অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ৪

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ৪
ইরিন নাজ

— “কিরে শুনলাম মেডিকেলে চান্স পেয়েছিস?”
রান্নাঘরে পানি নিতে এসেছিলো আয়ানা। তখনই কথা টা বলে উঠলো সারা। আয়ানা বোতলে পানি নিতে নিতে ছোট করে জবাব দিলো,

— “হুম…”
সারা মুখ বাঁকা করে বললো,
— “ভাবখানা তো এমন যেনো বিশ্ব জয় করেছিস।”
আয়ানা পানি নিয়ে চলেই যাচ্ছিলো। কিন্তু সারার কথায় পা থেমে গেলো তার। ফিরে এসে সারার মুখোমুখি দাঁড়ালো সে। সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— “বিশ্ব কে জয় করা তো আমার স্বপ্ন নয় সারা আপু; আমার স্বপ্ন হলো মেডিকেলে পড়া, সফল একজন ডাক্তার হওয়া। সেই স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ আমি সফলতার সাথে পার করে ফেলেছি। আর এটা আমার কাছে বিশ্ব জয় করার চেয়েও অনেক বড় কিছু। যাই হোক, আমার সফলতায় কেউ একজন বড্ড বেশি জ্ব’ল’ছে বোধহয় তাইনা সারাআআ আপু?”
তেলে বেগুনে জ্ব’লে উঠলো সারা। অ’গ্নি দৃষ্টি নিঃক্ষেপ করলো আয়ানার দিকে। আঙ্গুল তাক করে বললো,

— “অনেক অহংকার হয়েছে তোর তাই না? নিজের শ্বশুর বাড়ি নিয়েই তো যতো অহংকার তোর? যখন ওরা জানতে পারবে যে তুই এই বাড়ির মেয়ে না, পিতৃ পরিচয়হীন একটা মেয়ে তখন দেখে নিস ওরাই তোকে ধা’ক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিবে। তখন দেখবো তোর এই অহংকার কই যায়।
খারাপ লাগলো আয়ানার। তবুও নিজেকে সামলে বলে উঠলো,

— “ভুল বললে। আমার মোটেও অহংকার হয় নি। আর না আমি আমার শ্বশুর বাড়ি নিয়ে অহংকার করি। তারা আমাকে শিখিয়েছে কেউ আমাকে অকারণে অনুচিত কিছু বললে যেনো তাকে উচিত জবাব টা দিয়েই বাড়ি ফিরি। আর কি যেনো বললে, আমি পিতৃ পরিচয়হীন? আমি পিতৃ পরিচয়হীন নই। আমার বাবা ওয়ার্ল্ড এর বেস্ট বাবা ছিলেন। আল্লাহ হয়তো উনাকে অল্প আয়ু দিয়েই দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। তাইতো এতো অল্প বয়সে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আর ওই বাড়ির মানুষেরা এটা জানার পর আমাকে ধা’ক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেবে নাকি আদরে যত্নে মাথায় তুলে রাখবে সেটা সময় হলেই তুমি দেখতে পাবে সারা আপু।”

কথাগুলো বলেই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো আয়ানা। চোখ মুখ শক্ত করে আয়ানার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো সারা। রা’গ হচ্ছে তার, মারাত্মক রকমের রা’গ। ইচ্ছে করছে সব ভে’ঙেচু’রে গু’ড়ি’য়ে দিতে। যেই মেয়ে কে সারাদিন লা’ত্থি গু’তা দিলেও টু শব্দ টা পর্যন্ত করতো না, সেই মেয়ে আজ তার মুখের উপর এতগুলো কথা বলে গেলো! এর প্র’তি’শো’ধ সে নিবেই নিবে। আয়ানার সুখের সংসার সে টিকতে দিবে না, কিছুতেই না।

বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে আয়ানা। ভাবছে সারার বলা কথাগুলো। আসলেই তো সে এই বাড়ির মেয়ে না। এটা জানার পর কি সত্যিই তাকে ওই বাড়ির লোকেরা নিজেদের থেকে দূর করে দিবে? কিন্তু এতে তার কি দোষ? না তার বাবার হারিয়ে যাওয়ার পেছনে তার কোনো হাত আছে আর না আদ্রিশের সাথে তার বিয়ে হওয়ার পেছনে।

সব টা তো উপর ওয়ালার ইচ্ছাতেই হয়েছে। আর সামনে যা হবে তাও উনার ইচ্ছাতেই হবে। আয়ানা ঠিক করে নিলো অনু বেগম এবং আদ্রিশ কে তার ব্যাপারে সব টা জানিয়ে দিবে। আজ নাহয় কাল উনারা সব টা জানবেই। তার আগে নাহয় সে নিজেই সব টা জানিয়ে দিবে। এরপর যা হবে দেখা যাবে। আয়ানার বিশ্বাস অনু বেগম, আদ্রিশ সব টা জানলেও তাকে নিজেদের থেকে দূর করবে না।
সকল দুশ্চিন্তা কে দূরে সরিয়ে চোখের পাতা বন্ধ করলো আয়ানা। ভীষণ ক্লান্ত সে। এখন একটা ঘুমের প্রয়োজন।

রাতে আয়ানা আর মীরা কে নিতে গেলো আদ্রিশ আর আহিল। দুপুরে ব্যস্ত থাকায় আহিল যেতে পারে নি। কিন্তু এখনো না গেলে ব্যাপার টা কেমন দেখায় তাই আদ্রিশ আহিল কে বলেছে যেনো সেও তার সাথে যায়। কিন্তু ঝা’মে’লা বাঁধলো আদ্রিশ, আহিল আয়ানাদের বাড়িতে যাওয়ার পর। অনামিকা বেগম কিছুতেই মেয়েদের ছাড়বেন না।

এতদিন পর মেয়েরা বাড়িতে এসেছে, অন্তত একদিন না থাকলে কিভাবে হয়! উনি জোর করতে লাগলেন যেনো আদ্রিশ, আহিল ও আজ উনাদের বাড়িতে থেকে যায়। মাহমুদ সাহেব ও অনামিকা বেগমের সাথে তাল মিলাতে লাগলেন। শেষমেষ রাজী হতে হলো আদ্রিশ, আহিল কে। আদ্রিশ অনু বেগম কে ফোন করে জানিয়ে দিলো আজ তারা আয়ানাদের বাড়িতেই থাকবে। আপত্তি করলেন না অনু বেগম।

ডিনার শেষে অনামিকা বেগমের সাথে সাথে সবকিছু গুছিয়ে ড্রয়িং রুমে যাচ্ছিলো আয়ানা। যাওয়ার পথে সাহেরা বানুর রুম থেকে চিৎ’কার চেঁ’চা’মেচির আওয়াজ শুনলো সে। পা থেমে গেলো তার। খেয়াল করতেই বুঝতে পারলো মাহমুদ সাহেবের সাথে রা’গা’রা’গি করছেন সাহেরা বানু। বলছেন,

— “আজ আমি বা আমার মেয়ে কিছুতেই রুম ছাড়বো না। না মানে না। ওই মেয়ে পারলে ওর ওই রুমেই স্বামী কে নিয়ে থাকবে আর নইলে না থাকুক।”
মাহমুদ সাহেব অনেক ভাবে বোন কে রাজী করানোর চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু রাজী হচ্ছেন না সাহেরা বানু। শেষমেষ না পেরে রুমে প্রবেশ করলো আয়ানা। আয়ানা কে দেখে চমকালেন মাহমুদ সাহেব। আয়ানা মাহমুদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে নম্র কণ্ঠে বলে উঠলো,

— “উনাদের রুম ছাড়তে হবে না। আমরা ওই রুমেই থাকতে পারবো। এমনিতেও এই বাড়িতে আমার রুম বলতে ছাদের ওই রুমটাই। আর হ্যা,দুঃখিত। আপনাদের কথোপকথন শোনার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই কিছু কথা কানে আসলো।””

