অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ৩০

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ৩০
জিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

সময় গড়ালো আরো কিছুক্ষণ। বুকের ভেতর দ্রিমদ্রিম হাতুড়ি পে*টা*র শব্দ হচ্ছে। যদি সারাদিন এভাবেই দরজা আটকানো থাকে। অরু এক হাত তুলে দরজায় করাঘাত করে ডাকলো,“শুনছো!”
এমন ডাকে হৃৎপিন্ড থমকে গেল দুই মিনিটের জন্য। কী মধুর ডাক। বরফের ন্যায় গলে পড়তে গিয়েও নিজেকে শক্ত রাখলো রামি। জবাব দিলো না। অরু অনবরত করাঘাত করে বলল,“দরজা খোল না!”

রামি গলা ঝেড়ে বলল,“এত দ্রুত ধোয়া শেষ?”
অরু দাঁতে দাঁত চেপে বলল,“হ্যাঁ, তুমি দরজা আটকে দিলে কেন?”
“ধোয়া শেষ হলো কীভাবে? আমি তো সামান্য পানি পড়ার আওয়াজই শুনতে পেলাম না। তুই বরং ধোয়া শেষ হলে বের হোস।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অরু পড়লো বিপাকে। গরু দেখি মানুষ হয়ে গিয়েছে। বোধবুদ্ধি সব বেড়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। এমন হলে তো সে টিকতে পারবে না। বোঝা গেল জামাকাপড় না ধুইয়ে ওঁকে আজ বের হতে দেবে না। অগত্যা রামির একগাদা জামাকাপড় কেচে অর্ধ গোসল সম্পন্ন করে ফেলেছে। ক্লান্ত স্বরে আবার রামিকে ডাকলো।
“এবার দরজাটা খোল!”

একবার ডাকেই যথেষ্ট ছিল। সাথে সাথেই রামি দরজা খুলে দিল। অরু চোখমুখ অন্ধকার করে বেরিয়ে যেতে নিলেই রামি ভুরু উঁচিয়ে বলল,“এগুলো মেলে দিবে কে?”
অরু কথা বাড়ালো না। নাক, গাল ফুলিয়ে ভেজা জামাকাপড় নিয়ে ছাদে পা বাড়ালো। সন্ধ্যাবেলায় কেউ কাপড় ধোয়? রামিটা যে তাকে ইচ্ছে করেই নাকানিচুবানি খাওয়াতে চাচ্ছে, এটা কি ঘটা করে বলা লাগে? রামিও পিছু পিছু এলো। অরু আড়চোখে তাকাতেই সে বলল,“তুই কাজে ফাঁকি দিচ্ছিস কি-না, তার তদারকি করতে এসেছি।”

অরু কথা না বাড়িয়ে সন্ধ্যায় ছাদে কাপড় মেলে দিল। প্রথমত শীতকাল, দ্বিতীয় এখন সন্ধ্যা। তাই রোদের দেখা না পাক, এমনিতেও জামাকাপড় শুকাবে না। অরু কিছু একটা ভেবে দুর্বোধ্য হাসলো। রামির সাথে কথা না বাড়িয়ে দ্রুত সিঁড়ি ধরে নেমে নিজেদের বাসায় চলে গেল। দ্রুত জামাকাপড় পাল্টে কম্বলের ভাঁজে শরীর ডুবিয়ে দিল। রামি পিছুপিছু এসে দরজা বন্ধ পেয়ে কয়েকবার ডাকলো। অরু সাড়া দিলো না। তাই চলে গেল সে । আজ রাতে আর ও বাসায় গেল না অরু।

বিছানায় হেলান দিয়ে বই নিয়ে বসলো। মিঠু আজ তাড়াতাড়ি ফিরলো। ঘড়ির কাঁটা দশের ঘরে। এই বাড়িতে রাতের খাবার খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। কোনদিন নয়টা, কোনদিন দশটা আবার কোনদিন এগারোটায় রাতের খাবার খায় সবাই।
শরীর অসাড় হয়ে আসছে। কেমন ভেঙেচুরে যাচ্ছে। অনেক বছর হলো এতটা ক্লান্তি আসেনি। মাথাটা টনটন করে উঠছে। তাই কাজ রেখে দ্রুত বাড়ি ফিরলো মিঠু। বেল দিয়ে অপেক্ষা করলো। মনে হচ্ছে আজ অরুটাও যেন দরজা খুলতে দেরি করছে। অথচ মাত্রই সে বেল দিয়েছে। অরু এসে দরজা খুলে দিল। ভাইয়ের মলিন মুখশ্রী দেখে বলল,“তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে খুব। দ্রুত জামাকাপড় পাল্টে নাও। আমি খাবার দিচ্ছি।”

