অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ৫

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ৫
ইরিন নাজ

বিছানার এক কোনে চেপে শুয়ে আছে আয়ানা। তার বেড বেশি বড় না হলেও দুইজনের পক্ষে শোয়া সম্ভব। কিন্তু মাঝখানে কোনো প্রকার দূরত্ব থাকবে না হয়তো। আজ আদ্রিশের এতোটা কাছাকাছি থাকতে হবে ভেবেই কেমন যেনো অনুভূতি হচ্ছে আয়ানার, হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, তার ব্যাপারে সব টা জানার পর আদ্রিশ কেমন রিএক্ট করবে ভেবে চিন্তাও হচ্ছে আয়ানার।

আদ্রিশ ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখলো আয়ানা এক পাশে চেপে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে। হাসলো আদ্রিশ। লাইট নিভিয়ে আয়ানার পাশে শুয়ে পড়লো। আদ্রিশের দেহের উষ্ণতায় কেঁপে উঠলো আয়ানা। নিজেকে আরও গুটিয়ে নিলো। জানালা দিয়ে আবছা আলো রুমে প্রবেশ করে রুম কে হালকা আলোকিত করে রেখেছে। সেই আলোতে সবটাই নজরে আসলো আদ্রিশের। সে গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— “তোমার কি সমস্যা হচ্ছে?”
— “না, না আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।”
দ্রুততার সাথে জবাব দিলো আয়ানা। এরপর কিছুটা সময় নীরবতায় কে’টে গেলো। আয়ানা সাহস জুগিয়ে বলে উঠলো,
— “শুনুন? আপনাকে কিছু জানানোর ছিলো….”
আয়ানার কণ্ঠে চোখ মেললো আদ্রিশ। ঘাড় কাত করে আয়ানার দিকে তাকালো। চোখে চোখ পড়ায় অপ্রস্তুত হলো আয়ানা। দ্রুত দৃষ্টি অন্যত্র নিলো। জোরে একটা শ্বাস টেনে বলে উঠলো,

— “আমি এই বাড়ির মেয়ে নই…”
হঠাৎ আয়ানার মুখে এমন কথায় চমকালো আদ্রিশ। হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে রইলো আয়ানার দিকে। আয়ানা ফের বলে উঠলো,

— “অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই। অবাক হওয়ার ই কথা। উনি আমার বাবা নন। আমি আমার আম্মুর প্রথম পক্ষের সন্তান। যেহেতু আম্মুর উনার সাথে বিয়ে হয়েছে সেহেতু আমারও এই বাড়ির মেয়ে হওয়ার কথা ছিলো। সবাই তাই জানে। কিন্তু আমি নিজেকে এই বাড়ির মেয়ে মনে করি না। আর না এই বাড়ির অন্য সদস্যরা মনে করে। কারণ মীরা আপুর বাবা কখনোই আমাকে নিজের মেয়ে মনে করেন নি আর না আমাকে উনার মেয়ের মতো রেখেছেন।”

কথাগুলো বলে নাক টানলো আয়ানা। তার কান্না পাচ্ছে, বুকে য’ন্ত্র’না হচ্ছে। সে জানে না সবকিছু জানানোর পর আদ্রিশের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। কিন্তু আজ সে আদ্রিশ কে সব টা জানাবেই। আয়ানা আবার বলতে লাগলো,
— “আমি সেবার চতুর্থ শ্রেণী তে উঠেছি। হঠাৎ একদিন আব্বুর মাথায় ভীষণ য’ন্ত্র’না শুরু হলো। আব্বু য’ন্ত্র’নায় কা’ত’রাচ্ছিলো। প্রথম বারের মতো আব্বু কে কাঁদতে দেখেছিলাম সেদিন। আব্বু কে কাঁদতে দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো।

