অপ্রিয় আশালতা পর্ব ১৫

অপ্রিয় আশালতা পর্ব ১৫
আফিয়া অন্ত্রীশা

প্রতিদিনের ন্যায় আজও সর্বশেষ টিউশনটা শেষ করে সন্ধ্যা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরছিল আশালতা। তবে আজ শরীরটা বেশ দূ*র্ব*ল থাকায় বাসে চ*ড়ে বসেছিল। একে তো সিট খালি নেই তার ওপর আবার ঠে*লা*ঠে*লি করে দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে।

গ্রীষ্মের তা*প*দা*হে অ*তি*ষ্ট হয়ে আশালতার মন চায় ছুটে বাস হতে নেমে যেতে। হঠাৎ আশালতা তার কো*ম*রে কারো স্প*র্শ অনুভব করে। এই স্প*র্শ*কে খুব বা*জে উপাধি অনায়াসে দেয়া যাবে। অবস্থা যখন বেগতিক তখন আশালতা পাশ ফিরে লক্ষ্য করে এই কাজ তার বাবার বয়সী একজন লোক করছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ওমনি তার শরীরে আ*গু*ন জ্ব*লে ওঠে। আশপাশে চোখ বুলিয়ে আশা লক্ষ্য করে আরও দুই তিনজন লোক ঠিক একই কাজ করে যাচ্ছে অন্য কিছু মেয়ের সাথে। চুপচাপ আশালতা তার হিজাব হতে দুটো পি*ন খুলে নিয়ে সুযোগ বুঝে পাশের বয়স্ক লোকটার হাতে গে*থে দেয়। ওমনি বাস ভর্তি লোকজনের মাঝে এক গগণ বি*দা*রী চি*ৎ*কা*র দিয়ে ওঠে লোকটা। সাথে সাথেই আশালতা পাশ ফিরে লোকটার বাম গালে একটা থা*প্প*ড় বসিয়ে দেয়।

-কোন পর্যায়ের অ*মানুষ তোরা? মেয়ের বয়সী মেয়েদের সাথে এমন বা*জে কাজ করতে রুচিতে বাধেনা? ঘরে তো মনে হয় মেয়ে আছে। তবে অন্যের মেয়েদের দিকে কেন এমন দৃষ্টি? তোর নিজের মেয়ের সাথে এমনটা হলে বাবা হয়ে তা সহ্য করতে পারতি? তোদের জন্য মেয়েরা রাস্তা-ঘাটে কোথাও-ই রে*হা*ই পায়না।

কি শান্তি পাস তোরা এমনটা করে বল? ফুলের গায়ে টো*কা দিবি আর কা*টা*র ঘা খাবিনা তা হয়? একদম হাত কে*টে রেখে দেব। আর মেয়েরা তোমরাও বা কেমন? মেয়েদের স*হ্য ক্ষমতা বেশি তাই বলে কি সব স*হ্য করে নেবে? বারবার স*হ্য করো বলেই তো রাস্তা-ঘাটে এভাবে হে*ন*স্তা হওয়ার পরে আর মুখ ফুটে প্র*তি*বা*দ করার শব্দ খুজে পাওনা। রু*খে দাড়াতে শেখো আর কেউ টো*কা দেওয়ার সুযোগ পাবেনা। মেয়ে মানুষ ফুলের মতো হয়।

তবে শুধু কোমলতার রূপ নিজের মধ্যে ধারণ না করে গোলাপের গায়ে যেমন কা*টা থাকে তেমন কা*টা*র মতো রূপও নিজেদের মাঝে ধারণ করো। কেউ দ*মা*তে আসলেই কা*টা বি*ধি*য়ে দেবে। ফু*স*তে ফু*স*তে আশালতা কথাগুলো বলে ওঠে।

মাঝ রাস্তাতেই বাস থামিয়ে নেমে যায় আশালতা। আশালতা হাটছে আর মুচকি মুচকি হাসছে । এতক্ষণে বোধ হয় বাসে তু*ল*কা*লা*ম লেগে গেছে। অ*মানুষগুলোকে হয়তো গ*ণ*পি*টু*নি দেওয়া আরম্ভ করে করেছে বাসের যাত্রীরা। মেয়েগুলোও বোধ হয় ফু*সে উঠেছে এতক্ষণে। হয়তোবা অনেকেই এখনো আশালতার কথার রে*শ কাটিয়েই উঠতে পারেনি!

কাঙ্ক্ষিত স্থানটায় আসতেই আজ আর প্রতিদিনের চেনা মুখটা এসে তার সামনে হাজির হয়নি। চোখের মণি ঘুরিয়ে এদিকে ওদিক কাউকে খুজতে আরম্ভ করে আশালতা।
-কি ম্যাডাম আজ কি একটু দেরি করে ফেললাম নাকি?

