অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২২

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২২
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

“মাথাটা টিপে দেও তো,ঐশ্বর্য। প্রচন্ড ব্যা*থা করছে”
মিটিং শেষ করেই আঁধার বললেন।তার কথা শুনে আমি হতবাক। কি শুরু করেছেন উনি! মিনিটে মিনিটে আবদার করছে আবার অদ্ভুত নামে ডাকছে,ভুতে টুতে ধরছে নাকি উনাকে।
_এতো কী ভাবছো?তাড়াতাড়ি করো।

কোনো সংকোচ ছাড়া কতো সুন্দর করে আবদার খানা করছেন তিনি।কীভাবে ফেলবো তার আবদার!মায়া হচ্ছে ভীষণ।তাই দেরি না করে মুভ নিয়ে গেলাম তার কাছে। ডিভানের পিছন থেকে গিয়ে কাপা কাপা হাতে তার কপাল স্পর্শ করলাম। কিন্তু পিছন থেকে ঠিক মতো মালিশ করতে পারছি না।হঠাৎই তিনি উনার কপালে রাখা হাতটা টেনে আমাকে তার সামনে বরাবর দাড় করালেন। ঘটনার আকশ্মিকতায় আমি হকচকিয়ে গেলাম

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

_তোমার মতো লিলিপুট পিছনে দাড়িয়ে আমার কপাল শুধু স্পর্শই করতে পারবে কিন্তু ম্যাসাজ তোমার দারা আর হবে না। নাও এবার ঠিক ভাবে করতে পারবে। now,, Start
আমি যতক্ষণ মালিশ করেছি ততক্ষণ উনি চোখ বন্ধ করে রেখেছিলেন তাই অস্বস্তি ভাবটা প্রথমে থাকলেও তা পরে কেটে গেছে।উনি হয়তো এভাবেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। ডিভানটা জানালার পাশাপাশি হওয়ায় গৌধূলির রক্তি*ম আভা তার মুখে পরছে।একে বারে কিউট লাল মোরগ

লাগছে তাকে।কিন্তু তার মায়ায় জড়ানো মোটেও যাবে না।আসলে
“নি*ষিদ্ধ জিনিসে আমাদের আকর্ষণ আকাশ ছোঁয়া। ”
সৃষ্টির শুরু থেকে নি*ষিদ্ধ কিছুর প্রতি আমরা আকৃষ্ট বেশি হই, যা দুলর্ভ, পাওয়া বরাবরই অসম্ভব, সেই নিষিদ্ধ কিছুকে পাওয়ার ইচ্ছা মনে পোষণ করি ।
আপনি হয়তো আমার সেই নিষি*দ্ধ” ইচ্ছে “।আপনার মায়ায় পড়লেও খুব শীগ্রই তা ত্যাগ করতে করতে হবে।জানেন তো,,

মানুষের অতৃপ্ত রাক্ষস হৃদয়! যা চায় তার অধিকাংশই নিষিদ্ধ থাকে, হয়তো ধর্মে নয়তো সমাজে।আর আপনি তো আমার জীবনেই “নি*ষিদ্ধ ”
আর তার দিকে তাকালাম না।ছবির ফ্রেমটা বেডের সাথের টি-টেবিলে উল্টো করে রেখে আমি ছাদে গেলাম কাপড় নামাতে।এক্ষুনি মাগরিবের আযান পড়বে। তার আগেই কাপড় নামাতে হবে
রাতের খাবারের পর আলো আপুর রুমে গিয়ে দেখি রোজা আপু,কলি আপু মিলে তারা গল্প করছে। আমার উদ্দেশ্য একটাই এখানে ঘুমানো। উনার অদ্ভুত কথাবার্তা আমার মনে ভীষণ য*ন্ত্রণা তৈরি করছে।আমি উনার মায়ায় জড়াতে চাই না।

_কিরে তুই এখানে, সকালে ক্লাস আছে ঘুমাতে যাবি কখন?তোর জন্য কিন্তু পরে আমার ও দেরি হবে।আমার দিকে তাকিয়ে বলল আলো আপু
আমি ওপাশ থেকে গিয়ে আপুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলাম বললাম,
_ভাল্লাগছে না আপু,এখানে ঘুমাবো।
রোজা আপু তার চশমা খুলে রাখতে রাখতে বললেন,

