মহাপ্রয়াণ পর্ব ৫১+৫২

মহাপ্রয়াণ পর্ব ৫১+৫২
নাফিসা তাবাসসুম খান

সকাল থেকে প্রাসাদের সামনে প্রজাদের ভীড়। নতুন কাউন্টের মুকুট পড়ানোর কার্যক্রম শুরু হবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। মুকুট পড়ানোর কার্যক্রম শেষ হলেই কাউন্ট ঘোড়ায় করে বুখারেস্টে রাজ্য অভিষেকের জন্য বেরিয়ে পড়বে। আনাস্তাসিয়া এবং ক্যাথরিন এখানে উপস্থিত না থাকলেও আরোণ এবং ম্যাথিউ এই বিশেষ মুহুর্তে রিকার্ডোর সাথে উপস্থিত আছে। আনাস্তাসিয়া এবং ক্যাথরিনকে আদেশ দিয়ে আসা হয়েছে তারা যেন বাসকোভ প্রাসাদেই আরাম করে। তারাও বাধ্যের মতো সেই আদেশ মেনে নিয়েছে।

বিশাল সাদা পাথরের তৈরি হলরুমের দু’পাশে রাজ্যের উচ্চপদস্থ সকলে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে ম্যাথিউ এবং আরোণও উপস্থিত। অনেকেই তাদের দিকে ভ্রু বাকা করে তাকাচ্ছে। ম্যাথিউকে চিনলেও আরোণকে তারা চিনতে পারছে না। হয়তো ভাবছে এই আগুন্তকঃ আবার কে?
তাদের এসব ভাবনার মাঝেই হলরুমের দরজার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন প্রহরী স্ব শব্দে দরজা খুলে। প্রধান সেনাপতি স্টেফেন গলা ছেড়ে জোরে ঘোষণা করেন,
” সাবধান! কাউন্ট রিকার্ডো আলবার্ট আসছেন। ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

স্টেফেনের ঘোষণা শুনতেই হলরুমে উপস্থিত সকলে এক হাঁটু গেড়ে মাথা নত করে যে যার অবস্থান গ্রহণ করে। হীরা খচিত মুকুট মাথায় লাল মখমলের লম্বা ক্লক গায়ে জড়িয়ে হলরুমে প্রবেশ করে রিকার্ডো। ধীর গতিতে কদম ফেলে এগিয়ে যায় অপেক্ষমান সিংহাসনের দিকে। কাঙ্ক্ষিত পদধ্বনি শুনে হলরুমে উপস্থিত কারো কারো চেহারায় ফুটে উঠে স্মিত হাসি তো অপরদিকে কারো কারো চেহারায় ফুটে উঠে ভয় এবং আতংকের ছাপ। কারণ এই কাউন্ট তো কোনো সাধারণ মানুষ নয় বরং রক্তচোষা পিশাচ। সামান্য গড়মিল হলেই যদি ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে ফেলে?
রিকার্ডো হীরা খচিত সিংহাসনে এসে বসতেই সকলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। একে একে সকলেই রিকার্ডোর সামনে এসে মাথা নত করে তাকে অভিনন্দন জানায়। প্রাসাদে কার্যক্রম সম্পন্ন হতেই ঘোড়ার পিঠে চড়ে রিকার্ডো বেরিয়ে পড়ে রাজ্য অভিষেকের উদ্দেশ্যে। তার পিছনে অন্যান্য ঘোড়ায় থাকে প্রধান সেনাপতি স্টেফেন, ম্যাথিউ, আরোণ এবং আরো কিছু সংখ্যক সেনা৷

বুখারেস্টের অলিতে গলিতে প্রজাদের উপচে পড়া ভীড়। সকলেই উদগ্রীব নতুন কাউন্টকে দেখার জন্য। রিকার্ডো যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে সেখানে সকলের মুখেই তার নামের ধ্বনি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেক মানুষের ভীড়ে জোসেফকে দেখতে পায় রিকার্ডো। কে জানে কেন কিন্তু রিকার্ডো জোসেফের চোখে খুশির ঝলক দেখতে পায়। রিকার্ডো নিজেও তার দিকে তাকিয়ে সামান্য স্মিত হাসে। অবশেষে সব ভালোয় ভালোয় হয়ে যাচ্ছে।

