অপ্রিয় আশালতা পর্ব ১৪

অপ্রিয় আশালতা পর্ব ১৪
আফিয়া অন্ত্রীশা

ঘটনাস্থলে উপস্থিত কিছুসংখ্যক মানুষ মিলে সাদকে নিকটস্থ হসপিটালে নিয়ে যায়। সাদের অফিসের এক স্টাফ সাদের বাসায় কল দিয়ে সব কথা জানিয়ে দেয়। কল কেটে যেতেই সাজেদা বেগম অচেতন হয়ে মেঝেতে পড়ে যান। ফোন লাউড স্পিকারে থাকায় সব কথাই পাশ থেকে শুনেছে বাড়ির সবাই। সকলে শুধু স্তম্ভিত চোখে সাজেদা বেগমের মেঝেতে গড়িয়ে পড়াই দেখে গেল। কারো শরীরে ছিটেফোটা জোরও যেন অবশিষ্ট নেই।

সাদের অবস্থা বেগতিক হওয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা করে তাকে ঢাকার এক হসপিটালে শিফট করা হয়। এ্যাম্বুলেন্স এর হসপিটালে পৌছাতে আর পাচ থেকে ছয় মিনিট সময় লাগবে। সাদের অচেতন দেহখানার পাশে থাকা লম্বা সিটে একে একে বসে আছে সাদের মা,বোন,বড় ভাই,বড় ভাবি আর লিনা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সকলের চক্ষু লাল বর্ণ ধারণ করে আছে। সাজেদা বেগম ক্ষণে ক্ষণে হেঁচকি তুলছেন। ভেতরে ভেতরে ঘুরছে সন্তান হারানোর প্রবল ভ*য়। আজ বহু মাস পর সাদের জন্য একটু মায়া হচ্ছে লিনার। সাদের বড় ভাই পথেই তার ঢাকায় থাকা বন্ধুকে দিয়ে হসপিটালে কেবিন বুক করে ফেলেছেন।

রাত দুটো বেজে চব্বিশ মিনিট। নির্লিপ্ত চোখে ঘুমন্ত মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে আশা। হাফসা বেগম রাত বারোটার দিকে একবার চোখ খুলেছিলেন। ঘুমের ইঞ্জেকশনের তীব্রতা এতোই যে মিনিট দুয়েক পরে আবার চোখ বুজে ফেলেন। আশার পাশ ঘেষেই বেডের ওপর নিলুফা বসে আছে।

আচমকাই নিলুফা তার ভ্যানিটি ব্যাগ হতে একখানা ভাজ করা কাগজ এগিয়ে দেয় আশালতার দিকে। ভাজ করা কাগজ খানা নির্বিকার চিত্তে খুললেও ভেতরের লেখাগুলো পড়েই থমকে যায় সে। বি*স্ফো*রিত নয়নে নিলুফার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,

-হসপিটালের সব ফি কে পরিশোধ করেছে নিলু?
-কাব্য ভাই। (নিলুফা)
-তুই মানা করিস নি কেন?(আশালতা)
-আশা সবসময় এই কেন প্রশ্ন করাটা মোটেই উচিত না। কেউ যদি বি*পদের বন্ধু হয়ে আসতে চায় তবে ক্ষতি কিসের? লাইজু ম্যাডাম তোকে কত ভালোবাসে জানিস? কাব্য ছেলেটা মোটেও খারাপ না। এভাবে তাকে বো*কার মতো দূরে ঠেলে দিয়ে পরে পস্তাস না যেন। (নিলুফা)

চুপ হয়ে যায় আশালতা। নিলুফার কথাগুলো মস্তিষ্কে পৌছে বাড়ি খেতে শুরু করে। নিলুফা মোটেও ভুল কথা বলেনি।
কয়জনই বা বি*পদে এমন এগিয়ে আসে? আপন মানুষও তো নিজেদের স্বার্থপর প্রমাণ করে দেয়। এই বি*পদের বন্ধুদের অবশ্যই আগলে রাখা উচিত।

