অন্যরকম তুমি সিজন ২ পর্ব ২

অন্যরকম তুমি সিজন ২ পর্ব ২
তানিশা সুলতানা

শশুড় বাড়িতে প্রথম দিনটা কেমন হবে এটা নিয়ে প্রত্যেকটা মেয়েরই একটা আতঙ্ক থাকে। কিন্তু সেই আতঙ্কটা নেই শুধু ছোঁয়ার মধ্যে। তার চিন্তা অন্য কিছু।
কাবিন নামায় সাইন করেই সাদি চলে গেছে। কারো কোনো কথা শুনে নি৷ শশুড় মশাই আর ননদের সাথে শশুড় বাড়িতে পা রেখেছে ছোঁয়া। সারা রাস্তা এটাই ভেবে গেছে জল্লাদ বরের মুখোমুখি হবে কি করে? তার সামনে যাবে কি করে? তার সাথে রুম শেয়ার করবে কি ভাবে?

শশুড় মশাই আর ননদ নানা ভাবে ছোঁয়াকে হাসানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ছোঁয়ার হাসি পায় না। তার বুক ভরা কষ্ট।
সাধারণত প্রতিটি মেয়েকেই মিষ্টি মুখ করিয়ে শশুড় বাড়িতে ঢোকানো হয়। কিন্তু ছোঁয়াকে সাবিনা বেগম মিষ্টি খাইয়েছে ঠিকই সাথে কর্কশ গলায় বলেছেও
“আমার কাছে খবর আছে। সারাদিন চড়ুইয়ের মতো ঘুড়ে বেড়াও তুমি। ধিংগি পানা করাই তোমার স্বভাব। আমা
বাকিটা বলার আগেই ছোঁয়া ছোটছোট চোখ করে তাকিয়ে সাবিনা বেগমকে জিজ্ঞেস করে ফেলে
” ধিংগি কি শাশুড়ী?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সাবিনা দাঁত কটমট করে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। আসতে না আসতেই মুখে মুখে তর্ক শুরু করে দিয়েছে।
অনেক আত্নীয় স্বজন দাঁড়িয়ে ছিলো পাশে৷ তারাও হা হয়ে যায়। সাদেক চৌধুরী মুখ টিপে হাসে। যাকক এতোদিনে কেউ একজন এসেছে। যে তার তেঁতো বউটাকে হতমত খাইয়ে দিতে পারে।
তনু মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। ধমক দিবে না কি?
“এই মেয়ে মুখে মুখে একদম কটামি করবা না। এই বাড়িতে কারোর সাহস নেই আমার মুখের ওপর কথা বলার।
ছোঁয়ার ছোট্ট মাথায় আরও একটা প্রশ্ন উদয় হয়। বলবে কি বলবে না ভাবতে ভাবতে বলেই পেলে
“শশুড় মশাইয়েরও না?

সাদেক কেঁশে ওঠে। সাবিনা দাঁত কটমট করতে করতে চলে যায়। এই অসব্ভ মেয়ের সাথে একটাও কথা বলবে না সে। বেয়াদব মেয়ে।
ছোঁয়া মুখ বাঁকায়। এই মহিলাকে চেনে সে। তার বোনকে দেখতে গিয়ে এতো এতো প্রশ্ন করেছে। তখনই ছোঁয়া বুঝে গেছিলো ওনার মুখে মধু নেই।

বিয়ে বাড়ির আমেজটা এই বাড়িতে নেই। কেমন একটা মরা বাড়ি মরা বাড়ি বলে মনে হচ্ছে। সাউন্ড বক্স এনেছে কি বাজাচ্ছে না। মরিচ বাতি গুলো নেভানো। আত্নীয় স্বজনরা যার যার রুমে চলে গেছে। রাত সবে কয়টা? এগারোটা হবে।
ছোঁয়াকে নতুন সাদির রুমে নিয়ে যায়। ছোঁয়ার ভীষণ খিধে পেয়েছে। সারাদিন না খাওয়া সে। কিন্তু এখানে কেউ খেতে বলছেই না। মনে হচ্ছে এই বাড়িতে খাবার রান্না করাই হয় নাই।
রুমে পা দেওয়ার আগেই একটা পিচ্চি সামনে চলে আসে। একদমই পিচ্চি। বয়স কতো হবে? চার বা তার কয়েকমাস বেশি৷ গললুম, ধবধবে ফর্সা, একটা হাতে তিনটা ভাজ পড়েছে তার। হাতা কাটা ফ্রক পড়েছে। কোমর সমান চুল গুলো এলোমেলো।

বাচ্চাটাকে দেখেই ছোঁয়ার বেশ আদুরে লাগে। এতোখনে সে কোলেও তুলে নিতো কিন্তু বেশ ভারি হবে। কোলে তুলতে গিয়ে যদি না পারে? তখন?
তনু বাচ্চাটাকে দেখে হাঁটু মুরে বসে। বাচ্চাটার গালে দুই হাত রেখে জিজ্ঞেস করে
” মাম্মা কি হয়েছে? ঘুমাও নি কেনো?
পরি ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকায়। তারপর কাঁদো কাঁদো গলায় বলে
“পাপা কোথায়? আসছে না কেনো?

