অন্যরকম তুমি সিজন ২ গল্পের লিংক || তানিশা সুলতানা

অন্যরকম তুমি সিজন ২ পর্ব ১
তানিশা সুলতানা

“আমাকে বিয়ে দিও না বাবা। আমি বিয়ে করতে চাই না। পড়তে চাই আমি।
ছোট মেয়েটার মুখে এমন কথা শুনে বুকটা কেঁপে ওঠে সালমানের। সে তার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। এসএসসি দিয়েছে তার মেয়েটা। ষোল পেরিয়ে সতেরোর কোঠায় পা দিয়েছে। এই টুকুনি মেয়েকে বিয়ে দিতে তারও কলিজা কাঁপছে। কিন্তু কি করবে?
এটাই নিয়তি।

নাজমা বেগম আঁচলে মুখ গুঁজে মেয়ের পাশে বসে আছে। তার বলার মতো কিছুই নেই।
বাবা মা কারোর থেকে কোনো সারা না পেয়ে ছোঁয়া বাবার হাত ধরে আবারও বলে ওঠে
” বাবা প্লিজ ওনাদের চলে যেতে বলো। আমার জীবনটা নষ্ট করে দিও না।
মেয়ের করুন মুখটার দিকে তাকালে সালমান কখনোই তার সম্মান রক্ষা করতে পারবে না। প্রাণপ্রিয় বন্ধুর কাছে ছোট হয়ে যাবে সে। অন্যায় করে ফেলবে সে। তাই সে মেয়ের দিকে তাকায় না।
সালমান নিজেকে শক্ত করে কঠিন গলায় বলে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“অনেক পড়েছো আর পড়তে হবে না। বড় মেয়ে পালিয়েছে তুমিও পালাবে না তার কি গ্যারান্টি আছে? কতোবার নাক কাটা যাবে আমার? বিয়ে তোমাকে করতেই হবে। কথা না বলে তৈরি হয়ে এসো।
বলেই সালমান চলে যায়। মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার মতো মুখ নেই তার। ছোঁয়া হতদম্ভ হয়ে যায় বাবার কথায়। কান্না থেমে যায় তার। বাবা জানে ছোঁয়া এমন করবে না। তবুও জোর করছে।
ছোঁয়া কি তাদের কাছে বোঝা হয়ে গেছে?
নাজমা বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে

” সিমি তোর বাবাকে আধমরা করে রেখে গেছে। এখন তুই অবাধ্য হয়ে পুরোপুরি মেরে ফেলিস না। চুপচাপ তৈরি হয়ে নে।
আমি পার্লারের মেয়েটাকে পাঠাচ্ছি।
ছোঁয়া নাজমার শাড়ির আঁচল ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে
“মা তুমি বাবাকে বোঝাতে পারবে না? তুমি তো চিনো মা ওনাদের? সাদি ভাইয়া আমাকে মে*রেই ফেলবে। আর সাবিনা আন্টি? উনি তো আমাকে দেখতেই পারে না। ওদের সাথে আমি কি করে থাকবো মা? তুমি আমাকে একটু বোঝো। নিজের মেয়েকে এভাবে অন্ধকারে কি করে ঠেলে দিচ্ছে?
নাজমা নিজের আঁচল ছাড়িয়ে নেয়।

” ম*র*বি না তুই চিন্তা করিস না।
নাজমাও চলে যায়। রেখে যায় অসহায় ছোঁয়াকে।
এক আকাশ সমান পরিমাণ অভিমান ছোঁয়ার সিমির প্রতি। কেনো সে পালালো? কে ছোঁয়াকে রেখে গেলো বলি হওয়ার জন্য?

আর পালাবেই যখন তখন কেনো বিয়েতে রাজি হলো? কখনো সে তার আপুকে ক্ষমা করবে না। কখনোই না।
সাদমান চৌধুরীকে চেনে ছোঁয়া৷ দুবার দেখা হয়েছে তাদের। একবার সিমিকে দেখতে আসার পরে আরেকবার শেষ এক্সাম দিয়ে বাসায় ফেরার পথে। লোকটা অহংকারী, দাম্ভিক। মানুষকে মানুষ বলে ভাবে না সে। নাকের ডগায় রাগ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। পান থেকে চুল খসলেই তাকে যা না তাই বলে অপমান করতেও দুবার ভাবে না সে।

এক্সাম শেষে ফেরার পথে ছোঁয়া আইসক্রিম খেতে খেতে বাসায় ফিরছিলো। সাদিকে দেখে বেশ খুশি হয়ে এগিয়ে গিয়েছিলো। তার দুলাভাই হতে যাচ্ছে। তার সাথে রাস্তায় দেখা হলো কথা না বলে গেলে খারাপ দেখায় না?
তাই ছোঁয়া কথা বলতে গেছিলো।
গাড়ির দরজা খুলে বসে কয়েকটা ছেলের সাথে কথা বলছিলো সাদি।
ছোঁয়া সেখানে গিয়ে হাসি মুখে সালাম দেয় সাদিকে।