আমিও সমান তালে কাঁদছিলাম। আব্বু কে হাসপাতালে নেয়া হলো। ডাক্তার কি বললো, কি হলো তেমন কিছুই বুঝি নি। ছোট ছিলাম তো। পরে একটু বড় হওয়ার পর আম্মুর কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাম আব্বুর ব্রেইন টি’উ’মার ছিলো। যখন ধরা পড়ে তখন এমন অবস্থায় চলে গিয়েছিল যে কোনোভাবেই বাঁচানোর কোনো সম্ভাবনা ছিলো না। যাইহোক এরপরের কিছুদিন আব্বু হাসপাতালেই ছিলো। হঠাৎ একদিন সকালে শুনলাম আব্বু আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।”
ফুঁপিয়ে উঠলো আয়ানা। পুরনো স্মৃতিগুলো যেনো তার চোখের সামনে ভাসছে। সে পুনরায় বলতে লাগলো,

— “আমি আর আম্মু একেবারে ভে’ঙে পড়েছিলাম আব্বুর হঠাৎ এভাবে চলে যাওয়ায়। বিশেষ করে আম্মু, ভালোবাসার মানুষটা কে হারিয়ে আম্মুর অবস্থা তখন পা’গ’লপ্রায়। আব্বু যেনো নিজের সাথে করে আমাদের জীবনের সুখ, রঙ সব নিয়ে গেলেন। এরচেয়েও বা’জে কিছু তখনও আমাদের মা মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলো। আব্বু যাওয়ার পরের দিন ই আমাদের আব্বুর মৃ’ত্যু’র জন্য দায়ী করে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন আমার দাদী।

আসলে আব্বু নিজের পছন্দে বিয়ে করেছিলেন আম্মু কে। দাদী বিয়েতে রাজী ছিলেন না। আব্বুর জোরাজুরিতে শেষমেষ রাজী হয়েছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর আমার নানা বাড়ি থেকে তেমন কিছু না দেওয়ায় দাদী আম্মু কে আরও সহ্য করতে পারতেন না। এরপর হলাম আমি। দাদী চেয়েছিলেন নাতি, হলো নাতনি। সবকিছু মিলিয়ে আম্মু উনার চোখের বি’ষ ছিলো। আম্মু দাদীর হাতে পায়ে ধরে অনেক অনুরোধ করেছিলো যেনো আমাদের একটু আশ্রয় দেয়। কিন্তু উনি দেন নি।

আম্মু আমাকে নিয়ে চলে আসলো নানা বাড়িতে। আমার নানা বাড়ির অবস্থা তেমন স্বচ্ছল ছিলো না। নানাভাই তখন এতোটাই অ’সুস্থ যে বিছানা থেকে উঠতে পারতেন না। আমাদের অবস্থার কথা জানতে পেরে উনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর মাসখানেক আমরা নানা বাড়িতে ছিলাম। ভালো ছিলাম তা বলা চলে না। মামীরা বাড়ির সব কাজ আম্মু কে দিয়ে করাতো। এমন এমন কথা বলতো যা সহ্য করার মতো না।

মাসখানেক পর নানাভাই ও একদিন আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। নানাভাইয়ের বাড়ি আমার তিন মামার দখলে চলে গেলো। মামাদের কাছে আমি আর আম্মু তখন বো’ঝা। মামীরা মামাদের কি সব বোঝালো, তারা আম্মুর অগোচরে মীরা আপুর বাবার সাথে আম্মুর বিয়ে ঠিক করলো। যেদিন উনারা ওই বাড়িতে আসলো সেদিন আম্মু কে জানানো হলো আজ আম্মুর বিয়ে। আম্মু কিছুতেই বিয়ে করবে না। আব্বু কে অনেক ভালোনাসতেন যে! আব্বু ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ কে উনি নিজের জীবনে জায়গা দিবেন না।

কিন্তু মামারা আম্মু কে জো’র করলো। বললো বিয়ে না করলেও আম্মু আর আমাকে উনারা রাখবেন না। বাড়ি থেকে বের করে দিবেন। তখন আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে। আমি তখন ছোট। আমার কথা ভেবে আম্মু কে রাজী হতে হলো বিয়েতে। বিয়ে টা হলো। উনি আম্মু কে বিয়ে করেছিলেন মীরা আপু আর উনার সংসার দেখাশোনার জন্য। আম্মু তো মীরা আপু কে নিজের মেয়ে হিসেবে মেনে নিলেন কিন্তু উনি আমাকে কখনোই নিজের মেয়ে বলে মানেন নি। আমি সামনে পড়লেও রা’গা’রা’গি করতেন।

