অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ১৩

অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ১৩
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
রাত দশটা বাজে। বাইরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। অগ্রহায়ণ শেষ হতেই শীত এসে জাপটে ধরবে প্রকৃতিকে। এখনকার এই টুকরো টুকরো বর্ষণ দিয়েই প্রকৃতি নিজেকে শীতল করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। বেশ তাড়াহুড়ো করে নিজের পুরোনো টিনের চালা দেওয়া ঘরটায় এসে ঢুকলো তপু। অনেকটা ভিজে গেছে।
 বাইরের ঠান্ডা ছোট ছোট বৃষ্টির ফোঁটা তীরের মতো বিঁধছিলো শরীরে। ঘরে ঢুকে তপু একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। মনটা বেশ ফুরফুরে আজ তার। বাকি তিনজন যে কাজটা করতে পারেনি সেই কাজটা সে করে দেখিয়েছে। সোলার সিস্টেম গ্রুপের নেক্সট প্রজেক্টের ইনফরমেশন এখন ওর কাছে। কাল সকালের মধ্যেই ঢাকা ছাড়তে হবে ওকে। এরপর কেউ ওর টিকিটাও খুঁজে পাবেনা। ভাগ্যিস কাল রুদ্রকে অনুসরণ করেছিল!
না হলে এতক্ষণে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করতে হতো ওকে। রুদ্র যখন কালকে ফোনে তার দলের লোককে বলছিল যে তার সাথে যেতে অনিহা দেখাবে তাকেই পাঠাতে, তখনই তপু বুঝে ফেলেছিল যে রুদ্র কী করতে যাচ্ছে। তাই তাকে আর আক্কাসকে যখন বলা হল রুদ্রর সাথে যাওয়ার কথা তখন ইচ্ছাকৃত ভাবেই তপু যাওয়ার জন্যে ভীষণ আগ্রহ দেখাচ্ছিল। তাই রুদ্রর কথামতো লোকটা আক্কাসকেই পাঠালো। আর তপুর পরিকল্পনা সফল হল। এতক্ষণে নিশ্চয়ই আক্কাসকে খুন করে নিজেদের বিপদমুক্ত ভেবে নিশ্চিন্ত আছে রুদ্র। মনে মনে ভীষণ হাসি পেল তপুর। নিজেকে ভীষণ বুদ্ধিমান বলে মনে হল তার। রুদ্র আমেরকে বোকা বানিয়েছে। সেটা কী কম কথা? গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে ঘরের লাইটটা জ্বালিয়ে পেছনে বিছানার দিকে তাকাতেই চমকে উঠল। হৃদয় স্পন্দিত হতে ভুলে গেল কয়েক সেকেন্ডের জন্য। শরীর জমে গেল একদম। রুদ্র!
রুদ্র বেশ আরাম করে বসে আছে তপুর শক্ত বিছানাটার ওপর। নিশ্চিন্ত মনে সিগারেট টানছে বসে বসে। কথা বলতেই ভুলে গেল সন্ত্রাসী তপু। তপুকে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঠোঁটের ফাঁক থেকে সিগারেটটা নামিয়ে হাসল রুদ্র। ভ্রু নাচিয়ে বলল, ‘ এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? প্রথমবার এলাম তোর বাড়িতে। আপ্যায়ন করবি না।’
ঠান্ডা শীতল পরিবেশে এবার দরদর করে ঘামতে আরম্ভ করল তপু। সে খুব ভালো করেই বুঝে গেছে এতোরাতে রুদ্র এখানে আপ্যায়ন নিতে আসেনি। ধরা পড়ে গেছে সে। মৃত্যু নিশ্চিত। শুকনো গলায় তোঁতলানো কন্ঠে বলল, ‘রুদ্র ভাই আমি_’
এটুকু বলেই পেছন থেকে এম 1911 পিস্তলটা বের করে রুদ্রর দিকে তাক করে ট্রিগার চেপে দিল দ্রুত। ‘ক্লিক’ করে একটা শব্দ হল কেবল, কোন গুলি বের হল না। রুদ্র হেসে ফেলল। শ্বাস আটকে এলো তপুর। পালানোর উদ্দেশ্যে দৌড় দিল। কিন্তু পায়ে একটা ভারী ইটের আঘাতে মুখ থুবড়ে পড়ল নিচে। ব্যাথায় মৃদু আর্তনাদ বেরিয়ে এলো তার মুখ দিয়ে। রুদ্র বাঁকা হেসে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে এগিয়ে গেল তপুর দিকে। তপুর সামনে ডান হাঁটু ভেঙ্গে বসে বলল, ‘পালাচ্ছিস কেন? গুলি করে আপ্যায়ন করছিলি আমাকে? রাশেদ বাবার দলের লোক হয়ে আপ্যায়ন করতেও শিখিস নি? ব্যপারটা ভয়ানক অন্যায়।’