_কেনো পিচ্চি ভাবী, আধার ভাই বুঝি বকেছে তোমায়?নাকি ঝগড়া করে এসেছো!
_নাহ,, তোমাদের ভাই লাইট জালিয়ে কাজ করবে।আমার লাইটের আলোতে ঘুম আসে না। তোমাদের রুমের টাও নিভিয়ে দেও।আমি ঘুমালাম।আপু মাথায় হাত বুলিয়ে দাওতো।
একথা বলে আমি ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। ঐ কলি আপু আমায় দেখে বিড়বিড় করে কি কি যেন বললেন। ধূর মরু*ক গা। পাগল ছাগলের কথায় কান দিতে হয় না।

সকালে রুমের সামনে এসে দেখি এখনো অন্ধকার। কিন্তু এতোক্ষণে তো উনার উঠে যাওয়ার কথা। দরজার ভেতরে প্রবেশ করতেই এক জোড়া শক্তপোক্ত হাত আমায় দেয়ালে চেপে ধরলো। আবছা পরদা উড়ার আলোয় চোখ দেখে বুঝতে পারলাম সেই হাতের মালিক আঁধার।

_আরে ছাড়ুন ব্যাথা পাচ্ছি তো। এমন আচরণ করছেন কেনো? ছাড়ুন হাতে লাগছে আমার
__তোমার এতো সাহস কেনো?কোন সাহসে তুমি ওই ছবি এই রুমে এনেছো,, বলো।স্ত্রী বলে কি মাথায় উঠে নাচানাচি করবে নাকি!সব ব্যাপার এ নাক গলাবে!বেশি সাহস বেড়েছে তোমার!ইচ্ছে তো করছে তোমায় মেরে ফেলতে
তার গলার স্বর শুনে মনে হচ্ছে তিনি মাত্রাতিরিক্ত রে*গে আছেন। তাই কাপাকাপা স্বরে বললাম,

_ছবিটা সুন্দর ছিল, আমি স্কেচ করবো ভেবেছিলাম তাই এনেছি।আহ,,ছাড়ুন আমায় আমার হাতে ভীষণ ব্যা*থা পাচ্ছি।
এরপর উনি আমায় ছেড়ে উনার সামনে থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চলে গেলেন রুমের বাইরে। তার ধাক্কা পড়ে যেতে গিয়েও সামলে নিলাম নিজেকে। কিন্তু উনার এভাবে রেগে যাওয়ার কারনটা বুঝলাম না। কি এমন দোষ আছে ওই ফ্রেমবন্দী ছবি তে! কার ছবিটা!

এসব ভাবনার মাঝেই জানালার পর্দা সরানোর জন্য সেদিকে যেতেই আমি জোরে মৃদুস্বরে আর্তনাদ করে উঠলাম। মনে হচ্ছে ডান পায়ের তালুতে ছুড়ি ঢুকানো হয়েছে। পায়ের তালু চিড়ে গেছে মনে হচ্ছে। পায়ে আর ব্যালেন্স রাখতে পারলাম না নিচে পরতেই আমার কপালে ভীষণ জোরে বারি খেলাম।অনুভব করলাম কিছু তরল পদার্থ আমার মুখ বেয়ে গলায় পরেছে। মাথাটা ঝিমঝিমিয়ে উঠলো। অন্ধকার টা আমার কাছে আরো ঘোলাটে হয়ে এলো। আর কিছু মনে নেই।

চোখ বন্ধ অবস্থায় আমার হাতে কারো স্পর্শ পেলাম। পরম যত্নে আমার হাত খানা মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছেন। মাথায় তীব্র ব্যাথা অনুভব হলো মনে হচ্ছে মাথাটা ছিড়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে একটু পানি খেতে পারলে খুব ভালো লাগবে। তাই পিটপিট করে চোখ খুললাম।পাশে তাকিয়ে অবাক হলাম। আমার হাত আঁধার ধরে আছেন। অন্য হাতে ক্যানেল এ স্যালাইন চলছে। আমাকে চোখ খুলতে দেখে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়লো,

_কেমন লাগছে এখন?বেশি খারা*প লাগছে? মাথায় পেই*ন হচ্ছে?
তার একাধারে এতো প্রশ্ন শুনে আমার বিরক্তি লাগলো। তখনকার ব্যবহার এর কথা মনে পড়ে গেল। আমি তার হাত থেকে নিজের হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে নিলাম।হয়তো তিনি বুঝতে পেরেছেন আমি কেন হাত ছাড়িয়ে নিয়েছি। তারপর হেলান দিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করতেই তিনি মাথার বালিশ ঠিক করে দিলেন।আরেকটি বালিশের ওপর ক্যানেল লাগনো হাতটা রাখলেন। মাথায় আবারও ব্যাথা অনুভব করলাম কপালে হাত দিয়ে দেখি ব্যান্ডেজ। আশেপাশে তাকিয়ে আলো আপু বা মাকে খোজার চেষ্টা করছি কিন্তু তারা নেই। উনি আমার চাহনি দেখে বললেন