মীরা আপু আম্মুর কাছে ঘুমালেও আমাকে আলাদা রুমে একা ঘুমাতে হতো। একটু বড় হওয়ার পর সেটাও কপালে রইলো না। মীরা আপুর রুম হলো। সারা আপু আমার রুম দখল করে নিলো। আমাকে পাঠিয়ে দেয়া হলো উপরে, সবার থেকে আলাদা এই ঘরে। একা একা এখানে ভ’য় পেতাম ভীষণ। কিন্তু কিছুই করার ছিলো না। সারা আপু আর তার মা আমাকে আমার মায়ের কাছ থেকে দূর করে দিয়েছিল। সারা আপু আর উনার মা কে আসার পর থেকেই এই বাড়িতে দেখছি। সারা আপুর বাবা বিদেশে থাকেন।

এই জন্য উনারা মা মেয়ে এই বাড়িতেই থাকে। সারা আপু আর উনার মা আমাদের মা মেয়ে কে শুরু থেকেই সহ্য করতে পারে না। সারা আপু তো কথায় কথায় আমার গায়ে হাত তুলতো। আমাকে মে’রে সে উল্টো নিজের মায়ের কাছে বিচার দিতো আমিই নাকি তাকে আ’ঘা’ত করেছি। তখন তার মা ও আমাকে মা’র’তো, অকথ্য ভাষায় গা’লা’গা’লি করতো। আম্মু নিজের চোখে সব টা দেখে সহ্য করতে পারে নি। শুরু শুরুতে প্রতিবাদ করেছিলো। তাই উনি নিজের ভাইয়ের কাছে নালিশ দিয়েছিলো যে আমরা মা মেয়ে নাকি তাদের সহ্য করতে পারি না।

তাদের অনেক জ্বা’লা’চ্ছি। যাতে তারা এই বাড়িতে থাকতে না পারে। এসব শুনে মীরা আপুর বাবা অনেক রে’গে গিয়েছিলেন। উনি উনার বোন কে অন্ধের মতো বিশ্বাস করেন। উনি আমাদের কথা না শুনেই আম্মু কে থ্রে’ট দিলেন উনার বোনের কথা না শুনলে আমাকে বাড়ির বাইরে ফেলে আসবেন। এরপর থেকে আম্মু আর কিছু বলার সাহস পায় নি। তবে মীরা আপুর বাবা কে অনেক অনুরোধ করেছিলো আম্মু যেনো আমাকে পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়।

হয়তো উনার মন একটু নরম হয়েছিল। তাই আমাকে সরকারি স্কুলে ভর্তি করে দেন। আমার পড়াশোনা ও সহ্য হতো না সারা আপু এবং উনার আম্মুর। উনারা বহুবার চেষ্টা করেছেন যেনো আমি আর পড়াশোনা করতে না পারি। কিন্তু ততদিনে আমি বুঝে গিয়েছিলাম পড়াশোনা ছাড়া আমি এই অবস্থা থেকে বের হতে পারবো না আর না আম্মু কে বের করতে পারবো। তাই যেভাবেই হোক পড়াশোনা কন্টিনিউ করেছি।

সারাক্ষন মানসিক য’ন্ত্র’ণার মধ্যে থাকতো আম্মু। কারণ একটু বড় হবার পর থেকেই ঘরের সব কাজ আমাকে দিয়ে করাতো উনারা। আম্মু মা হয়ে সব টা দেখতো কিন্তু কিছুই বলতে পারতো না। সেই য’ন্ত্র’না হয়তো কিছু টা কমেছে আপনার সাথে আমার বিয়ে হবার পর। আমাকে এখান থেকে বের করতে পেরে আম্মু শান্তি পেয়েছে।”

এতগুলো কথা বলে হাপিয়ে উঠলো আয়ানা। জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো। ঘাড় কাত করে আদ্রিশের দিকে চাইলো সে। চোখ তার অশ্রুতে টলমল করছে। যেকোনো সময় তা গড়িয়ে পড়বে। আয়ানা ধরা গলায় বলে উঠলো,
— “আজ নাহয় কাল আপনারা সব টা জানতেই পারতেন। তাই আমিই জানিয়ে দিলাম। আচ্ছা, আমার বিষয়ে সব টা জানার পর এখন আপনি কি আমাকে নিজের থেকে দূর করে দিবেন? আমি এই বাড়িতে মূল্যহীন এটা জানার পর কি আমাকে আর নিজের কাছে রাখবেন না?”

