এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৪৬

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৪৬
Fabiha bushra nimu

পুরো রুম জুড়ে পিনপিনে নীরবতা কাজ করছে।কারো মুখে নেই কোনো কথা।হঠাৎ করেই ইফাদ কোনো কিছু না বলে,উঠে চলে গেল।বাহিরে গিয়ে কিছু একটা দেখে আসলো।রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিল।ধীর পায়ে তানহা’র কাছে এগিয়ে আসলো।তানহা ইফাদে’র দিকে-ই তাকিয়ে আছে।তানহা এবার মুখ খুলে,বলেই ফেলল।

–কি হয়েছে,এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?রিপোর্টে কি এসেছে,আমাকে বলছো না কেনো?তানহা’র কথা শেষ হবার আগেই’ ইফাদ তানহা’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তানহা’র মুখশ্রীতে অজস্র বার,অধর ছুঁইয়ে দিচ্ছে,তানহা সবকিছু চুপচাপ উপলব্ধি করছে। আদরে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আদরে ভরিয়ে তুলেছে তানহা’কে,স্বামীর এমন পাগলামি’তে এতটুকু-ও বিরক্ত হচ্ছে না তানহা।এই মানুষটা-ই তার ভালো থাকার কারন।তার মানসিক শান্তির কারন।মানুষটা’র কোনো কিছুই বিরক্ত লাগে না তানহা’র।মানুষটা’র মুখের দিকে তাকালে,অদ্ভুত এক শান্তি অনুভব করে তানহা,যে শান্তি পৃথিবীর কোথাও নেই।তানহা এবার ইফাদে’র দু’গালে হাত রেখে করে বলল।

–কি হয়েছে আমাকে বলবে না।আমার খুব চিন্তা হচ্ছে,ভেতরে খুব অস্থিরতা কাজ করছে।
–তুমি জানো তানহা তুমি আমাকে কত বড় উপহার দিয়েছো?পৃথিবীর সমস্ত সুখ তুমি আমাকে এনে দিয়েছো।
তানহা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ইফাদে’র দিকে তাকিয়ে আছে।তানহা’র দৃষ্টি বুঝতে পেরে,ইফাদ তানহা’র একা তানহা’র পেটে চেপে ধরলো।তারপরে কানের কাছে গিয়ে বলল।

–আপনি আম্মু আর আমি আব্বু হতে,চলেছি বউজান”।ইফাদে’র শুনে কিছু সময়ে’র জন্য থমকে যায় তানহা’।আল্লাহ তায়া’লার কাছে নামাজ পড়ে,একটা বাচ্চা কত করে চাইতো।আল্লাহ তায়া’লা তার চাওয়া পূর্ণ করে, দিয়েছে।মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করল।খুশিতে দু-চোখ ভরে এলো।

এক বাচ্চার জন্য ভেতরে ভেতরে কম কষ্ট পায় নাই তানহা।ইফাদ’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।মনের মধ্যে চেপে রাখা কষ্ট গুলো,আজকে হালকা হবে।ইফাদ-ও বুঝতে পারতো।তানহা একটা বাচ্চার জন্য কতটা কষ্ট পেত।কিন্তু তার কিছু করার ছিল না।ইফাদ তানহা’কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে,দু-চোখের অশ্রুকণা গুলো মুছিয়ে দিয়ে বলল।

–এভাবে কেউ কান্না করে।এতদিন একটা বাচ্চার জন্য কতটা কষ্ট পেয়েছো।আল্লাহ তায়া’লা তোমার মনে আশা পূর্ণ করে দিয়েছে।তার কাছে শুকরিয়া আদায় করো।আর কান্না করতে হবে না।আজকের পর থেকে আর কখনো কান্না করতে না দেখি।
তানহা ইফাদে’র কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলল।এখনো কান্না করছে।ইফাদ তানহা’র মুখ তুলে কপালে অধর ছুঁইয়ে দিল।দু’হাতে নিজের বুকে আগলে নিল।

–আজ থেকে একটা কাজ-ও তুমি করবে না।দরকার পড়লে তোমার সব কাজ আমি করে দিব।নিজের একদম অযত্ন নেওয়া চলবে না।মা’কে তো আগেই বলা হয়েছে।কাজের লোক ঠিক করতে,আম্মু নিশ্চয়ই খুঁজে বের করেছে।তোমার যা যা খেতে ইচ্ছে করবে।আমাকে বলবে,আমি সবকিছু এনে দেওয়ার চেষ্টা করবো।

