অনুভূতির শীর্ষবিন্দু শেষ পর্ব 

অনুভূতির শীর্ষবিন্দু শেষ পর্ব 
written by Nurzahan Akter Allo

তিতিক্ষা যত্ন সহকারে নক্ষত্রের ট্রলিটা গুছিয়ে দিলো। এরপর একরাশ মন খারাপ নিয়ে নিচে চলে গেল। রাতে খাবারের সময় সবাই একসাথে খেতে বসেছে। তিতিক্ষা খেতে বসেছে ঠিকই, কিন্তু ওর গলা দিয়ে খাবার নামছে না। ওর চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষাকে বললো,
–“কি রে আম্মু, তুই কাঁদছিস কেন? মনটা কি বেশি খারাপ?”
তিতিক্ষা মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। কিন্তু ওর চোখ দিয়ে ঝরঝর করে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। মিঃ আবরার সহ সবাই তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে আছে। তিতিক্ষা মাথা নিচু করে আছে। নক্ষত্র পানি খেয়ে গ্লাসটা রেখে মুচকি হেসে বললো,
–“আমি দুই সপ্তাহের জন্য বাইরে যাচ্ছি। একথা শুনে এভাবে কাঁদছে।”

নক্ষত্রের আব্বু-আম্মু একেঅপরের দিকে তাকালো। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে হো হো করে হেসে দিলো। নক্ষত্রও মিটিমিটি হাসছে। তিতিক্ষা অসহায় মুখ করে চোখ ছলছল করে তাকালো৷ নক্ষত্রের আম্মু নক্ষত্রের পিঠে থাবড় দিয়ে তিতিক্ষাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“পাগলি মেয়ে, তুই ওই ফাজিলের কথা শুনে কাঁদছিস? তোরা দু’জনেই একসাথে যাচ্ছিস। ওই ফাজিলটা তোর সাথে মজা করছে।”
তিতিক্ষা একথা শুনে অবাক হয়ে মুখ তুলে তাকালো। তারমানে নক্ষত্র এতক্ষণ মজা নিলো।
ইস! কি লজ্জা, কি লজ্জা। মান-সন্মান সব শেষ! আব্বু-আম্মুর সামনে ওনাদের ছেলের জন্যই এতক্ষণ কাঁদছিল। ও যে বরপাগল একটা মেয়ে আবার প্রমান করলো। ইস! তিতিক্ষার এবার সত্যি খুব লজ্জা লাগছে। আব্বু-আম্মুর কাছে এভাবে ধরা পড়ে গেল। উনারাই বা কি ভাবছে কে জানে? তিতিক্ষা লজ্জাতে আর মাথা তুলে তাকাতে পারলো না। ওর গালদুটো লাল হয়ে গেছে। উনাদের সামনে আর বসে না থেকে তিতিক্ষা ওখান থেকে দৌড়ে পালালো। তা না হলে উনাদের সামনে থাকলে ও লজ্জাতেই মরে যাবে। তিতিক্ষার আম্মু হাসতে হাসতে বললো,
–“ওরে বরপাগলী মেয়ে, খাবারটা তো খেয়ে যা।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নক্ষত্রের আব্বু নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্রের চোখে মুখে ছড়িয়ে আছে একরাশ সুখের ঝলক। মুখের আছে মিটিমিটি হাসির রেখা। চোখের চাহনি বলে দিচ্ছে সে কতটা খুশি। মিঃ আবরার মনে মনে দোয়া করলেন যাতে ওরা সারাটা জীবন এমনই থাকে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে এভাবে লজ্জা দিতে চাইনি। শুধু দেখতে চেয়েছিলো ওর যাওয়ার কথা শুনে তিতিক্ষার ঠিক কি করে। কিন্তু সে
ওর বোকামির জন্য নিজেই লজ্জা পেলো। তবে একদিক থেকে ভালোই হলো, বাবা-মা জেনে নিলো ওর বউটা ওর জন্য কতটা ব্যাকুল হয়ে থাকে। তবে এখানে নক্ষত্রের লাভ হলো তিতিক্ষার লজ্জামাখা মুখটা দেখতে পেয়ে। তিতিক্ষা যাওয়ার পর নক্ষত্রের আব্বু-আম্মু নক্ষত্রকে পচালো। নক্ষত্র শুধু উনাদের কথা শুনে হাসছিলো। নক্ষত্র নিজে খেয়ে তিতিক্ষার জন্য খাবার নিয়ে উপরে চলে গেল। নক্ষত্রের আব্বু-আম্মুও ওর এই কাজে খুব খুশি হলো।
নক্ষত্র রুমে গিয়ে দেখলো তিতিক্ষা চুপ করে বসে আছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার সামনে বসে ওর মুখে সামনে খাবার তুলে ধরলো। তিতিক্ষা চুপটি করে খাচ্ছে। তিতিক্ষাকে চুপ করে থাকতে দেখে নক্ষত্র মুচকি হেসে বললো,
–“অভিমানিনী! আপনি কি আপনার ডাক নামের অর্থ টা জানেন?”
তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললো,

–“হুম! তিতিক্ষা নামের অর্থ আলো।”
নক্ষত্র পূর্ণ দৃষ্টিতে তিতিক্ষার দিকে তাকালো। তিতিক্ষা সাথে সাথে চোখটা সরিয়ে নিলো। নক্ষত্র মৃদু হেসে আদুরে কন্ঠে বললো,
–“তুমি আমার জীবনের অদ্ভুত এক আলো। যে আলো কখনোই শেষ হবার নয়। তুমি শুধুমাত্র আমার অনুভূতির শীর্ষবিন্দু হয়ে তোমার অনুভূতিগুলোর পূর্ণতা প্রয়াসের আলো।”
তিতিক্ষা মুচকি হাসলো। নক্ষত্র জানালো কালকে সকালে ওরা দু’জনে কোথাও একটা যাচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে বললো না। নক্ষত্র নিচে গিয়ে প্লেট রেখে হাত ধুয়ে উপরে আসলো। তিতিক্ষা উশখুশ করছে কিছু একটা বলার জন্য। সে না পারছে বলতে আর না পারছে চুপ থাকতে। নক্ষত্র তিতিক্ষার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের চুলে হাত ডুবালো। নক্ষত্র চোখ বন্ধ করে শান্ত কন্ঠে বললো,
–“ডেট কি ওভার নাকি সামনে?”
–“সামনে।”