রাজ্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে রিকার্ডো আজ প্রায় তিনমাস হতে চললো। এতো ব্যস্ততার ভীড়েও আনাস্তাসিয়াকে সময় দেওয়া মোটেও ভুলে নি সে। প্রথম প্রথম প্রজাদের মনে রিকার্ডোকে নিয়ে ক্ষানিকটা সংশয় কাজ করলেও রিকার্ডো নিজের বিচক্ষণতা এবং কঠোর পরিশ্রম দিয়ে তা দূর করেছে। গ্রীককেও মুক্ত করে দিয়েছে সে। এ নিয়ে রাজ্যের কিছুসংখ্যক সেনারা মতবিরোধ করলেও অবশেষে তারা এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়। এই তিনমাস রিকার্ডোর পাশে ছায়ার মতো ছিলো ম্যাথিউ। তাইতো আজকে রিকার্ডো সবথেকে বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে তা সর্বপ্রথম ম্যাথিউকেই জানায়। ম্যাথিউ নিজে সব ব্যবস্থা করে দেয় এই ব্যাপারে।

হাত-পা দঁড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা আনাস্তাসিয়ার। চোখও একটা কাপড় দ্বারা বাঁধা। চলতি ফিটনে বসে সে লাগাতার চিৎকার চেচামেচি করে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ তার ডাক শুনছে না। আজ বিকেলে বাসকোভ প্রাসাদের সামনে জঙ্গলের দিকে বেরিয়ে হাঁটা অবস্থায় হঠাৎ পিছন থেকে কেউ তার মুখ চেপে ধরে একটা রুমাল দ্বারা। এরপর আর কিছু মনে নেই তার। জ্ঞান যখন ফিরে তখন সে অনুভব করে তার হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সে চলতি ফিটনে আছে৷ আনাস্তাসিয়া আবার চেঁচিয়ে বলে উঠে,

” তুই যেই হস সাহস থাকলে আমার চোখ খুলে আমার সামনে এসে দাঁড়া। অসভ্য কাপুরুষ কোথাকার! একবার ছাড়া পাই তোকে মরিচ দিয়ে মেখে বন্য শিয়ালকে খাওয়াবো। ”
আনাস্তাসিয়ার চেচামেচির মধ্যেই হঠাৎ ঘোড়া শব্দ তুলে ফিটন থেমে যায়। আনাস্তাসিয়া চুপ হয়ে বুঝার চেষ্টা করে কিছু একটা। কিন্তু তখনই ফিটনের দরজা খোলার শব্দ হয়। আনাস্তাসিয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে টেনে ফিটন থেকে নামানো হয়। আনাস্তাসিয়া জোরে বলে উঠে,
” শালা! একবার আমি নিজ চোখে তোর চেহারা দেখে নেই তারপর তোর চোখ জোড়া খুলে কৃষ্ণ সাগরে ভাসিয়ে দিবো। কাকে উঠিয়ে এনেছিস এখনো বুঝতে পারছিস না। তোকে মেরে যদি গেড়ে না দিয়েছি তাহলে আমিও মার্টিন অ্যালভেজের মেয়ে আনাস্তাসিয়া অ্যালভেজ না। ”

আনাস্তাসিয়ার কথার মাঝেই তার পা এবং হাতের বাধন খুলে দেওয়া হয়। চোখের বাধন খুলতে যাবে তার আগেই আনাস্তাসিয়া সামনে থাকা ব্যক্তিকে হাঁটু বরাবর একটা জোরে লাথি মেরে বসে। সাথে সাথে লোকটা আহ বলে আর্তনাদ করে মাটিতে বসে পড়ে। আনাস্তাসিয়ার কাছে সেই কণ্ঠস্বর পরিচিত মনে হয়। সে তাড়াতাড়ি নিজেই নিজের চোখের উপর থেকে কাপড়ের বাধন খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে তার সামনে জোসেফ নিচে বসে আছে। হাঁটু ধরে সমানে আর্তনাদ করে চলেছে সে। আনাস্তাসিয়া কিঞ্চিৎ রাগ নিয়ে প্রশ্ন করে,

” জোসেফ তুমি? ”
জোসেফ জবাব না দিয়ে হাঁটু ধরে বসে রয়। আনাস্তাসিয়া নিজেই আবার কণ্ঠে একরাশ বিরক্তি নিয়ে প্রশ্ন করে,
” তুমি আমাকে তুলে কোথায় নিয়ে এসেছো? ”
জোসেফ চেচিয়ে জবাব দেয়,
” কাউন্টের আদেশ ছিলো। আমি কেবল পালন করেছি৷ আর বিনিময়ে পুরো রাস্তায় তোমার বকবকানি, হুমকি এবং শেষমেশ লাথি খেলাম। ”
আনাস্তাসিয়া ভাব দেখিয়ে বলে,
” বেশ করেছি লাথি মেরেছি। তুমি আর তোমার কাউন্ট আমাকে অপহরণ করে নিয়ে আসবা আর আমি কি বসে তালি বাজাবো? ”
জোসেফ বিড়বিড়িয়ে বলে,