-ঐশী,,কিছু লাগবে তোমার? পানি খাবে?
_আলো আপুকে ডেকে দিন
আমার থমথম উত্তরে উনি হতাশ দৃষ্টিতে তাকালেন। আমাকে বিছানা থেকে নামতে নিষেধ করে বেড়িয়ে গেলেন রুম থেকে। আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বিকেল ৫টা বাজে। তারমানে আমি এতো ঘন্টা বেহুশ হয়ে ঘুমাচ্ছিলাম।আমার ভাবনার মাঝেই আলো আপু আর নীল ভাইয়া দুজন আমার দুপাশে বসেছে।তখনই রোজা আপু বললেন,

_নীল ক্ষেত ওইটা আমার জায়গা উঠ,মেয়ে মানুষের গায়ে ঘেসে বসতে ভাল্লাগে তাইনা, উঠ,,জায়গা ছাড়,,
_আমি আমার পিচ্চি বোনের পাশে বসেছি।তোর বসতে ইচ্ছে করলে ফ্লোরে বোস।দেখছিস মেয়েটা অসুস্থ তাও আজাইরা পেচাল করতেছোস কেনো!চুপচাপ থাক।
চোখ রাঙীয়ে নীল ভাইয়া বললেন। তারপর তিনি স্যালাইন প্রায় শেষের দিকে তাই খুলে দিলেন।

_ক্যানেল টাও খুলে দেন ভাইয়া। হাত নাড়াতে ব্যাথা পাচ্ছি আমি।
_নাহ, পিচ্চি খোলা যাবে না। রাতেও তোমায় ব্যাথার ইঞ্জেকশন পুশ কর‍তে হবে। তাই এটা আঁধার ভাইয়ের কাজ।আপাতত তুমি পানি খাও।ভাই বলেছিল তোমায় দিতে।তুমি কি ভাইয়ের উপর রেগে আছো নাকি?
_নাহ।
একথা বলে আমি পানি খেয়ে নিলাম। এবার একটু শান্তি লাগছে। চোখ বন্ধ করে মাথাটা এলিয়ে দিলাম আপুর কাধের উপর।

_তোমার এই অবস্থা দেখে আঁধার ভাইয়া দিশেহারা অবস্থায় ছিল, জানো।
রোজা আপুর কথায় আমি তার দিকে তাকালাম। সে আবার বলতে লাগলো
_ভাইয়াকে আমি এর আগে এতো অস্থির কখনো হতে দেখি নি। ভাইয়ার ডাকেই আমি আর আলো তোমাদের রুমে এসে দেখি তোমার মুখ রক্তাক্ত হয়ে আছে আর ভাইয়া তোমায় ডেকেই যাচ্ছা কিন্তু তোমার রেসপন্স নেই।সেই অবস্থায় তোমায় বেডে তোলে।

তোমায় কতো সুন্দর করে ড্রেসিং করে কপালে ব্যান্ডেজ করে দেয়।কিন্তু পরবর্তীতে খেয়াল করে তোমার পায়ে কাচ ঢুকে আছে। তখনই আমাকে আর আলোকে কি রামধমকটাই না দিল,, আমরা কেন বলিনি আগে। যে কিনা হার্ট সার্জেন,সপ্তাহে মিনিমাম দুটো অপারেশন সাকসেসফুলি কমপ্লিট করে অথচ তোমার পায়ের কাচের টুকরো বের করতে তার হাত কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছিলো।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২১

নীল কে মেডিসিন আনতে পাঠিয়ে তারপর থেকে যে তোমার পাশে বসে ছিলো আর রুম থেকে বের হয়নি। মামী বললো তিনি তোমার কাছে থাকবে ভাইয়াকে ফ্রেশ হয়ে খেতে যেতে। ভাইয়ার তো এক কথা তোমার জ্ঞান ফিরলে যাবে। এই আট ঘন্টা এখানেই তোমার পাশেই বসে ছিল।
আপুর কথা শুনে আমি অবাক হলাম। উনার এই ক্ষনে ক্ষনে রং পরিবতনের কারনটা আমার সত্যিই অজানা।আর কতো রুপ দেখাতে চান তিনি!হয়তো দায়িত্ববোধের বেড়াজালে করছেন এসব

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৩