তিতিক্ষা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ইস! এই ব্যাপারটা নক্ষত্র এত সহজে বুঝে যাবে এটা সে ভাবেনি। যাক তাও বাঁচা গেল। মুখ ফুটে ওর কিছু বলা লাগলো না। নক্ষত্র শুয়ে থেকেই তিতিক্ষার মুখটা ধরে চোখ চোখ রাখলো। তিতিক্ষা চোখ বন্ধ করে নিলো। ওর অবস্থা দেখে নক্ষত্র মুচকি হাসলো। নক্ষত্র বুঝলো তিতিক্ষা কেন এখন লজ্জা পাচ্ছে। এটা তো ন্যাচারাল। নক্ষত্রের মনে করে এটা লজ্জা পাওয়ার মত কোনো ব্যাপার না৷ বিশেষ করে হাজবেন্ডের কাছে তো নয়ই। তিতিক্ষা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নক্ষত্রকে বললো,
–“তুমি কি এখন ফার্মেসীতে যেতে পারবে?”
নক্ষত্র তিতিক্ষার কথার মানে বুঝে উঠে বসলো। নক্ষত্র আলাদা ভাবে কিছু বলে তিতিক্ষাকে লজ্জা দিতে চাচ্ছে না। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে বললো,
–“হুম পারবো। তুমি শুধু নামটা লিখে দাও। আমার খুব একটা ধারণা নেই এই ব্যাপারে।”
তিতিক্ষা উঠে একটা কাগজে নাম লিখে দিলো। নক্ষত্র রেডি হয়ে তিতিক্ষার থেকে কাগজের টুকরোটা নিলো। নক্ষত্র ওয়ালেটটা হাতে নিয়ে তিতিক্ষাকে সাবধানে থাকতে বলে দরজায় দিকে পা বাড়ালো। কিছু একটা ভেবে কাপজটা খুলে ন্যাপকিনের নামটা দেখে দরজার কাছে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে গেল। কাগজটাতে খুব সুন্দর করে লিখা,

( ******* sanitary Napkins)
নক্ষত্র পেছনে ঘুরে তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“নামটা এর আগে শুনেছি বলে মনে হচ্ছে না।
এটাই লাগবে? যদি এটা না পাই?”
তিতিক্ষা মাথা নিচু করে মৃদু স্বরে বললো,
–“আমি এটাই ব্যবহার করি। আমি এটাতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এটা চায়না প্রোডাক্ট। কোনো একটা ফলের রস দিয়ে এটা বানানো হয়। এটা ব্যবহারের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে ব্যাথা উপশম। এই স্যানিটারি ন্যাপকিনটা ব্যাথা যতটা সম্ভব কমাতে কিছু বিশেষ উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এটা আনলেই ভালো হয়।”
নক্ষত্র আর কথা বাড়ালো না। সে বুঝলো তার বউয়ের এটাই চাই। তাই এখন যেখান থেকে পারুক এটাই আনতে হবে। নক্ষত্রকে চুপ করে থাকতে দেখে তিতিক্ষা মৃদু স্বরে বললো,
–“সবার পছন্দ তো এক না। যে যেটাতে অভ্যাস্ত। ভাল নাকি মন্দ জানি না। তবে আমার এটাই পছন্দ। এটা সব দোকান/ফামের্সীতে পাবেন না। একটু খুঁজতে হতে পারে।”

নক্ষত্র আর কিছু বললো না। মুচকি হেসে রুম ত্যাগ করলো। তিতিক্ষা আর না দাঁড়িয়ে ওর ড্রেস বের করে গুছাতে লাগলো। তবে নক্ষত্রের একটা জিনিস ভালো লাগলো; অগ্রিম প্রস্তুুতি নিয়ে রাখার ব্যাপারটা। এটা অবশ্যই বুদ্ধিমতী মেয়ের কাজ। নক্ষত্র খুঁজে খুঁজে দশটা ভেনাসের প্যাক একেবারে এনেছে। তিতিক্ষাকে একটা প্যাক নিজের সাথে রাখতে বললো। আর বাকি গুলো তুলে রাখতে বললো।
পরেরদিন সকালে হালকা ব্রেকফাস্ট করে আম্মু-আব্বুর থেকে বিদায় নিয়ে ওরা বের হয়ে গেল। তিতিক্ষা এখনো জানে না আসলে ওরা ঠিক কোথায় যাচ্ছে। তবে নক্ষত্রের সাথে বের হতে পেরে মনটা খুব ভালো লাগছে। নক্ষত্র বাস ষ্ট্যান্ডে এসে টিকিট অনুযায়ী ওদের বাসে উঠে বসলো। তিতিক্ষা খুব খুশি; অনেকদিন পর বাস জার্নি করবে। একটু পর সাফওয়ান আর জেসিকা এসে বাসে উঠে বসলো। ওদের দেখে তিতিক্ষা হেসে হেসে ওদের সাথে কথা বললো। সাফওয়ান নক্ষত্রের থেকে তিন সিট পেছনে বসলো। নক্ষত্র ইচ্ছে করেই এভাবে টিকিট কেটেছে। যাতে ওদের জন্য তিতিক্ষা লজ্জা পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে না রাখে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে নিয়ে নিচে নামলো। ফুড ভিলেজে গিয়ে কিছু খাবার প্যাক করে নিলো। যা নিলো সব দুইটা করে দুই জায়গায় প্যাক করতে বললো। তিতিক্ষা আশে পাশে চোখ বুলাতে ব্যস্ত। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে নিচে বাসে উঠলো। একটা খাবারের ব্যাগ সাফওয়ানকে দিলো আর একটা নিজেদের কাছে রাখলো। বাসে ওঠার দুই মিনিট পরেই বাস ছাড়লো। লোকাল বাস না, এজন্য গ্যাদারিং নেই। তিতিক্ষা পড়েছে অরেঞ্জ কালার স্টাইলিশ কুর্তির সাথে ব্ল্যাক জিন্স, ব্ল্যাক নেক রেপ স্টাইলে ওড়না। চুল গুলোলো উঁচু করে ঝুঁটি করে রাখা। চোখে কাজল ঠোঁটে হালকা ভাবে চ্যাপস্টিক। তিতিক্ষা নক্ষত্রের দেওয়া সেই নোজ পিনটা পড়েছে। এসব মামনির বাসায় ছিলো। তনুকা তিতিক্ষাকে দেখতে এসে ওর প্রয়োজন জিনিস গুলোও দিয়ে গেছে। নক্ষত্র সাদা শার্টের সাথে ব্ল্যাক জিন্স পড়েছে। নক্ষত্র খেয়াল করছে, তিতিক্ষার নাকের নোজ পিনটাতে রোদ পড়াতে জ্বলজ্বল করছে। নোজপিনটা নক্ষত্র আকৃতি হওয়াতে তিতিক্ষার গোলাকৃতির মুখের সাথে খুব মানিয়েছে। মনে হচ্ছে নোজপিনটা ওর সৌন্দর্য এক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে মৃদু ভাবে বললো,