” ঈশ্বর জানে কাউন্ট কি বুঝে এই জংলী বিড়ালের প্রেমে পড়েছে? কাউন্টের একটা হাড্ডিও এই মেয়ে আস্ত রাখবে না। বেচারা কাউন্টের জন্য আমার আফসোস হচ্ছে। ”
আনাস্তাসিয়া চারিদিকে তাকিয়ে দেখে খানিকটা ঝোপঝাড়ের মতো জায়গা। সে সন্দিহান গলায় প্রশ্ন করে,
” কোথায় তোমার কাউন্ট? ”
জোসেফ কোনো মতে উঠে দাঁড়িয়ে একটি পথ দেখিয়ে আনাস্তাসিয়াকে বলে,
” এই পথ ধরে সোজা যাও। কাউন্টকে পেয়ে যাবে। ”
আনাস্তাসিয়া ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,
” তুমি যাবে না? ”

” না। তোমার সাথে আর এক মুহূর্ত এখানে থাকলে আমার হাড্ডি সব গুড়ো হয়ে যাবে। আমি চললাম। ”
এই বলেই আনাস্তাসিয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে জোসেফ ফিটনের সামনে বসে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে প্রস্থান করে। আনাস্তাসিয়া বারকয়েক জোসেফের নাম ধরে ডাকা স্বত্বেও সে ফিরে তাকায় না। আর কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে আনাস্তাসিয়া জোসেফের দেখানো পথ ধরে হাঁটতে থাকে। হঠাৎ কিছু একটার শব্দ পেয়ে আনাস্তাসিয়া দৌড়ে সামনের দিকে যায়৷ ঝোপঝাড় পেরোতেই সে দেখতে পায় সামনে সমুদ্রের তীর।

সমুদ্রের তীরের একপাশে অসংখ্য আগুনের মশাল জ্বলছে। দুপাশে আগুনের মশালের মধ্যিখানে রাস্তার মতো মনে হচ্ছে। সেই রাস্তার বালি অগোচর করতে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে অসংখ্য ফুলের পাপড়ি। আনাস্তাসিয়া ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সেই পথ ধরে। সেই আগুনের মশালের রাস্তা কিছুটা পেরোতেই সামনে দেখতে পায় চারটি লম্বা কাঠ কোণাকুণি করে একসাথে তার মাথা বেধে দেওয়া হয়েছে। সেই কাঠ গুলো আবার শুভ্র পর্দা দ্বারা আবৃত। সেখানেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে রিকার্ডো।

সাদা টিউনিক শার্ট এবং কালো প্যান্ট পড়ে সুদর্শন পুরুষ সেজে দাঁড়িয়ে আছে সে। হালকা সোনালী রঙের গাউন পড়ে থাকা আনাস্তাসিয়া ধীর পায়ে এগিয়ে যায় তার স্বপ্নের পুরুষের দিকে। রিকার্ডো মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে আছে আনাস্তাসিয়ার দিকে। আনাস্তাসিয়া বোধহয় খানিকটা লজ্জা পেলো। তাই সাথে সাথে দৃষ্টি নত করে ফেলে সে। এগিয়ে এসে রিকার্ডোর সামনে দাঁড়ায়। রিকার্ডো আনাস্তাসিয়ার হাত ধরে কিছুটা কাছে আনে নিজের। আনাস্তাসিয়া চোখ তুলে তাকাতেই তার হাত ধরে রেখেই রিকার্ডো দু কদম পিছিয়ে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। আনাস্তাসিয়া হকচকিয়ে উঠতেই রিকার্ডোর সম্মোহনী দৃষ্টিতে থমকে যায়। রিকার্ডো শান্ত স্বরে বলতে থাকে,

” নিশি রাতের রক্তিম চন্দ্রগ্রহণের সময় যখন আমার পিশাচ স্বত্তা মানব রক্তের খোঁজে ছিলো
তখন এক দমকা হাওয়া এসে আমায় ছুঁয়ে যায়।
এক স্নিগ্ধ অনুভতি গ্রাস করে নেয় সম্পূর্ণ আমায়।
চুম্বুকের ন্যায় সেই বাতাসে মিশে থাকা রহস্যময়ী মিষ্টি রক্তের ঘ্রাণ আমায় আকৃষ্ট করে ফেলে।
আমি সেই ঘ্রাণ অনুসরণ করে অন্ধকারের মধ্যে হঠাৎ এক আহত রমণীর অবয়ব দেখতে পাই।
সামান্য দূরে হ্রেষা শুনতে পেয়েই আমি সেই ঘোড়ার পিঠে চড়ে এগিয়ে যাই রমণীর দিকে।
আহত রমণীকে তুলে নিজের সামনে বসাই।