আয়ানা কথাগুলো বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মুখ বাঁকা করলেন সাহেরা বানু। মাহমুদ সাহেব আরও বেশ কয়েকবার চেষ্টা করলেন। যতোই হোক তার মেয়ের সম্মান ও এর সাথে জড়িত। কিন্তু আজ কিছুতেই কিছু হলো না। সাহেরা বানু কিছুতেই রাজী হলেন না। অবশ্য রাজী হবেন ই বা কেনো! আয়ানার উপর যে উনার প্রচুর রা’গ। সারা দুপুরের সমস্ত ঘটনা মা কে জানিয়ে দিয়েছে। সেই থেকেই উনার শরীর জ্ব’ল’ছে। আজ দুনিয়া উল্টে গেলেও উনি বা উনার মেয়ে রুম ছাড়বেন না। উনার মতে আদ্রিশের ও জানা উচিত এই বাড়িতে আয়ানার মূল্য ঠিক কতটুকু।

ছাদের রুমে আদ্রিশ কে নিয়ে এসেছে আয়ানা। এর আগেও একদিন এই রুম দেখেছিলো আদ্রিশ। যদিও সেদিন ওতোটা খেয়াল করে নি। ছোট একটা পরিপাটি রুম, সাথে একটা ওয়াশরুম ও আছে। খোলা জানালা দিয়ে ফুরফুরে বাতাস রুমে প্রবেশ করে রুম কে শীতল করে রেখেছে। সামনে খোলা ছাদ। সুন্দর পরিবেশ। রুমের মাঝে আধুনিকতার কোনোরকম ছোঁয়া না থাকলেও রুম টা বেশ ভালোই লাগলো আদ্রিশের। সে কৌতূহল নিয়ে আয়ানা কে জিজ্ঞাসা করলো,

— “এই রুমে মাঝে মাঝে সময় কা’টা’তে আসো তাই না?”
মলিন হাসলো আয়ানা। বিছানা ঠিক করতে করতে বললো,
— “না, এটাই আমার রুম। এই বাড়িতে এই রুমেই থাকতাম আমি।”
এবার অবাক হলো আদ্রিশ। সবাই নিচে থাকে। আর আয়ানা উপরে সবার থেকে আলাদা! আচ্ছা মেয়েটা কি একা থাকতো এখানে? আদ্রিশ কৌতূহল দমাতে না পেরে প্রশ্ন টা করেই বসলো আয়ানা কে। আয়ানা আদ্রিশের প্রশ্নে তার মুখোমুখি দাঁড়ালো। ছোট করে জবাব দিলো,

–“হু…”
— “ভ’য় পেতে না একা একা?”
আদ্রিশের প্রশ্নে কিছুক্ষন নিশ্চুপ রইলো আয়ানা। তারপর বলে উঠলো,
— “পেলেও কিছু করার ছিলো না।”

আয়ানার এই উত্তর যেনো আদ্রিশের মনের কৌতূহল দ্বিগুণ করলো। নানারকম প্রশ্ন মনের মাঝে উঁকি দিতে লাগলো। কিন্তু নিজেকে সামলে নিলো সে। এর বেশি প্রশ্ন করা উচিত হবে বলে মনে হয় না তার। বাকিটা নাহয় আয়ানা নিজে থেকেই কখনো তাকে বলবে, সেই অপেক্ষাতেই থাকবে সে।
আদ্রিশ কে চুপচাপ কিছু একটা ভাবতে দেখে আয়ানা ফের বলে উঠলো,

— “আপনার কি এখানে থাকতে সমস্যা হবে? যদি সমস্যা হয় তবে আমরা বাড়ি ফিরে যাই চলুন…”
ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলো আদ্রিশ। স্বাভাবিক হয়ে বললো,
— “আমার কোনো সমস্যা হবে না। বরং তোমার রুম টা আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।”

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ৩

হাসলো আয়ানা। বললো,
— “তবে যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।”
আয়ানার কথায় সম্মতি জানিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো আদ্রিশ।

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ৫