–“তুমি কি আমাকে ভদ্র থাকে দিবে না বলে পণ করেছো?”
তিতিক্ষা অবাক হওয়ার সুরে বললো,
–“আমি আবার কি করলাম?”
নক্ষত্র তিতিক্ষার নাকটাতে জমে থাকা মুক্তর দানার মতো বিন্দু বিন্দু জমে থাকা ঘামটা মুছে দিলো। এরপর তিতিক্ষার আর একটু কাছে গিয়ে আদুরে সুরে বললে,
–“তোমার ঘামার্ত নাকটা আমাকে ভদ্র থাকতে দিচ্ছে না। আমাকে চুম্বুকের মত খুব টানছে।”
তিতিক্ষা মুচকি হেসে জানালার দিকে তাকালো। এই ছেলেটা পারেও বটে। সাফওয়ান আর জেসিকা কিছু একটা নিয়ে ঝগড়া করছে। নক্ষত্র ওর এক কানে ইয়ার ফোন গুঁজে আরেকটা তিতিক্ষাকে দিলো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের এক কাঁধে মাথা রেখে কানে ইয়ার ফোন গুঁজে জানালার দিকে তাকালো। বেশ কয়েক ঘন্টা জার্নি করার পর সে বুঝলো যে ওরা এখন সাজেকের পথে যাচ্ছে। তিতিক্ষার খুশি যেন আর ধরে না।
প্রকৃতির সৌন্দর্যের মোহে সে বরাবরই নেশাগ্রস্ত। মনের প্রশান্তির জন্য এই ভ্রমণের বিকল্প আর অন্য কিছু হতেই পারে না। মাথার উপর মেঘের ভেলা আর পায়ের নিচে সবুজের চাদর বিছানো। তিতিক্ষা ছবিতে এসব অনেক দেখেছে। কিন্তু সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু এমন সুযোগ যে পাবে সে ভাবতেও পারেনি। তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে কৃতজ্ঞতাসূচক দৃষ্টি তাকালো। নক্ষত্র মুচকি হেসে বললো,
–“বলেছিলাম না, আমি বেঁচে থাকলে মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য্যের সাথে তোমাকে আবার সাক্ষাৎ করাবো!”

তিতিক্ষা মুচকি হাসলো। সিগ্ধ মুখটানে এসে জমা হয়ে অসীম খুশির আভা। পাহাড়ের পাশ ঘেঁষে যখন ওদের বাসটা শোঁ শোঁ করে দীঘিনালার দিকে এগিয়ে চলছে, তখন থেকেই ওরা প্রকৃতির অভ্যর্থনা বুঝতে পেরেছে। সাপের মতো আঁকাবাঁকা রাস্তাগুলো সাপের মতোই ভয়ংকর। একটু অসাবধানতা কিংবা দুর্ঘটনা মুহূর্তেই খাদে ফেলে চিরতরে ঘুম পারিয়ে দেবে। যেটা নিয়ে অনেকটা ওর মনে ভয় কাজ করছিল। তিতিক্ষা একবার সাফওয়ানের দিকে তাকালো। সাফওয়ান ঘুমাচ্ছে আর জেসিকা ওর কাঁধে মাথা রেখে প্রকৃতি দেখছে। নক্ষত্র আর তিতিক্ষা প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখছে আর হালকা কিছু না কিছু খাচ্ছে।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা নেমে সেখানে একটা হোটেলে গিয়ে চারজন আগে খেয়ে নিলো। একটা দোকান থেকে পানি কিনে চান্দের গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়িটাও একটু পরে সাজেকের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। ওরা বসেছিলো চান্দের গাড়ির পেছনের সিটে, ছাদের ওপরে। যে কারণে বাইরের প্রকৃতিটা পুরোপুরি চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল। নক্ষত্র ইচ্ছে করেই তিতিক্ষাকে নিয়ে এখানে বসেছে। সাফওয়ান আর জেসিকাও সাথে আছে। ওরা পিক তুলতে ব্যস্ত। নক্ষত্র প্রাইভেট ভাবে সব ব্যবস্থা করতে পারতো। কিন্তু নক্ষত্র চেয়েছে একদম স্বাভাবিক ভাবে তিতিক্ষাকে নিয়ে ঘুরে ফিরে সময় কাটাতে। পরিপাটি চলাফেরার জীবন থেকে মাঝে মাঝে অগোছালো চলাফেরা করলে মন্দ হয় না। বরং জীবনটাকে নিখুঁত ভাবে উপলব্ধি করা যায়।
নক্ষত্র শক্ত করে ধরে আছে তিতিক্ষার হাত। চারজনেই ডুবে আছে প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের অতলে। তিতিক্ষার চুল গুলো উড়ছে অবাধ্য হয়ে।

চারদিকে উঁচুনিচু পাহাড় আর সবুজ মিলে একটা মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারে। গাড়িটা কখনো সোজা ভাবে ধোঁয়া ছেড়ে ওপরের দিকে উঠছে, আবার কখনো খাড়াভাবে নিচের দিকে নেমে এক দম বন্ধকরা পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। উচু নিচু রাস্তায় উঠা-নামা করার সময় তিতিক্ষা ভয়ে চোখ বন্ধ করে শক্ত করে নক্ষত্রের শার্ট খামছে ধরছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। একটু পর চোখ খুলে আবার সামনে তাকাচ্ছে। দূরের উঁচু পাহাড়গুলো মনে হচ্ছিল যেন ওর কাছে চলে আসছে। আবার চোখ বড় বড় দেখে না সবটা ঠিক আছে। এমন একটা ভ্রম তৈরি হচ্ছে ওর চোখে। নক্ষত্র তিতিক্ষার কানে কানে বললো,
–“এমন মনোমুগ্ধকর চাহনি নিয়ে আমাকে দেখলেও তো পারো। আমি কিন্তু মোটেও রাগ করবো না।”
তিতিক্ষা নক্ষত্রের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরালো। কিছু একটা ভেবে নিজেই নক্ষত্রের আঙ্গুলের ভাজে আঙ্গুল রেখে মৃদু স্বরে বললো,
–“আমার বয়েই গেছে।”
তিতিক্ষার কথা শুনে নক্ষত্র হাসলো। সাফওয়ান জেসিকার দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে। কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছে। গাড়িটা অতি দ্রুত চলছে যার কারণে জিসিকার আইলেস উঠছে৷ সাফওয়ান আর ধৈর্য রাখতে পারলো না। সে আতংকিত কন্ঠে বললো,
–“জান, তোমার চোখের পাতা এভাবে নড়ে উঠে কেন? কতদিন বলেছি এসব কালি কুলি দিবা না। হলো তো এবার, চোখের পাতা খুলে যাচ্ছে, এখন কি হবে?”

