অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ৬

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ৬
ইরিন নাজ

ঘুম ভা’ঙার পর নিজেকে আদ্রিশের বুকে লেপ্টে থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করে রাতের কথাগুলো মনে পড়ে গেলো আয়ানার। গাল জুড়ে লাজের রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়লো। ইশ! এতো নির্লজ্জ কি করে হলো সে! লাজুক হাসলো আয়ানা। বুক থেকে মাথা তুলে ঘুমন্ত আদ্রিশের দিকে চাইলো সে। সকালের উজ্জ্বল আলো আদ্রিশের চোখে, মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। আয়ানা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো আদ্রিশের দিকে। তার মন বারংবার একটা কথাই উচ্চারণ করতে চাইলো,

— “এতো সুন্দর কেনো লোকটা! এতো ভালো কেনো সে!”
আদ্রিশের গাঢ় নিঃশ্বাস চোখে মুখে আছড়ে পড়তেই আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো আয়ানা। কিছু সময় পর চোখ মেলে পুনরায় আদ্রিশের দিকে চাইলো সে। আলতো হাতে আদ্রিশের চিবুক স্পর্শ করলো। অতঃপর খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে আঙ্গুল স্পর্শ করলো। মুগ্ধ কণ্ঠে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— “আমার শ্যামপুরুষ, আমার ডাক্তার সাহেব…”
আদ্রিশ নড়েচড়ে ওঠায় দ্রুত আদ্রিশের বুকে মুখ লুকালো আয়ানা। চোখ, মুখ শক্ত করে বন্ধ করে রাখলো। এছাড়া আর কোনো উপায় যে নেই! আদ্রিশ তাকে এমন ভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে যে নড়বার কোনো কায়দা নেই।
আয়ানা বুকে মুখ গুজতেই চোখ মেললো আদ্রিশ। ঠোঁট এলিয়ে হাসলো সে। তার ঘুম আরও আগেই ভে’ঙে’ছে। এতোটা সময় সে তার মিষ্টি বউ কে দেখেই পার করেছে।

আয়ানা কে নড়তে দেখে ঘুমের ভান ধরেছিলো সে। আয়ানার কার্যকলাপ দেখার উদ্দেশ্যেই কাজ টা করেছে আদ্রিশ। কিন্তু আয়ানা যে এমন কিছু বলবে ভাবনার বাহিরে ছিলো তার। মেয়েটার মুখ থেকে উচ্চারিত, “আমার শ্যামপুরুষ, আমার ডাক্তার সাহেব” কথা টা যেনো আদ্রিশের হৃদয়ে ঝড় তুলেছে। আদ্রিশের ইচ্ছে হচ্ছে পুনরায় আয়ানার মুখ থেকে কথা টা শুনতে। কিন্তু সে জেগেছিলো, সব টা শুনেছে জানতে পারলে মেয়ে টা যে লজ্জায় কুঁ’ক’ড়ে যাবে ভেবে নিজেকে কন্ট্রোল করলো আদ্রিশ। আরও কিছু সময় ঘুমের ভান ধরে রইলো সে।

কিছু সময় পর নড়েচড়ে উঠে বসলো আদ্রিশ। বসে বসে হাই তুলতে লাগলো। আদ্রিশ উঠতেই লাফ দিয়ে উঠে বসলো আয়ানা ও। এক পাশে জড়োসড়ো হয়ে বসে রইলো। আদ্রিশ ঘুমিয়ে ছিলো ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সে। ভাগ্যিস আদ্রিশ কিছু শোনে নি। নাহলে এই মুখ কই লুকাতো সে! রাতের এবং কিছু সময় আগের মুহূর্ত গুলো ভেবে পুনরায় লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো আয়ানা।
আদ্রিশ আড়চোখে আয়ানার দিকে তাকালো। আয়ানা কে লজ্জায় লাল হতে দেখে মিটিমিটি হাসলো সে।

— “কি সমস্যা? এভাবে লজ্জা পাচ্ছ কেনো?”
নিজেকে স্বাভাবিক করে গলা খাকারি দিয়ে বলে উঠলো আদ্রিশ। চমকালো আয়ানা। থতমত খেয়ে বলে উঠলো,
— “ক..কই লজ্জা পাচ্ছি?”
আদ্রিশ আয়ানার দিকে কিছু টা এগিয়ে গেলো। আয়ানার ফুলো ফুলো গালে আঙ্গুল ছুঁয়িয়ে বলে উঠলো,
— “তোমার গাল এমন রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে কেনো?”

