অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৬

অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৬
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

গভীর রাত। কার্তিক মাসের একদম শেষ সময়। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি থেমেছে। চারপাশের পরিবেশটা একদম শান্ত, নিরব। শহর ছাড়িয়ে গ্রামের নির্জন রাস্তার দিকে ছুটে চলেছে একটা গাড়ি। মাঝারি গতিতে এগিয়ে চলছে গাড়িটা। একটু আগেই পাকা রাস্তা ছেড়ে এবার মাটির রাস্তায় নেমেছে। রাস্তার দুপাশে এখন শুধু বিশাল বিশাল ক্ষেত। প্রায় অনেকটা সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও গাড়ি থামার কোন নামগন্ধ নেই। গাড়ি চালক খুব মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পরনে তার কালো টিশার্ট তার ওপরে আছে কফি কালার লেদার জ্যাকেট।

হাতে কালো রঙের হাত মোজা পরে আছে এক বিশেষ কারণে। তার দৃষ্টি সামনের রাস্তার দিকে। মাঝেমাঝে আশেপাশে তাকাচ্ছে আর হালকা আওয়াজে শিস বাজাচ্ছে। যেন মনে মনে ভীষণ আনন্দ অনুভব করছে সে। এদিকে পেছনের সিটে হাত-পা বাঁধা এক চব্বিশ-পঁচিশ বছরের যুবক ছটফট করে চলেছে আর মৃদু স্বরে গোঙাচ্ছে। বেশি জোরে আওয়াজও করতে পারছেনা কারণ তার মুখের মধ্যে রুমাল ঢুকিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার, মনে হচ্ছে এক্ষুনি মারা যাবে। কিন্তু গাড়ি চালকের সেদিকে কোন মনোযোগ নেই। যেন শুনতেই পাচ্ছেনা পেছনের সিটে পড়ে থাকা বন্দি ব্যক্তির করুণ আর্তনাদ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

যেন এই মুহূর্তে গাড়ি চালানোটাই তার একমাত্র প্রধান কাজ। আরও কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর একটা মাঠের মাঝখানে গাড়িটা থামল। গাড়ি চালক বিন্দুমাত্র সময় ব্যয় না করে নেমে এলো গাড়ি থেকে। প্যান্ট থেকে পিস্তলটা বের করে হাতে নিল। এগিয়ে গিয়ে গাড়ির পেছনের দরজাটা খুলে কিছুটা ঝুঁকে তাকালো বন্দির দিকে। বন্দির ভয়ার্ত মুখ দেখে ঠোঁট বাকিয়ে হাসল সে। বন্দি ব্যক্তি হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নড়াচড়া থামিয়ে স্হির হয়ে গেছে একদম। লোকটা কলার চেপে ধরে গাড়ি থেকে টেনে মাটিতে নামাল খোকনকে। বন্দি ছেলেটার নাম খোকন। খোকন ভয়ার্ত চোখে একবার চারপাশে তাকাল।

জনমানবহীন বিশাল এক মাঠ। মাঠের পশ্চিমপাশে শুস্ক ক্ষেত, উত্তর দিকে নদী, পূর্ব আর দক্ষিণ দিক জুড়ে কেবলই জঙ্গল। চারপাশটা অদ্ভুত নিরব। দিনের বেলাতেই এখানে মানুষ কম আসে আর এখনতো রাত তিনটে বাজতে চলল। শরীর ঠান্ডা হয়ে এলো খোকনের। ভয়ে সিটিয়ে যাওয়া দৃষ্টিতে তাকাল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দানবের দিকে। রুদ্র আমের! যে এখন ওর জন্যে স্বয়ং যম। এই পাষাণ হয়তো আজ ওকে ভয়ংকর মৃত্যু দেবে।