সাফওয়ানের কথা শুনে জেসিকা দাঁত কড়মড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। নক্ষত্র আর তিতিক্ষা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে হাসছে। ওরা দু’ জন সাফওয়ানের কথা শুনে আরো হাসছে। জেসিকা অগ্নি দৃষ্টিতে সাফওয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“এটা এক্সটা আইলেস। চোখে খুব বাতাস লাগছে এজন্য এভাবে নড়ছে৷”
সাফওয়ান বুঝতে পেরে বোকা বোকা হাসি দিলো। সাফওয়ানের ভ্যাবলা হাসি দেখে তিতিক্ষা নক্ষত্রের কাঁধে মুখ লুকিয়ে হাসছে। তিতিক্ষার হাসি দেখে নক্ষত্রেও হাসি পাচ্ছে। নক্ষত্র শব্দ করে হাসতেও পারছে না বন্ধুর মান-সন্মানের কথা ভেবে। জেসিকা আর কথা না বাড়িয়ে চোখে সানগ্লাসটা পড়ে নিলো।
গাড়িটা একটু পর বিরতি নিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার হাত ধরে ওকে নিচে নামালো। জেসিকা আগে নেমে সাফওয়ানকে ধরে নামালো। চারজনে তাকিয়ে আছে দূরের পাহাড়গুলোর দিকে। ওরা যেন অসম্ভব সুন্দরের মোহে পড়েছে গেছে। একটু পরে ওখানকার স্থানীয় উপজাতি একটা বাচ্চা ওদের দিকে এগিয়ে আসলো। বাচ্চাটা হাসিমুখে হাত নাড়িয়ে উষ্ণ অভিবাদন জানাচ্ছিল ওদেকে। ওরাও হেসে বাচ্চাটার সাথে কথা বললো। বাচ্চাটার হাতে নিজেদের চাষ করা কমলা, আখ, পেঁপে, বাদাম আছে । প্রয়োজনের তাগিদে শেখা ভাঙা বাংলায় ডেকে ডেকে বলছে ‘দছ তাকা, বিছ তাকা, পচিছ তাকা।

নক্ষত্র ওর থেকে পেঁপে, কমলা, ভাজা বাদাম কিনে নিলো। নক্ষত্র বাচ্চাটাকে ওর বলা দামের চেয়ে একটু বেশিই দাম দিলো। উপজাতিরা দাম কম রাখে। সত্যি বলতে এখানকার ফল গুলো যেমন স্বাদের হয়। আমরা চড়া দামে জিনিস কিনি ঠিকই তবে ভেজাল যুক্ত। আর ওখানে ভেজাল মুক্ত জিনিসপাওয়া যায় সীমিত দামে। তিতিক্ষাসহ সবাই বাচ্চাটার সাথে ছবি তুলে নিলো। ওরা নিজেদের কাপল পিক তুললো। এরপর সবাই গাড়িতে গিয়ে বসলো। গাড়িতে বসেই ওরা খাবার গুলো খাচ্ছিলো। পেঁপেটা খেতে অসম্ভব মিষ্টি। সত্যিই এমন পেঁপে ওদের ওখানে পাওয়া যায় না। তিতিক্ষার পেঁপে পছন্দ না। শুধু নক্ষত্রের বলাতে সে টেস্ট করতে গিয়ে এখন লোভে পড়ে গেছে। এমন মিষ্টি পেঁপে তিতিক্ষা এর আগে কখনো খায়নি। সাফওয়ান তো হালুম হালুম করে খাচ্ছে৷ জেসিকা পেঁপে খেলো না লিপস্টিক নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে৷ তবে তিতিক্ষা খুব মজা করে খাচ্ছে ওর খুব ভালো লেগেছে। নক্ষত্র হাসলো তিতিক্ষার খাওয়া দেখে।

যথা সময়ে ওরা ওদের বুক করা রিসোর্টে পৌঁছে গেল। সাজেকের রিসোর্ট গুলো ভিন্ন ভিন্ন সাজে সজ্জিত করা। কোনোটা সম্পূর্ন বাঁশের তৈরী, কোনোটা কাঠ, আবার কোনোটা খড়ের তৈরী। সবগুলোই ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে ভিন্ন আকষর্ণীয় সৌন্দর্যের দাবিদার। নক্ষত্ররা বাঁশের তৈরী রিসোর্টে উঠেছে। আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে ওরা যে যার রুমে চলে গেল। সারাদিন জার্নি করে সবাই খুব ক্লান্ত। তিতিক্ষার কাছে তো সবটা স্বপ্ন মনে হচ্ছে। নক্ষত্র ওদের ট্রলি রেখে রুমের দরজা আটকে দিলো। তিতিক্ষার চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে। খুব সুন্দর করে মানানসই ভাবে রুমটা সাজানো। বেডশীর থেকে শুরু করে জানালার পর্দা গুলোও সাদা। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিলো। এরপর নিজেও ফ্রেশ হয়ে আসলো। আসার আগে ওদের রুমে খাবার দিতে বলেছিলো। এজন্য একজন এসে খাবারটা ওদের দিয়ে গেল। এত জার্নি করে আসার পর তিতিক্ষার খেতে ইচ্ছে করছে না। এজন্য চালাকি করে উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
–“আমার নিজে হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না৷ কেউ যদি একটু খাইয়ে দিতো।”
নক্ষত্র টাওয়াল দিয়ে ওর মাথা মুছতে মুছতে একবার তিতিক্ষার দিকে তাকালো। বারান্দায় টাওয়ালটা মেলে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

–“হুহ আমার বয়েই গেছে।”
তিতিক্ষা বুঝলো ওর কথা ওকেই ফিরিয়ে দিচ্ছে। তিতিক্ষা মনে মনে খুশি হয়ে ঝপাং করে শুয়ে পড়লো। তখনই নক্ষত্রের ফোনটা বেজে উঠলো। নক্ষত্র কিছুক্ষণ কথা বললো। নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষার সাথে কথা বলতে চাইলো। নক্ষত্র ফোনের স্পিকার অন করে তিতিক্ষাকে ইশারা করলো কথা বলতে।
–“হ্যা আম্মু। কেমন আছো? কি করছো? আব্বু কোথায়, বাসায় কি ফিরেছে?”
–“ওরে বাবা রে এতগুলো জবাব কিভাবে দিবো। আমরা ভাল আছি। তোর আব্বু কেবল ফিরলো; ফ্রেশ হচ্ছে। তা তোরা কেমন আছিস? খেয়েছিস?”
–“হুম ভাল আছি। খায়নি এখন খাবো।”
–“আম্মু আসার সময় আমাদের জন্য গেস্ট নিয়ে আনিস। আমি অপেক্ষায় রইলাম।”
–“আম্মু কোন গেস্ট? ”