বাকরুদ্ধ আদ্রিশ। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না সে। তার মনে হচ্ছে সে একটা ঘোরের মাঝে আছে। আয়ানার লাইফে এমন কিছু থাকতে পারে বিশ্বাস হচ্ছে না তার। মেয়েটা এতকিছু মনের মাঝে পুষে রেখেছিলো ভাবতেই অবাক হচ্ছে সে। এই জন্যই হয়তো মাহমুদ সাহেব নিজের মেয়ে কে আদর করলেও আয়ানা কে ইগনোর করে চলেন। বিষয় টা খেয়াল করেছে আদ্রিশ। কিন্তু এমন কিছু থাকতে পারে ভাবে নি সে। আজ অনামিকা বেগমের কথাগুলোর মানে ধরতে পারলো আদ্রিশ। আর এই মেয়ে কি বলছে? সে কেনো তাকে নিজের থেকে দূর করবে?

আদ্রিশের কাছ থেকে কোনো প্রকার জবাব না পেয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো আয়ানা। আদ্রিশ বুঝি তাকে আর নিজের সাথে রাখবে না! সে বুঝি আদ্রিশের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে! কিন্তু ওই পরিবারের সবাইকে ছেড়ে, আদ্রিশ কে ছেড়ে সে তো থাকতে পারবে না, কিছুতেই পারবে না।

আয়ানার কান্নার শব্দে ঘোর থেকে বেরিয়ে আসলো আদ্রিশ। আয়ানা কে ঠোঁট কা’ম’ড়ে কাঁদতে দেখে বুকে তীব্র য’ন্ত্র’না অনুভব করলো সে। কোমর আঁকড়ে ধরে আয়ানা কে টেনে নিজের বুকে নিয়ে আসলো। আদ্রিশের এমন স্পর্শে শিউরে উঠলো আয়ানা। তবে নড়াচড়া করলো না। লেপ্টে রইলো আদ্রিশের বুকে। আদ্রিশ আয়ানা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে নরম কণ্ঠে বলে উঠলো,

— “হুশ, কাঁদে না। তোমাকে এসব ফা’ল’তু কথা কে বলেছে, হু? আমি কেনো তোমাকে আমার কাছ থেকে দূর করবো?”
আদ্রিশের কথায় আর আদুরে স্পর্শে কান্নার গতি কমে আসলো আয়ানার। সে নাক টেনে ধরা গলায় বললো,
— “সারা আপু বলেছে আমার ব্যাপারে সব টা জানলে নাকি আপনারা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবেন। আমাকে আর নিজেদের সাথে রাখবেন না।”

— “আর তুমিও ওই মেয়ের কথা মেনে নিলে! আমাদের পরিবার কি তোমার এমন মনে হয়! এই বাড়িতে তুমি মূল্যহীন হলেও ওই বাড়িতে সবার চোখের মনি ই হয়ে থাকবে। আর আমার কাছে বিয়ের সম্পর্ক একটা পবিত্র সম্পর্ক। এটা কোনো ছেলে খেলা নয় যে সামান্য কিছু হলেই ভে’ঙে যাবে। আমি এই সম্পর্কটাকে সম্মান করি। আমাদের বিয়েতে আমার কোনো প্রকার কোনো মত ছিলো না জানো! কিন্তু আমি আম্মুর আদেশ কখনো অমান্য করি নি। আম্মু আমার জন্য যখন যা করেছেন সবটাই ভালোর জন্য করেছেন।