তানহা মুগ্ধ হয়ে ইফাদে’র দিকে তাকিয়ে আছে।কান্না থামিয়ে ইফাদে’র হাসি-খুশি মুখখানার দিকে তাকিয়ে আছে।মানুষটা’কে দেখে মনে হচ্ছে,পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ ইফাদ।তানহা’র চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রুকণা গুলো শুকিয়ে আসতে শুরু করেছে।ইফাদে’র পাগলালি দেখে তানহা হেসে দিল।তানহা’কে হাসতে দেখে ইফাদ বলল।

–আমাকে দেখে তোমার পাগল মনে হয়।তানহা আমি সিরিয়াস।
–তুমি তো পাগল-ই।তোমাকে পাবনা রেখে আসবো।বলেই দু’হাতে মুখ ঢেকে ফেলল।তানহা’কে মুখ ঢাকতে দেখে,ইফাদ বলল।
–তুমি এভাবে মুখ আড়াল করছো কেনো?

–এই যে,আমি তোমাকে পাগল বললাম।এখন তুমি আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।আমার শরম করবে না, বুঝি।তানহা’র কথা শুনে,ইফাদ শব্দ করে হেসে ফেলল।ইফাদ’কে হাসতে দেখে তানহা বলল।
–তাহলে চলো বাহিরে যাই।আম্মাকে তুমি বলবে,আমি কিন্তু কিছু বলতে পারবো না।আমার লজ্জা লাগে।দুপুরের রান্না করতে হবে আবার।

তানহা’র শেষের কথা শুনে,ইফাদ রেগে গেল।মুখটা গম্ভীর করে বলল।
–কোনো রান্না করবে না।যতদিন না বাচ্চা হচ্ছে,ততদিন
তোমাকে যেনো রান্না ঘরে না দেখি?
–আজব রান্নার সাথে বাচ্চা হবার সাথ কি?এমন ভাব করছো?যেনো এই প্রথম তোমার বউয়ের বাচ্চা হবে।আর কোনোদিন কারো বউয়ের বাচ্চার হয় নাই।

–দেখো অন্যদের সাথে একদম আমার তুলনা দিবে না।এটা আমি একদম পছন্দ করি না।আম্মুর কাছে যাব চলো।বলেই বাহিরে আসলো।রোকেয়া বেগম ইফাদ’কে দেখে বলল।
–আজকে বিকেলে চৈতালি’কে দেখতে আসবে।

–আম্মু তাড়াতাড়ি টাকা-পয়সা জোগাড় করো।আমার মেয়েকে,কিন্তু সোনার গহনা দিয়ে মুখ দেখতে হবে।বলে দিলাম।
ছেলের কথা শুনে,রোকেয়া বেগম ভ্রু কুঁচকে তাকালো।ইফাদ মায়ের কাছে গিয়ে বসে,মায়ের গলা ধরে আহ্লাদী কণ্ঠে বলল।
–তুমি দাদি হতে যাচ্ছো আম্মু।নিজেকে তৈরি করো।ঔষধ খেয়ে সুস্থ হয়ে যাও।ক’দিন পরে তোমাকে আমার মেয়ের পেছনে ছুটতে হবে।ইফাদে’র কথা বুঝতে পেরে রোকেয়া বেগম বলল।

–আলহামদুলিল্লাহ।সত্যি আমাদের বাসায় নতুন সদস্য আসতে চলেছে।তানহা মা আমার কাছে আসো।তানহা লাজুক মুখ করে।শাশুড়ীর কাছে বসলো।রোকেয়া বেগম তানহা’কে বুকে আগলে নিয়ে,অনেক দোয়া করে দিল।
–আম্মু আজ থেকে একটা কাজ-ও তানহা’কে দিয়ে করাবে না।সব কাজ মিনু করবে।বলল ইফাদ।
–তুই কি করে মিনুকে চিনলি।বলল রোকেয়া বেগম।

–তুমি মিনুকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছিলে,আমি আসতে আসতে শুনেছি।বলল ইফাদ।
–দেখেন আম্মা আপনার ছেলে কি শুরু করেছে।আমদের এলাকার বউরা পেটে বাচ্চা নিয়ে কত কাজ করে।রান্না থেকে শুরু করে বাসার সব কাজ করে।কলসি করে পানি বইয়ে নিয়ে যেতে-ও দেখেছি।আমি নাকি।আজ থেকে কোনো কাজ করতে পারবো না।আপনি বলেন,এটা কোনো কথা।বলল তানহা।