–“যে গেস্ট আমার পুরো বাসাটা মাথার করে রাখবে। হাউকাউ, চেচাঁমেচি, অবদার, দুষ্টুমি দিয়ে বাসাটা মাতিয়ে রাখবে। যার অত্যাচারে তুই অতিষ্ঠ হয়ে আমার কাছে নালিশ করবি। যার দন্তহীন দাঁতে হেসে দেখে আমাদের কলিজা ঠান্ডা হয়ে যাবে। আমি সেই গেস্টের কথায় বলছি।”
তিতিক্ষা লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো। নক্ষত্র নিঃশব্দে হেসে যাচ্ছে। এই অসভ্য ছেলেটা দিন দিন কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে। নক্ষত্রের আম্মু ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কথায় বললো। তিতিক্ষা শুধু হু হ্যা করে উত্তর দিচ্ছে। কথা বলে তিতিক্ষা ফোনটা রেখে দিলো। নক্ষত্র এখনো মিটিমিটি হাসছে। তিতিক্ষা লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারছে না। দুই সপ্তাহ হলো নক্ষত্রের সাথে থাকে। তবুও ওদের সম্পর্কটা আগের মতই সীমাবদ্ধতায় আটকে রয়েছে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে ইচ্ছে করেই ওর কাছে টানে নি। কারণ ওদের উপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেল। এজন্য নক্ষত্রের মনে হয়েছে তিতিক্ষাকে একটু সময় দেওয়া প্রয়োজন। বউ তো ওরই, কোথাও তো পালিয়ে যাচ্ছে না। আর তখন জোর করলেও তিতিক্ষার মনেও ওর প্রতি নেগেটিভ চিন্তা আসতে পারতো। নক্ষত্রের কোন তাড়াহুড়ো নেই। কারণ তাড়াহুড়োর কাজ কখনোই সুমিষ্ট হয় না।
নক্ষত্র কথা ঘুরানোর জন্য তিতিক্ষার মুখে খাবার তুলে দিয়ে মুচকি হেসে বললো,
–“আমার বেড রুমটা পরিপূর্ণ ভাবে সাজানোর কাজটা অবশেষে সমাপ্ত হলো।”
তিতিক্ষা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্রের কথা মানে তিতিক্ষা বুঝতে পারেনি। তাই নক্ষত্র নিজে থেকেই বললো,
–“একটা ছেলের রুম বউ ছাড়া কখনোই পরিপূর্ণ সাজে সজ্জিত হয় না। তোমার আগমনে আমার রুমটা নয় বরং আমি নিজেও পরিপূর্ণ হয়ে গেছি।”

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু ??
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_32 (last part)

তিতিক্ষা হাসলো নক্ষত্রের কথা শুনে। নক্ষত্র তখন দুষ্টু হেসে তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“তোমার আগমনে আমি পরিপূর্ণ হয়েছি৷ এবার আমাদের ভালবাসার অংশ হয়ে ছোট একটা প্রিন্স/ প্রিন্সেস আসবে। বেবিদের আগমনে তখন আমাদের পুরো বাসাটা পরিপূর্ণ করবে।”
তিতিক্ষা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে হাসলো৷ নক্ষত্র নিজেও খাচ্ছে তিতিক্ষাকেও খাইয়ে দিচ্ছে। দু’জন খেয়ে বেলকণিতে গেল। ওখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করলো। আজকে সারাদিন অনেক জার্নি করেছে। এজন্য আর রাত জাগলো না। দ্রুত ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।

পরেরদিন ভোর পাঁচটার দিকে নক্ষত্র তিতিক্ষাকে নিয়ে রিসোর্ট থেকে বের হলো মেঘ আর সূর্যোদয় দেখার উদ্দেশ্যে। দু’জনে মিলে হ্যালিপ্যাডের দিকে পদযাত্রা শুরু করলো। সকাল বেলা একটু শীত শীত লাগছে। পাতলা চাদরে শরীর জড়িয়ে আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল রেখে দু’জনে হাটছে। কারো মুখে কোন কথা নেই। শুধু একে অপরের সাথে পথচলাটাকে গভীর ভাবে উপভোগ করছে। কোন রকম নোংরামি ছাড়াই চলছে ওদের মাঝে একট টুকরো অনুভূতি আদান-প্রদানের অদৃশ্য এক খেলা।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর দেখা যায়, ওই দূর পাহাড়ের পেছন থেকে সূর্যের রক্তিম লালচে আভা থেকে আস্তে আস্তে আলো ছড়াচ্ছে। পাহাড় আর গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে ধীরে ধীরে সূর্যের মাথা উঁকি দিচ্ছে। দু’জনে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে সূর্যোদয় উপভোগ করছে। যদিও সূর্য প্রতিদিন ওঠে এবং সেটা আমাদের চোখে প্রায়ই পড়ে। কিন্তু এখানকার সূর্যোদয় অন্য রকম। এখানকার সূর্যোদয় এক সৌন্দর্যের মনোরম দৃশ্যের সৃষ্টি করে। যা অন্য সব সূর্যাস্তের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অন্যদিকে স্পষ্টভাবে মেঘেদের ভেলা দেখা যাচ্ছিল। তুলার মতন সাদা মেঘগুলো ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে। এটা অপরূপ এক দৃশ্য। যেটা ভাষায় প্রকাশ করাটা অসম্ভব।

পাহাড়ের উপর এসে তিতিক্ষা নক্ষত্রের বুকে মাথা এমন সৌন্দর্য উপভোগ করছে। নক্ষত্র পেছনে থেকে তিতিক্ষাকে জড়িয়ে ধরে আছে। তিতিক্ষা মাঝে মাঝে হাত দিয়ে মেঘ ছুয়ে দিচ্ছে। মেঘগুলো তখন ওর হাতের সাথে বারি খেয়ে পানি হয়ে যাচ্ছে। তিতিক্ষার মুখে তখন হাসি ফুটছে। পাহাড়ের উপর এসে এত অপরুপ সৌন্দর্য দেখে খুশিতে ওর চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে ঘুরে নক্ষত্রকে জড়িয়ে ধরলো। এত কাছে থেকে এসব দেখে ওর শরীর খুব কাঁপছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার চোখ মুছে ওর দুই গালে হাত রেখে আদুরে কন্ঠে বললো,
–“এই অশ্রুফোঁটা শুধু আমার জন্য ঝড়বে। তোমার চোখের প্রতিটা অশ্রুুকণা আমার নামে লিখিত থাকবে। এছাড়া অন্য কোন কারণে তোমার চোখে অশ্রু দেখাটা আমার সহ্য হবে না।”
নক্ষত্র তিতিক্ষার অশ্রুভেজা দু’চোখে আদর দিলো। তিতিক্ষা সরাসরি নক্ষত্রের চোখের দিকে তাকালো। প্রতিবারের মতো তিতিক্ষা হার মেনে ওর চোখ সরিয়ে নিলো। নক্ষত্রের এই চোখ দুটি মারাত্মক ভাবে মাদকাসক্ত। তিতিক্ষা নক্ষত্রের চোখের চাহনিতে এক ধরণের নেশাক্ত কিছু খুঁজে পায়। যে নেশার মাঝে তিতিক্ষা অনায়াসে অতলে ডুবে যাবে। তিতিক্ষার দ্রুত চোখ সরিয়ে নেওয়া দেখে নক্ষত্র মুচকি হাসলো। আজকেও তিতিক্ষা হেরে গেল। তবে মাঝে মাঝে হেরে যাওয়ার মাঝে রয়েছে অসীম সুখানুভূতি। তিতিক্ষাও শত’বার নক্ষত্রের চাহনির কাছে নিজেকে হার মানতে সর্বদা প্রস্তুত।