নিজের হাত-পা বন্ধন মুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে করতে অসহায় দৃষ্টিতে রুদ্রর দিকে তাকাল খোকন। রুদ্র গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে কিছু করছে। কয়েক মুহুর্ত পরে ফোনটা পুনরায় পকেটে রেখে নির্বিকারভাবে খোকনের দিকে তাকাল রুদ্র। খোকনের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সে। আজ বহুবছর পর সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছে ছেলেটা। একটাই প্রার্থনা করছে যাতে আজকের মতো এই নরপশুর হাত থেকে ওকে বাঁচিয়ে দেয়। এসব কাজধান্দা ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবে ও। শুধু এই জানোয়ারের হাতে যেন আজ প্রাণটা না যায়। খোকনের সামনে গিয়ে বা হাঁটু ভেঙ্গে বসল রুদ্র। আস্তে আস্তে খোকনের মুখের বাঁধন খুলে দিল, মুখের ভেতরে গুজে দেওয়া রুমালটাও টেনে বের করল। এটা করার সাথেসাথেই কাশতে কাশতে মুখে জমে থাকা লালা বেরিয়ে এলো খোকনের মুখ দিয়ে। বাঁচার জন্যে চিৎকার করে উঠতেই রুদ্র একহাতে গলা চেপে ধরল তার। আরেক হাতে নিজের পিস্তলটা মুখের কাছে এনে চুপ থাকার ইশারা করে শীতল কন্ঠে বলল,

‘ হুশশশ ! অহেতুক চিৎকার আমার একদম ভালো লাগেনা।’
রুদ্রের ঠাণ্ডা গলার আওয়াজ শুনে কেঁপে উঠলো খোকন। গলা চেপে ধরায় নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে ওর। এই বুঝি প্রাণটা গেল। নিজের কাজে এখন ভীষণ আফসোস হচ্ছে ওর। কয়েকটা টাকার লোভে এতো বড় বোকামি কীকরে করল? কী করে ভুলে গেল যার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে যাচ্ছে সে এক নির্দয় হিংস্র পশু। যন্ত্রণায় কাতর কন্ঠে খোকন বলল,
‘ রুদ্র ভাই! এরকম কাজ আর করব না আমি। আমার ভুল হয়ে গেছে। এবারের মতো ছেড়ে দিন। আমি রাশেদ বাবার পা ধরে ক্ষমা চাইব। আপনার গোলাম হয়ে থাকব। একটা সুযোগ দিন ভাই। জানে মারবেন না আমাকে।’
রুদ্র ঠোঁট চেপে ধরে একবার দেখল খোকনকে। তারপর গলাটা আরও জোরে চেপে ধরে বলল,

‘ তোর সাথের শু*রের বাচ্চাটা কে?’
প্রাণ বাঁচাতে আটকে যাওয়া কন্ঠে খোকন বলল,
‘ সবুজ ছিল ভাই। সবুজ!’
রুদ্র আবার হাসল। খোকন জানে এই হাসির অর্থ অগ্রীম সবুজের মৃত্যু সংবাদ। কিন্তু এখন সে নিজের পরিণতি নিয়ে চিন্তিত। নিজের পরিণতির কথা চিন্তা করেই রক্ত হিম হয়ে আসছে তার। খোকনের গলা ছেড়ে দিল রুদ্র। কাশতে শুরু করল সে। রুদ্র জিজ্ঞেস করল,
‘ ইনফরমেশগুলো চলে গেছে ব্লাক হোলের হাতে?’

খোকন আরেকটু কেশে নিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে বলল,
‘ না ভাই। কাল রাতে আমার যাওয়ার কথা ছিল ওগুলো নিয়ে। কিন্তু আমি যাবোনা রুদ্র ভাই। আমি রাজি হয়ে ভুল করে ফেলেছি। এমন ভুল আর কোনদিন হবেনা। বিশ্বাস করুন আমাকে, আর হবেনা।’
‘ আমি জানি আর হবেনা। এরকম ভুল আমি দ্বিতীয়বার কাউকে করতে দেইনা।’
কথাটা বলে উঠে দাঁড়াল রুদ্র। খোকন বুঝে গেছে ওর জীবনের অন্তিম মুহূর্ত এটা। হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল সে। রুদ্রের পায়ের কাছে পড়ে গেল একদম। হাত বাঁধা বলে পা ধরতে পারলোনা তাই রুদ্রর পায়ের সাথে মিশে বসে চরম অসহায় কান্না কেঁদে বলল,
‘ ভাই আপনার পায়ে পড়ছি ভাই আমাকে মারবেন না। আমায় বাঁচতে দিন। ভাই_’