–ইফাদ ঠিকি বলেছে।এমনিতেই তোমার শরীর খারাপ।তুমি সারাবছর কাজ করো।তোমার সংসার হারিয়ে যাচ্ছে না।তোমার সংসার তোমারই থাকবে।একটা বছর কাজ না করলে কিছু হবে না।বাচ্চার কথা চিন্তা করে হলে-ও,তোমাকে সব সময় চাপ মুক্ত থাকতে হবে।বলল রোকেয়া বেগম।

–আম্মা আপনি-ও শুরু করে দিয়েছেন।বলল তানহা।
–আমার ইফাদ একদম বাবার মতো হয়েছে জানো।আমার ইফাদের বাবা-ও এমন ছিল।আমি অসুস্থ থাকলে আমার খুব খেয়াল রাখতো।আমার তিনটা ছেলে-মেয়ে।ওরা যখন পেটে ছিল।আমাকে একটা কাজ করতে দেয় নাই।সব কাজে নিজে করেছে।আমার জন্য দু’টো কাজের লোক রেখেছিল।আমার ছেলে তা-ও একটা রেখেছে।বলল রোকেয়া বেগম।
তানহা আহত দৃষ্টিতে ইফাদ আর রোকেয়া বেগমে’র দিকে তাকালো।তানহা’র আহত দৃষ্টি দেখে দু’জনেই হেসে দিল।

–অনেক হাসাহাসি হলো,বিকেলে চৈতালি’কে দেখতে আসবে,সবকিছুর আয়োজন তো’ করতে হবে।বলল রোকেয়া বেগম।
–সমস্যা নেই।আমি আপনাকে সাহায্য করছি আম্মা।বলল তানহা।
–পাগল নাকি,তোমাকে একটা কাজ-ও করতে দিব না।আমি আম্মুকে সাহায্য করবো।বলল ইফাদ।
–কাউকে সাহায্য করতে হবে না।আমি আর মিনু মিলে করে নিব।বলল রোকেয়া বেগম।

–আমার আম্মুকে একা কাজ করতে দিব না।তানহা বসে থাকবে।আমরা তিনজন কাজ করবো।বলল ইফাদ।
–কিন্তু তোরা দু’জনেই অসুস্থ।আমি এভাবে তোদের দিয়ে,কাজ করাতে পারি না।বলল রোকেয়া বেগম।
–আম্মু আমি একদম সুস্থ আছি।বলল ইফাদ।বলেই রান্না ঘরের দিকে গেল সবাই।চৈতালি’কে ফোন করে,
আজকে আগে আসতে বলা হয়েছে।

চৈতালি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফাইয়াজে’র রুমের দিকে হাঁটা শুরু করল।দরজার সামনে এসে,
ফাইয়াজে’র থেকে অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল।ফাইয়াজ মনযোগ দিয়ে কাজ করছিল।চৈতালি’কে দেখে দৃষ্টি চৈতালি’র দিকে দিল।গম্ভীর মুখে বলল।

–কিছু বলবে?
–স্যার আজকে আমার আগে ছুটি লাগবে।
–হঠাৎ আগে ছুটি নেওয়া’র কারন কি?
–স্যার আমার বিয়ে,আজকে ছেলের বাসা থেকে,

আমাকে দেখতে আসবে।কথা গুলো মাথা নিচু করে বলল চৈতালি।চৈতালি’র কথা শুনে,ফাইয়াজে’র বুকের ভেতরটা’য় মোচড় দিয়ে উঠল।বুকের বা পাশে,চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল।নিজকে স্বাভাবিক রেখেই বলল।
–কংগ্রাচুলেশনস।সমস্যা নেই।তুমি চাইলে আগে যেতে পারো।তোমাকে এখনই ছুটি দিয়ে দিলাম।বাসায় গিয়ে পরিপাটি হয়ে নাও।বিয়ে তো’ মানুষের একবার-ই হয় তাই না।বিয়েটা যদি মনের মতো করে না হয়।তাহলে সারাজীবন অক্ষেপ থেকে যাবে।কোনো আক্ষেপ রাখবে না।আমাকে নিজের বন্ধু মনে করতে পারো।বিয়ের ক’টাদিন যত ছুটি লাগে,আমাকে বলে,আমি তোমাকে ছুটি দিব।সবকিছু যেনো তোমার মনের মতো হয়।