এতক্ষণের বিরক্তিটা যেন হঠাৎ করেই উবে গেল। দুটো বোনই তার প্রতি ভীষণ যত্নশীল। যদিও অরু সবসময় নিজের যত্ন টুকু ঝ*গ*ড়া, মা*রা*মা*রি*র পেছনে আড়াল করে রাখে! প্রকাশ খুব কমই করে। তবুও মিঠু জানে অরু তাকে কতটা ভালোবাসে। বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো সে। অরুর মাথায় হাত রেখে কিছু না বলেই শরীরটা টে*নে*হিঁ*চ*ড়ে রুম পর্যন্ত নিয়ে গেল। কোনভাবে জামাকাপড় বদলেই শরীর এলিয়ে দিল। আর এগোতে চাইছে না শরীর। এখান থেকে উঠে ডাইনিং পর্যন্ত যাওয়ার শক্তি নেই। কিছুক্ষণের মাঝে অরু ঘরে ঢুকলো। তার হাতে খাবারের প্লেট। মিঠুকে তাগাদা দিয়ে বলল,“উঠে বসে আগে খেয়ে নাও। তারপর ঔষধ নিয়ে লম্বা একটা ঘুম দেবে।”

মিঠু দ্বিরুক্তি না করে উঠে বসলো। কম্বলের ভাঁজে হাত গুটিয়ে বলল,“হাত বের করতে ইচ্ছে করছে না।”
অরু ঝাঁঝালো স্বরে বলল,“হ্যাঁ, সবার পেছনে কামলা খাটার জন্য তো আমি আছিই। সবার আর কী! পায়ের উপর পা তুলে নিশ্চিন্তে খাবে, ঘুমাবে।”

মিঠু হাসছে। অরুটা ছোটো থেকেই বড়োদের মতো করে কথা বলে। এখনো বলছে। মনে হচ্ছে মা এসে বকাঝকা করে গেলেন মিঠুকে। মায়ের কথা মনে পড়তেই ঠোঁটের হাসি দীর্ঘশ্বাসে রূপ নিলো। অরু গরম ভাত মাখিয়ে মিঠুর সামনে ধরলো। পরপর কয়েক নলা ভাত খেয়ে মিঠু আর খেল না। মুখ তিতকুটে হয়ে আছে। অরু আর বাড়াবাড়ি করলো না। হাত ধুয়ে মিঠুকে ঔষধ দিলো। মিঠু শুয়ে পড়তেই যাওয়ার সময় ঘরের আলো নিভিয়ে দরজা চাপিয়ে দিল। দরজার বাইরে বেরিয়ে অরু পরপর তিনবার হাঁচি দিল। নাকের ডগা ডলে বাবাকে খেতে ডাকলো।

অরু যাওয়ার পরপরই বাবা এসে একবার দেখে গেলেন মিঠুকে। তারপর খেতে বসলেন।
রাতে মিঠুর আর ঘুম হলো না। হাড়কাঁপানো জ্বর এলো তার। গলা শুষ্ক হয়ে ব্যথা হয়ে আছে। মিঠু সাধারণত সকাল সকাল উঠেই বেরিয়ে যায়। আজ সাতটা বেজে গেলেও তাকে বের হতে না দেখে অরু তাকে ডাকতে গেল। দরজা চাপানোই ছিলো। অরু দুবার নক করলো। মিঠু নিস্তেজ স্বরে বলল,“আয়।”

গলা ফ্যাসফ্যাসে শোনাচ্ছে। অরু দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকেই চমকে গেল। একরাতেই মিঠুর চোখমুখ শুকিয়ে গিয়েছে। শরীর ফ্যাকাশে লাগছে, চোখদুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। অরু তড়িঘড়ি করে মিঠুর কপালে, গলায় হাত রেখে দেখলো। আৎকে ওঠা স্বরে বলল,“তোমার তো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।”

দ্রুত থার্মোমিটার খুঁজে জ্বর মেপে নিলো। ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট। একটা বালতি করে পানি এনে মিঠুর মাথায় ঢাললো। মুখ, গলা ভেজা তোয়ালে দিয়ে মুছে বাবাকে ডাকলো। তিনি দেখে বললেন,“নাস্তা করে একবার ডাক্তার দেখিয়ে আনবো।”
অরু নাস্তা তৈরি করে মিঠু আর বাবাকে খাইয়ে তরীর কাছে বলে গেল মিঠুর অসুস্থতার কথা। ক্লাসও মিস দেওয়া যাবে না। অগত্যা অরুকে বের হতে হচ্ছে। রামির এখনো ঘুম ভাঙেনি। এক ফাঁকে তার ঘরে ঢুকলো অরু। আলমারি থেকে রামির সব জামাকাপড় নামিয়ে ভিজিয়ে রাখলো। আর একটা পোশাকও শুকনো নেই। কার্য সম্পন্ন করে ঘুমন্ত রামির দিকে এক পলক তাকিয়ে হাসলো।

তরী আজ বাবার বাসায় চলে এলো। রান্না বসিয়ে ফাঁকে ফাঁকে মিঠুকে দেখে যাচ্ছে। বাবা সকালে ডাক্তার দেখিয়ে এনেছেন।
ঘুম থেকে উঠে অভ্যাসবশত তোয়ালে হাতে গোসলের জন্য ওয়াশরুমে ঢুকলো রামি। তোয়ালে পেঁচিয়ে ঘরে ঢুকলো।

আলমারি খুলতেই তার চোখ চড়কগাছ। একটাও পোশাক খুঁজে পেল না। সারা ঘরে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও একটা প্যান্ট খুঁজে পেল না। বারান্দার দড়িতে আছে কি-না দেখতে ওখানে গিয়ে দেখলো তার সবগুলো জামাকাপড় ভেজানো। এটা যে অরুর কাজ, তা আর বুঝতে বাকি রইলো না। গতকালের প্রতিশোধ আজ নিলো সে। রাতে আর ছাদ থেকে ওই কাপড়গুলোও আনা হয়নি। ছাদে উঠে দেখলো ওগুলো এখনো ভেজা। হতাশ হয়ে তোয়ালে পেঁচিয়ে বসে রইলো। অপেক্ষা করলো কাপড় শুকানোর। ভাবলো এই মেয়ের সাথে লেগে লাভ নেই। জীবনে প্রতি*শোধ ছাড়া কিছুই পাবে না।

সুহা অফিস করে বের হলো। চাকরির ব্যাপারে মামা অবশ্য কোন বাঁধা দেননি। রিয়াজ অপেক্ষা করছিল সুহা বের হওয়ার। তার দেখা পেতেই এগিয়ে এসে বলল,“চলুন ভাবি, আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি।”
সুহা বাঁধ সাধলো। বলল,“লাগবে না ভাইয়া। মামা দেখলে হাজারটা প্রশ্ন করবেন।”
রিয়াজ বলল,“ঠিক আছে। আমি তাহলে ভাইকে দেখতে যাচ্ছি।”

সুহার মনে কৌতূহল জাগলো। রয়েসয়ে প্রশ্ন করলো,“ভাইকে দেখতে যাচ্ছেন মানে?”
“ইবতেসাম ভাইকে দেখতে যাচ্ছি। আপনি দেখতে যান নি?”
সুহার মনে আবারও প্রশ্ন জাগলো। শুধালো,“দেখতে যাব কেন? উনার কী হয়েছে?”
রিয়াজ দুঃখী দুঃখী চেহারা বানিয়ে বলল, “ভাই তো দুদিন ধরে অসুস্থ। কাল রাতে ভীষণভাবে জ্বরের কবলে পড়েছে। বিছানা ছাড়তেই পারছে না। তাইতো দেখতে যাচ্ছি। আপনি যাবেন?”