রমণীর মুখশ্রী দেখার জন্য উদগ্রীব আমায় আরো কাতর করে নিষ্ঠুর চাঁদ আধারে তলিয়ে যায়।
চাঁদ, পৃথিবী, প্রকৃতি সকলে যেন একত্র হয়ে আমার সঙ্গে এক অদ্ভুত ষড়যন্ত্রে মত্ত হয়েছিলো।
কিন্তু সেই অপেক্ষার প্রহর অধিক দীর্ঘ হয়নি।
অবশেষে রক্তিম চাঁদ আধার ছেড়ে বেরিয়ে আসে এবং সেই রমণী উদগ্রীব নয়নে ফিরে তাকায়।
রমণীর নীলকান্তমণি আমার হৃদয়ে ঝড় তুলে।
আমি হারিয়ে যাই তার নেত্রের অতল গভীরে।
তার অবাধ্য দীঘল সোনালী কেশ হতে ভেসে আসা জেসমিনের সুবাস আচ্ছন্ন করে আমায়।
কে জানতো আমার হৃদয় প্রলয়ঙ্কারী হিসেবে সেদিন আমার জীবনে তোমার আগমন ঘটবে? ”
অনুভূতির আবেশে আচ্ছন্ন আনাস্তাসিয়া কিছু বলতে পারে না। রিকার্ডো কিছুক্ষণ থেমে আবার বলতে থাকে,

” পাথরের বুকে তৃণার জন্ম,
আমার জীবনে তোমার আগমণ।
সাগরের বুকে ঝড় উঠলো,
আমার পিশাচ স্বত্তা পুনরুত্থান হলো।
আকাশের বুকে পাখি ছুটে চললো,
আমার হৃদয় কেবল তোমার হলো। ”
অবশেষে আনাস্তাসিয়ার হৃদয়ে কম্পন তুলে রিকার্ডো বলে,
” আমাকে সারা জীবনের জন্য তোমার জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করবে নাসিয়া? ”
আনাস্তাসিয়ার চোখ ছলছল করে। অস্ফুটে সে বলে উঠে,
” হ্যাঁ। ”

রিকার্ডো সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে একটি ছোট কাঠের বাক্স বের করে। রিকার্ডো সেই বাক্সটা খুলতেই সেখানে একটি কালো মুক্তা পাথরের হার দেখতে পায় আনাস্তাসিয়া। রিকার্ডো আনাস্তাসিয়ার পিছনে দাঁড়িয়ে একহাতে তার পিঠে ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো একপাশ করে সড়িয়ে দেয়। তারপর খুবই সন্তপর্ণে সেই হারটি আনাস্তাসিয়ার গলায় পড়িয়ে দিয়ে তাকে পিছন থেকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়। আনাস্তাসিয়ার কানের লতিতে আলতো করে অধর ছুঁইয়ে ফিসফিস করে বলে উঠে,
” ভালোবাসি। ”
” আমিও ভালোবাসি। ”

আনাস্তাসিয়াকে রিকার্ডো যখন বাসকোভ প্রাসাদে পৌঁছে দিতে যায় তখন সকাল হয়ে গিয়েছে প্রায়। প্রাসাদে প্রবেশ করতেই নিচে মিলোসের সাথে দেখা হয় আনাস্তাসিয়া ও রিকার্ডোর। মিলোস জানায় ক্যাথরিনের প্রসব বেদনা শুরু হয়েছে। আনাস্তাসিয়া এবং রিকার্ডো সাথে সাথে দৌড়ে আরোণ এবং ক্যাথরিনের কক্ষের সামনে যায়। কক্ষের দরজার বাহিরে আরোণ, ক্রিয়াস সহ আরো কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। ভিতর হতে ক্যাথরিনের চিৎকারের শব্দ ভেসে আসে। রিকার্ডোকে বাহিরে রেখেই আনাস্তাসিয়া হন্তদন্ত হয়ে কক্ষের ভেতর চলে যায়। আরোণ করিডর জুড়ে পায়চারি করছে। তার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। আগে কখনো কোনো মানব কন্যার গর্ভে নেকড়ের আলফার শিশু জন্ম নেয় নি। তাই এই প্রসবে কোনো ঝুঁকি আছে নাকি তা নিয়ে নিশ্চিত নয় কেউ। আরোণের কেবল একটাই চাওয়া, তার ক্যাথ এবং সন্তান যেন সুস্থ থাকে।