কাব্য কি শুধুই তার বি*পদের দিনের বন্ধু! এই ছেলেটা তো তার ভরদুপুরেরও মন খা*রাপের বন্ধু। হসপিটালের সকল ফি আর বিল মিলিয়ে দুইদিনের জন্য প্রায় ১৫ হাজারের মতো লেগেছে। এত টাকা সে এখন কই পেতো? কাব্য সব টাকা অগ্রিম পরিশোধ করে দিয়ে গেছে যেন আশালতার দুশ্চিন্তায় পড়তে না হয়।

আশালতা ভেবে নেয় পরের মাসেই সব টাকা পরিশোধ করে দেবে সে। যতই বি*পদে এগিয়ে আসুক অর্থের ক্ষেত্রে অন্তত কারো কাছে ঋণী থাকা মোটেও উচিত নয়।

আশালতার ভাবনার মাঝেই তার ছেলে ঘুম থেকে জেগে কেদে ওঠে। আশালতা দ্রুত ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে দোল দিতে থাকে। তবুও তার কান্না থামেনা। আশালতার দ্রুত ছেলেকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে দোতলা থেকে নিচে নীচতলায় নেমে আসে। বাড়ির উঠানের মতো নীচতলার বিশাল ফাকা জায়গাটাতে এসে ছেলেকে কোলে নিয়ে এ মাথা হতে ও মাথায় পায়চারী করতে থাকে আশালতা। এতক্ষণে তার ছেলেটাও কান্না থামিয়ে দিয়ে চুপ হয়ে গেছে। ছেলেকে ছোট কম্বলটা দিয়ে ভালো করে জড়িয়ে নেয় সে। হঠাত এক মহিলা কন্ঠ পেয়ে চমকে উঠে পেছনে ঘুরে তাকায় আশা।

-তুমিই কি আশালতা?
-জ্বী আমিই আশালতা। (আশালতা)
-কেমন আছো?
আশালতা মেয়েটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। আবছা স্মৃতিশক্তি হঠাৎ প্রখর হয়ে উঠতেই আশালতা চমকে ওঠে,

-আমি যদি ভুল না হই, আপনি লিনা তাই তো? (আশালতা)
লিনার ফ্যাকাশে মুখে কিঞ্চিত হাসি ফুটে ওঠে।
-তা আপনি এখানে হঠাৎ? (আশালতা)
লিনা ধীর কন্ঠে আশার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,

-আজ সাদ এক্সি*ডেন্ট করেছে আশালতা। অবস্থা খুবই খা*রাপ ছিল। অপারেশন করতে হয়েছে। এখন কিছুটা আশঙ্কা মুক্ত। ডান পা’টা কা*টা পড়েছে।
ছিটকে দুই কদম পেছনে সরে যায় আশালতা। দুই চোখ হতে অঝোরে জল ঝরতে আরম্ভ করে।

-আমি একবার ওকে দেখতে চাই। শুধুমাত্র একবার। আর কখনো দেখতে চাইবো না বিশ্বাস করুন। শেষ দেখাটুকু একটু দেখতে দেন প্লিজ। কাদতে কাদতে বলে ওঠে আশালতা।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে লিনা। থমথমে কন্ঠে বলে ওঠে,

-তোমার জায়গায় আমি হলে হয়তো কখনো শেষবারের জন্য হলেও দেখতে চাইতাম না ওকে। এই কথা শুনে আমাকে অ’মানুষ উপাধি দিতে চাইলেও আমি তা মাথা পেতে নেব। তুমি আসলেই একজন ভালো মনের মানুষ। তোমার চেহারার মাঝে যেমন অদ্ভুত মায়া আছে তেমনি তোমার মনের মাঝেও এক মহাসাগর পরিমাণ মায়া আছে।

