানকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে ভীষণ চিন্তিত, বিচলিত ও ক্লান্ত।
তিনি বলে উঠে, ইমান বাবা তুমি?
ইমান বিনীত গলায় সালাম দিয়ে বলে, মামা আজকে আমি আপনার বাসায় ঘুরতে আসিনি৷ বরং প্রোফেশনাল কাজে এসেছি৷
বড় আব্বু ভ্রু কুচকে বলে, তোমার সাথে তো আমার কোন লেনদেন নেই বাবা। ব্যবসা সংক্রান্ত কোন ঝামেলাও নাই আমাদের। বহু আগে তোমার বাবার সঙ্গে একটা প্রেজেক্ট সামলেছিলাম৷ সেটা পুরনো কথা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইমান হালকা শ্লেষ মেশানো গলায় বলে, আপনার কোম্পানির সিইও সব জানে। ডাকুন ওনাকে।
বড় আব্বু আরেকদফা হতভম্ব হয়ে বলে, ভেতরে আসো। তোমাকে উত্তেজিত দেখাচ্ছে। আসো ঘরে আসো। ঘরের ছেলে ঘরে থাকবে। বাইরে দাঁড়িয়ে নয়।
ইমান চোখ বন্ধ করে পুরো পরিকল্পনা একবার ভেবে নিল। অস্থির এক প্লানিং আছে তার। সবটা ভালোই ভালো হলে এই-বার মিরার একদিন কি তার যতোদিন লাগে!

ইমান ভেতরে এসে ঢুকলো। সে যখন ভেতরে আসল, তখন সবার আগে নজর গেল, সোফায় পা তুলে বসে থাকা মিরার উপর। মিরা নীল রঙের একটা টি-শার্ট পড়েছে সঙ্গে সাদা প্লাজো। একটা সাদা স্কার্ফ গলায় ঝুলানো। কাটা ক্লিপ দিয়ে চুল উচু করে আটকানো। সে চোখ সরিয়ে নিলো। তার মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে। এদিকে তার খাওয়া-নাওয়ার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। ঘুম হারাম হয়ে আছে তার! অথচ মহারানীকে দেখো! আয়েশ করে বসে টিভি দেখতে দেখতে পাস্তা খাচ্ছে৷ তার মন চাচ্ছে,

মিরাকে গিয়ে ঠাটিয়ে দুটো স্কেলের বাড়ি বসাতে। কেন ফিক্সিসের অংক না বোঝার সাথে সাথে তার মনের সূত্র গুলো বুঝলো না! আরে বাবা, ইমানের মনের সব সূত্রের ডানপাশের উত্তর তো কেবল মিরা। এফ ইকুয়াল টু ও মিরা, ভোল্ট ইকুয়াল টুও মিরা, এম্পিয়ার ইকুয়াল টুও মিরাই!
মিরার মুখে তখন চামচ, পাস্তা সবে মুখে নিয়েছে। ঠিক ওই মূহুর্তে ইমান গমগমে সুরে বলে, মিস মিরা, আপনার বিরুদ্ধে মনহানির মামলা আছে।

মিরা খাওয়া বাদ দিয়ে ইমানের কথা শুনে টাস্কি খেল। মুখ থেকে চামচটা সরাতেও ভুলে যায় সে। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। এরপর কোনমতে মুখের খাবারটা খেয়ে নিয়ে বলে, কি বললেন আপনি? মনহানির মামলা? এটা আবার কি জিনিস?
ইমান ঘাবড়ে গেল। আয়হায় মনহানির মামলা বলে দিলো কেন সে? অবশ্য প্রকৃতপক্ষে ঠিকই বলেছে সে। মিরা তো তার মন দিয়েই ছিনিমিনি খেলেছে। কাজেই মিরার বিরুদ্ধে মনহানির মামলাই ঠুকে দেওয়া উচিত।

বাড়ির সবাই অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ সবকিছুই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷ কতোদিন পর ইমান বাসায় এসেছে এইজন্য সুপ্তি বেগম দারুণ খুশি হলো। সে কোন কিছুর পরোয়া না করেই বলে ফেললেন, ইমান তুমি রাতে না খেয়ে যাবেনা। আমি এক্ষুনি বিরিয়ানি বানাচ্ছি৷ খেয়ে যাবে৷
মিরার দাদিও রুমে এসেছিলেন। উনি এবারে বলে উঠে, বৌমা, দ্রুত কাবাব ভাজো। আমার নাতিটা তো আমাকে ভুলেই গেছে।