বেশ কিছুক্ষণ পর কক্ষের ভেতর থেকে একটি শিশুর কান্নার ধ্বনি ভেসে আসতেই আরোণের পা আপনাআপনি থেমে যায়। তার চোখ জোড়া ছলছল করে উঠে। বদ্ধ দ্বার ধীরে ধীরে খুলে যায়। আনাস্তাসিয়া কোলে করে গোলাপি রঙের কাপড়ে মোড়ানো একটি ছোট্ট শিশু নিয়ে বেরিয়ে আসে। আরোণ ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে যায়। আনাস্তাসিয়া স্মিত হেসে বাচ্চাটিকে আরোণের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
” আপনার এবং ক্যাথরিনের মেয়ে। ”
আরোণ কাপা কাপা হাত জোড়া বাড়িয়ে শিশুটিকে কোলে তুলে নেয়। বাচ্চাটি মিটিমিটি চোখে আরোণের দিকে তাকায়। আরোণের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। সে বাচ্চাটির কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে উঠে,
” আমার জান। ”
তারপর সে আনাস্তাসিয়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
” ক্যাথ? ”
আনাস্তাসিয়া আশ্বস্ত করে বলে,

” ক্যাথরিন দূর্বল সামান্য তবে চিন্তা করবেন না। ক্রিনা, হান্নাহ এবং বাকি দুজন ভিতরে তার সাথে আছে। ”
ক্রিয়াস এবং রিকার্ডোসহ কক্ষের বাহিরে অপেক্ষমান সকলেই আরোণকে অভিনন্দন জানায়। আনাস্তাসিয়া আরোণকে জানায় ক্যাথরিন ভিতরে তার জন্য অপেক্ষা করছে। আরোণ মেয়েকে কোলে নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করতেই হান্নাহ, ক্রিনা এবং বাকিরা কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
বিছানায় দূর্বল ভঙ্গিতে চোখ বুজে শুয়ে আছে ক্যাথরিন। আরোণ ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে ক্যাথরিনের পাশে বসে। একহাতে মেয়েকে কোলে আগলে রেখে আরেক হাত বাড়িয়ে ক্যাথরিনের গাল স্পর্শ করে। ধীর এবং শান্ত গলায় ডাকে,

” ক্যাথ। ”
ক্যাথরিন ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়। আরোণকে দেখে হালকা হাসে সে। চেহারা বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে তার। তবুও গলায় সামান্য জোর এনে প্রশ্ন করে,
” আমার মেয়ে? ”
আরোণ হেসে ক্যাথরিনের হাতের উল্টো পিঠে চুমু খেয়ে বলে,
” মেয়ে হুবুহু মায়ের প্রতিচ্ছবি। ”
এটা বলেই আরোণ মেয়েকে নিয়ে সামান্য ঝুকে ক্যাথরিনকে দেখায়। ক্যাথরিনের চোখ চিকচিক করছে। সে ঘাড় সামান্য কাথ করে মেয়ের কপালে চুমু খায়। তারপর আরোণের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
” ওর নাম কি রাখবে ভেবেছো? ”
আরোণ অবাক সুরে প্রশ্ন করে,

” এই তিনমাস না তুমি আমার সাথে ঝগড়া করলে যে নাম তুমি ঠিক করবে? ”
” কিন্তু এখন আমি চাই আমাদের মেয়ের নাম তুমি রাখবে। ”
আরোণ কোলে থাকা বাচ্চাটির দিকে তাকায়। মাথায় অল্প কিছু বাদামি চুল, ছোট ছোট চোখ মেলে বাচ্চাটি তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। আরোণ তাকানোর সাথে সাথেই সামান্য হাসলো মনে হলো। সাথে সাথে বাচ্চাটির চেহারায় মৃদু লাল আভা ফুটে উঠলো। তা দেখে আরোণ হাসে। স্পষ্ট স্বরে বলে উঠে,
” ক্যামেলিয়া। ”
ক্যাথরিন প্রশ্ন করে,
” ক্যামেলিয়া? ”
” হ্যাঁ। আমার ক্যাথের প্রতিচ্ছবি ক্যামেলিয়া। ”
ক্যাথরিন হাসে। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে,
” পৃথিবীতে স্বাগতম ক্যামেলিয়া রদ্রিগেজ। ”

