প্রণয়ের জলসাঘরে পর্ব ১৮

প্রণয়ের জলসাঘরে পর্ব ১৮
রেহানা পুতুল

” ফুলের বনে দারুন খরা, চাই অনেক বৃষ্টি।
শুদ্ধ জলে চাই ভিজাতে কামনারই দৃষ্টি। ”
পিয়াসা আপ্লুত স্বরে ধীর গলায় জানতে চাইলো আয়মানের কাছে ,

এত প্রেম , এত অনুরাগ, এত নিবেদন,এত আরাধনা, হৃদয় কুঠিরে পুঞ্জীভূত রেখে এতদিন কিভাবে ছিলেন আপনি ?
আয়মান কামুক চাহনিতে পিয়াসার চোখে অপলক চেয়ে রইলো। পিয়াসা দৃষ্টি সরিয়ে নিতেই আয়মান পিয়াসার দুগালে হাত দিয়ে তার দিকে তাক করে ধরলো।
বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দেখি কতসময় ধরে তুমি স্থির চোখে আমার চোখে চোখ রাখতে পারো। চোখের পাতা পড়ে গেলেই খেলায় হেরে যাবে। দুজনের যে জিতে যাবে অর্থাৎ যার চোখের পাতা পরে নড়ে উঠবে। সে যা চাইবে এই বাসর রাতে তাই হবে।
দূর! আমি ঘুমাব। পারবোনা। কিভাবে চেয়ে থাকব। কেমন যেন লাগছে। আহ্লাদী ভঙ্গিতে বলল পিয়াসা।
তার মানে পরাজয় মেনে নিলে?

আমি খেলা বয়কট করলাম। গণতন্ত্র বলে কিছু আছে দেশে।
ওরে বাহানারে। গণতন্ত্র নাই এখন দেশে। একনায়কতন্ত্রেই দেশ চলে। সো আমিও এখন একনায়কতন্ত্রগিরি ফলাব।
খবরদার ভালো হবেনা বলছি স্যার। অধিকারের সাথে বলল পিয়াসা।

স্যারের খেতা পুড়ি। হালকা শীতে এই ঘোর নিশিতে আজ ডাকাত হবো আমি । শীত চলে যাচ্ছে। গ্রীষ্মে ডাকাতি করে এই সময়ের মতো মজা পাওয়া যাবেনা। এত ভয় কেন? তুমি না এই ডাকাতের কাছে স্বেচ্ছায় লুটপাট হতে চাও?
কই একদম নাতো। ঠোঁট উল্টিয়ে বলল পিয়াসা।
এমন পবিত্র মধুময় রাতে মিথ্যা বলতে নেই। জিহবা খসে পড়বে। শুন বলে, আয়মান পিয়াসার কোল থেকে মাথা সরিয়ে নিল। বালিশে মাথা রাখল। সিরিয়াস মুডে বলল,

এবার তোমার শুরুতে করা প্রশ্নের আনসার শুনো,
এই দুটি বছর জাস্ট তোমাকে মিস করতে হতো প্রতিটিমুহুর্তে। অনুভবে খুব চাইতাম তোমাকে । পেতাম ও। তখন তোমাকে খেয়ালমতে মিশে ফেলতাম আমার মানসপটের নরম গালিচায়।
উঁহু! আর শুনতে চাইনা। বলে পিয়াসা আয়মানের মুখ চেপে ধরলো হাতের তালু দিয়ে। আয়মান হাত সরিয়ে দিল পিয়াসার।
তপ্ত স্বাস ছেড়ে বলল,

” মানুষ হওয়ার সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা হলো কাউকে কিছু বলতে চেয়েও না বলতে পারা। ”
এই দহন ভারী ভয়ানক পিয়াসা। আচ্ছা বেশ রাত হয়ে গেল। আসো ঘুমাই। শাড়ি গহনা চেঞ্জ করো। নয়তো তুমিই আরাম পাবেনা। পিয়াসা হুম বলে বিছানা থেকে নামতে যাচ্ছে। আয়মান বাধা দিল। নামতে হবেনা বউ। বিছানার উপরেই চেঞ্জ করো।
পিয়াসা রাগী চোখে চাইতেই,