–স্যার আপনার গলা কাঁপছে?বলল চৈতালি।
–তোমার ছুটি লাগবে।ছুটি চেয়েছো।ছুটি দিয়ে দিয়েছি।এবার তুমি আসতে পারো।আমার অনেক কাজ আছে।বলেই ল্যাপটপে মনোযোগ দিল।চৈতালি আর কথা বাড়ালো না।ফাইয়াজে’র রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।ফাইয়াজে’র চোখ দু’টো নিমিষেই লাল হয়ে উঠেছে।নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে,আর থাকতে পারলো না।উঠে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিল।আপন মনে,গাড়ি চালাচ্ছে ফাইয়াজ।মনে মনে ভাবলো।

–ভালোবাসলে-ই কি তাকে পেতে হবে।কিছু প্রিয় জিনিস হোক না অন্য কারো।তুমি ভালো থেকো চৈতালি।আমি না হয়,দীর্ঘশ্বাস আর নির্ঘুম রাত নিয়ে,আমার বাকি জীবন টা পার করে দিব।

বাসায় এসে মায়ের কাছে গেল ফাইয়াজ।মায়ের কোলে মাথা রেখে বাচ্চাদের মতো করে কান্না করে দিল।রাহেলা চৌধুরী ধরেই নিলেন,ছেলের আজকে-ও বোনের কথা মনে হয়েছে।তিনি আদৌও কি জানতে পারবেন।তার ছেলের আঘাতটা অন্য কোথাও গিয়ে লেগেছে।না পাওয়ার যন্ত্রণা তার ছেলেকে,জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে।রাহেলা চৌধুরী ছেলের মাথায় স্নেহর হাত রাখলেন।বেশ কিছুক্ষণ পরে,রাহেলা চৌধুরী টের পেলে,তার ছেলে ঘুমিয়ে গিয়েছে।হঠাৎ করে রাহেলা চৌধুরী বুক কেঁপে উঠল।তার ছেলে কি অন্য কিছু নিয়ে কষ্ট পাচ্ছে।এই কয়দিনে ছেলের দিকে একবারো ভালো করে নজর দেওয়া হয় নাই।ছেলের এমন বিধ্বস্ত চেহারা হলো কি করে।দেখে মনে হচ্ছে,

ছেলেটার কত রাত ঘুম হয় নাই।মায়ের কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে ফাইয়াজ।পৃথিবীর সবথেকে নিরাপদ স্থান মায়ের কোল।যা’ ফাইয়াজে’র ঘুম বলে দিচ্ছে।রাহেলা চৌধুরী একটা বালিশ টেনে ছেলেকে শুইয়ে দিয়ে বাহিরে চলে গেল।ঠিক সেই সময় ফাইয়াজে’র বাবা বাসায় আসলো।রাহেলা চৌধুরীর কড়া আদেশ।তার ছেলে তাদের রুমে আছে।সেখানে গিয়ে ছেলে’কে যেনো বিরক্ত করা না হয়।

ফাইয়াজে’র বাবা কোনো উওর না দিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো।ফাইয়াজ’কে নিজের রুমে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে,দু-চোখ ভরে এলো।ছোট্ট ফাইয়াজ’টা কত বড় হয়েছে।বাবার ওপরে তার কি রাগ।কতগুলো বছর হয়ে গেল।তার মুখ থেকে বাবা ডাক শোনা হয় না।ফাইয়াজে’র কাছে এসে,মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।চোখ দিয়ে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।কতদিন পরে ছেলেকে এভাবে কাছে থেকে দেখলো।জেগে থাকলে,নিশ্চয়ই তাকে হাজারটা কথা শুনিয়ে চলে যেত।ফাইয়াজে’র বাবা উঠে বাহিরে চলে আসলো।যে,করেই হোক স্রুতির সাথে ফাইয়াজে’র বিয়েটা দিতে হবে।

