অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী পর্ব ৩৫

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী পর্ব ৩৫
জিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

বিষাদময় হয়ে উঠলো তরীদের বাড়ি। বাবা সবার আড়ালে ঘরে ঢুকলেন। দরজার খিল দিয়ে স্ত্রীর ব্যবহৃত জিনিস ছুঁয়ে ছুঁয়ে কথা বলছেন। পুরুষ মানুষ যতটাই শক্ত থাকুক না কেন? একটা পর্যায়ে এসে তারা আবেগী হয়ে ওঠে। সেই পর্যায়টা কন্যা বিদায় দেওয়ার মুহুর্তেই হুট করে আসে। বুকের ভেতর উথাল-পাতাল ঝড় নামে।
অরু আর মিঠুকে তরী সঙ্গে নিয়ে গিয়েছে। একা হয়ে পড়েছেন বাবা। আজ নিজেকে সত্যিকার অর্থেই একা লাগছে। ভীষণ একা। যতটা একা হলে আর পৃথিবীর স্বাদ গ্রহন করার ইচ্ছে থাকেনা!

তবুও পরিস্থিতি আমাদের বাঁচতে বাধ্য করে। আমরা বাঁচি কারো টা*নে। কিসের যেন একটা দায়বদ্ধতা থাকে আমাদের। পরক্ষণেই কিছু একটা অনুভব করি। হয়তো উপলব্ধি করি জীবন নামক রেলগাড়ীটি সত্যিই বৃথা অথবা জীবন এত সুন্দর কেন? আমি তাকে আরো কাছ থেকে জানতে চাই। পৃথক পৃথক মানুষের ক্ষেত্রে ধারণাটা ভিন্ন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বিভীষিকাময় জীবন পার করে মাহমুদ-তরীর জীবনে নামলো আষাঢ়ের ঝুমঝুমি বৃষ্টি। এই আষাঢ়ে তরী সদ্য ফোটে ওঠা এগুচ্ছ কদম ফুলের মতোই সুন্দর মাহমুদের কাছে। আলোকসজ্জায় জমজমাট ফ্ল্যাটের একটা ঘরেই তরী বসেছিল। ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়ায় বারান্দাটা তাকে খুব করে টা*ন*লো। মেহেদী রাঙানো হাত দুটো শক্তপোক্ত গ্রিল ছুঁয়ে দাঁড়ালো। জীবনের প্রতি অদ্ভুত এক টা*ন কাজ করে তার। স্বপ্নগুলো রঙিন হয়ে ওঠে। যখনই অরু, মিঠু আর বাবার কথা ভাবে, নিমিষেই ফিকে হয়ে যায় সবকিছু। সব সুখ, উল্লাস ঝরঝর করে ভেঙে পড়ে।

তরীর ভীষণ দুঃখ হয়। মন খা*রা*পে*র মাঝেই তার সিঁদুর রাঙা নরম হাত দুটোতে আলতো হাতের ছোঁয়া পড়ে। তরীর পুরনো ভাবনা কে*টে নতুন ভাবনায় ডুব দেয়। আবছা আলোয় বিভোর হয়ে তাকিয়ে থাকে ওই হাতের মাঝে। মাহমুদ শব্দ করলোনা। শব্দহীন পেছনে দাঁড়ালো। আজ আর বাঁধা নেই। নিজ থেকে প্রথম তরীর খুব নিকটে এলো। তরীর হাত ছেড়ে মাহমুদের হাত দুটো তরীর কোমর স্পর্শ করলো।

পেছন দিক থেকেই জড়িয়ে ধরলো তাকে। আবেগঘন মুহূর্ত সৃষ্টি হলো। দুদিক থেকেই কোন বাঁধা নেই। চোখ বুজে নিলো তরী। ঠোঁটে ক্লান্তির মাঝেও একটুখানি প্রশান্তির ছাপ। বুকের ভেতর দুরুদুরু ভয় আজ ঠেলে বেরিয়ে গেছে। এখন কেবল আছে ভালোবাসা। মাহমুদের কন্ঠস্বর প্রসক্ত।
-“সৃষ্টিকর্তা আমায় একটুকরো সুখ দিয়েছেন, তরী। আমি তার শুকরিয়া আদায় করে শেষ করতে পারবোনা। তিনি আমার আর্জি শুনেছেন। তোমায় আমার করে দিয়েছে, তরী। তার কাছে কতটা আকুতি করে তোমায় চেয়েছি, তরী তুমি জানো না।”