বাসকোভ প্রাসাদের হলরুমে মেয়েকে কোলে নিয়ে সকলের সামনে তার নাম ঘোষণা করে আরোণ। সেখানে রিকার্ডো এবং আনাস্তাসিয়াও উপস্থিত ছিলো। প্রাসাদে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। কিন্তু বুখারেস্ট প্রাসাদে কিছু কাজ থাকায় রিকার্ডোকে এখন ফিরতে হবে। যাওয়ার আগে সে আরোণকে একান্তে জানিয়ে দেয় আনাস্তাসিয়াকে সে খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে চলেছে। আরোণ বেশ খুশি হয়। রিকার্ডোকে অভিনন্দন জানায় সে। আপাতত আনাস্তাসিয়া রিকার্ডোকে এগিয়ে দিতে তার সাথে হাঁটতে হাঁটতে প্রাসাদের বাহির পর্যন্ত চলে আসে। প্রধান ফটকের কাছাকাছি আসতেই রিকার্ডো থেমে আনাস্তাসিয়াকে বলে,

” তুমি এখন ভেতরে যাও। ”
আনাস্তাসিয়া কিঞ্চিৎ লজ্জাবোধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। রিকার্ডো সেই দৃষ্টি বুঝতে পেরে আনাস্তাসিয়াকে প্রশ্ন করে সে কিছু বলতে চায় নাকি। আনাস্তাসিয়া ইতস্তত করে প্রশ্ন করে,
” ক্যামেলিয়াকে আমার কোলে কেমন লাগছিলো? ”
রিকার্ডোর ভ্রু কুচকে আসে এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে। তবুও সে উত্তর দেয়,
” ক্যামেলিয়া সুন্দর। তুমিও অপরূপ সুন্দরী দেখতে। অবশ্যই তোমাদের একসাথে সুন্দর লাগছিলো। ”
আনাস্তাসিয়া বলে উঠে,

” উহু। এভাবে না। ওকে কোলে নিয়ে আমাকে মানাচ্ছিলো? ”
রিকার্ডোর ভ্রু জোড়ার মাঝে সূক্ষ্ম ভাজ কিছুটা গভীর হয়। সে সরাসরি প্রশ্ন করে,
” তুমি কি বলতে চাইছো সরাসরি বলো তো? ”
আনাস্তাসিয়া এবার লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করে,
” আমি বুঝাতে চাইছি বাচ্চা কোলে কি আমাকে মা মা লাগছিলো? ”
রিকার্ডো এবার বুঝতে পারে আনাস্তাসিয়ার এতক্ষণের ইতস্ততার কারণ। তার চোখ মুখ শক্ত রূপ ধারণ করে। আনাস্তাসিয়ার মাথায় আলতো করে গাট্টা মেরে সে বলে উঠে,
” নিজের মাথার অদ্ভুত চিন্তাভাবনা বাদ দাও। নিজেই এক বাচ্চা আবার বাচ্চার স্বপ্ন দেখছো? বিয়ে করে তোমাকে এক জংলী বিড়াল নিয়ে যাবো সেটা কি কম যে আবার আরো জংলী বিড়াল পালতে চাও? আমার প্রাসাদকে চিড়িয়াখানা বানানোর চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। ”

আনাস্তাসিয়া রাগ হয় প্রচুর। সে কোমরে হাত দিয়ে ঝাঁঝালো স্বরে বলে উঠে,
” কাকে বাচ্চা বলছো হ্যাঁ? আমার বয়স আঠারো চলছে। আমার বয়সী মেয়েরা দু এক সন্তানের মা হয়ে বসে আছে। আর কি বুঝাতে চাইছো তুমি? আমি জংলী বিড়াল আর আমার বাচ্চারাও আমার মতো জংলী হবে? আমরা তোমার প্রাসাদকে চিড়িয়াখানা বানিয়ে ফেলবো? ”
রিকার্ডো ভ্রু কুটি করে বলে,
” কোনো সন্দেহ তোমার? ”
আনাস্তাসিয়া রাগে অগ্নিরূপ ধারণ করে। সে ফোসফাস করতে করতে বলে,

” আর কখনো আসবে না এখানে। কোনো বিয়ে টিয়ে করবো না আমি তোমাকে। লোকালয় থেকে খুঁজে নিজের জন্য যোগ্য ভদ্র মেয়ে বিয়ে করে নিও। তাহলে তোমার প্রাসাদও আর চিড়িয়াখানা হবে না। ”
এটুকু বলেই আনাস্তাসিয়া হনহনিয়ে প্রাসাদের ভেতর চলে যায়। রিকার্ডো পিছন থেকে বার কয়েক নাসিয়া বলে ডাকে। কিন্তু আনাস্তাসিয়া ফিরে তাকায় না। রিকার্ডো একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। সে ইচ্ছে করেই এভাবে কথা বলেছে যেন আনাস্তাসিয়া আর কখনো এই বিষয়ে কথা না তুলে। তার এখনই বুখারেস্ট পৌঁছাতে হবে। বেশ কাজ আছে তার। আনাস্তাসিয়ার কাছে ফিরতে ফিরতে বেশ দেড়ি হবে। ততক্ষণে আনাস্তাসিয়ার রাগ সাত আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে। সেই রাগ ভাঙাতে রিকার্ডোর অনেক কাঠখড় পোহাতে হবে। কিন্তু যেকোনো মূল্যে রাগ ভাঙিয়েই ছাড়বে সে। রিকার্ডো আপনমনে বলে উঠে,
” প্রেয়সীর রাগ ভাঙ্গানোর তুলনায় গোটা রাজ্য সামালানো বেশি সহজ৷ ”