আচমকা সেই চির চেনা কন্ঠটা কানে এসে পৌছাতেই আশালতা চমকে ওঠে। নিজেকে ধা*ত*স্থ করে নিয়ে বলে ওঠে,
-আচ্ছা মিঃ কাব্য আমাকে একটু বলুন তো আপনি রোজ এই সময়ে কেন এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন?

-আমিতো আপনাকে দেখার রোজকার তৃ*ষ্ণা মেটাতে আসি। আপনার সাথে একটু কথা বলার লো*ভে এখানে আসি। সন্ধ্যার এই ল্যাম্পপোস্টের আলোতে আপনার সাথে পায়ে পা মিলিয়ে হাটার লো*ভে এখানে ছুটে আসি। তা আপনি বলুন তো, আগের মতো আমাকে দেখলে আর বি*র*ক্ত*বো*ধ কেন করেননা? আপনার চোখে-মুখে কেন সেই আগের মতো বি*র*ক্তি*বো*ধ ফুটে ওঠে না। (কাব্য)
কাব্যের কথায় থতমত খেয়ে আশালতা বলে ওঠে,

-তা আমি জানিনা। আপনি কেন আমার পেছনে সময় ন*ষ্ট করছেন? আপনার স্ট্যাটাসের সাথে একদম আমার যায়না কাব্য। আমার মতো এমন কালো ব*র্ণে*র মেয়েকে একদম আপনার সাথে মানায় না।
এবার কাব্য বেশ রে*গে যায়। হুং*কা*র দিয়ে বলে ওঠে,

-বোঝেন না কেন পড়ে আছি আপনার পেছনে? ভালোবাসি আপনাকে আমি। কিসের স্ট্যাটাসের কথা বলছেন আপনি? অর্থ-বি*ত্ত*র কথা বলছেন? উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার পরে আমার আব্বুর থেকে আমি কখনো এক টাকাও নেইনি। নিজের খরচ নিজে চালিয়ে আসছি।

ছোটখাটো একটা চাকরি করে হালালভাবে কিছু অর্থ উপার্জন করি আমি। আর তা দিয়ে সাদামাটাভাবে চলি। ইচ্ছা আমার আপনাকে নিয়ে সাধারণভাবে ছোট্ট একটা সংসার সাজাবো। যেখানে সুখের বিপরীতে অন্য কিছুই থাকবেনা। আর কি বললেন আপনি কালো? আমার সাথে মানাবেনা? ইউ নো হোয়াট? আমার কাছে আপনি এবং আমার মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দর নারী। কেন আমাকে একটু ভালোবাসতে আপনার ইচ্ছে হয়না? কি এমন দো*ষ আমার?

আশালতা ক্ষানিক সময় ক্লা*ন্ত চোখে কাব্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর গম্ভির কন্ঠে বলে ওঠে,
-বু*ক পকেটে যে প্রতিদিন বেলী ফুলের মালা নিয়ে ঘোরেন! তা যার জন্য নিয়ে আসেন তাকে কেন দেন না? সে তো প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকে কবে মিঃ কাব্য তাকে নিজ হাতে বেলী ফুলের মালা খানি হাতে মু*ড়ি*য়ে দেবে।

খুশিতে কাব্যের চোখ চিকচিক করে ওঠে। আ*হ্লা*দে গ*দ*গ*দ হয়ে বু*ক পকেট হতে মালা খানা বের করে আশালতার বাড়িয়ে দেয়া ডান হাতখানায় মু*ড়ি*য়ে দেয়। আশালতা মুচকি হেসে ডান হাতখানা দিয়ে কাব্যের বাম হাতের আঙ্গুল গুলো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেয়। হাসিখুশি দুটো মানুষ নির্লিপ্তভাবে ব্যস্ত রাস্তা এক সঙ্গে পাড়ি দিতে আরম্ভ করে। মুখে তাদের কথা না থাকলেও মনে মনে যেন দুজনে কতশত গল্পে মুখোরিত হচ্ছে!

বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে নিজের চুল খাম*চে ধরে এক ভ*য়ং*কর দিনের স্মৃতি চারণে ডুব দেয় সাদ।
-ব্যাগ গোছাচ্ছো কেন লিনা? বিছানায় শুয়ে শুয়ে কথাগুলো বলে ওঠে সাদ।
মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে তুলে লিনা বলে ওঠে,

-যেই দিনটার জন্য এতদিন অপেক্ষা করে ছিলাম সেই দিনটা যে আজ চলে এসেছে সাদ। এই পেপারস গুলো দেখছো? তোমার সম্পত্তি আর টাকা-পয়সা যে এখন থেকে আমার নামে হয়ে গেছে সব প্রমাণ এখানে রয়েছে। মনে আছে আশা আর তোমার ডিভোর্সের পেপারসগুলোতে সাইন দিয়েছিলে? মানুষ তো একবার চেক করে দেখে কি লেখা আছে!