সোনালী আপা পেটে হাত বুলাতে বুলাতে বলে, ইমান এখন কতো বড় কোম্পানির এমডি! আমরা এখন কেউ না। সোনালী আপুকেও আর চেনে না। নিজের ভাগ্নার তো খোঁজ নিস না তুই।
ইমান কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না৷ সে সরু চোখে মিরার দিকে তাকালো। মিরাও হতভম্ব হয়ে তার পানে চেয়ে আছে৷ সে বাঁকা হাসলো। মাত্র তো শুরু আগে আগে দেখো হোয়া হ্যা কেয়া!
বড় আব্বু বলে উঠে, ওসব পরে হবে। ইমান তুমি কি জানি বলছিলে? আমি বুঝিনি আবার বলো৷ কিসের জন্য মামলা করবে তুমি?

ইমান হাঁসফাঁস করতে করতে বলে, আপনাদের কোম্পানির সিইও আমার সম্পদহানি করেছে৷ ওনার বিরুদ্ধে আমি একশন নিব।
বড় আব্বু থ মেরর দাঁড়িয়ে রইল। মিরা সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো এবং বেশ জোড়ালো গলায় বলে, আমি কবে আপনার টাকা মেরে দিলাম!

ইমান পকেট হাত গুটিয়ে নিয়ে বলে, আমাদের সঙ্গে আপনি রিসেন্টলি একটা প্রজেক্টে কাজ করার জন্য ডিল সাইন করেছেন। আমাদের প্রজেক্টটার সময় সীমা তিন মাস। অথচ আপনি পনের দিনের অন্তর অন্তর দেশ ত্যাগ করছেন। কাজ ফেলে চলে যাচ্ছেন। এই প্রেজেক্টের পেছনে আমি তের লাখ টাকা ইনভেস্ট করেছি। অথচ এখন শুনছি আপনার জন্য ডিল ক্যান্সেল। এভাবে তো ব্যবসা চলে না ম্যাডাম।

মিরার মুখটা দেখার মতো ছিল তখন। ইমান ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, আপনার কোম্পানির নামে আমি মামলা করব। দরকার পড়লে আপনাকেও জেলের ভাত ওপস সর‍্যি, জেলে রুটি দেয় দুইবেলা, কাজেই আপনাকে আমি জেলের রুটি খাইয়েই শান্ত হবো। পাস্তা খাওয়ার ইচ্ছা চুকে যাবে। এতোদিন বাপ-চাচার সঙ্গে কাজ করেছেন তো তাই ব্যবসা কি জিনিস বুঝেননি! আজকে সব বোঝাব। কত ধানে কত চাল হয় তা হারে হারে টের পাবেন৷

ইমানের হুমকি শুনে মিরা ভয় পেয়ে গেল। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হলো। সে চুপসে যাওয়া গলায় বললো, মিস্টার চৌধুরী কি প্রেজেক্ট ক্যান্সেল করার নোটিশ দিয়েছে আপনাকে?
— হ্যাঁ। আপনি সিডনি ব্যাক করলে, উনি ডিলটা ড্রপ আউট করবেন কিন্তু আমি ওলরেডি মোটা অংকের টাকা ইনভেস্ট করে দিয়েছি। এখন যদি আপনি কোন ধরনের তিড়িংবিড়িং করেন তাহলে আমাকে আপনাকে সোজা ও স্ট্রেইট কাট বানানোর পদ্ধতি বের করতে হবে৷

ইমানের সঙ্গে আসা লোকটা এবার বেশ গম্ভীরমুখে বলে, ম্যাডাম আপনি আগামী ছয় মাস দেশের বাইরে পা রাখতে পারবেন না। ছয় মাসের আগে দেশ ত্যাগ করলে, আপনাকে এরেস্ট করা হবে৷
মিরা পুলিশ বড্ড ভয় পায়। এরেস্ট হওয়ার কথা শুনে সে তরতর করে ঘামতে লাগলো৷ দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে রইল। বহু কষ্টে সে বলে উঠে, আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক! যেখানে খুশি সেখানে যাব৷ আপনারা কে আমাকে আটকানোর?