হঠাৎ করে নক্ষত্র তিতিক্ষার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। তিতিক্ষা অবাক হয়ে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে আছে। নক্ষত্র মুচকি হেসে তিতিক্ষার সামনে বুনো গাছের লতা আর বুনো ফুল দিয়ে তৈরীকৃত রিং এগিয়ে দিয়ে বললো,
–“মনোপ্যাথি! তুমি আমার সব অনুভূতির শীর্ষবিন্দু। তোমার প্রতি আমি মারাত্মক ভাবে আসক্ত। তুমি কি আমার মনের ব্যাধি সারানোর জন্য সর্বদা মনোপ্যাথি হয়ে আমার সাথে থাকবে? আমার শেষ নিঃশ্বাস অবধি তোমার সাথে পথচলার সুযোগ দিবে? আমার অনুভূতি দিয়ে তোমার অনুভূতিকে স্পর্শ করার অনুমতি দিবে? তোমার ঘামার্ত নাক, লজ্জারাঙ্গা মুখশ্রীটা দেখে আমি শত শত বার নেশাগ্রস্ত হতে চাই। তোমার চুলের মাদকাতায় নিজেকে হারাতে চাই। তোমার অর্ধভেজা মুখশ্রী, মায়াবী চোখ, নজরকাড়া চুলের খোঁপা, তোমার হাসিতে আমি পরিপূর্ণভাবে নিজেকে বিলীন করতে চাই। তুমি নামক মায়াজালে আমি পুরোপুরি ভাবে ডুবে যেতে চাই। ওহে! আমার মনের মন্দিরের মনোহরণী, তোমার অনুভূতির শীর্ষবিন্দুটা শুধুমাত্র আমার নামে খোদাই করতে চাই। পাবো কি সেই সুযোগ? হবে কি আমার সেই সৌভাগ্য?”

তিতিক্ষা ছলছল চোখে নক্ষত্রের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। নক্ষত্র মুচকি হেসে তিতিক্ষার আঙ্গুলে বুনো ফুলের রিং পড়িয়ে দিলো। মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, প্রকৃতিক দান লতার তৈরী বুনোর ফুলের রিং আর নক্ষত্রের বলা প্রতিটা শব্দ তিতিক্ষার মন কেড়েছে। নক্ষত্র অতি যত্ন সহকারে ভালবাসা মিশ্রিত করে ওর জন্য রিং টা বানিয়েছে। তিতিক্ষা নক্ষত্রের হাত ধরে ওকে উঠালো। এই আকাশ, বাতাস, মেঘ, এক কথায় প্রকৃতিকে সাক্ষী রেখে নক্ষত্রের প্রতিটা আবদার তিতিক্ষা সাদরে গ্রহন করলো। তবে মুখে কিছু বলতে পারলো না। খুশিতে চোখ থেকে ঝরঝর করে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। নক্ষত্রের এত আদুরে কথা গুলো শুনে ওর শরীরে কম্পণ সৃষ্টি করেছে। কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু কথা গুলো যেন গলাতে এসে জমা হয়ে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।

তিতিক্ষা নক্ষত্রের কাছে গিয়ে নক্ষত্রের পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ালো। দুই হাত নক্ষত্রের কাঁধে রেখে কম্পিত ঠোঁটে নক্ষত্রের কপালে আদর দিলো। নক্ষত্র ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলো। এই প্রথম তিতিক্ষা নক্ষত্রের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। তিতিক্ষা এমন ভাবে যে ওর ভালবাসায় মুড়ানো অনুভূতি গুলো গ্রহন করবে, এটা নক্ষত্র নিজেও ভাবেনি। তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে অনেকটা সাহস নিয়ে কম্পিত কন্ঠে বললো,
–“আমি পুরোপুরিটাই শুধু তোমার। নাহিয়ান তুমি শুধু আমার অর্ধাঙ্গ। তুমি আমার শরীরের একটা অংশ হয়ে আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছো। অনেক আগেই তোমার নামটা আমার অনুভূতির শীর্ষবিন্দুর নামে খোদাই করার কাজ সমাপ্ত হয়েছে। তোমাকে পেয়ে আমার অনুভূতিরা স্বার্থক।”
নক্ষত্র ওর মনোপ্যাথিকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো।
দু’জনে আর কিছুক্ষণ ওখানে থেকে ওরা রিসোর্টের দিকে পা বাড়ালো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের হাত ধরে হাঁটছে। ওদের মুখে লেগে আছে অজস্র সুখের চিহ্ন। দু’জনকে দেখলে মনে হবে ওরা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দম্পত্তি। দু’জনে গল্প করতে করতে রিসোর্টে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষা, সাফওয়ান আর জেসিকাকে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে গেল। চারজন মিলে একসাথেই বসলো। সাফওয়ান উঠার ভয়ে আগেই নক্ষত্রকে বললো,

–“ভাই তারাতাড়ি কিছু অর্ডার কর। আমর খুব ক্ষুধা লেগেছে। উহ্ বাবারে! আমি ক্ষুধাতে নড়তে পারছি না।”
নক্ষত্র সাফওয়ানের চালাকি বুঝতে পারলো। তাই কথা না বাড়িয়ে নিজেই উঠে অর্ডার দিয়ে আসলো। জেসিকা মুখ ভেংচি দিলো। সাফওয়ান ওর দিকে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিলো। জেসিকা লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে তাকালো। তিতিক্ষা ওদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে মিটিমিটি হাসছে। ওরা খাওয়া-দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে পুরো রিসোর্টটা ঘুরে দেখলো। এরপর চারজনে মিলে আশে-পাশে ঘুরতে বের হলো।
তিতিক্ষা হাঁটতে হাঁটতে নক্ষত্রের আব্বু-আম্মুর সাথে কথা বলে নিলো। তখনই তনুকা তিতিক্ষাকে ফোন দিলো। তনুকা আর রায়হান থাইল্যান্ড যাচ্ছে। ওখানে ১ বছরের মতো যাচ্ছে। তনুকা তিতিক্ষাকে সাবধানে থাকলে বলো। তনুকা আর রায়হান নক্ষত্রেও সাথে কথা বললো। তিতিক্ষা তনুকার থেকে মামনির খোঁজ খবর নিলো। নক্ষত্র আর তিতিক্ষা পাশাপাশি হাঁটছে, সাফওয়ান আর জেসিকা আছে ওদের সামনে।
নক্ষত্র তিতিক্ষার বুটিক শপটা নিয়ে কথা তুললো। নক্ষত্র জানে তিতিক্ষার ওর ছোট বুটিক শপটা আরো বড় করার পরিকল্পনা আছে। কিভাবে কি করবে? এসব নিয়েই ওরা কথা বলছিলো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের বাসায় আসার পরেরদিন রাতেই নক্ষত্র তিতিক্ষার হাতে দশ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিলো। এই দশ লাখ টাকা ছিলো ওদের দেনমোহরের। দশ লাখ টাকা ধার্য করারও কারণ আছে৷ তিতিক্ষার দিকে আঙ্গুল তুলে যাতে কেউ বলতে না পারে যে, একা বিয়ে করেছে বলে দেনমোহর কম হয়েছে। এজন্য কবুল বলার আগে নক্ষত্র দশ লাখ টাকা দেনমোহর বেঁধেছিলো। এতগুলো টাকা তিতিক্ষা নিতে চাচ্ছে না। এজন্য নক্ষত্র তিতিক্ষার বুটিক শপটা আরো বড় করার বুদ্ধি দিলো। নক্ষত্র ওকে সর্বদা সাপোর্ট করবে বলে আশ্বাস দিলো। নক্ষত্র এসব ভাল বুঝবে তাই তিতিক্ষা রাজি হলো।