আয়ানা চমকে দুই হাতে নিজের গাল চেপে ধরলো। লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে আমতা আমতা করে বলে উঠলো,
— “আমার গাল মোটেও লাল হয় নি। আপনি ভুল দেখেছেন। আপনি বসুন। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
দ্রুত পায়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো আয়ানা। আয়ানা যেতেই ফিক করে হেসে দিলো আদ্রিশ। বউ টা তার ভালোই লজ্জা পেয়েছে। আপাতত আর লজ্জা দেয়া ঠিক হবে না ভেবে মুচকি হাসলো সে।

ফ্রেশ হয়ে আদ্রিশ কে রুমে রেখেই নিচে চলে এসেছে আয়ানা। আদ্রিশ কে দেখলে লজ্জা লাগছে তার। নিচে নেমে অনামিকা বেগমের কাছে চলে গেলো সে। অনামিকা বেগম নাস্তা রেডি করছেন। আয়ানা ও উনাকে হেল্প করতে শুরু করলো। অনামিকা বেগম নিষেধ করলেন। কিন্তু মানলো না আয়ানা। সেও টুকটাক কাজ করতে লাগলো।
আয়ানা কে রান্নাঘরে কাজ করতে দেখে শ’য়’তানি হাসি দিলো সারা। আশেপাশে তাকিয়ে চুপিচুপি ছাদে চলে আসলো। আয়ানার রুমের কাছে এসে থেমে গেলো সে। আদ্রিশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ বলে উঠলো,

— “আপনি অনেক সুন্দর আদ্রিশ…”
আদ্রিশ মনোযোগ সহকারে নিজের শার্ট এর হাতা ঠিক করছিলো। হঠাৎ অপরিচিত কণ্ঠে কেউ এমন মন্তব্য করায় পিছনে ফিরে তাকালো সে। এই মুহূর্তে সারা কে এখানে দেখে এবং সারার অদ্ভুত কথায় চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো তার। মুহূর্তেই চোখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো। সারার মতিগতি সে ঠিকই ধরতে পারছে। সারার দৃষ্টি ই বলে দিচ্ছে তার মতলব।

— “আমি থা’প্প’ড় ও অনেক সুন্দর মা’র’তে পারি। একটা খেলেই বুঝতে পারবেন।”
রা’গী কণ্ঠে বলে উঠলো আদ্রিশ। আদ্রিশের রক্তিম চাহনি এবং এমন কথায় ভ’য় পেয়ে গেলো সারা। তবুও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

— “Stay away from me and my wife… অন্যের হাসব্যান্ড এর উপর যেসব মেয়েরা নজর দেয় তাদের কি বলে জানেন তো? না জানলে জানিয়ে দিচ্ছি। সেসব মেয়েদের ক্যারেক্টারলেস বলে। বাংলায় চরিত্রহীন। আশা রাখছি নিজেকে ক্যারেক্টারলেস মেয়ে হিসেবে প্রমান করবেন না। তাই নিজের দৃষ্টি কে সংযত করুন। আর আমি আপনার বয়সী নই যে আমাকে নাম ধরে সম্বোধন করবেন। আমি সম্পর্কে আপনার বোনের স্বামী হই। আই হোপ, বুঝতে পেরেছেন।”

দাঁতে দাঁত চেপে পুনরায় কথাগুলো বলে উঠলো আদ্রিশ। ভীষণ রা’গ হচ্ছে তার। ইচ্ছে করছে সামনে দাঁড়ানো মেয়েটার গাল দুটো থা’প’রে লাল করে দিতে। তবুও নিজেকে কোনোমতে সামলে নিলো সে। আপাতত সে কোনোরকম কোনো সিন ক্রিয়েট করতে চায় না। আদ্রিশ ভেবে পায় না একটা মেয়ে কতো টা বা’জে হলে অন্য মেয়ের হাসব্যান্ড এর দিকে নজর দেয়। আদ্রিশ সারা কে পাশ কা’টিয়ে যেতে গিয়েও আবার ফিরে আসলো। ক’ট’ম’ট চাহনি নিঃক্ষেপ করে বললো,