ইমান পকেট থেকে হাত বের করে চুলগুলো হাতের আঙুল দিয়ে ব্রাশ করতে করতে বলে, আপনি মোটেও স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক না বরং আপনি একজন আসামী! ইয়েস ইউ আর ক্রিমিনাল। অন্যের কষ্ট করে অর্জিত টাকা আত্মসাৎ করে সাত দিনের মাথায় দেশ ত্যাগ করতে চাচ্ছিলেন। ভাগ্য ভালো আমরা টের পেয়ে গেছি এবং আপনাকে হাতে-নাতে ধরে ফেলেছি৷

মিরা ঢোক গিললো। ইমানের মাথা ঠিক আছে? এতোগুলো লোকের সামনে কি যা-তা বকছে! মিরার আগে সন্দেহ হত যে এই ছেলের মাথায় গন্ডগোল আছে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গিয়ে নিজের মাথার সার্কিটেই গন্ডগোল হয়েছে। কিন্তু মাঝে এই সার্কিট নষ্ট ছেলেটার প্রেমে পড়ে ভুলেই গিয়েছিল ছেলেটা অর্ধেক পাগল!, পাগল নাহলে এইসব ছাইপাঁশ কথা কিভাবে বলে? তাও অভিভাবকদের সামনে?
মিরার বাবা জয়নুল সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে বলে, তোমাদের ব্যবসায়িক কথা-বার্তায় আমি থাকতে চাই না। তবে ইমান, আমার মেয়ে যদি সত্যি এবার কোন অন্যায় করে থাকে তাহলে তার শাস্তি হবে। এবার ক্ষমা পাবে না সে।

ইমান হাসি হাসি মুখ করে মিরার দিকে তাকালো। মিরার চোখ-মুখ কালো হয়ে গেছে ততোক্ষণে। বেচারী ভয়ে তটস্থ! ইশ! কি যে শান্তি লাগছে মিরাকে ভয় দেখাতে! খুব আনন্দ পাচ্ছে ইমান। কলিজা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে৷
মিরা কাচুমাচু হয়ে বলে, আমি কবে আপনার টাকা মেরে খেলাম?
ইমান সহজ গলায় উত্তর দেয়, গত বারো তারিখ আমাদের কোম্পানির একাউন্ট থেকে আপনার নিজের পারসোনাল একাউন্টে তের লাখ টাকা ডিপোজিট করা হয়েছে। আমার কাছে প্রুফ আছে? সো করব?

মিরার খেয়াল হলো, আসলেই কোম্পানি থেকে তার একাউন্টে টাকা এসেছে। ব্যাংক থেকে কলও এসেছিলো।
সে ঘাবড়ে যাওয়া ভয়ার্ত মুখ নিয়ে বলে, আমি প্রজেক্টের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিডনি যাব না! কাজ শেষ হবে এরপরই যাব। তাও প্লিজ মামলা করবেন না৷ আমি পুলিশ, কেস, মামলা ভীষণ ভয় পাই৷ প্লিজ! প্লিজ ডোন্ট ডু দিস।

ইমান হালকা হাসলো। এতোক্ষনে মিরাকে আন্ডার কট্রোলে আনতে পারলো! সাহস কতো মেয়ের! তাকে ভালোবাসার কথা বলেই উড়াল দিবে ভীনদেশে! তাতো হতে দিবে না ইমান! এই পুরান ঢাকাইয়া গাধীকে বাগে না আনলে সেও ইমান খান নয়!

মিরা বিদেশে যাবেনা শুনে সুপ্তি বেগম আর সোনালী আপা দারুণ খুশি হলো। ইমানের উপর তাদের দুইজনেত বিশ্বাস আছে যে সে কোনদিন এই পরিবারের সদস্যের ক্ষতি করবে না কাজেই প্রথম থেকেই তারা চিন্তামুক্ত ছিল। সুপ্তি বেগম তো মনে মনে রান্না করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মিরা-ইমানের কথোপকথন শুনে, সুপ্তি বেগম আর দেরি না করে রান্নাঘরে ইমানের জন্য রান্না করতে গেলেন। ছেলেটা কতোদিন পরে এসেছে! ভালো-মন্দ তো রেঁধে খাওয়াতেই হবে৷ সরিষার তেল দিয়ে তেহারি পছন্দ ছেলেটার। কাজেই তেহারি বানানো যেতে পারবে।আবার কাবাব ভাজতে হবে।