ইটটা রুদ্রই মেরেছে। খাটের পায়াটা উঁচু করার জন্যে কয়েকটা ইট এনেছিল তপু। চারটা ইট কাজে লাগিয়ে বাকি তিনটে রেখে দিয়েছিল খাটের নিচে। কে জানতো তাকে আঘাত করার জন্যই এগুলো একদিন ব্যবহার করা হবে? জানলে কী তপু ভুল করেও ইটগুলো এখানে রাখতো? কিন্তু এখন আর এসব ভাবলে চলবে না। ক্ষমা চেয়ে যে রুদ্রর হাত থেকে বাঁচা সম্ভব হবেনা সেটা তপুর চেয়ে ভালো আর কেউ জানেনা। তার জন্যে ব্যপারটা ‘ডু অর ডাই’ এর পর্যায়ে চলে গেছে। প্রাণ বাঁচাতে তপু এবার ভয়ানক সাহসের পরিচয় দিয়ে ফেলল।
শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে ঘুষি বসিয়ে দিল রুদ্রর তলপেটে। বসা থেকে আধশোয়া হয়ে পড়ল রুদ্র। মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো মৃদু আর্তনাদ ধ্বনি। হঠাৎ এরকম আক্রমণ আসা করেনি সে। তপু হঠাৎই এতোটা সাহস দেখিয়ে ফেলবে সেটা ভাবতে পারেনি। রুদ্র ব্যাপারটা বুঝে উঠতে উঠতে তপু দ্রুত উঠে ইটটা হাতে নিল। ততক্ষণে রুদ্র সামলে নিয়েছে নিজেকে। তপু ইটটা রুদ্রর মুখ বরাবর লক্ষ্য করে ছুড়তেই রুদ্র গড়িয়ে সরে গেলো। এবং তপুর দিকেই সরল। তপু কিছু বুঝে ওঠার আগেই তপুর পা ধরে এক টানে ফেলে দিল রুদ্র। ডান পা টা দু পায়ের মাঝে নিয়ে এমনভাবে মোচড় দিল যে বিকট একটা শব্দ হল। তীব্র আর্তনাদ বেরিয়ে এল তপুর মুখ দিয়ে।
 পায়ের হাড় ভেঙ্গে ফেলেছে রুদ্র। গোটা ব্যাপারটা এতো দ্রুত ঘটল যে কিছুই করার রইল না তপুর। তীব্র যন্ত্রণায় মাটিতে পড়ে ছটফট করতে শুরু করল। কিছু করার ক্ষমতা এখন আর তার নেই। রুদ্র উঠে দাঁড়িয়ে অলস ভঙ্গিতে নিজের গায়ের ধুলো ঝাড়লো। তপুর বিকৃত কন্ঠের আর্তনাদ শুনে এমন মুখভঙ্গি করল যেন ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে সে। মুখ দিয়ে ‘চ্যাহ’ মতন একটা আওয়াজ করে বিছানার ওপর থেকে তার এনে রাখা দড়িটা নিয়ে এলো। তপুর আর্তনাদ শুনতেই পাচ্ছেনা এমন চেহারা বজায় রেখেই শক্ত করে বেঁধে দিল তপুর হাত-পা। ভাঙা পা-টা শক্ত করে বেঁধে রাখায় অসহ্য যন্ত্রণায় চেঁচিয়ে উঠল তপু। বিরক্ত হয়ে একটা ময়লা কাপড় ঠেসে দিল রুদ্র তপুর মুখের মধ্যে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তপুর চোখ লাল হয়ে উঠল, গলার শিরাগুলো ফুলে উঠে বেরিয়ে আসতে চাইল যেন। প্রচন্ড অসহায় দেখাল ওকে। সেই দৃশ্য দেখে রুদ্র নিষ্ঠুর হাসি হাসল।
দুই ঘন্টা যাবত রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে রুদ্রর আসার অপেক্ষা করছে উচ্ছ্বাস। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিরক্ত হচ্ছে তাই একটা সিগারেট ধরালো। দুটো টান দিতে না দিতেই এসে উপস্থিত হল রুদ্র। তার চোখ-মুখ একদম স্বাভাবিক। যেন কিছুই হয়নি। উচ্ছ্বাস সিগারেটটা নামিয়ে এগিয়ে এসে বলল, ‘শেষ?’