তাই আমি আম্মুর আদেশে তোমাকে না দেখে, না চিনে বিয়ে টা করেছি। আমি কিন্তু চাইলে বিয়ের রাতেই তোমাকে অস্বীকার করতে পারতাম। কারণ বিয়েতে আমার মত ছিলো না। কিন্তু আমি অস্বীকার করি নি। আমি নিজেকে সময় দিয়েছি, তোমাকে সময় দিয়েছি, আমাদের সম্পর্কটাকে সময় দিয়েছি। আমাদের সম্পর্ক এতোটা ঠু’ন’কো নয় যে সামান্য কিছুতেই তা ভে’ঙে যাবে। আর তোমার লাইফে যা কিছু হয়েছে এতে তোমার তো কোনো দোষ নেই। আমার কাছে এসব কোনো কিছুই ম্যাটার করে না। যা ম্যাটার করে সেটা হলো কেবল তুমি এবং তুমিই।”

গম্ভীরতার সহিত কথাগুলো বললো আদ্রিশ। বুক থেকে যেনো পাথর নেমেছে আয়ানার। আদ্রিশের কথাগুলো শুনে প্রশান্তিতে ছেয়ে গেছে হৃদয়। বুক থেকে মুখ তুলে আদ্রিশের দিকে চাইলো আয়ানা। আবছা আলোয় তাকিয়ে রইলো আদ্রিশের মুখপানে। আদ্রিশ ও তাকিয়ে রইলো আয়ানার দিকে। দুজন অজান্তেই একে অপরের কতোটা কাছে এসেছে সেটা ভুলে গেলো কিছু মুহূর্তের জন্য। আদ্রিশ আয়ানার চোখে চোখ রেখে বললো,

— “আমাকে হারানোর এতোটা ভ’য়? কারণ?”
— “হু, অনেক ভ’য়। কারণ টা জানা নেই। তবে আপনাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না এটা জানি। ভাবলেও আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আপনি জানেন এর কারণ কি হতে পারে?”
জবাব দিলো না আদ্রিশ। গম্ভীর চোখে চেয়ে রইলো শুধু। আয়ানা জবাব না পেয়ে পুনরায় আদ্রিশের বুকে মুখ গুজলো, আঁকড়ে ধরলো শক্ত করে। হুশ, জ্ঞান হারিয়েছে সে। ভালো লাগছে তার আদ্রিশের বুকে থাকতে। কেমন যেনো শান্তি, শান্তি অনুভব হচ্ছে।

কিছু সময়ের ব্যবধানে ঘুমিয়ে পড়লো আয়ানা। আদ্রিশ তাকিয়ে রইলো ঘুমন্ত আয়ানার দিকে। আয়ানা যে তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে তা আরও আগেই ধারণা করেছিলো সে। আর আজ তো পরিষ্কার হয়ে গেলো। আচ্ছা সেও কি মেয়েটাকে ভালোবাসে! এই যে মেয়ে টা বুকের মাঝে চুপটি করে ঘুমিয়ে আছে, কি ভীষণ ভালো লাগছে তার। ইচ্ছা করছে সারাজীবন বুকের মাঝে পুরে রাখতে, এটা কি ভালোবাসা নয়?

মেয়েটাকে ছেড়ে থাকার কথা তো সে নিজেও ভাবতে পারে না। দিনশেষে বাড়ি ফিরে মেয়েটাকে না দেখলে সে অস্থির হয়ে পড়ে। এটা কি ভালোবাসা নয়? তবে কি সে এই বাচ্চা মেয়েটার প্রেমে পড়েছে, মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছে! অবশেষে তার জীবনেও প্রেমের আগমন ঘটলো বুঝি! মৃদু হাসলো আদ্রিশ। তার খুব করে ইচ্ছা জাগলো ঘুমন্ত আয়ানার কপালে একটা গভীর চুম্বন আঁকার। মেয়েটাকে কি আদুরে লাগছে! আজ নিজেকে দমালো না আদ্রিশ। আয়ানার কপালে ঠোঁট ডুবিয়ে দীর্ঘ সময় নিয়ে চুম্বন আঁকলো। ঠোঁট আলতো নাড়িয়ে উচ্চারণ করলো,

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ৪

— “আমার মিষ্টি বউ… এখন থেকে কেবল একজন আদর্শ স্বামী নয়, একজন আদর্শ প্রেমিক পুরুষকেও দেখবে তুমি। এখন থেকে নিজের অনুভূতি কে আর দমিয়ে রাখবো না বরং প্রতিনিয়ত প্রকাশ করবো। হোক না একটুখানি প্রেম, হোক না একটুখানি ভালোবাসা।”

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ৬