কিন্তু খোকনের অসহায়ত্ত্বের এই কান্না রুদ্র নামক এই পশুর কানে গেলোনা। কলার ধরে উঠিয়ে নিয়ে আবার গাড়ির ভেতরে ধাক্কা দিয়ে ঢুকিয়ে দিল তাকে। খোকনকে বাইরে আসার সুযোগ না দিয়েই গাড়ির দরজাগুলো সব বাইরে থেকে লক করে দিল রুদ্র। খোকন বুঝে উঠতে পারছেনা রুদ্র কী করতে চলেছে। শুধু বারবার একটাই বাক্য আওড়ে যাচ্ছে ‘ রুদ্র ভাই ক্ষমা করে দিন এরকম ভুল আর জীবনেও হবেনা। দয়া করুন আমাকে।’ কিন্তু খোকনের এই আকুতি রুদ্র ওর কানেও তুলছে না। নির্বিকারভাবে নিজের কাজ করে যাচ্ছে।

গাড়ির ডিকিটা খুলে পেট্রোলের ক্যানটা বের করে নিয়ে এসে জানালা দিয়ে একবার খোকনের দিকে তাকাল। খোকনের দিকে তাকিয়ে থেকেই ক্যানের মুখটা খুলে পুরো গাড়িতে পেট্রোল ছিটিয়ে দিতে শুরু করল। এই দৃশ্য দেখে খোকন বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল রুদ্রের দিকে, নিঃশ্বাস আটকে এলো ওর। কিছুক্ষণের জন্যে কথা বলতেও ভুলে গেল। রুদ্র পকেট থেকে দেশলাইয়ের বক্সটা বের করতেই ভয়ে এবার বাচ্চাদের মতো কেঁদে দিল খোকন। এবার ও উন্মাদের মতো চিৎকার করতে লাগল। বাঁধা পা দিয়ে জোরে জোরে গাড়ির দরজায় আঘাত করতে করতে লাগল। যখন মানুষ বুঝতে পারে তার এরকম নৃশংস মৃত্যু হতে চলেছে তখন তার মানসিক অবস্থা অনুধাবন করা মুশকিল। এই মুহূর্তে খোকনের বাঁচার এই তীব্র আকুতি দেখে হয়তো সাধারণ কোন মানুষের ভীষণ দয়া হতো ওর ওপর। কিন্তু রুদ্র নামক এই হৃদয়হীন অমানুষটা কেবলই হাসল। খোকন যেন ওর সাথে দারুণ একটা কৌতুক করছে। বক্স থেকে দেশলাই কাঠি বের করতেই খোকন আবার আকুতি শুরু করল। দয়া ভিক্ষা চাইল রুদ্রর কাছে। রুদ্র দেশলাইয়ে আগুন জ্বালিয়ে সেটা নিজের মুখ বরাবর এনে বলল,

‘ দয়া? ইতিহাস পড়েছিস? আজ পর্যন্ত যারাই নিজের ঘরশত্রু চিনতে ভুল করেছে তাদেরই পতন হয়েছে। সেই আদিকাল থেকেই বিশ্বাসঘাতকতার খেলা চলে আসছে। আর এই খেলায় তারাই হেরে যায় যারা দয়া করে। আর রাশেদ আমের আমাকে হেরে যাওয়া শেখায়নি। আর সেইজন্যেই রুদ্র আমের দয়া করতে শেখেনি।’