মাথা নাড়ল রুদ্র। উচ্ছ্বাস নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে সিগারেট টেনে বলল, ‘ বলিস নি তো নিজের পেছনেও স্পাই লাগিয়েছিস।’
নিজেও আরেকটা সিগারেট বের করতে করতে রুদ্র বলল, ‘সব বলতে হবে কেন?’
উচ্ছ্বাস কিছু বলল না। স্বপন মরার পরেই রুদ্র বুঝে গিয়েছিল ওকে মারার একটা চেষ্টা করবে ওরা। তাই কিছুই জানিনা এমন ভাব করে ঘুরে বেড়াচ্ছিল নিশ্চিন্তে। কিন্তু পেছনে বিশ্বস্ত লোক লাগিয়ে রেখেছিল। সেদিন রাতে ওর গাড়ির ব্রেক তপু কেটেছে সেটা না দেখলেও তপু আর আক্কাস দুজনকেই ঐ এলাকায় ঘুরতে দেখা গেছে। এটা নিশ্চিত ছিল যে তপু বা আক্কাসের মধ্যেই কেউ করেছে কাজটা। সেইজন্যই রুদ্র নিজের দ্বিতীয় ফাঁদ পাতল। করিডর থেকে বেরিয়ে জ্যোতির সাথে কথা বলার সময় জ্যোতির গলার হারের আয়নায় দেখতে পেয়েছিল ওকে লুকিয়ে অনুসরণ করা তপুকে। তখন ইচ্ছে করেই ফোন করে তপুকে শুনিয়ে শুনিয়ে ঐ কথা বলে। কারণ রুদ্র জানতো তপু ঠিক উল্টোটাই করবে। হলোও ঠিক তাই। প্রয়োজনের অতিরিক্ত আগ্রহ দেখাল তপু। আর নিশ্চিত করল নিজের মৃত্যুদণ্ড। উচ্ছ্বাস বলল, ‘এতক্ষণ লাগল কেন?’
‘ এতো সহজে মরতে দেব?’  সদ্য জ্বালানো সিগারেট ঠোঁটের মাঝে রেখে লাইটার পকেটে রাখতে রাখতে বলল রুদ্র।
উচ্ছ্বাস একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হাতের ইশারা করল দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজনকে। ইশারা করতেই তিনজন দ্রুতপদে চলে গেল লাশটার ব্যবস্থা করতে। উচ্ছ্বাস বলল, ‘ থাক তুই, আমিও গিয়ে দেখে আসি একবার।’
সিগারেটটা রাস্তায় ফেলে জুতো দিয়ে পিসে নিভিয়ে এগিয়ে গেল উচ্ছ্বাস তপুর ঘরের দিকে। তপুর ঘরে গিয়ে ঢুকতেই শিউরে উঠল উচ্ছ্বাস। স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আফসোসের ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল একবার । তপুর হাতের শিরা, পায়ের রগ একাধিক আঘাতে কেটে দিয়েছে রুদ্র। সারাঘর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তপুর গলাতেও ছোরার আঘাত দেখতে পেল সে। বুঝলো প্রথমে হাত-পায়ের রগ কেটে ফেলে রেখেছিল ওকে। শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছিলো তারসাথে ভয়ানক যন্ত্রণা। যন্ত্রণার পরিমাণটা যখন রুদ্রকে তৃপ্ত করতে পেরেছিল তখন গলা কেটে যন্ত্রণা থেকে চিরমুক্তি দিয়ে দিয়েছে রুদ্র তপুকে।
বর্তমান- (সুলতান’স ডাইন রেস্টুরেন্ট ঢাকা)
‘ লোকটা মানুষ না-কি পিশাচ?’ স্তব্ধ, ভীত কন্ঠে বেরিয়ে এলো ফারিয়ার মুখ দিয়ে।
এতক্ষণ আজিজের মুখে রুদ্রর কিছু নৃশংসতার গল্প শুনছিল তারা। এটুকু শুনেই তমাল আর ফারিয়া চমকে গেছে। তুহিনের চেহারা দেখে কিছু অনুমান করা যাচ্ছেনা। সে নির্বিকার। ইন্সপেক্টর আজিজ সামান্য হাসলেন। অভ্যাসমতো বৃদ্ধা ও তর্জনী আঙুল গোঁফে বুলিয়ে বললেন, ‘কী জানি? কিছু পিশাচ যেমন মানুষের মতো দেখতে হয়, তেমন কিছু মানুষকেও হয়তো পিশাচ বলে মনে হয়।’
তুহিন একটু বিরক্ত হল। রুদ্রর মতো একটা জঘন্য অপরাধীর প্রতি এই ইন্সপেক্টরের সুপ্ত স্নেহটা ভালো চোখে দেখছে না সে। আঙুল দিয়ে নাক ঘষে নিজের বিরক্তি আড়াল করে বলল, ‘আপনি নিশ্চিত সবুজ, খোকন, স্বপন এবং তপুর খুনটা রুদ্রই করেছিল?’
আজিজ সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল, ‘হ্যাঁ। আমি মোটামুটি নিশ্চিত। কিন্তু কিছুই প্রমাণ করতে পারিনি। তপুর লাশটাও আমরা পাইনি।’
ফারিয়া অবাক কন্ঠে বলল, ‘ কী ভয়ানক কাহিনী! মনে হল কোন সিনেমার গল্প শুনলাম।’
তমাল ফারিয়ার উদ্দেশ্যে টিটকারি মেরে বলল, ‘অবসর সময়টা সিনেমা দেখে দেখে কাটালে সবকিছুই সিনেমা সিনেমা লাগবে। এইজন্যই বলি ভালো কিছু দেখুন।’
‘ তমাল!’ তুহিনের ধমকে থেমে গেল তমাল। তুহিন ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল, ‘ তুমি ফরেন্সিকে আছো তাই অনেককিছুই তোমার অজানা। জীবনটা নাটকের চেয়েও বেশি নাটকীয় ফারিয়া। তবে আমাদের কাছে ততটুকুই বাস্তব যতটুকু আমরা চোখে দেখতে পাই। দৃষ্টির এই সীমাবদ্ধতা আমাদের মনকেও সীমাবদ্ধ করে রাখে। কিন্তু পৃথিবী এতোটাও সহজ নয়। এখানে ভয়ংকর থেকে ভয়ংকরতম মানুষ আছে। জঘন্য থেকে জঘন্যতম কিছু সত্য আছে যা শুনলেও অনেকে ভেতর থেকে কেঁপে উঠবে।’
ফারিয়া কিছু বলল না। মৌন থেকে সম্মতি জানাল তুহিনের কথাগুলোকে। তুহিন আবার ইন্সপেক্টরের দিকে দৃষ্টি ফেলে বলল, ‘এদের অপরাধ ছিল নিজের দলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, তাইতো?’
‘ এমনটাই ধারণা করা হয়েছে।’
তুহিন ভ্রু দুটো খানিকটা উঁচু করে জিজ্ঞেস করল, ‘তাহলে এই কেসের খুনগুলোও রুদ্রের পক্ষে করা অসম্ভব নয়।’
আজিজ এবার কিছুটা আহত গলায় বলল, ‘ খুন হওয়া সাতজনের সবার পরিচয় আপনি আগেই দেখেছেন। এখনো এ কথা বলছেন? আপনার এখনো মনে হচ্ছে গুলশান আর মীরপুরে হওয়া খুন দুটো করতে পারে রুদ্র?’
‘ হ্যাঁ  হচ্ছে। তবুও ওকে সন্দেহের বাইরে রাখতে পারছিনা আমি। মানুষ প্রয়োজনে সব করতে পারে ইন্সপেক্টর। এমন অনেক কেস সম্পর্কে জানি আমি।’
হতাশ নিশ্বাস ফেলল আজিজ। তুহিনকে বোঝানো তার সাধ্যের বাইরে। কোকের গ্লাসে চুমুক দিয়ে কয়েক সেকেন্ড ভাবল তুহিন। রুদ্র, রাশেদ আমের, উচ্ছ্বাস, কুহু, জ্যোতি, নাজিফা, জাফর আমের, সবুজ, স্বপন, খোকন, তপু  সবগুলো চরিত্র মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ওর। আমের ভিলার একটা কাল্পনিক চিত্র অঙ্কিত হচ্ছে মস্তিষ্কে। যতটুকু শুনলো তাতে কিছুই বোঝা গেলোনা। এই পর্যন্ত  অস্বাভাবিক কিছুই ঘটেনি। আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিত্যকার ঘটানা। তাহলে কী এরপর কিছু_। তুহিনের ভাবনার মাঝেই তমাল বলে উঠল, ‘এরপর কী হয়েছিল? আপনি বললেন আমের ভিলা এখন ফাঁকা। কিন্তু ফাঁকা হবে কেন? রাশেদ আমের, কুহু আর জ্যোতি কোথায়? আর এই দু-বছরে রুদ্র সত্যিই বিয়ে করেনি?’
ইন্সপেক্টর আজিজ কিছু বলতে যাচ্ছিল তখনই ফোন বেজে উঠলো তার। কথা থামিয়ে তুহিনের দিকে তাকাতেই তুহিন বলল, ‘ফোনটা তুলুন। থানা থেকে কল এসেছে হয়তো।’
‘ ধন্যবাদ।’
বলে ফোনটা তুলে নিল আজিজ। কয়েকসেকেন্ড চুপ থেকে শুনলো ওপাশের ব্যক্তির কথা। ‘ আমরা আসছি’ বলে ফোনটা কান থেকে নামিয়ে তুহিনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘স্যার রুদ্রের স্কেচ তৈরী হয়ে গেছে। এখন যাবেন নাকি আরও কোন কাজ আছে।’
তুহিন উঠে দাঁড়িয়ে গেল। তাকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে আজিজ, তমাল আর ফারিয়াও উঠে দাঁড়াল। তুহিন গম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘থানায় চলুন। আপাতত এখানে আর কোন কাজ নেই। বাকি কাহিনী পরে শুনবো।’
গাড়ি ছুটে চলেছে গুলশান থানার দিকে। তুহিন বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে অন্যমনস্ক হয়ে। সাজ্জাদের খুনটা হল পরশু দিন। তার আগে আরও পাঁচটা রহস্যময় খুন। গতকাল সকালে ওর হাতে কেসটা দেওয়া হল। ঠিক বিকেলবেলাতেই আরেকটা খুন।
 আগে আভাস পেয়েও কিছুই করতে পারেনি সে। এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে যেন কেসটা। যদিও মাত্র একটা দিন হল কেসটা ওর হাতে এসেছে। এইটুকু সময়ে ইনভেস্টিগেশন এর চেয়ে বেশি কী হতে পারতো? কিন্তু মনকে বোঝাতে পারছেনা। সে বুঝতে পারছে আরও খুন হতে চলেছে। খুনিকে যত দ্রুত সম্ভব ধরতেই হবে। আরও কয়েকটা প্রাণ যাওয়ার আগেই। তুহিনের চিন্তিত মুখটার দিকে তাকিয়ে হয়তো তমাল কিছু একটা আন্দাজ করতে পারল তার মনোভাব। তুহিনের দিকে কিছুটা এগিয়ে নিচু গলায় বলল, ‘স্যার?’
‘ বলো।’ বাইরে তাকিয়ে থেকেই নিরুৎসুক কন্ঠে বলল তুহিন।
‘ সোলার সিস্টেম গ্রুপ, রাশেদ, রুদ্র এদের গল্প শুনে সময় নষ্ট করাটা কী ঠিক হচ্ছে? এগুলো কী সত্যিই কেসটার কোন কাজে আসবে? এরচেয়ে মার্ডারগুলোর এভিডেন্স খোঁজাতে_’
তুহিন গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকাতেই থেমে গেল তমাল। কিছুটা হকচকিয়ে গেল সে। মাথা নিচু করে বলল, ‘সরি স্যার।’
তুহিন কিছু না বলে আবার বাইরে তাকাল। চিন্তাটা যে সে নিজেও করেনি তা কিন্তু না। সত্যিই তো, এসব কাহিনী শুনে সময় নষ্ট করাটা কী ঠিক হচ্ছে?
কিন্তু এছাড়াও করবে টা কী? আপাতত এমন কোন ক্লু তার হাতে আসেনি যেটা ধরে ও এগিয়ে যেতে পারে। কিন্তু ফাইল গুলোতে লেখা তথ্য আর আর অশান্ত গুলশান হঠাৎ শান্ত হতে শুরু করার ঠিক আগের যে ঘটনাটা সে জেনেছে তাতে কেন জানিনা তার মনে হচ্ছে সোলার সিস্টেম গ্রুপের কাহিনী ওর জানা প্রয়োজন। সাংঘাতিক কিছু একটা হয়েছিল এই দুই বছরের মধ্যে। এমন কিছু যা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। রুদ্র নামক যুবটাকে বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে ওর। অনেকদিন পর হয়তো মনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী পেতে চলেছে। যদি রুদ্রই সেই খুনি হয় তবে। কিন্তু যদি না হয়?
#চলবে..
[ রি-চেক করিনি। হাতে কিছুটা ব্যথা ছিল বলে পর্বটা দিতে দেরী হয়ে গেছে। লিখতে পারছিলাম না। অপেক্ষা করানোর জন্যে দুঃখিত।]

1 COMMENT

Comments are closed.