আশালতা অবাক ভঙ্গিতে ভেজা চোখে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে লিনার দিকে। মেয়েটাকে সে এত কাল যেমনটা কল্পনা করে এসেছে আসলে সে ঠিক তেমনটাও নয়। হয়তো কোথাও একটু মানুষকে চেনা ও বোঝার ত্রুটিটুকু রয়ে গেছে তার।
-আশালতা তুমি আমাকে ভুল বুঝোনা প্লিজ। আমি জেনে শুনে তোমার সংসারে পা রাখিনি।

সাদ আমাকে কখনো বলেইনি ওর বিয়ে হয়েছে আগে। কথাটা আমাকে বিয়ের দিন রাতে জানিয়েছিল। কথাটা শুনে আমি যেই মুহূর্তেই তে*ড়ে উঠব ততোক্ষণে জানায় ওর সাথে তোমার ডিভোর্সও হয়ে গেছে। চুপচাপ সেদিন রাতে আমি মনে একরাশ ঘৃ*ণা চেপে নিয়ে দমে যাই। পরে জানতে পারি তুমি মা হতে চলেছো আর ডিভোর্স তখনও মাঝে পথে থেমে রয়েছে।

সেদিন আমার মনের ভেতর হাহাকার করে ওঠে। নাড়া দিয়ে ওঠে পুরোনো ক্ষ*তগুলো। আমার মায়ের সাথেও তোমার মতোই একই ঘটনা ঘটেছিল তবে সেই গল্পে আমার বাবা মায়ের মাঝের তৃতীয় পক্ষ ইচ্ছাপূর্বকই প্রবেশ করেছিল। আমার মা কত হাত পা ধরেছিল তার কা*পুরুষ স্বামীটার।

লা*থি দিয়ে দূরে ফেলে দিয়েছিল আমার মাকে। আমি শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে দেখেছিলাম। শশুড়বাড়িতেও জায়গা পায়নি আমার মা। আপন ভাইয়ের বউয়েরা পিঠে গরম খুন্তির ছ্যা*কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। মানুষের বাড়িতে কাজ করে আমার মুখে খাবার তুলে দিয়েছে, লেখাপড়া শিখিয়েছে আমার মা।

ওই লোকটা কখনো আমাদের খোজও নেয়নি। আমি চাকরি পেয়ে ভেবেছিলাম আমার মায়ের সব ক*ষ্ট দূর করে দেব। বাচ্চার মতো করে আগলে রেখে দেব। কিন্তু সেই সুযোগটুকু বেশিদিন আমার ভাগ্যে জুটেছিল না। আমি ছোট থেকে আমার মায়ের ল*ড়া*ই দেখে বড় হয়েছি। সমাজের মানুষ কত ঠাট্টা করেছে আমাদের নিয়ে। আর এখন সব মাটি চা*পা পড়েছে। আমার মা মানুষটাও নেই আর সমাজের মানুষের বি*ষাক্ত বুলিগুলোও এখন আর বের হয়না। কি জানি আমার মায়ের সাথে কিসের শ*ত্রুতা ছিল তাদের!

ক্ষানিক দম নেয় লিনা। অতঃপর আবার বলতে আরম্ভ করে,
-কার ভেতরে ঠিক কতটা রহস্যময় য*ন্ত্র*ণা লুকিয়ে থাকতে পারে তা তার আশেপাশের মানুষ ধরতেও পারেনা আশালতা। তোমাকে আমার মায়ের গল্প শোনানোর কারণটা কি জানো? আমার বাবা আর সাদের মতো একটা মানুষকে হলেও তার প্রাপ্যটুকু বুঝিয়ে দিতে পারলে আমার মতো খুশি আর কেউ হবেনা।

মনে বছরের পর বছর ধরে লুকিয়ে রাখা য*ন্ত্র*ণার অবসান ঘটবে। যেদিন তোমার ছোট ভাবি কল দিয়ে বলেছিল একটাবার সাদের সাথে তোমাকে কথা বলিয়ে দিতে! আমি দেইনি। আমি চাইনি তুমি ফেরো এদের সংসারে। কেননা এরা এবার তুমি ফিরলে হয়তো মে*রে ফেলতো তোমাকে।