আয়মান হ্যাঁচকা টানে পিয়াসাকে তার পাশে শুইয়ে দিল।
আজব! কি সমস্যা আপনার?
সমস্যা গুরুতর। চুপ বলছি। একদম চুপ। আমিই সব খুলে নিচ্ছি একে একে।

আয়মানের পেশীশক্তির কাছে পিয়াসা হেরে গেল। ছোট্ট অবোধ শিশুর মতো একপাশ হয়ে চুপটি করে শুয়ে রইলো। আয়মান যত্ন করে পিয়াসার কানের দুল জোড়া খুলে নিল। গলা থেকে নেকলেস খুলে নিল। হাত থেকে বালা গুলো খুলে নিল। মাথা থেকে বিয়ের লাল ওড়নাটি সরিয়ে নিল। খোঁপা থেকে চুলের কাঁটাগুলো খুলে চুলকে পিয়াসার সারা পিঠে ছড়িয়ে দিল। চুলের ভাঁজে নাক ডুবিয়ে দিল।

মনে মনে, আহ! কি সোঁদা গন্ধ। মুখ ফিরানো দায়। আমার প্রেমিক হৃদয়ে ঝড় তুলতে এমন কেশবতীর কেশই যথেষ্ট। চুল সরিয়ে পিয়াসার ঘাড়ে নাক মুখ ঘষতে লাগল। পিয়াসা কেঁপে উঠলো। আয়মান টের পেল কিছু। পিয়াসার শাড়ি খুলে একপাশে রেখে দিল। কম্বলের নিচে পিয়াসাকে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। পিয়াসার দুই হাতের আঙ্গুলের ভিতর নিজের দুই হাতের সব আঙ্গুল ঢুকিয়ে পেরেকের মতো আটকে ফেলল।
পিয়াসা আস্তে করে বলল,

এমন করছেন কেন? কি করবেন?
তেমন কিছুইনা। জাস্ট চোরের মতন অল্পস্বল্প কিছু নিব। ডাকাতের মতো লুটপাট করবো যেদিন স্বইচ্ছায় তুমি ধরা দিবে। ঠিক সেদিন। হাত ছেড়ে দিল আয়মান। পিয়াসার কোমরে হাত দিয়ে খামচি দিয়ে ধরল। পিয়াসা কুঁকিয়ে উঠল। আঃ লাগছেতো। রাক্ষস নাকি আপনি?

হ্যাঁ ঠিক তাই। যা মন চায় বল। কোন রক্ষা তাই।
প্লিজ আমি ঘুমাব। আপনিও ঘুমান না। আমি কি হারিয়ে যাচ্ছি নাকি?
হারাতে দিবনা কভু তোমায়। তুমি আমার আরাধ্য। তুমি আমার ঘোর লাগা ভোর। তুমি আমার নেশা।
তুমি ঘুমাও পিয়াসা। আমি একটু ভালোবাসার সুরা পান করেই ঘুমিয়ে যাব। এর অতিরিক্ত কিছুই আজ হবেনা। প্রমিজ কেশবতী আমার।

আচ্ছা তাই যেন হয়। পিয়াসা অবসাদগ্রস্ত শরীর এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে খানিক বাদেই । আয়মান নেশাতুর চোখে চোরের মতো পিয়াসাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। তার প্রচন্ডভাবে মন চাচ্ছে পিয়াসার পা দুটো দেখা। গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে থাকা পিয়াসার উদাম পায়ের কথা মনে হলো তার। দুষ্ট দুষ্ট মন নিয়ে বিড়াল পায়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।