তরী অবাক হয়। এই মানুষটা তাকে এতটা চেয়েছে? অনিমন্ত্রিতভাবে আসা প্রেম তাদের ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে বহুদূর। তরী শুধায়,
-“আপনি আমায় ঠিক কবে থেকে মুনাজাতে রেখেছেন?”
মাহমুদ আলতো হাসে। হিসহিসে হাসির শব্দে কান ধাঁধিয়ে যায় তরীর। উষ্ণ শ্বাস গলার কাছটাতে পড়তেই একটুখানি মিইয়ে যায়।
মাহমুদ বলল,

-“তোমাকে আল্লাহর কাছে চাইবো, আমি কখনোই ভাবিনি। প্রথম দেখাতেও আমার চোখে তোমার জন্য কোন ভালোলাগা ছিলোনা। কেবল একরাশ স্তব্ধতা ছিলো। পরপরই তোমাকে নিয়ে কৌতুহল হতো। তারও অবশ্য কারণ আছে। তুমি আমাকে দেখলেই পালাতে৷ পরে যখন পালানোর কারণটা উপলব্ধি করলাম তখন আমার ইন্টারেস্টিং লাগলো। ভাবলাম একটু বিভ্রান্ত করা যাক তোমায়।

কিন্তু দিন দিন তুমি আমার চোখে মুগ্ধতা ছড়িয়েছো। আমাকে জড়িয়ে ফেলেছো তোমার মাঝে। তবুও আমি প্রথমদিকে ভাবতাম এটা কেবলই মুগ্ধতা। ধীরেধীরে বোধদয় হলো আমার। অজান্তেই তোমাকে চেয়ে বসলাম মুনাজাতে। সেদিন নিজেই অনেকটা বিস্মিত হলাম নিজের কাজে। আহবান ছাড়াই আমার জীবনে প্রেমের বৃষ্টি নামলো। খাঁ খাঁ করা রোদ্দুরে এক পশলা বৃষ্টি ঝরালে আমার হৃদয়ে। তারপর থেকে রোজ নিয়ম করে চাইলাম। তোমার কাছে তোমাকে নয়, খোদার কাছে আমার সুখকে।”

তরীর চোখেমুখে বিস্ময়, ভালোলাগা, মুগ্ধতা, ভালোবাসা সবকিছুই জায়গা করে নিয়েছে। তার চোখজোড়া ব্যাকুল ভঙ্গিতে মাহমুদকে দেখতে চাইলো। মাহমুদের হাত ছাড়িয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মেহেদি রাঙানো নরম হাত দুটো মাহমুদের গালে জায়গা করে নিলো। ঘোর নিয়ে খুঁটিয়ে মাহমুদকে দেখলো। মাহমুদও মুগ্ধতার চোখে স্নিগ্ধ এক মানবীকে অবলোকন করলো। যার উপর একমাত্র তারই হক রয়েছে৷ আজ মেয়েটা ভয়ঙ্করভাবে তাকে টানছে। উষ্ণ ঠোঁটজোড়া চেপে ধরলো তরীর প্রশস্ত ললাটে। আবেশিত হলো তরী। চোখজোড়া তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে গেল।

কাক ডাকা ভোর, অথচ একরত্তি ঘুম নেই চোখে। সারারাত নিষুপ্তিহীন কেটেছে তরীর। মাহমুদ উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে। বালিশে হেলান দিয়ে তার খালি পিঠে হাত ছুঁইয়ে দিলো তরী। লজ্জায় রাঙা হলো গাল দুটো। অল্প ভেজা চুল মেলে দিয়েই মাহমুদের পিঠে মাথা রেখে এলোমেলো ভঙ্গিতে শুয়ে পড়লো। উপুড় হয়ে থাকা মাহমুদের ঠোঁটের কোন প্রসারিত হলো। সেও তরীর মতোই জেগে আছে।

তবে প্রকাশ করলোনা। কিছু ভালোলাগা নিরব হয়, একান্তই ব্যক্তিগত। তরীর যখন ঘুম ভাঙলো তখন সে নিজেকে মাহমুদের বাহুডোরে আবিষ্কার করলো। তার চুলের ভাঁজে চিকন আঙ্গুল চালিয়ে দিল। হুট করেই সময়ের কথা মনে পড়তেই সে সময় দেখলো। নয়টার চেয়ে একটু বেশি সময় হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় কেউ তাদের ডাকতেও এলোনা! তরী ঝটপট নিজেকে ছাড়িয়ে হাতমুখ ধুয়ে ঘর ছেড়ে বের হলো। মাথায় লম্বা ঘোমটা টে*নে পরিচত মুখ খুঁজতে ব্যস্ত। ইরার সাথে দেখা হতেই সে স্বাভাবিকভাবে জিজ্ঞেস করলো,