সুহা হাসফাস করে উঠলো। মিঠুকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। কিন্তু জড়তার কারণে মুখ ফোটে বলতে পারছে না। তাছাড়া এভাবে হুট করে মিঠুর বাসায় গেলে সবাই কী ভাববে! রিয়াজ সূক্ষ্ম চোখে সুহাকে পর্যবেক্ষণ করছে। তার এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য ছিল সুহাকে মিঠুর অসুস্থতার সংবাদ দেওয়া। আপাতত সে সফল। এবার সুহা কী করে সেটাই দেখার পালা। সে বলল,“আমি বরং যাই ভাবি।”

সুহা দ্বিধাদ্বন্দ কাটিয়ে বলে ফেললো,“আমি আপনার সাথে যাবো ভাইয়া।”
মনে মনে হাসলো রিয়াজ। বলল,“তাহলে চলুন।”
সুহাকে নিয়ে রিয়াজ এসে নামলো মিঠুর বাসার সামনে। রিয়াজ ভেতরে ঢুকে গেল। সুহা এক পা বাড়াচ্ছে তো দুপা পিছিয়ে যাচ্ছে। দুরুদুরু বুক নিয়ে রিয়াজের পাশে এসে দাঁড়ালো। দরজা খুলে দিল তরী। সুহাকে দেখে সে প্রথমে অবাক হলো। পরক্ষণেই নিজেকে সুহার জায়গায় বসিয়ে মৃদু হাসলো। মিঠুর জায়গায় মাহমুদ থাকলে সে-ও কোন না কোন উপায়ে মাহমুদের কাছে আসতে চাইতো। সুহা সালাম দিতেই তরী মুচকি হেসে জবাব দিয়ে সুহাকে ভেতরে নিয়ে গেল। রিয়াজ কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা মিঠুর ঘরে ঢুকলো। টুকটাক কথা বলে মিটিমিটি হেসে বলল,“ভাই!”

চোখজোড়া ক্ষীণ হয়ে এলো মিঠুর। কপালে ভাঁজ পড়েছে। রিয়াজের হাসির কারণ খুঁজে পেল না সে। প্রশ্ন করলো,“কী? এভাবে হাসছিস কেন?”
রিয়াজ ফিসফিস শব্দে বলল,“ভাবি এসেছে আপনাকে দেখতে।”
“কোন ভাবি?” মিঠুর কপালের ভাঁজ আরেকটু গাঢ় হলো। রিয়াজ চওড়া হেসে বলল,“সুহা ভাবি।”
চমকে তাকালো মিঠু। পরক্ষণেই নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,“ওহ্।”
“আমি বরং ভাবিকে ডেকে দিচ্ছি।” বলেই রিয়াজ বেরিয়ে গেল।
সুহা তরীর সাথে রান্নাঘরে ঢুকেছে। তরী এটা-ওটা বলে তার জড়তা ভাঙানোর চেষ্টা করছে। সুহা ইনিয়েবিনিয়ে বলল,“শুনলাম উনি না-কি অসুস্থ। তাই..”

তরী মৃদু হেসে বলল,“আমাকে আর বলতে হবে না। তুমি আসতেই পারো। কেউ কিছু মনে করবে না। বরং এসে ভালোই করেছো। শশুর বাড়ি দেখে তোমার কোন মতামত থাকলে বলতে পার।”
সুহা তড়িঘড়ি করে বলল,“না না, আমার কী মতামত থাকবে? সবকিছু আমার পছন্দ হয়েছে।”
বলেই জিহ্ব কাটলো সুহা। তরী ফিক করে হেসে ফেললো। বলল,“পছন্দ না হলে নিজ হাতেই সব গুছিয়ে নেবে।”

কথা বলতে বলতে একসময় সুহা সহজ হয়ে উঠলো। তার ভীষণ ভালোলাগছে। কী মিষ্টি পরিবার। লোকটার দুটো বোনই ভীষণ অমায়িক। রিয়াজ এসে মিটিমিটি হেসে বলল,“ভাবি, আপনাকে ভাই ডাকছে।”
সুহার কান গরম হয়ে এলো। লজ্জায় গাল দুটো ফুলে উঠছে। পা দুটো টলে উঠছে। তরী স্বাভাবিক গলায় বলল,“যাকে দেখতে এসেছো, তাকেই তো দেখনি। যাও গিয়ে দেখা করে এসো।”
সুহার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। সময় নিয়ে দু-ঠোঁট ফাঁক করলো।