তোমার ছোট ভাবি যখন আমাকে বলেছিল তোমার গর্ভে সাদের সন্তান আমি সেদিন সাদের মাকে জানিয়েছিলাম যখন, তিনি বলেছিলেন যে সে আগে থেকেই জানে। তোমার প্রেগনেন্সি কিটটা সে দেখে ফেলেছিল। এমনকি তোমার বাচ্চাটাকে তখনই শেষ করে দেয়ার অনেক চেষ্টা চালিয়েছিল। আমি নির্বাক হয়েছিলাম এদের এক একজনের ভয়া*বহ রূপ দেখে। আমি ইচ্ছাপূর্বক নিজ হাতে ডিভোর্স পেপার সাদের কাছে নিয়ে গিয়ে সাইন করিয়েছিলাম।

হয়তো মনে মনে আমাকে তুমি কঠিন কঠিন গা*লি দিতে পারো। তবে আমি কিছুই মনে করব না। আমি চাইনা তোমার জীবনটাও আমার মায়ের মতো হোক। আমি চাইনা তোমার কোলের বাচ্চাটার অবস্থা আমার মতো হোক। আমি জানি আমি খা*রা*প। তবে আমি অ*মা*নু*ষ নই আশা। আমি এই সাদকে একদম নিঃস্ব করে দিয়ে ছাড়ব। বিশ্বাসঘা*ত*কতার য*ন্ত্র*ণা ঠিক কতটা ভ*য়ংকর তা আমি ওকে কড়ায় গন্ডায় বুঝিয়ে ছাড়ব। আফসোস করতে করতে সারাজীবন পার হয়ে যাবে ওর এমন ব্যবস্থা করব আমি।

-আর আপনার কি হবে তবে? (আশালতা)
-আমার আর কি হবে? কপালে যা আছে তাই! এই সংসারে পা রেখেছিলাম তো নিজের শত অপূর্ণ ইচ্ছে গুলোকে পূর্ণতা দেবার জন্য। অনেকখানি সুখ খুজে নেয়ার জন্য। অঝোর ভালোবাসায় নিজেকে শিক্ত করার জন্য। কিন্তু আমিতো বুঝিনি ব্যাপারটা ঠিক এমন হবে! সম্পর্কটা শুরুই হবে ধো*কা আর বিশ্বাসঘা*ত*কতা দিয়ে!

ওর প্রতি সকল ভালোবাসা তো আমার সেদিনই উবে গিয়েছিল। নেহাৎ ও আমাকে পাবার জন্যই নিজের প্রথম ঘর ভে*ঙ্গেছে! সেইতো আমার সাথেও ছলনা করল। আমিতো এমন ভালোবাসা কখনোই চাইনি। ঘৃ*ণা আর ধি*ক্কারই আসে শুধু এমন ভালোবাসা দেখলে।

লিনার ভেজা গলায় বলা কথাগুলো শুনে আশালতা বেশ বুঝতে পারে মেয়েটা বহু ক*ষ্টে কান্নাটা চেপে রেখেছে।
-আমি আপনাকে ঠিক কি বলব ভাষাই খুজে পাচ্ছিনা। এতদিন আপনাকে নিয়ে মনে যা পুষে রেখেছিলাম সব আজ দূর হলো। (আশালতা)
মুচকি হাসে লিনা। আশালতার ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠা,
-ছেলে বুঝি? (লিনা)
মাথা নাড়ায় আশালতা। “আমার কোলে একটু দাও তো। কি নাম রেখেছো?” বলেই বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নেয় লিনা।

-আদিব। (আশালতা)
-বাহ সুন্দর নাম। তবে আশালতা একটা কথা! সাদ কখনো ক্ষমা চাইতে এসে তোমাকে ফিরে যেতে বললে যেওনা কখনো। সুখী থাকবে দেখো। তবে একাও থেকো না। বার্ধক্যের সময়ে বারান্দায় কারো পাশে বসে তার দিকে তাকিয়ে থেকে ধোয়া উড়ানো চায়ের কাপে নিশ্চিন্তে চুমুক দিতে পারো এমন কাউকেই খুজে নিও। পেয়ে গেলে দূরে ঠেলো না। আজকাল মানুষের এই ব্যস্ত শহরে যে একটা ভরসার হাতের আর খাঁটি ভালোবাসার বড্ড অভাব। (লিনা)