-“কাউকে খুঁজছো তরী? অরু আর মিঠুকে? তারা নাস্তা করে বেরিয়েছে রামির সাথে। তুমি মাহমুদকে ডেকে তুলে দুজনে নাস্তা করে নাও।”
তরী ভাবলো হয়তো ইরা ভাবি লজ্জাজনক কোন কথা বলবেন। সে নিজেকে মনে মনে প্রস্তুত করে নিতেই ইরার স্বাভাবিকতায় অবাক হলো। ভালোলাগলো তার। তরী মাহমুদকে ডেকে দিয়ে ফের বেরিয়ে এলো।
দুজনে নাস্তা করতে বসেছে একসাথে। অনেকেই ঠোঁট চেপে হাসছেন। তরী অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। অস্বস্তিতে তার খাওয়া থেমে গেল। মাহমুদ খেয়াল করতেই জিজ্ঞেস করলো,

-“খাচ্ছো না কেন?”
ইরা সবটা তদারকি করছিল। সে বেশ শব্দ করেই বলল,
-“বিয়ে, সংসার সবটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। এখানে হাসাহাসি করে একজন নতুন মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলা উচিত না।”
যাদের উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলা, তাদের মাঝেই একজন বলল,
-“এটা সব নতুন বউদেরই বুঝতে হয়। যারা মজা বুঝেনা, তাদের সাথে কথা বলাই বৃথা।”
ইরা রাগ করলোনা। মৃদু হেসে বলল,

-“অবশ্যই মজা করবেন। তবে সে এখন এখানে সম্পূর্ণ নতুন। নিজেকে সবটার সাথে মানিয়ে নিতে সময় লাগবে। এভাবে করলে সবারই খা*রা*প লাগা কাজ করে। যখন সবার সাথে মিশে যাবে, তখন এই মজাটা সেও উপভোগ করবে।”

মাহমুদ আর কথা বললোনা। তরীর দিকে খাবার এগিয়ে ইশারায় খেতে বললো। ভাবি নিজেই সবটা সমাধান করে দিলেন। তরী কৃতজ্ঞ চোখে তাকালো। সত্যিই তার এতক্ষণ অস্বস্তি হচ্ছিলো। ইরা বিনিময়ে হাসি উপহার দিলো।
তরীর বাসা থেকে মেহমান আসলো। আশ্চর্য হলো সাথে চাচাকে দেখে। তিনি এগিয়ে এসে তরীর মাথায় হাত রাখলেন। তরীর নম্রতা দেখে তিনি মন থেকেই চাইতেন ভাইয়ের মেয়েটা নিজেদের কাছেই থাকুক।

মেয়েটা তাদের নিজ হাতে গড়া মানুষ। অন্তত তাকে নিয়ে কোন আতঙ্ক থাকবেনা। ইচ্ছেমতো চালানো যাবে। তিয়াসের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলেন তরীকে নিয়ে তার আপত্তি নেই। হুট করেই ভাইকে বিয়ের কথা বলে বসলেন। তাদের সুসম্পর্কের কারণে তরীর বাবাও আর না করলেন না। সবটা ঠিকঠাকই ছিলো। মাঝখান থেকে মেয়েটার মতামতের তোয়াক্কা করলেন না কেউই।

নিজেরাই নিজেদের অপ*মান ডেকে এনে মনমালিন্য করলেন। অহমিকায় অন্ধ হয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে বিরাট দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। দুঃসময়ে আপনজন হয়েও পাশে থাকার প্রয়োজন মনে করেন নি। সবসময় কাজের বাহানায় দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়েছেন। এখন অবশ্য তিনি লজ্জিত।

ভাইয়ের বারবার অনুরোধ তিনি ফেলতে পারলেন না। আজ আবারও তরীর বাবা ভাইয়ের কাছে গিয়ে বসে রইলেন। ক্ষো*ভে*র বশে দুজনই দুজনকে কটাক্ষ করে কথা বলেছেন। তবে আজ ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব ভুলে একে অপরকে বুকে টে*নে নিলেন। পুরুষরা যত তাড়াতাড়ি নিজেদের মাঝের দূরত্ব ঘুচাতে পারে, নারী তত তাড়াতাড়ি পারেনা। তাদের মনে ভালোবাসার মতোই ঘৃণাটাও তীব্র। আজ তরীর বাবা আর চাচার মাঝে তার মা আর চাচি থাকলে এতটা দ্রুত সবটা ঠিক হতো না। তারা নিজেদের ইগো ধরে রাখতে হলেও দূরত্ব বৃদ্ধি করতেন আরো কিছুকাল।