ফাইয়াজে’র মা ছেলের রুমে এসে,বাকরূদ্ধ হয়ে গেল।ছেলেটা আমার ভেতরে ভেতরে এতটা শেষ হয়ে যাচ্ছে।আর আমি মা হয়ে টের পেলাম।ছেলেটা আমার মেয়েটা’কে কতটা ভালোবাসে,তাকে নিয়ে কত-শত স্বপ্ন বুনেছে।আমি থাকতে তোকে কষ্ট পেতে দিব না বাবা।চৈতালির সাথে তোকে বিয়ে দেওয়ার জন্য,আমার যতটা ছোট হওয়া লাগে,আমি হব।আজকেই ইফাদে’র কাছে যাব।

পাত্র পক্ষের সামনে বসে আছে চৈতালি।ছেলে দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ।সবার পছন্দ হয়েছে।চৈতালি কেমন পাথরের ন্যায় হয়ে বসে আছে।চৈতালি’কে আর পাত্রকে এক সাথে কথা বলার জন্য ছাদে পাঠানো হলো।সবাই ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছে।এমন সময় দরজায় কলিং বেল বেজে উঠল।চৈতালি ছাদ থেকে ফাইয়াজে’র আম্মু’কে দেখতে পেল।ভেতরে খুব অস্থিরতা কাজ করছে।খুব করে জানতে ইচ্ছে করছে।ফাইয়াজে’র আম্মু এখানে কেনো এসেছে।লেখিকা ফাবিহা বুশরা নিমু।
ইফাদ দরজা খুলে ফাইয়াজে’র আম্মুকে দেখে চমকে উঠল।ফাইয়াজে’র আম্মু বলল।

–বেশি সময় নেব না।দু’টো কথা বলে চলে যাব।বাহিরে থেকে বলবো।নাকি ভেতরে আসতে বলবে।
–ছিঃ আন্টি আপনি এভাবে বলছেন কেনো?বলল ইফাদ।তারপরে ফাইয়াজে’র আম্মু’কে নিয়ে ইফাদ নিজের রুমে গেল।ইফাদে’র সাথে তানহা’ও আছে।

ফাইয়াজ ঘুম থেকে উঠে যখন জানতে পারলো।তার আম্মু চৈতালিদে’র বাসায় আসছে।ফাইয়াজে’র মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।ফ্রেশ না হয়েই ছুলে চলল ইফাদে’র বাসার উদ্দেশ্যে।
–আম্মু না জানি সবকিছু শেষ করে দেয়।চৈতালিদে’র নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার আছে।নিজের ছেলের জন্য এতটা স্বার্থপর হলো কি করে আম্মু।
নিরবতা ভেঙে রাহেলা চৌধুরী বলল।

–আমার ছেলেটা তোমার বোনকে অনেক ভালোবাসে,
তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে ফাইয়াজ।মা হয়ে ছেলের কষ্ট কিভাবে সহ্য করবো।প্লিজ বাবা তুমি আমার ছেলেটা’কে বাঁচাও।তোমার বোনকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবে না।আমার ছেলেটা খুব চাপা স্বভাবের,
খুব সহজে নিজের মনের কথা গুলো কাউকে বলতে পারে না।

–আন্টি আমি আপনাকে মায়ের মতো ভালোবাসি।আপনি সবকিছু জানেন,তারপরে এমন কথা কিভাবে বলতে পারলেন।
–আমি আমার ছেলের জন্য স্বার্থপর হয়ে গেছি।তোমার বোনকে আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে,রাজি হয়ে যাও।এর জন্য যা করা লাগে আমি করবো।তোমার পা’ ধরতে হলে,তাই ধরবো।তবু-ও আমার ছেলেকে,শেষ করে দিও না ইফাদ।
–আন্টি আজকে চৈতালি’কে দেখতে এসেছে।আশা রাখছি,কোনো সমস্যা তৈরি করবেন না।আপনি যেমন আপনার ছেলের,ভালো চান।ঠিক তেমনই আমি আমার বোনের ভালো চাই।
ঝড়ের গতিতে ফাইয়াজ রুমে প্রবেশ করল।অস্থির হয়ে বলল।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৪৫

–আম্মু তুমি এখানে এসেছো কেনো?আসার আগে আমাকে বলে এসেছিলে,এখনই বাসায় যাবে।ইফাদ ভাইয়া তুমি কিছু মনে করো না।আম্মু কি বলতে কি বলে দিয়েছে।বলেই নিজের মায়ের হাত ধরে টেনে তুলল।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৪৭