তনু কি বলবে বুঝতে পারছে না। তার ভাই আজকে বাড়ি ফিরবে কি না এটাও তার অজানা।
” তোমার মাম্মা চলে এসেছে। পাপা পরে আসবে। তুমি মাম্মা কাছে ঘুমাবে আজকে।
ছোঁয়াকে দেখিয়ে বলে তনু। পরি ছোঁয়ার দিকে মায়ামায়া চোখে তাকিয়ে থাকে।
ছোঁয়া চিন্তায় পড়ে যায়। কে এই বাচ্চাটা? এই বাড়ির বড় ছেলে সাদি। সে সবে বিয়ে করে আনলো তনুর বিয়ে হয় নি। তাহলে এই বাচ্চা আসলো কোথা থেকে?
তনু ছোঁয়াকে বলে

“পরিকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ভাইয়া চলে আসবে।
ছোঁয়া ফট করে প্রশ্ন করে ওঠে
” এই বেবিটা কে?
তনু পরিকে কোলে তুলে নিয়ে বলে।
“তোমার বরের মেয়ে।
ছোঁয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে। তার মানে সাদি আগেও একবার বিয়ে করে ছিলো। ছোঁয়া সাদির দ্বিতীয় স্ত্রী? একটা বিবাহিত ছেলের সাথে ছোঁয়াকে ধটে বেঁধে বিয়ে দেওয়া হলো?
এখন ছোঁয়াকে এই বাচ্চা মানুষ করতে হবে?
ভাবতেই কান্না পায় ছোঁয়ার।
তনু ছোঁয়ার মনোভাব বুঝতে পেরে বলে

” বাচ্চাটার সারাদিন প্রচুর জ্বর ছিলো। ওর ঘুম প্রয়োজন।
বলেই ছোঁয়ার কোলে এক প্রকার ঠেলে দেয়। ছোঁয়া পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নেয়।
তনুকে কোনো কথা না বলে রুমে চলে যায়।

রুমে গিয়ে আরেক দরফা সারপ্রাইজড হয়ে যায়। কারণ বিছানায় একটা বিড়াল আর একটা কুকুর শুয়ে আছে। ছোঁয়াকে রুমে ঢুকতে দেখেই ঘেউঘেউ করতে করতে তেরে আসে। ছোঁয়া ভয় পেয়ে এক দৌড় দিতে নেয় তখনই কিছু একটার সাথে বেঁধে ঠাসস করে পড়ে যায়। আশ্চর্য জনক ভাবে কুকুর বিড়াল ঘেউ ঘেউ বন্ধ করে চুপ হয়ে যায়।
ছোঁয়া বেশ ব্যাথা পেয়েছে। পেটের ওপর পড়েছে পরি। পরি বেশ মজা পেয়েছে সে খিলখিল করে হাসছে।
ছোঁয়া চোখ মুখ বন্ধ করে মরার মতো পড়ে আছে। পরির একটা কথায় ধাপ করে ছোঁয়া চোখ খুলে
“পাপা মাম্মা পড়ে গেছে।

হাত তালি দিয়ে বলতে থাকে পরি। ছোঁয়া চোখ খুলে দেখে সাদি বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। বিরক্ত হয় ছোঁয়া। তার এই গনেশের মতো মেয়েটাকে কি সে উঠাবে না?
ছোঁয়া যে আলুভর্তা হয়ে যাচ্ছে।
ছোঁয়া ওঠানোর কথা বলতে যাবে তার আগেই সাদি পরিকে কোলে তুলে নেয়। আদর করে কপালে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করে
” আর ইউ ওকে মাম্মা?
পরি ঘনঘন মাথা নারিয়ে জবাব দেয়
“এই এম ওকে

সাদি পরিকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে উঠে বসে। না উঠালো এটলিস্ট বলতে তো পারতো ” ঠিক আছো”
ছোঁয়া একা একাই উঠে পড়ে। কোমরে বেশ ব্যাথা পেয়েছে সে। কুকুর বিড়াল নিরবে শুয়ে আছে। যেনো তারা কিছুই করে নি।
ছোঁয়া রেগে চিল্লিয়ে বলে ওঠে

অন্যরকম তুমি সিজন ২ পর্ব ১

“আমি এই কুত্তা বিলাইয়ের সঙ্গে থাকতে পারবো না।
সাদি পরিকে বিছানায় বসিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত এক পলক দেখে বলে
” দরজা খোলা আছে।

অন্যরকম তুমি সিজন ২ পর্ব ৩