দেখল পিয়াসা গভীর তন্দ্রায় নিমগ্ন হয়ে আছে। আয়মান পিয়াসার পায়ের কাছে গিয়ে অতি সন্তপর্ণে কম্বল সরিয়ে নিল। লাল পেটিকোটটি হাঁটু অবধি তুলে নিল। সুবহানাল্লাহ! এত মোহনীয় হয় নারীর পা*যুগল। আমিতো খুন হয়ে গেলাম।
লেখিকা রেহানা পুতুল এর সাথেই যুক্ত হবেন দারুণ স্বাদের সব গল্প পেতে। আয়মান পিয়াসার ফর্সা ধবধবে পায়ের পাতায় ও আঙ্গুলগুলোতে অজস্র চুমু খেল। মোলায়েল করে চুমু খেতে খেতে হাঁটু অবধি ঠোঁট নিয়ে গেল। পিয়াসা নড়েচড়ে উঠলে আয়মান তার পা ঢেকে দিয়ে সরে গেল।

আয়মানের পিপাসায় গলা শুকিয়ে চৈত্রের মাঠ হয়ে গেল। টেবিল থাকা মগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে নিল। গলা উঁচিয়ে ঢকঢক করে দুই গ্লাস পানি খেয়ে নিল। বারান্দায় চলে গেল। পরপর দুটো সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে নিজেকে নেশা থেকে মুক্ত করলো। বেশ সময় পার হয়ে গেলে পিয়াসার পাশে এসে ঘুমিয়ে পড়ল।

আলো ফোটা ভোরেই পিয়াসা জেগে গেল। দেখল আয়মান ঘুমিয়ে আছে। মিষ্টি হাসি দিয়ে নেমে গেল লাজুক লাজুক মুখে। ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে একটি জামদানি শাড়ি পরে নিল। কারণ তার শাশুড়ী আগেই বলে দিয়েছে বিয়ের পর কিছুদিন যেন বাসায় শাড়িই পরে। নতুন বউ শাড়ি পরা দেখতেই আকর্ষণীয় লাগে। তাছাড়া বাঙালী মেয়েদের শাড়িতেই বেশ মানায়।

পিয়াসা রুম থেকে বের হয়ে গেল। শাশুড়ীকে পা ধরে সালাম দিল। বিয়ে উপলক্ষে বাসায় নিকটাত্মীয় মুরুব্বি যারা ছিল,
তাদের ও পা ধরে সালাম দিল।
আলিশা সামনে এসেই,
গুড় মনিং হানি। শুভ বিবাহ আনন্দময় হউক।
মনিং কাল ননদী।

কি বললা আমি কাল ননদী? দেখলে আম্মু তোমার পেয়ারের পুত্রবধূ দিন না গড়াতেই আমাকে বিষ নজরে দেখছে।
ভালো হইছে দেখছে। ফ্রেস হয়ে ডাইনিং এ আয় নাস্তা খেতে।
তুমিও পটে গেলে বউর তালে? এই বলে আলিশা পিয়াসাকে এক পাশে টেনে নিয়ে,
এই ভাবি গোসল করেছ? চুল দেখি?
খুব পেকে গিয়েছো । কোন দুঃখে এই সাতসকালে গোসল করব আমি। দুষ্ট হাসি দিয়ে আলিশার চিবুক নেড়ে বলল পিয়াসা।
আমার যে কবে বিয়ে হবে?

সময় হলেই হবে। আগে পড়াশোনা। ক্যারিয়ার। দেন বিয়েসাদি।
শ্বাশুড়ির আদেশে পিয়াসা নাস্তার ট্রে নিয়ে নিজেদের রুমে গেল। আয়মান ঘুমিয়ে আছে। পিয়াসা হাতে করে পানি এনে আয়মানের মুখে ছিটিয়ে দিল। আয়মান গড়িমসি করে জেগে গেল। পিয়াসা চোখের পাতা তুলে ইশারায় নাস্তার ট্রে দেখাল।
ওয়াও! মাইন্ডব্লোয়িং পিয়াসা। শাড়িতে তোমাকে ইন্ডিয়ান নায়িকার মতো লাগছে। পেট দেখা যাচ্ছে কেন। এত পাতলা শাড়ি বেশী সময় পরবেনা। পরে পর পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি যাবে আমার বউয়ের দিকে।