“পরে দেখবো।”
তরী সুহার হাতে কা*টা ফল ধরিয়ে দিয়ে বলল,“এগুলো মিঠুকে দিয়ে এসো।”
সুহা অগত্যা ট্রে হাতে মিঠুর ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। তার বুক কাঁপছে। দরজায় কারো ছায়া দেখা যাচ্ছে। মিঠু বলল,“ভেতরে আসুন সুহা।”

বুকে একটা ধাক্কা লাগলো। দরজায় যে সে দাঁড়িয়ে আছে, এটা মিঠু বুঝলো কীভাবে? একগাদা প্রশ্ন মাথায় নিয়ে ঘরে ঢুকলো সে। এক পলক মিঠুর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো লোকটি তাকেই দেখছে। সুহা আর চোখের দিকে তাকানোর সাহস করলো না। নতমস্তকে মিঠুকে প্রশ্ন করলো,“দরজায় যে আমি দাঁড়ানো ছিলাম, বুঝলেন কীভাবে?”
মিঠু স্বাভাবিকভাবে বলল,“আমার বোনেরা এভাবে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে না। হয় সোজা রুমে ঢুকে যাবে অথবা নক করবে।”

“ওহ্!” চুপসে গেল সুহা। অথচ সে কত কিছু ভেবে বসে আছে। মিঠুর দিকে কা*টা ফলগুলো বাড়িয়ে দিয়ে বলল,“এগুলো খেয়ে নিন। আপু পাঠিয়েছে।”
মিঠুর দৃষ্টির নড়চড় হলো না। সে অপলক নেত্রে তাকিয়ে থেকে খানিক আদেশের সুরে বলল,“খাইয়ে দিন।”
সুহা আরো একবার চমকালো।
“হুঁ?”

মিঠু নির্লিপ্ত রইলো। একই ভঙ্গিতে বলল,“খাইয়ে দিন।”
সুহা বলল,“আপনার কী হাত নেই?”
“আছে, তবে হাতদুটো আপাতত কাজে লাগাতে চাচ্ছি না। পরে প্রয়োজন পড়তে পারে।”
সুহার কাছে সবসময়ই মনে হয় লোকটা সোজাভাবে কথা বলতে পারে না। তাই সে-ও ত্যাড়া জবাব দিল। মিনমিন করে বলল,“আমি পারবো না।”
“এসেছেন কেন?”

মিঠুর প্রশ্ন শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেল সুহা। সত্যিই তো, সে এসেছে কেন? এবার এই লোককে সে কী জবাব দেবে? উত্তর জানতে তাগদা দিল মিঠু।
“বললেন না তো কেন এসেছেন?”
সুহা এদিক-ওদিক তাকিয়ে জবাব দিলো,“আপনি অসুস্থ, তাই দেখতে এসেছি।”
মিঠু গম্ভীর স্বরে বলল,“এদিক-ওদিক কী দেখছেন? আমার দিকে তাকান।”

সুহা তাকালো না। মিঠু বাঁকা হেসে শুধালো,“ভয় পাচ্ছেন?”
সুহা এবার মিঠুর চোখে তাকালো। বলল,“ভয় কেন পাবো?”
মিঠু ঠোঁট টিপে হাসলো। বলল,“আমার জন্য এত চিন্তা হয়! আপনার উচিত দ্রুত আমাকে বিয়ে করে নেওয়া। নয়তো আমার চিন্তায় আপনি হার্টের রোগী হয়ে যাবেন। একদিনেই আপনার কেমন চোখমুখ শুকিয়ে গিয়েছে। জনগণের সুবিধা-অসুবিধা দেখার দায়িত্ব আমার। আমি চাই না আমার কারণে কারো ক্ষ*তি হোক।”

সুহা মুখ লুকানোর চেষ্টা করে মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,“বাজে কথা বাদ দিন। আমার বয়েই গেল আপনাকে বিয়ে করতে।”
মিঠু ঝট করে সুহার হাত চেপে ধরে পাশে বসিয়ে দিল। সুহার দিকে ঝুঁকে এসে বলল,“আপনি তো আমারই। শুধু বৈধতা দেওয়া বাকি। তাই বিয়ে করতে আপনি বাধ্য।”
সুহা ভয় পেয়ে পেছন দিকে হেলে গেল। ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে তার। বারকয়েক চোখের পলক ঝাপটালো। মিঠু নিজেকে সুহার আরেকটু নিকটে নিয়ে গেল। ফিসফিস শব্দে বলল,“কবে আপনার মামার কাছে প্রস্তাব রাখবো? বলে দিন। আমি কিন্তু আর অপেক্ষা করতে রাজি নই।”

কান শিরশির করে উঠলো সুহার। চোখমুখ খিঁচে দুহাতে মিঠুর বুকে হাত দিয়ে তাকে দূরে ঠে*লে দিল। হাত সরাতে গিয়ে ব্যর্থ হলো সুহা। তার একহাত বুকে শক্ত করে চেপে ধরে মিঠু কাতর স্বরে বলল,“এইখানটায় বড্ডো জ্বালা করছে সুহা। আগুনটা নিভিয়ে দিন না!”
সুহা তোতলানো স্বরে বলল,“জ জ্বরে আপনার মাথা ঠিক নেই। আমি যযাচ্ছি।”
মিঠুর অভিমান হলো। ছেড়ে দিল সুহার হাত। শক্ত গলায় বলল,“আর কখনো আমার সামনে পড়বেন না সুহা। আপনি এবার আসতে পারেন।”

ছাড়া পেয়েও যেন এবার আর সামনে পা বাড়ানের সাহস হয় না সুহার। পা জোড়া আটকে রইলো। মিঠু মুখ ঘুরিয়ে বলল,“আপনি নিশ্চিন্তে বাড়ি যান সুহা। আমার পরিবার আপনার মামার কাছে আর প্রস্তাব নিয়ে যাবে না। আপনি পূর্বের মতোই মুক্ত।”

সুহা তাৎক্ষণিক কিছু বলতে পারলো না। যতটা উচ্ছ্বাস নিয়ে এসেছিল, ঠিক ততটা বিষাদ নিয়েই তাকে ফিরে যেতে হবে মনে হচ্ছে!অনেকদিন পর তার চোখ দুটো ভিজে এলো। রোধ হয়ে আসা গলায় বলল,“খাঁচায় বন্দি করে মায়া বাড়িয়ে মুক্ত করতে চাইছেন?”
বারবার ঢোক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে সে। মিঠু কঠোরস্বরে বলল,“যে থাকতে চায় না, তাকে ধরে রাখতে নেই।”

সুহা অটল গলায় বলল,
“আপনি বাধ্য। আমি দ্বিতীয়বার ভাঙতে চাই না।”
সুহার কথার সারমর্ম বুঝতে পারলো না মিঠু। কেবল সরল চোখে তাকিয়ে রইলো। সুহা বেরিয়ে গেল।
বাসায় চিন্তা করবে বলে তরীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। মিঠুর কপালে চিন্তার বলিরেখা।
অরু ফিরলো সন্ধ্যার পূর্বে। মিঠুর ঘরে উঁকি দিতেই দেখতে পেল সে কিছু নিয়ে চিন্তিত। অরু চুপিচুপি মিঠুর ঘরে ঢুকলো। ঘাড়ে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো, “কী ভাবছো?”

মিঠু কিছুই লুকানোর চেষ্টা করলো না। সুহার বলা শেষ কথাটি বলে অরুকে জিজ্ঞেস করলো,“এই কথার মানে কী?”
অরু জিজ্ঞেস করলো,“এর আগে কী বলেছো তুমি?”
মিঠু সত্যটাই বললো। অরু বলল,“এটা তো সিম্পল ব্যাপার। না বোঝার কী আছে? ভাবি চায় তুমি তাকে ধরে রাখো, তাকে ধরে রাখতে তুমি বাধ্য।”

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ২৯

মিঠু আবারও চিন্তার মাঝে ডুবে গেল। আসলেই কি সুহার কথার মানে এমন কিছু!

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ৩১