সাদি গম্ভীর চোখে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। সালামের জবাব দেয় না। ছেলে গুলো তাকিয়ে ছিলো ছোঁয়ার দিকে।
অপমানিত হলেও আবারও ছোঁয়া জিজ্ঞেস করে
“কেমন আছেন ভাইয়া?
সাদি দাঁতে দাঁত চেপে কঠিন একটা ধমক দিয়ে বলে
” মেনার্স শিখো নাই তুমি? দেখছো না কথা বলছি? রাস্তাঘাটে একদম ডিস্টার্ব করবা না আমায়। আউট
অপমানে ছোঁয়ার চোখে পানি চলে এসেছিলো। সে মাথা নিচু করে চোখ মুছতে মুছতে চলে যায় সেখান থেকে।
একটু ভালো করে বললেও পারতো সে।

সেই দাম্ভিক মানুষটা পছন্দ করতো সিমিকে। তাদের একটা সুন্দর সম্পর্কও ছিলো। দুজনের সম্মতিতে বিয়ের কথাবার্তা এগোয়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসে ঘটা করে বিয়ের তারিখ ঠিক করে যায় সাদি।
গতকাল হলুদের অনুষ্ঠানও হাসিখুশি ভাবে করলো সিমি। আর সন্ধায়ই পালিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে একটা চিরকুটও লিখে গেছিলো। যাতে লিখা ছিলো “আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবা”

এতোসব ভাবনার মাঝে পার্লারের মেয়েটা ছোঁয়াকে সাজিয়ে তৈরি করে দেয়। সিমির জন্য আনা গহনা শাড়ি দিয়ে সাজিয়ে দেয় ছোঁয়াকে। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হয় ছোঁয়া। একদম অচেনা লাগছে তাকে। বিয়ের সাজে একটা মেয়েকে এতোটা অন্য রকম লাগতে পারে?
পার্লারের মেয়েটা ছোঁয়ার মুখটা দেখে মিষ্টি হেসে বলে
“মাশাআল্লাহ আপু

তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। একটু হাসো তাহলে আরও সুন্দর লাগবে।
ছোঁয়া হাসার চেষ্টা করে। কিন্তু হাসি পায় না। এইরকম অদ্ভুত পরিস্থিতিতে হাসি না পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
তখনই বেশ অনেকগুলো মেয়ে ঢোকে ছোঁয়ার রুমে। এখানকার একটা মেয়েকে চেনে ছোঁয়া। এটা সাদমান চৌধুরীর বোন তনু চৌধুরী। চেহারাটা সাদির মতো হলেও মেয়েটা বেশ মিশুক আর ভালো। তার সাথে ছোঁয়ার ভাব জমে গেছে অনেক আগেই। আর বাকি গুলো সাদির কাজিন রিলেটিভস।

তনু এসে ছোঁয়াকে একটুখানি জড়িয়ে ধরে।
” মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ ছোঁয়া তোমাকে অনেক কিউট লাগছে।
ভাইয়ার মাথা ঘুরে যাবে তোমাকে দেখলে।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে ফেলে।
রিনরিনিয়ে প্রশ্ন করে
“আপি পালিয়েছে সাদি ভাইয়া জানে?

তনুর হাসি মাখা মুখটা কালো হয়ে যায়। ছোঁয়াকে ছেড়ে দেয়। এদিক সেদিক চোখ ফিরিয়ে কিছু একটা চিন্তা করে। তারপর আবার ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে বলে
” জানবে না কেনো? পুরো শহর জেনে গেছে। বাদ দাও সে সব। তোমাকে নিতে এসেছি আমি। চলো
সবাই অপেক্ষা করছে।
ছোঁয়া দাঁড়িয়েই থাকে তনুর দিকে ছোট ছোট চোখ করে। তনু বুঝতে পারছে ছোঁয়া কিছু বলতে চাইছে তাকে।
তনু সবার দিকে এক পলক চোখ বুলিয়ে নেয়। তারপর ছোঁয়াকে বলে

“কিছু বলবে?
” আপু কেনো চলে গেলো? জানো তুমি?
“তোমার আপুর মনের খবর আমরা জানবো কিভাবে?
চলো তুমি। দেরি হচ্ছে। আমার আম্মু বেশ রেগে আছে। লেট করলে আরও রেগে যাবে।
ছোঁয়া যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। আর তখনই

অন্যরকম তুমি সিজন ২ পর্ব ২