শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২০

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২০
আলিশা

শান্তর ঝাড়ি নীরবে নিভৃতে সইয়ে পথ চলতে আরম্ভ করলাম। প্রথমেই “নাচ গার্ডেন” এর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। একটা সিএনজি ভাড়া করে তাতে দু’জনে আলাপচারিতায় এগোতে লাগলাম। স্মরণের চোখ ফাঁকি দিয়ে ডাক্তার বিদায় দিতে যা পোহাতে হয়েছে আমার তার কথা না হয় চাপাই রাখলাম। বেলা গড়িয়ে গেলো। আমরা নাচ গার্ডেনের মুখোমুখি পৌঁছে গেলাম। চাপা সরু গলির সঙ্গে যেন যুদ্ধ করে পৌঁছাতে হলো।

দু’জনে কেবল ঘোরাঘুরি করলাম। আমি বোরকার আড়ালে থেকে অনুসন্ধান করলাম অস্বাভাবিক কিছু পাওয়ার আশায়। শান্ত একটু আগ বাড়িয়ে চলে গেলো সামনে। পরিত্যাক্ত বাড়ি যেন। দুই তলা তার অবয়ব। কোনো জমিদার বাড়ি বললে বোধ হয় ভুল হবে না। পুরোনো বিল্ডিং। ভেতরে কতটুকু চাকচিক্য তা বুঝে ওঠা দ্বায়। দশ মিনিট গড়িয়ে যেতেই আচমকা কেউ আমার কাঁধে হাত রাখলো। ভরকে গিয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই গলা শুকিয়ে চৌচির হলো।
দামি শার্ট, প্যান্টে আবৃত মধ্য বয়স্ক এক লোক। কড়া পারফিউম তার। উচ্চমূল্যের জুতো পায়ে। হাতের দামি ঘড়িটা সে আমার হাতে মুহূর্তের মধ্যে গুঁজে দেওয়ার প্রচেষ্টা করে বলতে লাগলো

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— শোন খাইরুন এইটা সোনার ঘড়ি। বেচলে অনেক টাকা পাবি। তুই শুধু আজকের জন্য আমার হয়ে যা। তিন ঘন্টা নিলাম তোকে।
আমার হাত পা যেমন কেঁপে উঠলো তেমনই মস্তিষ্ক অসার হতে আরম্ভ করলো। সাথে যুক্ত হলো স্মৃতিচারণ। খাইরুন? সন্দেহের তালিকায় থাকা বুড়ি দাদিমার সেই নাতনি চোখের সাথে ভেসে উঠলো।

— আচ্ছা তাইলে দুই ঘন্টা চল।
আমার হাত দ্বিতীয় বারের মতো শক্ত করে ধরার জন্য লোকটা উদ্যত হতেই আমি আমার হাতে গুঁজে দেও ঘড়িটা টুপ করে মাটিতে ফেলে দিলাম। দু পা পিছিয়ে শান্তর দিকে নজর দিতেই দেখি ও হুড়মুড় করে এগিয়ে আসছে আমার দিকে।

— ওর বুকিং হয়ে গেছে। ফ্রি নেই।
শান্ত যেন দূর থেকেও পরিস্থিতি বুঝে জবাব দিলো। লোকটা ভ্রুকুটি করলো। আমিও সাহস নিয়ে বলে উঠলাম
— আমি খাইরুন নই। নতুন এসেছি।

লোকটার কুঁচকানো ভ্রুতে কোনো পরিবর্তন এলো না। কিছুটা জটলা পাকতে আরম্ভ করলো আমাকে আর শান্তকে ঘিরে। ছোট এক উঠোন মতো জায়গা। তার একটু পরেই আছে গলি। এলোমেলো শাড়িতে দাড়ানো পাঁচ সাতটা নারী। শান্ত ও আমি ভীত হয়ে উপায়ন্তর খুঁজতে ব্যস্ত হলাম। এখনই এখান থেকে যেতে না পারলেই বিপদ। কি করবো? ধরা পরবো কি? দু’টো মেয়ে আমার নিকাব নিয়ে প্রশ্ন তুলল। এখানে কেউ বোরকা পরে থাকে না। তাহলে আমি কেন পরেছি? কবে আমাকে এখানে আনা হয়েছে? আমি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছি। অস্থির, অশান্ত আমার তনু, মন। এমন সময় হঠাৎ নুপুরের ঝুনঝুন শব্দ।

মধ্য বয়স্ক লোকটা আমার দিক থেকে ধ্যান সরিয়ে চাতক পাখির মতো চেয়ে রইলো সম্মুখের কাঠের দরজার দিকে। বেরিয়ে এলো খাইরুন। আমি হতবাক হয়ে তাকে দেখতে লাগলাম। সঙ্গে দু’টো ছেলে। কালো শাড়িতে আবৃত খাইরুন বসে পরলো টাইলস বিহীন প্লাস্টার করা চকচকে মেঝেতে। গুটি কয়েক পুরুষ হামাগুড়ি দিলো যেন খাইরুনের দিকে। এই ফাঁকে শান্ত আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার মতলব আঁটলো। ও আমার চোখে চোখ রেখে ইশারা করতেই আকস্মিক হাজির হলো দু’টো লোক। ঘিরে ফেলল আমাকে ও শান্তকে। খাইরুন হাসলো। এগিয়ে এলো আমাদের দিকে। আমার অন্তরাত্মা লাফিয়ে উঠলো। তবে কি আমরা ফেঁসে গেলাম। এখন কি মানুষ হয়ে বন্দি হবো পশুর হাতে? ভাবনার মাঝেই খাইরুন বলে উঠলো

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ১৯

— এটাই হলো আমার রূপের জাদু। আমার রূপে সবাই এভাবেই ফাঁসে।
অদ্ভুত দেহভঙ্গি তার। শান্তর দিকে করুন চোখে চাইলাম আমি। অশ্রু বুঝি আমার চোখে টলমল করছে। শান্ত নীরব রইলো। আমি কিছু বলে ওঠার পূর্বেই খাইরুনের কন্ঠ ভাসলো তপ্ত বাতাসে
— নিয়ে যা ওকে। স্টোর রুমে বন্দি কর এই ছোকরা কে।

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২১