যেখানে বুটিক শপটা ছিলো, ওখানেই করা হবে। নক্ষত্র যত দ্রুত সম্ভব কাজ করবে সিদ্ধান্ত নিলো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে দাঁড়ালো। সে কিছু বলার আগেই নক্ষত্র শান্ত কন্ঠে বললো,
–“দেনমোহরের টাকা দিয়ে তোমাকে আমি কিনে নেইনি। এটা তো শুধু একটা রীতি। আমি আমার সবটুকু অনুভূতি দিয়ে মন থেকে তোমাকে আমার অর্ধাঙ্গিনী করেছি।”
তিতিক্ষা নক্ষত্রের এই কথা শুনে বললো,
–“সবই বুঝলাম। তবে দেনমোহর হিসেবে এত টাকা ধার্য করছিলে কেন?”
তিতিক্ষার কথা শুনে নক্ষত্র মুচকি হেসে বলেছিলো,
–“কাউকে কিছু দিতে চাইলে দুই হাত ভরেই দিতে হয়। পরবর্তীতে যেন সে স্বাবলম্বী হয়ে নিজে কিছু একটা করতে পারে। যদিও বা এটা আমার নিজস্ব মতামত। আমি চাই তুমি নিজে স্বাবলম্বী হও। আর বুটিক শপের মাধ্যমে অন্যকেও কিছু করার সুযোগ প্রদান করো।”
তিতিক্ষা আর কিছু বললো না। আইডিয়াটা মোটেও খারাপ না। আর বুটিক শপটা বড় হলে অনেক মেয়েরা এখানে নিযুক্ত হবে। ওই মেয়ে গুলোও কিছু করতে পারবে। নক্ষত্রের এমন মনোভাব দেখে তিতিক্ষা মন থেকে নক্ষত্রের জন্য দোয়া করলো। যাতে নক্ষত্রের চিন্তা ধারা সব সময় এমন পবিত্রই থাকে। তিতিক্ষার মনে নক্ষত্রের প্রতি দিন দিন সন্মান আর ভালবাসা দুটোই বেড়ে চলেছে; শুধু মাত্র নক্ষত্রের চিন্তা-ধারা আর ওর পার্সোনালিটির জন্য। চারজনে সারাদিনে আশে-পাশের জায়গাগুলো ঘুরে ঘুরে দেখলো। পাহাড়িদের থেকে টুকটাক জিনিস কিনলো, খাওয়া-দাওয়া, মজা করে সন্ধ্যার দিকে ওরা রিসোর্টে ফিরলো।

ওইদিকে বিভা মার খেয়ে মুখ থুবকে মেঝেতে পড়ে আছে। হেলাল নামের একজন টিচারকে সে পছন্দ করে। সে টিচার অনেক করে বিভাকে বুঝিয়েছে। কিন্তু বিভা বুঝতে নারাজ। বরং বিভা হেলালকে থ্রেট দিয়ে বলেছে ওকে না গ্রহন করলে সে সুইসাইড করবে। আর সুইসাইড নোটে হেলালের নাম উল্লেখ করবে। একথা শুনে হেলাল আর রিস্ক নেয়নি। সে নিজে বিভাদের বাসায় এসে মামনিকে সবটা জানিয়ে গেছে। এসব শুনে মামনি বিভাকে আচ্ছা মতো মেরেছে। মার খেয়েই সে আধমরা হয়ে রুমের এক কোণে পড়ে আছে।
তিতিক্ষার আব্বু-আম্মু এখনো তিতিক্ষার সাথে কথা বলে না৷ তবুও তিতিক্ষা আননোন নাম্বার দিয়ে দু’জনকেই ফোন দেয়। শুধুমাত্র উনাদের কন্ঠ শোনার জন্য৷ উনারাও বুঝতে পারে এটা তিতিক্ষা। তাও উনারা ধরা দেয় না। হ্যালো হ্যালো করে ফোনটা কেটে দেয়। এমন ভাব করে যেন উনারা কিছু বুঝতেই পারে না। মেয়ের কাছে কিছুতেই উনারা ধরা দিবে না। একমাত্র মেয়েকে ছাড়া থাকতে উনাদেরও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু উনারা সেটা কিছুতেই স্বীকার করবে না৷ ভাঙলে ভাঙবে, তবুও তাঁরা মচকাবে না।

জীবন বহমান স্রোতের মতো। একদিন হয়তো সবার মনের অন্ধকার কেটে গিয়ে আলোর দেখা পাবে। নক্ষত্রের আম্মু এখনও অদ্রির উপরে রেগে আছে। কোন এক মুহূর্তে উনিও হয়তো অদ্রিকে কাছে টেনে নিবে। মামনি, তিতিক্ষার আব্বু-আম্মুও একদিন তিতিক্ষাকে মেনে নিব। ভাইবোনদের সম্পর্ক গুলো আগের মত খুনশুটিময় হয়ে যাবে। মামনি অদ্রির বাবুকে দেখলে হয়তো উনার অভিমানের পাহাড় গলবে। সাফওয়ান, রুহান, আফান, নক্ষত্র ওদের বন্ধত্ব আরো গাঢ় হবে। কোন একদিন হয়তো দুই পরিবারের সম্পর্ক কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হবে। আল্লাহ ভরসা! একদিন সব মনমালিন্যের অবসাদ ঘটে সবটা আগের মতো হবে। হোক বা না হোক, আশা রাখতে সমস্যা কি!
নক্ষত্র শাওয়ার নিয়ে বের হলো। তিতিক্ষার ড্রেস ওয়াশরুমে রেখে তিতিক্ষাকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললো। তিতিক্ষা বেড থেকে উঠে চুলের কাটা খুলে ওয়াশরুমে চলে গেল। শাওয়ার শেষে সে পড়লো আরেক বিপদে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে অন্য ধরনের ড্রেস দিয়ে গেছে। পাহাড়ি মেয়েদেরা যে থামি পড়ে সেই থামি। ব্ল্যাক এ্যান্ড পিংক কালারের সংমিশ্রণে তৈরী। থামিটা দেখতে খুব সুন্দর। ৩০ মিনিট পেরিয়ে ৪০ মিনিট হয়ে গেছে। তবুও তিতিক্ষার বের হওয়ায় নাম নাই। নক্ষত্রের ডাকাডাকিতে তিতিক্ষা থামি পড়েই বের হলো। নক্ষত্র বেতের সোফাতে বসে তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। তিতিক্ষা হাঁটতেও পারছে না।