কথাটা বলে আবার বাঁকা হাসি দিল রুদ্র। আর অপেক্ষা না করে জ্বলন্ত দেশলাই গাড়িতে ছুড়ে মেরে বেশ কয়েক পা পিছিয়ে গেল। সাথেসাথেই গোটা গাড়িতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠল। রুদ্র বেশ কিছুটা দূরে গিয়ে একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। গাড়ির ভেতর থেকে খোকনের তীব্র আত্মচিৎকার শোনা যাচ্ছে। জঙ্গলের ভেতর থেকেও কয়েকটা শেয়াল ডেকে উঠল। রুদ্র জ্বলতে থাকা গাড়িটার দিকে তাকিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেট বের করে ঠোঁটের মাঝে নিয়ে লাইটার দিয়ে আগুন ধরালো। খোকনের চিৎকারে চারপাশটা কেঁপে উঠছে।

সে এক ভয়ংকর পরিবেশ। কিন্তু রুদ্র ভাবলেশহীনভাবে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে দেখছে সেই দৃশ্য। যেন বিশেষ কিছুই হচ্ছেনা এখানে। দূরে জ্বলতে থাকা আগুনের রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে রুদ্রের স্হির চোখদুটোও জ্বলজ্বল করে উঠছে। চোখ দুটোতে যেন তার ভেতরের তীব্র হিংস্রতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। আস্তে আস্তে খোকনের চিৎকার থেমে গেল। চারপাশটা একদম শান্ত হয়ে গেল। এখন শুধু গাড়িতে জ্বলতে থাকা আগুনের ‘ফরফর’ জাতীয় শব্দটাই হচ্ছে। রুদ্র বুঝতে পারল অবশেষে বিশ্বাসঘাতকটা মরেছে। তবে খোকনকে দেওয়া কষ্টটা পর্যাপ্ত মনে হলোনা রুদ্রর কাছে। মনে হল আরেকটু যন্ত্রণা দিয়ে হয়তো মারতে পারলে ভালো হতো। বেশি তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে। আরও সময় নিয়ে আরও যন্ত্রণা দিয়ে মারা যেতো একে।

পুরোনো সিগারেটটা ফেলে নতুন একটা সিগারেট জ্বালাতেই ওখানে একটা জিপ এসে থামল। জিপটা দেখতে ঠোঁট থেকে সিগারেট নামালো রুদ্র। জিপটা আসার জন্যেই অপেক্ষা করছিল এতক্ষণ। ফোনে তখন জিপ নিয়ে আসার জন্যেই মেসেজ করেছিল সে। জিপটা চালিয়ে নিয়ে এসছে উচ্ছ্বাস। ও কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে জ্বলন্ত গাড়িটা আর রুদ্রকে। রুদ্র এগিয়ে গিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই উচ্ছ্বাস লাফিয়ে ড্রাইভিং সিট থেকে সরে পাশের সিটে বসে পড়ল। রুদ্র ড্রাইভিং সিটে বসে জিপটা স্টার্ট দিতেই উচ্ছ্বাস বলল,

‘ কাজটা তো আমাদের লোকগুলোই করতে পারতো। নিজেই একা একা এতো দূরে এসে করতে গেলি কেন?’
‘ গ্রুপের মধ্যে এমন আরও দু একপিস থাকতেই পারে। সতর্ক হয়ে যাবে। এসব তোর মাথায় ঢুকবেনা। তাই চুপ থাক।’
কিন্তু উচ্ছ্বাসের পক্ষে চুপ থাকা সম্ভব হয়ে উঠল না। খানিক বাদেই প্রশ্ন করল,
‘ সবুজ মালটাকে কী করলি?’
‘ ওকেতো সন্ধ্যার পরেই ওপরে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
একদম নির্বিকারভাবে বলল রুদ্র। উচ্ছাস হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘ কোথায়? আর কীভাবে?’
‘ ওর বাড়িতেই। বেশি কিছু করিনি। জাস্ট মাথাটা বালতির পানিতে চুবিয়ে ধরেছিলাম। শ্বাস আটকে মারা গেছে।’
রুদ্র এমনভাবে কথাটা বলল যেন ইঁদুর মারার গল্প শোনাচ্ছে। উচ্ছ্বাস স্তব্ধ চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,