আশালতা নির্বাক হয়ে শুধু লিনার কথাগুলোই শুনে যায়।
পাশের কেবিনে সাদের পরিবারের সকলে যখন ক্লান্ত শরীর নিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন সাদের কেবিনে আশালতাকে নিয়ে পা টিপে টিপে প্রবেশ করে লিনা। শেষবারের মতো সাদকে দেখে নেয় আশা। নীরব ভঙ্গিতে কেদে কেটে দিশেহারা হয়ে কেবিন থেকে এক ছুটে বেরিয়ে আসে আশালতা। আর কখনো সে দেখবেনা সাদকে। মানুষটাতো আর তার নেই!

কেটে গেছে প্রায় দেড়টা বছর। আশালতার করা হরেক রকম জামার ডিজাইন দেখে ফ্যাক্টরির সব উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিরা মালিকের নিকট অনুরোধ জানায় তাকে ফ্যাক্টরির ড্রেস ডিজাইনার পোস্টে নিযুক্ত করার জন্য। হাতের কাজের ওপর করা স্পেশাল ট্রেইনিং আশালতার মনে ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার আকাঙ্ক্ষা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল।

কাব্যসহ আশালতা তার সহকর্মীদের জোরাজুরিতে পুনরায় লেখাপড়ায় মনোযোগ দেয়। একটা ভার্সিটিতে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে অনার্স কমপ্লিট করার জন্য ভর্তি হয়ে যায়। ভর্তির সকল ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিল কাব্য। যার দরুণ আশালতা সারাজীবন তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে প্রস্তুত।

বেড়ে যায় আশালতার আরও দশ গুণ অধিক সং*গ্রাম করবার ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা। জোগাড় করে নেয় সে আরো দুটো তিনটে টিউশন। ফ্যাক্টরিতে নিজের দায়িত্ব সামলে রোজ ভার্সিটিতে ক্লাস করে টিউশনগুলো শেষ করে সন্ধ্যার পরে বাসায় ফেরে আশালতা। ছেলে আর মাকে একটু সময় দিয়েই বইয়ে মুখ গুজে বসে পড়ে। কখনো কখনো সারারাত চলে তার ভার্সিটির প্রেজেন্টেশন তৈরির কাজ।

কখনো কখনো ছেলেটাকে সাথে নিয়েই বের হয় আবার কখনো কখনো হাফসা বেগমের কাছে রেখে যায়। ছেলে আর মা উৎসুক দৃষ্টিতে রোজ দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে আশালতার ফেরার আশায়। ইদানীং আশালতার মনে ইচ্ছা জেগেছে ছোটখাটো একটা দুই রুমের বাসা নেবার।

অপ্রিয় আশালতা পর্ব ১৩

রুম গুলোর একটা রুম তাদের থাকার জন্য বরাদ্দ থাকবে আর আরেকটাতে তার মতোই শত অসহায় মেয়েদেরকে স্বল্প খরচে হাতের কাজের ট্রেইনিং প্রদানের ব্যবস্থা করবে। যেই ভাবনা সেই কাজ! একটা ছোটখাটো বাসাও নিয়ে নেয় সে। যথারীতি মনের প্রবল ইচ্ছাটাকেও প্রাধান্য দিয়ে ফেলে। প্রত্যেক শুক্রবার আর শনিবার মেয়েদেরকে হাতের কাজের ট্রেইনিং দিতে শুরু করে। আশালতার এতো পরিশ্রমের প্রমাণ বহণ করে একমাত্র তার চোখের নিচে পড়ে যাওয়া কালি।

অপ্রিয় আশালতা পর্ব ১৫