রাজ্যের বিভিন্ন কাজ শেষ করে কেবলমাত্র কক্ষে প্রবেশ করে রিকার্ডো। সাথে সাথেই কক্ষের দরজায় করাঘাতের শব্দ। একজন প্রহরী দরজা খুলে মাথা নত করে কক্ষে প্রবেশ করে রিকার্ডোকে জানায় ম্যাথিউ এসেছে। রিকার্ডো অনুমতি দিতেই প্রহরী বেরিয়ে গিয়ে ম্যাথিউ ভেতরে প্রবেশ করে। ম্যাথিউ প্রবেশ করেই প্রথমে প্রশ্ন করে,
” আনাস্তাসিয়া হ্যাঁ বলেছে? ”
রিকার্ডো সামান্য হেসে বলে,
” কাল রাতে রাজি হয়ে আজ আবার আমাকে প্রত্যাখ্যানও করে দিয়েছে। ”
ম্যাথিউ ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,
” তুমি আবার কি করলে? ”
রিকার্ডো কিছু না জানার ভান করে বলে,
” আমি আবার কি করবো? আমি শুধু বলেছি ও একটা জংলী বিড়াল। যেটা আলবাত সত্য কথা। ”
ম্যাথিউ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

” বেশ করেছো। এখন চিরকুমার হিসেবে জীবন পার করো। ”
রিকার্ডো হাসতে হাসতে তৈরি হতে থাকে। তা দেখে ম্যাথিউ প্রশ্ন করে,
” আনাস্তাসিয়া প্রত্যাখ্যান করায় কি এখন নতুন বন্য প্রাণী খুঁজতে যাচ্ছো? ”
রিকার্ডো বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,
” উহু। বন্য বিড়ালের রাগ ভাঙাতে যাচ্ছি। ”
ম্যাথিউ রিকার্ডোর যাওয়ার পানে তাকিয়ে হাসতে থাকে। রিকার্ডো চোখের আড়াল হতেই ম্যাথিউর মুখের হাসি ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়। বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। বিড়বিড় করে বলে,
” এরকম খুনসুটি চলুক তবুও কখনো আলাদা যেন না হয় এরা। ”

শরীরের উপর দিয়ে এতো ধকল যাওয়ার দরুন ক্যাথরিন ক্লান্ত হয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। হান্নাহ জানিয়েছে এতটা ধকলের ঘাটতি পূরণের জন্য ক্যাথরিনের এখন বেশি বেশি বিশ্রাম প্রয়োজন। ক্যাথরিন ঘুমোচ্ছে তাই আরোণই ক্যামেলিয়াকে কোলে নিয়ে কক্ষে হেঁটে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ক্যামেলিয়ার ঘুমোনোর নামগন্ধও নেই। সে নিশাচর পাখির মতো জেগে আছে। আরোণ ধীর স্বরে বলে উঠে,
” আর কতক্ষণ এভাবে জেগে থাকবে তুমি? মধ্যরাত হয়ে গিয়েছে প্রায়। ”
আরোণের কথার মধ্যেই কক্ষের দরজায় মৃদু করাঘাতের শব্দ হয়। এতো রাতে কে আসতে পারে ভাবতে ভাবতে আরোণ ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়। সাথে সাথে আনাস্তাসিয়া কক্ষে প্রবেশ করে। আরোণ আনাস্তাসিয়াকে দেখে প্রশ্ন করে,

” অ্যানা? তুমি এতো রাতে এখানে? সব ঠিক আছে? ”
ক্যাথরিনের ঘুমে যেন ব্যাঘাত না ঘটে তাই আনাস্তাসিয়া ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,
” আমার ঘুম আসছিলো না ভাই। ভাবলাম আপনি ক্যামেলিয়াকে নিয়ে হয়তো জেগে আছেন তাই দেখতে এলাম। ”
” হ্যাঁ। কতক্ষণ ধরে ওকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছি ও ঘুমোচ্ছেই না। ”
আনাস্তাসিয়া আরোণকে আশ্বস্ত করে বলে,
” আপনি ওকে আমার কাছে দিন। আমি আমার কক্ষে নিয়ে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি। ”
” তুমি শুধু শুধু কষ্ট করবে কেন? ”