‘ হ্যাঁ সেটাই তো। তুই তো শুধু মাথাটা পানিভর্তি বালতিতে চেপে ধরেছিলি। শ্বাস নিতে না পারলে সেটা কী তোর দোষ? পানির নিচে শ্বাস নিতে পারেনা সেটা ওর ব্যর্থতা। তোর এখানে কিছুই করার নেই।’
উচ্ছাসের এমন কৌতুকে অন্যসময় চোখ রাঙিয়ে তাকালেও আজ কোন প্রতিক্রিয়া দেখাল না রুদ্র। এখন অন্যকিছু ভাবছে সে। কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

‘ আর কোন কালসাপ পালছি কি-না সেটা নিশ্চিত হতেই জিজ্ঞেস করেছিলাম ওর সাথে আর কে আছে। কিন্তু গাধাটা ভেবেছিল সবুজ এখনো বেঁচে আছে। মনে হয়না আপাতত আর কেউ আছে। কারণ ও শুধু সবুজের নামই নিয়েছে।’
উচ্ছ্বাস নিজেও এবার একটা সিগারেট জ্বালিয়ে বলল,

‘ তুই থাকতে কোন কালসাপ এখনো গ্রুপে টিকতে পেরেছে? কীভাবে বুঝে যাস বলতো? এই দুটো যে তলে তলে এসব করছে আমরাতো ভাবতেই পারিনি। তুই ধরতে না পারলেতো ইন্নালিল্লাহ হয়ে যেতো বস!’
রুদ্র কিছু বলল না। সিগারেটে একটা টান দিয়ে আবার স্টেয়ারিং এ হাত দিল। উচ্ছ্বাস আবার বলল,
‘ রাশেদ বাবাকে কী বলবি? তোর কাকাও কিন্তু বারবার ফোন করছিল।’
রুদ্র নিজের কন্ঠস্বর শক্ত করে বলল,

‘ বাবাকে কিছু বলার দরকার নেই। যা বলার আমি বলে দেব। উনি যাতে কিচ্ছু বুঝতে না পারে।’
উচ্ছ্বাস কিছু বলল না শুধু মাথা নাড়ল। কিন্তু খোকনের কথাটা মাথায় আসতেই বলল,
‘ ঐ কুত্তাটাকে কীকরে আনলি এখানে?’
‘ বাড়ি ফিরছিলো। রাস্তা থেকেই তুলে নিয়েছি।’
উচ্ছ্বাস খানিকটা হেসে বলল,

অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৫

‘ শালা! এরা যেচেপরে মরতে কেন আসে বুঝিনা। হরিণের বাচ্চা হয়ে নিজের ইচ্ছায় কেউ সিংহের গুহায় ঢোকে?’
রুদ্র স্টেয়ারিং এ হালকা আঘাত করে ক্রোধিত স্বরে বলল,
‘ শু*রেরবাচ্চাটা তাড়াতাড়ি মরে গেল। বেশিক্ষণ চিৎকার করেনি। ওর চিৎকার শুনে মন ভরেনি আমার। আরও সময় নিয়ে কাজটা করা উচিত ছিল। তাড়াহুড়ো হয়ে গেছে।’
উচ্ছ্বাস হতাশ দৃষ্টিতে তাকাল রুদ্রর দিকে। কিন্তু রুদ্রর দৃষ্টি সামনের দিকে স্হির। বন্ধ গাড়ির মধ্যে একটা লোককে আগুনে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরেও তার তৃপ্তি হয়নি? আরও চিৎকার শুনতে চাইছিল? এই ছেলেটার হৃদয় কী দিয়ে তৈরী?

অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৭