পিয়াসা নাক কুঁচকে। ইসসরে! পেয়েছে এক সম্পত্তি।
হুম ঠিক তাই। আয়মান উঠে ফ্রেস হয়ে পিয়াসা সহ নাস্তা খেয়ে নিল।
পিয়াসাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিল বেশ খানিকটা নাস্তা। নিজেও খেতে চাইলো পিয়াসার হাতে। পিয়াসা খেতে চাইলনা। খাওয়ালোওনা আয়মানকে। বলল আমার কারো হাতে খেতে ভালো লাগেনা। আবার খাওয়াতেও ভালো লাগেনা।
আয়মান মাইন্ড করলো শুনে। চুপচাপ উঠে গেল নাস্তা খেয়ে।

শুভ পড়াতে এলো বিকেলে। আলিশা অংক করছে আর মনে মনে অনুযোগের সুরে বলছে,
রোবট নাকি। রসকষহীন একটা মানব। একটু দুষ্টমি করলে কি হয়।
অংকের খাতার শেষে এক পৃষ্ঠায় আলিশা ,

‘ স্যার আপনাকে খুব লাইক করিই।’
শুভ রিপ্লায় দিলো,
‘ তা আমি ইতঃপূর্বেই জেনেছি। ‘
‘ তাহলে আপনিও কি আমাকে…? ‘
খাতা ঠেলে দিল শুভ’র সামনে।
‘ হুম আমিও লাইক করি একজনকে। ‘
‘ তার নাম স্যার? ‘

‘ কলাবতী তার নাম ‘ অংক কাটাছেঁড়া করতে করতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল শুভ।
‘ সেই মেয়ে কি সারাদিন কলা খায়? কলাবতী নাম যে?,
জানিনা। মনে হয় খায়। অংক করো বলছি আলিশা।
‘ না করবোনা। সেই কলাবতী কি আমিই স্যার? ‘
‘ তুমি কি সারাদিন কলা খাও? ‘ চোখের কোণে হাসির আবরণ ছড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো শুভ।
‘ নাতো। তেমন খাইনা। ‘

‘তাহলে তুমি কিভাবে আমার কলাবতী হও? ‘
আলিশার মন বেজায় ভার হয়ে গেলো। এভাবে খাতায় ও কলমের ভাষায় ব্যাক্য বিনিময়ের মাধ্যমেই আলিশা ও শুভ’র প্রণয়ের সূচনা পর্ব শুরু হওয়ার দিগন্তে এগিয়ে যেতে লাগল।
বিয়ের দ্বিতীয় রাতে আয়মান মন খারাপ করে শুয়ে আছে। তার আগে পিয়াসার মোবাইল হাতে নিল ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে। নেড়েচেড়ে দেখল বেশ কিছুক্ষণ ।

এর আগে পিয়াসার মোবাইল চেক করার মতো সিচুয়েশন হয়নি। তাই বহুবার তার ইচ্ছে হলেও বাদ দিতে হয়েছে। পিয়াসার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ঢুকলো। দেখলো একাধিক ছেলের প্রেমের প্রপোজাল পিয়াসাকে। গান, কবিতাও পেল কিছু।
পিয়াসা রুমে ঢুকেই বুঝলো কোন এক অজ্ঞাত কারণে পরিস্থিতি বেগতিক। অমাবস্যা নেমেছে কারো মৌনাকাশে।
কন্ঠে মায়া ঢেলে জানতে চাইলো,

প্রণয়ের জলসাঘরে পর্ব ১৭

কোন কারণে স্যারের মুড অফ মনে হচ্ছে। কি আমি রুমে আসতে দেরী করাতে?
আয়মান তেজী কণ্ঠে বলল,
যার জন্য চারদিকে হাজারো প্রেমিকের ঢল । আর তারা প্রেমের ঢালি সাজিয়ে অপেক্ষা করে কারো জন্য। তার আমাকে না হলেও চলবে!
শুনে পিয়াসা স্তব্দ হয়ে গেল। দুচোখ ভিজে গেল প্রবল অশ্রুবর্ষণে।

প্রণয়ের জলসাঘরে পর্ব ১৯