তিয়াসের বাবা বললেন,
-“সুখে থাকিস, মা। তোদের দুঃসময়ে পাশে থাকিনি। তবে আজ আর নিজেকে একা মনে করবিনা। চাচা-চাচি তোদের পাশে আছি।”
তরীর ভীষণ ভালোলাগলো সবটা ঠিক হয়ে যাওয়াতে। সৃষ্টিকর্তা চাইলে কি-না করতে পারেন? কিছুই তার ক্ষমতার বাইরে নয়। তরী বলল,

-“বেয়া*দবি করার জন্য আমাকেও ক্ষমা করবেন চাচ্চু। সেদিন আমিও আপনাদের সাথে খা*রা*প ব্যবহার করেছি। আর মিঠুর কথায় মনে কষ্ট ধরে রাখবেন না। ছোটো মানুষ মুখে যা এসেছে বলে ফেলেছে।”
তিয়াসের বাবা হেসে বললেন,

-“আমার মনে আর কারো জন্যই রাগ অবশিষ্ট নেই।”
একবুক প্রশান্তি নিয়ে সকলের সাথে কুশল বিনিময় করলো তরী। সকলের যাওয়ার মুহূর্তে তরীর বাবা তাকে সাথে নিয়ে যাওয়ার কথা তুললেন। মাহমুদ সকলের কাছে কিছু কথা বলার অনুমতি চাইলো, বিশেষ করে মায়ের কাছে।
-“আমি কিছু কথা বলতে চাই মা।”
আয়েশা সুলতানা বললেন,

-“বল।”
মাহমুদ বিনয়ের সাথে নরম সুরে বলল,
-“তরী আপাতত তার বাবা আর ভাই-বোনের সাথেই থাকুক। তাদের দেখার জন্য এখন তরীকে দরকার। পরে নাহয় কোন ব্যবস্থা হয়ে গেলে তরী এখানে সবার সাথে থাকবে।”
আয়েশা সুলতানা চুপ করে আছেন। কিছুই বলছেন না। সকলেই উনার জবাবের প্রতিক্ষায় বসে আছেন। তিয়াসের বাবা তরীর বাবার উদ্দেশ্যে বললেন,

-“তিনতলা তো এখনো খালিই পড়ে আছে। এতটা ঝামেলা করার দরকার কী? জামাই তার পরিবার নিয়ে সেখানে উঠলেই সকল সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।”
তরীর বাবার ব্যাপারটা মনে ধরলো। বললেন,
-“মন্দ বলো নি ভাইয়া। আমি আসলে ভেবে দেখিনি।”
অতঃপর মাহমুদ আর আয়েশা সুলতানার উদ্দেশ্যে বললেন,
-“আমাদের বাসায় উঠলে ভালো হতো। ভালোলাগতো আমার।”
মাহমুদ কিছু বলার আগেই আয়েশা সুলতানা জবাব দিলেন।

-“আপনাদের বাসায় উঠতে আমাদের সমস্যা নেই। তবে আমরা ঠিক তেমনটাই থাকবো, যেমনটা পূর্বে ভাড়াটিয়া হিসেবে ছিলাম।”
তরীর বাবা বললেন,
-“ছিঃ! ছিঃ! এখন আপনারা আমার আত্মীয়।”
আয়েশা সুলতানা বাঁধা দিলেন।

-“তবে আমরা থাকতো পারবোনা আপনার বাসায়। আমাদের সম্পর্ক সব জায়গায় ঠিক থাকলেও বাড়িতে থাকাকালীন বাড়ির মালিক আর ভাড়াটিয়ার মতোই সম্পর্ক থাকবে। এখানে যেমন ভাড়া দিয়ে থাকি, ওখানেও তেমন ভাড়া দিয়েই থাকবো। আপনি যেমন আত্মসম্মানের জোর ধরে রাখতে চাইছেন, তেমনই আমিও চাই আমার ছেলের সম্মান বজায় থাকুক।”

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী পর্ব ৩৪

আয়েশা সুলতানার উপর আর কথা বলার মতো ভাষা পেলেন না তরীর বাবা। সকলেরই আয়েশা সুলতানার সিদ্ধান্ত পছন্দ হলো। তবে এ বাসা ছাড়তে ছাড়তে আপাতত তরী তার বাবার কাছেই থাকবে।

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী পর্ব ৩৬