ওর মনে হচ্ছে পায়ে সাথে পা বেধে দুম করে পড়বে। আস্তে আস্তে হেঁটে ভেজা চুল ভাল করে মুছে, কাপড় গুলো বেলকনিতে মেলে দিলো। তিতিক্ষা আড়চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে আর না দাঁড়িয়ে
ব্ল্যাঙ্কেটের ভেতর ঢুকে চোখ মুখ ডেকে নিলো।
২০ মিনিট পর নক্ষত্র এসে তিতিক্ষাকে উঠে বসালো। তিতিক্ষা মাথা নিচু করে আছে। লজ্জায় লালবর্ণ ধারণ করেছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার খুব কাছে গিয়ে মিটিমিটি হাসতে হাসতে আদুরে কন্ঠে বললো,
–“থামিটা দেখে মনে হলো এটা পড়লে তোমাকে ভাল লাগবে। কিন্তু এখন বুঝছি, শুধু ভাল না অসম্ভব ভালো লাগছে।”
তিতিক্ষা চুপ করে আছে৷ নক্ষত্র দুষ্ট হেসে তিতিক্ষার কানের কাছে স্লো ভয়েজে বললো,
–“টমেটো বউ তুমি কি লজ্জা পাচ্ছ? এমন ভাবে লজ্জা পেও না। তা নাহলে আমি তোমাকে টমেটো ভেবে টুপ করে খেয়ে নিতে পারি।”
তিতিক্ষাকে লজ্জারা এসে যেন পুরোপুরি ভাবে গ্রাস করেছে। ওর মনে হচ্ছে মাটিটা গর্ত করে ঢুকে যেতে। ইস! এই ছেলেটা আবারও উঠে পড়ে লেগেছে ওকে লজ্জা দেওয়ার জন্য। তিতিক্ষার বুকের ভেতর ওর হৃদস্পন্দনটা দ্রুত গতিতে দৌড়াচ্ছে। গাল দুটো গরম হয়ে মনে হচ্ছে কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। লজ্জায় নতজানু হয়ে নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার দুই গালে হাত রেখে মাদকাসক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আদুরে কন্ঠে বললো,

–“লাজুক লতা আজকে আমরা দু’জনে নিষিদ্ধ অনুভূতিতে ডুবতে চাই।”
তিতিক্ষা চুপ করে করে আছে। ওর পুরো শরীর কাঁপছে। কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। নক্ষত্রের ভয়েজে তিতিক্ষার সবটা গুলিয়ে যাচ্ছে। নাক, কপাল, থুতনিতে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে৷ নক্ষত্র আবারও বললো,
–“ওহে মায়াবতী তোমাতে বিলীন করতে চাই। আজকে পরিপূর্ণ ভাবে তোমার হতে চাই।”
তিতিক্ষা বসে থাকার আর শক্তি পাচ্ছে না। নক্ষত্রের বলা এক একটা উক্তি তিতিক্ষার হৃদস্পন্দনে সর্বনাশা কম্পনটাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিতিক্ষাকে গভীরভাবে স্পর্শ না করেও, শুধু কথা দিয়ে ঘায়েল করার টেকনিকটা নক্ষত্র খুব ভাল ভাবে আয়ত্ত করে নিয়েছে। আজকে নক্ষত্রের বলা এক এক উক্তি তিতিক্ষার বাক শক্তিকে গ্রোগ্রাসে গিলে খাচ্ছে। এজন্য হয়তো তিতিক্ষা কিছু বলার জন্য কোন বাক্য খুঁজে পাচ্ছেনা৷ নক্ষত্র আবারও বলে উঠলো,

অনুভূতির শীর্ষবিন্দু পর্ব ২২৮+২৯+৩০

–“মনোপ্যাথি আমি পুরোটাই তোমার হতে চাই। শুধু মাত্র আমাদের অনুভূতির শীর্ষবিন্দুর প্রত্যাশা পূরণের আশায়।
তিতিক্ষা আর পারছে না নক্ষত্রের এমন আদুরে কথার অত্যাচার সহ্য করতে। সে মুখ ফুটে না পারছে নক্ষত্রকে আবদারে সামিল হতে, আর না পারছে ওকে দূরে সরাতে। এত চেষ্টা করেও তিতিক্ষা কোন পন্থা অবলম্বন করতে সক্ষম হলো না। নক্ষত্র ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে তিতিক্ষার মুখ পানে চেয়ে আছে৷ তিতিক্ষা একবার চোখ তুলে তাকিয়ে দুই হাত দিয়ে ওর মুখ ঢেকে নিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার কান্ড দেখে মুচকি হেসে তিতিক্ষাকে ওর বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো। নক্ষত্রও যেন ওয়াদা করেছে, সে আজকে তিতিক্ষাকে লজ্জার চুড়ান্ত সীমানায় গিয়ে দাঁড় করিয়েই ছাড়বে। এজন্য সে আবারও দুষ্টু হেসে তিতিক্ষার কানে কানে বললো,
–“ইস! এত লজ্জা পেলে হবে? তোমার বরের পেট টানটান আছে কি না সেটা তো তোমাকে পরখ করতে নিতে হবে। তুমি চাইলে এখনই চেক করে নিতে পারো। আমি কিন্তু একদম প্রস্তুত।”

তিতিক্ষা দুই হাতে মুখ ঢেকে মৃদুসুরে কম্পিত কণ্ঠে বললো,
–“আপনি দুষ্টু! মারাত্মক দুষ্ট! যে দুষ্টুর কোন সীমা নেই। পঁচা ছেলে একটা।”
একথা বলে তিতিক্ষা নক্ষত্রের টিশার্ট খামছে ধরে নক্ষত্রের বুকেই মুখে লুকালো। নক্ষত্র ওর মনোপ্যাথির কথা শুনে হাসতে হাসতে ওকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলো। অবশেষে জয় হলো ওদের পবিত্র বন্ধনের। আজকে পূর্ণতা পেলে ওদের সব অনুভূতির। আর এখানে সমাপ্ত হলো ওদের একে অপরের অনুভূতির শীর্ষবিন্দু হয়ে ওঠার গল্প। আর সাথে নতুন করে উদ্ভব হলো,
–“ভাগ্য + পবিত্রভাবে চাওয়া + প্রিয়মানুষটা + বিশ্বাস
=অনুভূতির শীর্ষবিন্দু।”??

( লেখাঃনূরজাহান আক্তার (আলো)) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এই গল্পের সিজন ২ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন