তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৩৩

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৩৩
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

‘মুক্তি চাই’ শব্দটির সাথে ডিভোর্স নামক তিক্তমাখা শব্দটি মস্তিষ্কে প্রবেশের পূর্বেই সমস্ত মুখস্রীতে লাল বর্ন ধারন করলো অয়নের। অয়ন হাত বাড়িয়ে রিমির বাহু আকড়ে ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। রিমি ব্যাথা পেলেও টু শব্দ টাও মুখ থেকে বের করেনা। স্হির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অয়ন রাগে ফুশফুশ করছে। স্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তার পক্ষে মুশকিল হয়ে উঠেছে। তার রিমিপরীকে ভালোবাসার কোন কমতি তো সেই রাখেনি তাহলে কেন তার রিমিপরী তার কাছে মুক্তি চাইছে কেন? অয়নের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। রিমি থেকে দূরত্ব বজিয়ে রুমের জিনিসপত্র ভাঙ্গচুর শুরু করে দেয়। তবুও যেন রাগ কমেনা তার। পকেটে হাত ঢুকিয়ে ওষুধ বের করতে নিয়ে ওষুধ টা খেয়ে নিলো। বিছানায় চুল খামচে ধরে বসলো। রাগ কমছে না।

সময়ের সাথে সাথে বেড়েই চলছে প্রখরভাবে। অয়নের ইচ্ছে করছে রিমিকে কোন কঠিনতম শাস্তি দিতে,যেন সে দ্বিতীয়বারের মতো ভুল না করে,কিন্তু অয়ন তো তার ভালোবাসার কাছে অসহায়। চাইলেও কিচ্ছুটি করতে পারবে না সে তার রিমিপরীকে। অয়ন তার ওষুধটা পকেটে রেখে দিতে চাইলে, রিমি অয়নের হাত হুট করে ধরে ফেলে। ওষুধের দিকে তাকিয়ে সংদেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ এই ওষুধ টা খান কেন আপনি? কি আছে এই ওষুধে? ‘
অয়ন একপ্রকার ঘাবড়ে গিয়েই দ্রুততার সঙ্গে পকেটে ওষুধটা রেখে দিলো। অতঃপর গলার স্বর শক্ত করে কপাট রাগ দেখিয়ে বললো,
‘ তার আগে তুমি বলো আমাকে। কেন তুমি মুক্তির কথা তুললে। কোন সাহসে বললে তুমি? ‘
রিমি নিরব রইলো।অয়ন ওষুধের বিষয়টি নিরবে দমিয়ে দিলো। তবুও অয়ন নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না। রিমি কিছুটা সাহস সংচয় করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,

‘ আমিও তো মানুষ অয়ন চৌধুরী। আমারোও তো ইচ্ছে করে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো বেঁচে থাকতে।আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো প্রিয় মানুষটার সাথে রাস্তায় হাতে হাত ধরে হাঁটতে। আমারোও তো ইচ্ছে করে অন্য মেয়েদের মতো প্রেমিকা হয়ে প্রেমিকের থেকে গোলাপ ফুল পেতে।
আমার দামি গিফট চাই না। আমি সাধারণ মানুষের মতো বেঁচে থাকতে চাই। আমার বন্দী জীবনটা ভালো লাগছে না ডক্টর এয়ারসি। ‘

রিমির গভীর আকুতি আদোও কি অয়ন শ্রবণ করলো?কিংবা অয়নের মন মস্তিষ্কে প্রবেশ করলো?
হয়তো করেছে।হয়তো নয়। অয়নের মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেলো সঙ্গে সঙ্গে। বার বার কেন রিমি নিজেকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তুলনা করছে? রিমি তো সাধারণ নয়। যাকে বলে এক অসাধারণ এক রমনী। তাইতো অয়ন চৌধুরী রিমিতে মন দিয়ে বসেছে। বদ্ধ উম্মাদে পরিনত হয়েছে। অয়ন রিমির গালে হাত দিয়ে নিষ্প্রান দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকে। রিমি হেচকি তুলে কাঁদছে। উজ্জ্বল মুখস্রী কেমন একটা ফ্যাকাশে হয়ে উঠেছে মুহুর্তেই। অয়ন রিমিকে কাঁদতে দেখে, অয়ন অসহায় পানে তাকিয়ে রইলো।

হাত বাড়িয়ে রিমির আখিজোড়া থেকে চোখের জলটুকু নিমিষেই, মুছে দিলো। রিমি স্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অয়ন রিমির হাত ধরে রিমিকে বাইরের দিকে নিয়ে যায়। অতঃপর রিমিকে গাড়িতে বসিয়ে, নিজেও বসে পড়ে। গাড়ি নিজ গতিতে চলতে শুরু করে।রিমি অয়নকে প্রশ্ন করার সাহসটুকু পায় না। অয়নের ফর্সা মুখস্রীতে ললাটের বেশ খানিক্টা অংশ জুড়ে ঠায় নিয়েছে তার অবাধ্য ঘন লেপ্টে থাকা চুলগুলো। অসম্ভব সুন্দর লাগছে অয়নকে।

অয়ন গাড়ি চালানোর মাঝে মাঝে বাম হাতের কালো শার্টের হাতা টা গুটিয়ে নিচ্ছে। বাম হাতে গুলি লেগে থাকায়, অয়ন সাবধানতার সাথে ডান হাত দিয়েই ড্রাইভ করে যাচ্ছে। রিমি অন্যমসষ্ক তার পাশে বসে থাকা সুদর্শন ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে। ভাবতেই অবাক লাগে এমন সুদর্শন মানুষটা তাকে ভালোবাস। যাকে বলে পাগলের মতো ভালোবাসা।
আফসোস এই পাগল ভালোবাসাটাই রিমির জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ালো।

মেঘ আমানের বেডের পাশে একটি চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে বসে আছে। চোখে তার রাজ্যের ঘুম। তবুও ঘুমাচ্ছে না। আমানের ঘুম ভেঙ্গে গেলে যদি তার কিছু লাগে তখন? তাই মেঘ ঠিক করেছে ঘুমাবে না। মেঘ তার অবাধ্য চুলগুলো একটা কাকড়া নিয়ে
বেঁধে ফেলে উচু করে। মুখ হাত দিয়ে বার বার ঘুম তাড়ানোর প্রচেষ্টায় থাকে। তবুও অবাধ্য ঘুম তাকে বশে নিয়ে আসছে মুহুর্তের মাঝেই মেঘের চোখ-মুখে ধরা দেয় একরাজ্যের ঘুম। আমানের চোখ মুখ কুচকে উঠে। ঘুমের ওষুধের কাজ বোধহয় এতোক্ষনে শেষ হয়ে গিয়েছে।

আমান উঠে বসলো বিছানার চাদর সরিয়ে। নিজেকে একটি অপরিচিত জায়গায় আবিষ্কার করলো। রুম টা অন্ধকার হলেও আশে-পাশে মোমের আলো দিয়ে আলোকিত হয়ে উঠেছে। আমান ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখতে পায় মেঘ মাথা ঘুমিয়ে পড়েছে। গাঁয়ে স্কুলের ড্রেস। শ্যামবর্ন মুখশ্রীতে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। আমান মেঘকে দেখেই চিনে ফেললো, মেঘ অয়নের বোন হয় সম্পর্কে,কিন্তু মেঘ এবং সে একই রুমে কেন? সে আপাতত কোথায় অবস্হান করছে? মষ্তিষ্কে প্রশ্নটি ঝটলা পাঁকাতেই আমান হাক ছেড়ে ডাকে,

‘ এইযস শুনছেন আপনি? শুনছেন? ‘
মেঘ সবেমাত্র ঘুমের মাঝে আখিঁজোড়া বন্ধ করে রেখেছিলো,আমানের ডাকে হন্তদন্ত হয়ে আখিঁজোড়া খুলে ফেলে। আমানকে বসে থাকতে দেখে অস্হির হয়ে মেঘ দ্রুত উঠে যায়। অতঃপর নিচু হয়ে বলে,
‘ আপনার শরীরের অবস্হা কেমন? আপনি সুস্হ আছেন তো? ‘
আমান সুদীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

‘ হ্যা! আমি ঠিক আছি আপাতত, কিন্তু আমি এখানে এলাম কী করে? ‘
মেঘ কিছু না বলে তার পাশে থাকা কফির কাপটি হাতে নিয়ে পাশের রান্নাঘরে চলে যায়। অতঃপর বিকালের কফিটা গরম করে, কাপে ঢেলে নেয়। সেই কফি আমানের রুমে এনে, আমানের হাতের দিকে বাডিয়ে পূর্বের ন্যায় নিচু গলায় বলে,

‘ আপনি কফিটা খেয়ে নিন। আমি আপনাকে সব বলছি। শুরু থেকে। ‘
আমানও বসে পড়ে। মেঘ চেয়ার নিয়ে আমানের সামনসামনি বসে পড়ে। অতঃপর শুরু থেকে সকল ঘটনা খুলে বলে। সে কীভাবে অয়নের হাত থেকে আমানকে বাঁচিয়ে ফ্রাম হাউজে নিয়ে এসেছে।

ভরা পর্ণিমার রাতে নিটোল চাদ তার ঝলমলে আলাের পসরা নিয়ে উপর আকাশে আবির্ভূত হয়।
এ রাতে প্রকতি মায়াবী রূপ-মাধুর্যে ভরে ওঠে। পূর্ণিমা নিশিতে নির্জন অরণ্যের আলো-ছায়া জড়ানাে পথে একসাথে হাতে হাত ধরে হেঁটে চলেছে অয়ন এবং রিমি। পাশে বয়ে চলেছে নদীর স্রোত। শীতের রাতে মৃদ্যু বাতাসে রিমির শরীর ভালোলাগার স্রোত বয়ে চলেছে। পাশেই নদীর স্রোতের মৃদ্যু শব্দ। সবমিলিয়ে মোনরম একটি পরিবেশ।

প্রেয়সীর আবদারে মানতেই, অয়ন এতোদূর ছুটে এসেছে মধ্যরাতে। অয়নকে রিমিকে নিয়ে শহর থেকে দূরে একটি নির্ঝন জায়গায় নিয়ে এসেছে। রিমি বেশ উপভোগ করছে পরিবেশটা। রিমি কখনো ভাবেনি,তার আবদার পূরনে অয়ন তাকে এতোদূর নিয়ে আসবে। রিমির প্রথম মনে হচ্ছে সে অয়নের স্ত্রী নয়। একজন প্রেমিকা। তাইতো প্রেমিক পুরুষের ন্যায় অয়ন রিমির আবদার পূরন করেছে,কিন্তু অয়নের মুখে গম্ভীর্য। হঠাৎই অয়ন রিমিকে আকড়ে ধরে পাশের ব্যান্চেতে বসিয়ে দেয়। অতঃপর গলার স্বর উঁচু করে বলে,

‘ তখন কি যেন বলেছিলো। তোমার মুক্তি চাই তাইনা? ‘
রিমি নিষ্চুপ হয়ে থাকে। অয়ন হাটু গেড়ে রিমির কোলে মাথা গুজে ভেজা গলায় বিড়বিড় করে আওড়াতে থাকে,
‘ মুক্তি তুমি কখনোই পাবে না রিমিপরী। অয়ন চৌধুরীর বন্দিনী হয়েই তোমাকে আজীবন কাটাতে হবে। ভেবে না আমার মৃত্যুর পর তুমি মুক্তি পেয়ে যাবে। আমি মরে গেলেও তোমার সঙ্গ ত্যাগ করবো না রিমিপরী। সর্বদা তোমার অস্হিত্বে মিশে রইবে তোমার সাইকো। ‘

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৩২

চলবে……..কী?

[নোটঃ আমি দুঃখির বোনাস পার্ট দিতে পারলাম না?। এই পার্ট আমি দুইদিন ধরে লিখলাম। শরীরে অবস্হা খারাপ। বিছানা থেকে উঠতেই পারছি না। ?সবাই দোয়া করবেন আমার জন্যে]

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৩৪