খাওয়া-দাওয়ার পর ইমানের সঙ্গে ঠাণ্ডা মাথায় কিছু কথা বলবেন তিনি৷ মনে মনে কথাগুলো গুছিয়ে নিচ্ছেন৷
ইমান বাধ্য হয়ে নানীর পাশে বসলো৷ বাসায় যেতে চাচ্ছিল সে কিন্তু রাতে না খেয়ে এ বাসা থেকে যাওয়া আর পাহাড় ভাঙ্গা সমান!
টুকটাক নানীর সঙ্গে কথা বলছে সে। কিন্তু চোরা চোখে বারেবারে মিরাকে পর্যবেক্ষণ করছে। মিরা গালে হাত দিয়ে সোফায় তার বাম পাশে বসে আছে৷ খুব গভীর ভাবনায় সে নিমজ্জিত।

মিরার পাশে গা ঘেঁষে সোনালী আপু বসা। তাদের সামনে টেবিল। টেবিলে দুই বাটি পাস্তা রাখা। পাস্তা থেকে গরম ধোঁয়া উঠছে। পাশেই মিস্টির প্লেট। যেহেতু আপু প্রেগন্যান্ট তাই বাসায় রান্না-বান্নার আয়োজন মোটামুটি ভালোই থাকে ইদানীং। আর পুরান ঢাকার স্থানীয়রা সবসময়ই খেতে ও খাওয়াতে ভালোবাসে। খাওয়া নিয়ে তাদের কোন কৃপনতা নেই।

ইমান চোখ সরিয়ে নিতেই মিরা বলে উঠে, পাস্তা নেন। আপু ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে তো,তুমি খেয়ে নাও! তোমার না ক্ষুধা লেগেছে৷
সোনালী পাস্তার বোল হাতে তুলে নিয়ে খাওয়া আরম্ভ করলো। মিরা নিজের খাওয়া পাস্তাটা ইমানের দিকে এগিয়ে দিল।
ইমান একটু ভাব নিয়ে বলে, আমি ডায়েটে আছি। এইসব চিজি ফুড এভোয়েড করি। আর আমি একদমই খাই-খাই স্বভাবের না।খুবই পরিমিত খাই৷

মিরা শেষের বলা কথাটাকে নিজ গরজে অপরাধ হিসেবে ধরলো। এবং রেগে কটমট করে মনে মনে বলে, কেন রে তোর ডায়েট করার দরকার কি? মোটা হয়ে গেলে বুঝি তোর গার্লফ্রেন্ড তোকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে? দেখ! নিজের ভাগ্য দেখ! কি গার্লফ্রেন্ড পাইলি যার জন্য খাবার ও খাইতে পারিস না। নিশ্চয়ই ওয়েট এক কেজি বেড়ে গেলে তোর গার্লফ্রেন্ড ব্রেক-আপ করে দিবে। এই তোর শেহজাদী কি ওয়েট মেশিন নিয়ে ঘুরে? এরচেয়ে আমাকে বিয়ে করে নেন, দেখবেন খেতে খেতে হাতির বাচ্চা হলেও আমি আপনাকে কক্ষনও খোঁটা মারবো না!উলটা যতো মোটা হবেন ভালোবাসা ততো বাড়িয়ে দিব। কিন্তু মিরার মনের কথা মনেই রয়ে গেল! প্রকাশ করা হলোনা।

ইমান আবারো কথা বলতে লাগে নানীর সঙ্গে।
মিরা ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ইমানকে দেখছে। এতে ভারী বিব্রতবোধ করতে লাগলো সে। হুট করে তার ফোন বেজে উঠল। সে রিসিভ করতেই ওপার থেকে জহির সাবেব বলে উঠে, হ্যালো হ্যাঁ ইমান?
সে বললো, জি বলেন আব্বু৷
— তুমি কোথায় আছ? অফিসে নেই তো!
— মামার বাসায় আছি৷
— আজকে রাতে ওই বাসাতেই থাকো।
ইমান ভ্রু কুচকে বলে, কেন?

জহির খান ওপাশ থেকে বলে উঠে, আর বলো না হুট করে তোমার ছোটমা বাসায় ওয়াল পেইন্ট করানো শুরু করলো।ষ্টুপিড মিস্ত্রি গুলো সব রুমের কাজ একসাথে শুরু করে এখন অফ করে চলে গেছে। আজকে থাকার মতো পরিবেশ নেই এই বাসায়। আমরা সাদের নানা বাসায় যাচ্ছি। কিন্তু সাদ ওই বাসায় যাবে না। কোন কাজিনের সাথে ঝগড়া হয়েছে ওর। মুখ দেখবে না ওই বাড়ির৷ হোটেলে থাকবে।

— হোটেলে একা থাকা কি সেইভ?
— বুঝাও ওকে।
— আচ্ছা দেখি কি করা যায়৷ রাখি তাহলে৷
ফোন রাখতেই নানী ও সোনালী আপুর হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হলো তাকে। একে একে সব বলার পর নানী ঘোষণা দিল, সাদ যেন এ বাসায় এসে ইমানের সাথে থাকে। অগত্যা ইমান ফোন দিয়ে সাদকে তার মামাবাড়ি আসার জন্য সাধাসাধি করলো। সাদ রাজীও হয়ে যায়। আর হবেই বা না কেন! তার ডানাকাটা পরী আছে যেখানে সাদ সে বাসার আমন্ত্রণ নাকজ করার ক্ষমতা রাখে না৷

রাতের দিকে মিরা ফোন হাতে ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের আঙুল কামড়াচ্ছে। ভীষণ বিব্রত, অস্থির আর দোটানায় ভুগছে সে। আবির ক্রমাগত তাকে ম্যাসেজ দিয়েই যাচ্ছে
সে ইগনরে ফেলে রেখেছে৷ কি করা উচিত? ব্যাটাকে একটা শিক্ষা না দেওয়া অব্দি মিরা শান্তি পাচ্ছে না৷

সে মনে সাহস জুটিয়ে তিনবার আয়তুল কুরসি পড়ে রিপ্লে দিলো, কুত্তার বাচ্চা, শয়তানের সেকেন্ড জামাই, শাকচুন্নির এক্স ভুলেও আমাকে ম্যাসেজ দিবি না। তোর গুষ্টি কিলাই।
ম্যাসেজ সেন্ড হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে সিন হলো৷ কিন্তু রিপ্লে এলো না। মিরা পৈশাচিক হাসি হাসলো। কাউকে গালি দিতে যে এতো আনন্দ তা আগে কোনদিন ফিল করেনি সে৷

একটু পর ম্যাসেজ এলো, মিরা জান আমার এমন করছো কেন? হু? এতো দুষ্ট কবে থেকে হলে? আমি জানি তুমি আমাকে খুব ভালোবাস। শুধু রেগে আছো। আই লাভ ইউ মাই জান। উম্মাহ।
মিরা এই ম্যাসেজ দেখে রাগে থরথর করে কাঁপা শুরু করে।কতোবড় সাহস তাকে চুমু দেয়! এই ছেলের ঠোঁট কেটে দিবে সে।
কি লিখবে তার আগেই পেছন থেকে কেউ বলে উঠে, কি করো? নিশ্চয়ই বয়ফ্রেন্ডের সাথে পীড়িতি চলছে? মেয়েরা প্রেমিকদের সঙ্গে নির্জনে কথা বলে! লোকালয়ে তৃপ্তি পায়না।

মিরা ঘুরে তাকিয়েই দেখে একবারে তার মুখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বোঝার আগেই সে ছোঁ মেরে তার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে দিয়ে আবিরের ম্যাসেজ পড়ে ঝাঝালো ও তাচ্ছিল্য মেশা সুরে বলে, এই তোমার ভালোবাসার নমুনা! কাল অব্দি আমাকে ছাড়া বাঁচবে না আর আজকেই আরেকজন জুটিয়ে নিয়েছো। যার সঙ্গে কিসিং-মিসিং খেলা চলছে। বাহ! বাহ!
মিরা বলে উঠে, পুরো ম্যাসেজ তো চেক করুন।

শেহজাদী পর্ব ২৯

সে ফোনটা রেলিংয়ের উপর রেখে বলে, আমি কারো ফোন চেইক করি না৷
মিরা কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে, বিশ্বাস করুন ! এই হারামি ছেলেটার সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নাই।
ইমান হেসে বলে, যা বোঝার বুঝে গেছি। তুমি আমার মতো নিষ্পাপ ছেলেদের নাকে দঁড়ি দিয়ে ঘুরিয়ে কি মজা পাও আল্লাহ ভালো জানেন।

মিরা আর কিছু বলবে আর আগেই ইমান নেমে গেলো। সে তাকে ভুল বুঝলো জন্য মিরা ছাদে দাঁড়িয়েই কেদে দেয়। ফোনটা রাগে-দুঃখে ছুঁড়ে মারে ফ্লোরে।
ইমান ছাদের দরজার পেছনে দাঁড়িয়ে তাকে কাঁদতে দেখে স্মিত হেসে মনে মনে বলে, কিছুদিন কাঁদো! মাঝে মাঝে কান্না করাও উচিত এতে চোখ পরিষ্কার হয়৷

শেহজাদী পর্ব ৩১