” নিজের ভাগ্নিকে ঘুম পাড়াতে কিসের কষ্ট? আর তাছাড়াও ক্যামেলিয়া যদি কান্না শুরু করে তাহলে উল্টো ক্যাথরিনের ঘুম ভেঙে যাবে এখন। আপনি বরং আপনার বউয়ের খেয়াল রাখুন আর আমি আমার ভাগ্নির। ”
আরোণ হেসে ক্যামেলিয়াকে আনাস্তাসিয়ার কোলে দিতে দিতে বলে উঠে,
” কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে ডাক দিও। আমি সারারাত প্রাসাদেই আছি আজকে। ”
আনাস্তাসিয়া সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে ক্যামেলিয়াকে নিয়ে নিজের কক্ষে চলে আসে।
ক্যামেলিয়াকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আনাস্তাসিয়া আপনমনে কথা বলে যাচ্ছে।
” আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ক্যামি। ওই রিককে আমি বিয়ে করবো না। ওই অসভ্য আমাকে বলে আমি নাকি জংলী বিড়াল। নিজের চেহারা কখনো আয়নায় দেখেছে? আস্ত এক জিরাফ কোথাকার। একদম শিম্পাঞ্জির ভাইয়ের মতো চেহারা। ”

ক্যামেলিয়া বিজ্ঞের মতো আনাস্তাসিয়ার দিকে তাকিয়ে সবকথা শুনছে। যেন আনাস্তাসিয়ার বলা প্রতিটা কথার অর্থ সে বুঝতে পারছে। আনাস্তাসিয়া নিজেই বলতে থাকে,
” ওই হনুমান যদি আর কখনো আমার সামনে আসে তাহলে ওকে ওর কৃষ্ণ সাগরের পানিতে ডুবিয়ে ধুয়ে বরফ চাপা দিয়ে দেব একদম। ”
আনাস্তাসিয়া আপনমনে কথা বলতে বলতে হঠাৎ তাকিয়ে দেখে ক্যামেলিয়া তার কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। আনাস্তাসিয়া হেসে মনে মনে নিজেকে বলে,

” ওই জিরাফ আমাকে বাচ্চা বলে অথচ আমি কি সুন্দর এক বাচ্চা পালতে সক্ষম। ”
এটুকু বলেই আনাস্তাসিয়া সাবধানে ক্যামেলিয়াকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তারপর নিজেও তার পাশে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার চোখ বুজে ঘুম নেমে আসে।

কক্ষের দরজা খুলে ধীরে ধীরে প্রবেশ করে রিকার্ডো। আনাস্তাসিয়া দরজার দিকে পিঠ করে বিছানায় শুয়ে আছে। রিকার্ডো মনে মনে বলে,
” এখন ওকে ঘুম থেকে জাগাতে গেলে সারাদিনের রাগ আগ্নেয়গিরির লাভার মতো বেরিয়ে আসবে। তারচেয়ে ভালো ঘুমিয়ে থাকুক। ”

মহাপ্রয়াণ পর্ব ৪৯+৫০

এটুকু বলে রিকার্ডো ধীরে ধীরে আনাস্তাসিয়ার দিকে এগিয়ে আসে। বিছানার কাছাকাছি আসতেই তার পা জোড়া থমকে যায়। আনাস্তাসিয়ার পাশে ক্যামেলিয়াকে দেখে ওর বুকে একটা ধাক্কা খায়৷ আনাস্তাসিয়া আর ক্যামেলিয়া বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। হঠাৎ দুজনকে এভাবে দেখে যে কেউ ভাববে এটা আনাস্তাসিয়ারই সন্তান। রিকার্ডো হেঁটে বিছানার অপরদিকে ক্যামেলিয়ার পাশে এসে বসে। তারপর আনাস্তাসিয়ার চেহারার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে। সকালে আনাস্তাসিয়ার করা প্রশ্ন তার মস্তিষ্কে বাজতে থাকে। রিকার্ডো অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে,
” বাচ্চা কোলে তোমায় অপরূপ লাগে। কিন্তু যেই বাচ্চা পৃথিবীতে আসলে তোমাকে তার মূল্য দিতে হবে সেই বাচ্চা আমি কখনোই চাই না। তোমার বিনিময়ে সবকিছু মূল্যহীন আমার কাছে। ”

মহাপ্রয়াণ পর্ব ৫৩+৫৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here