— “আজ ছেড়ে দিলাম। তবে ওয়ার্নিং দিয়ে যাচ্ছি, পরবর্তীতে যদি কখনো এমন করেন তবে এমন অবস্থা করবো যে নিজেকে নিজেই চিনতে পারবেন না। তখন না মেয়ে মানুষ দেখবো আর না আত্মীয়। যত্তসব থার্ড ক্লাস মেয়ে মানুষ….”
ধুপধাপ পা ফেলে নিচে চলে গেলো আদ্রিশ। হাত মুঠ করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সারা। রা’গে সর্বাঙ্গ কাঁপছে তার।

আদ্রিশ এভাবে তাকে অপমান করে চলে গেলো আর সে কিছুই করতে পারলো না। রা’গে, দুঃখে আয়ানার রুমের দরজায় সর্বশক্তি দিয়ে লাত্থি দিলো সে। সেকেন্ডের ব্যবধানেই বুঝতে পারলো আবারও ভুল করেছে সে। লাত্থি দেয়ার কারণে দরজার তো কিছু হয় নি কিন্তু তার পা গেলো বোধহয়। ব্য’থা’য় কুঁ’ক’ড়ে উঠে ওখানেই পা ধরে বসে পড়লো সারা।

আয়ানা টেবিলে খাবার এনে রাখছিলো। হঠাৎ আদ্রিশ এসে হাত চেপে ধরলো তার। চমকে তাকালো আয়ানা। আদ্রিশের রক্তিম চোখ দেখে অবাক হলো সে। দেখে মনে হচ্ছে কোনো কারণে ভীষণ রে’গে আছে আদ্রিশ। কিন্তু এই তো কিছু সময় আগে ও তো স্বাভাবিক ছিলো। হঠাৎ কি হলো ভেবে পেলো না আয়ানা।
— “আমরা এখনই বাড়ি ফিরবো….”

আদ্রিশের শক্ত কণ্ঠে বলা কথায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলো আয়ানা। চোখ বড় বড় করে তাকালো সে। কিছু বলবে তার পূর্বেই আদ্রিশ পুনরায় গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
— “আম্মু কে ডেকে নিয়ে আসো যাও।”
বিনাবাক্য ব্যয়ে অনামিকা বেগম কে ডেকে নিয়ে আসলো আয়ানা। ততক্ষনে আহিল, মীরা ও চলে এসেছে বসার ঘরে। আদ্রিশ নম্র কণ্ঠে অনামিকা বেগম কে বলে উঠলো,

— “আম্মু আমরা এখন ফিরতে চাচ্ছি।”
অনামিকা বেগম আপত্তি করে বললেন,
— “কিন্তু বাবা নাস্তা টা তো করে যাও….”

— “আসলে আম্মু আমাকে টাইম মতো হাসপাতালে পৌঁছতে হবে। এখন ই বের না হলে পৌঁছতে পারবো না ঠিক সময়ে। আর আপনি প্লিজ মন খা’রা’প করবেন না। আমরা আবার কিছু দিনের মধ্যে আসবো।”
বুঝানোর ভঙ্গিতে বললো আদ্রিশ। ব্যাপার টা বুঝতে পেরে এবার আর আপত্তি করলেন না অনামিকা বেগম। আদ্রিশ, আহিল আর মীরার দিকে তাকিয়ে বললো,

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ৫

— “তোরা কি এখনই যাবি? ইচ্ছে হলে পরে আসতে পারিস।”
— “না, না ভাইয়া। তোমরা চলে যাচ্ছ। আমরা আর থেকে কি করবো! একসাথেই যাই।”
বলে উঠলো আহিল। মীরা ও সম্মতি দিলো। মন খা’রা’প করে মায়ের দিকে তাকালো আয়ানা। অনামিকা বেগম কে ছেড়ে যেতে মোটেও ইচ্ছে করছে না তার। ভেবেছিলো আরও কিছু সময় মায়ের সাথে কা’টা’তে পারবে। কিন্তু আদ্রিশের জন্য হলো না। অনামিকা বেগম এবং মাহমুদ সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো সবাই।

অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ৭