ডিভোর্স পেপারে সাইন ঠিকই তুমি করেছো তার সাথে সব সম্পত্তি আর টাকা-পয়সা যে তুমি আমার নামে করে দিচ্ছো সেই সাইনটাও তুমি করে দিয়েছিলে এই পেপারে। সব প্রসেসিং করতে করতে এতোটা মাস লেগে গেল। আমাকে আবার লো*ভী ভেবো না! এই টাকা,সম্পত্তি কিছুই আমার জন্য ব্যয় করব না।

সব চলে যাবে এ*তি*ম*খানাগুলোতে। কিভাবে তোমার এতদিনের স্থাপিত বিশ্বাসটাকে এক নিমিষেই ভে*ঙ্গে দিলাম তাইনা? আ*ফ*সো*স হচ্ছে? তোমার মতো পুরুষেরা কেন ছ*ল*না করার আগের ছ*ল*না*র প*রি*ণা*ম*টার কথা চিন্তা করেনা? আশালতার মতো সহজ-সরল মেয়েটাকে তুমি যেভাবে ঠ*কা*লে একটু বু*ক কাঁ*প*ল না তোমার? তোমার ওই বি*ষা*ক্ত মুখে কখনো আমার জন্য ভালোবাসা শব্দটা উচ্চারণ করো না সাদ। ঘৃ*ণা হয় আমার। প্রচুর ঘৃ*ণা হয়।

এতক্ষণে শাড়ির আচল দিয়ে দুইবাহু আ*ষ্টে*পৃ*ষ্টে জড়িয়ে রাখার বাধন হালকা করে এক বাহু হতে আচল ছি*ট*কি*য়ে সরিয়ে ফেলতেই সারা দুই হাতে আর কাধের ওপরে লাল লাল কা*টা কা*টা দা*গ*গুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নিজের মুখে কয়েকটা থা*প্প*ড় নিজেই বসিয়ে দিয়ে চুল এলোমেলো করে নেয় লিনা। সাদ কাঁ*পা কাঁ*পা কন্ঠে বলে ওঠে,
-কি করতে চাইছো তুমি লিনা?

-শুধু চুপচাপ দেখা যাও জান। বলেই ছুটে চি*ৎ*কা*র দিতে দিতে ঘর হতে বেরিয়ে একদম বাসার বাইরে বেরিয়ে আসে লিনা। চি*ৎ*কা*র করে কান্না করে করে আশেপাশের মানুষ জড়ো করে ফেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই। এতক্ষণে সাজেদা বেগম ও ছবি এসে বাইরে দাড়াতেই তাদের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়। কি করছে লিনা এটা? কিছুক্ষণের মধ্যে উপস্থিত সকলে তেঁ*তে ওঠে,

বাড়ির বউকে এভাবে সকলে মা*র*ধো*র করে কিভাবে? তবে কি আগের বউটাকেও এইভাবেই অ*ত্যা*চা*র করে বিদায় করেছে এরা? সাদের পরিবারের মাথায় আকাশ ভে*ঙ্গে পড়ে যেন। কাউকেই তারা শত বুঝিয়েও কু*লি*য়ে উঠতে পারেনা যে লিনাকে তারা একদম কোনো অ*ত্যা*চা*র করেনি। উপস্থিত সকলে পুলিশ ডাকার হু*ম*কি দিতেই লিনা কান্নার ভা*ন করে সকলকে মানা করে দেয়।

সকলের সাহায্যেই ব্যাগপত্র নিয়ে সাদদের বাসা হতে বেরিয়ে আসে লিনা। সাদ প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত চুপ করেই দেখে গেল সব। যেন এটাই তার প্রাপ্য ছিল। সাজেদা বেগম বেশ বুঝে ফেলেন, লিনা যে ইনডিরেক্টলি আশালতার কাহিনীটাই নিজের মাধ্যমে সকলের কাছে ফুটিয়ে তুলে গেল!

বড় ছেলেটা ঠিকভাবে যোগাযোগ করেনা আজ কয়েকমাস। ছোট ছেলেটা তো প*ঙ্গু হয়ে বিছানায় পড়ে রয়েছে। শেষমেশ লিনা সব সম্পত্তি কৌশলে কে*ড়ে*তো নিলোই তার ওপর সারা এলাকাবাসীর নিকট তাদের রূপটা তুলে ধরে গেল। ঠিক মতো তিন বেলা খাবারও জো*টে*না কপালে।

অপ্রিয় আশালতা পর্ব ১৪

এখন আ*ফ*সো*স করতে করতেই কপাল চা*প*ড়া*ন সাজেদা বেগম। মনে মনে একটা কথাই শুধু বিড়বিড় করে উচ্চারণ করেন, “তবে কি এটাই ছিল তাদের প*রি*ণা*ম?”

অপ্রিয় আশালতা শেষ পর্ব