অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৯ শেষ অংশ

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৯ শেষ অংশ
নন্দিনী নীলা

হুট করে বাসার বিয়ের ধুম পড়ে গেল যেন। বিয়ের কথা শুনতেই ছোঁয়া নিবিড়কে ডেকে নিয়ে বলেছে,”এত তাড়াতাড়ি কি আছে? আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি! বিয়ে তো কয়দিন পর ও হতে পারবে! আপনি এসব বন্ধ করুন এখন।”
নিবিড় আমার কথায় স্তব্ধ হয়ে গেছে। অবাক গলায় বলল,”তুমি কি চাও না আমাদের বিয়ে হোক?”

আমি আমতা আমতা করে বলি,”অবশ্যই চাই! কিন্তু আমি সত্যি এখন এত মানুষের মাঝে যেতে চাই না। আপনি প্লিজ বিয়েটা কোনভাবে বন্ধ করুন।”
“এত মানুষের মাঝে যেতে চাও না মানে কি বলতে চাচ্ছ?”
“আসলে এতো ধুমধাম এত আয়োজন করে বিয়ে আমি করতে চাই না।”
“বাট হোয়াই? ছোঁয়া আমার মনে হচ্ছে তুমি আমায় থেকে কিছু লুকাচ্ছো! কিছু নিয়ে তুমি খুব ভয় আর টেনশন আছো আই এ্যাম রাইট?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হঠাৎ করে ছোঁয়া রেগে গেল নিবিড় কে চিৎকার করে বলল,,” কি লুকাবো কি বলতে চাচ্ছেন আপনি? এতসব আয়োজন বন্ধ করুন না হলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।”
নিবিড় বিষ্ময় এ হতভম্ব। এই ছোঁয়া কে ও চিনতে পারছে না। বাবা কাকা এত শখ করে বিয়ের আয়োজন করছে। বাসার সাজানোর লোক পর্যন্ত চলে এসেছে। সবকিছু ফাইনাল সেখানে ছোঁয়া কি না বাধ সাধছে।

যেখানে ওর সবচেয়ে আনন্দ আর খুশি হওয়ার কথা ছিল। সেখানে ও কিনা রাগ দেখাচ্ছে এই বিয়েটার হচ্ছে এজন্য। তাহলে কি সত্যি ছোঁয়া আমাকে কোনদিনই ভালোবাসে নি। আমি এতো দিন মিথ্যে আশায় দিন গুনছিলাম। নিবিড়ের ভেতর ধপ করে সব কিছু ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। ভালোবাসা টা হঠাৎ করেই কেমন যেন ফিকি হয়ে গেল।

ছেলেমানুষ সহজে কাঁদে না কিন্তু নিবিড় এর চোখ ছল ছল করে উঠল। ছোঁয়া সেই চোখের দিকে তাকাতে পারলো না। দৌড়ে বেলকনিতে চলে গেল। নিবিড় আহত ভাঙ্গাচুরা মনটা নিয়ে এলোমেলো পায়ে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। পৃথিবীর সবকিছুই ওর কাছে তুচ্ছ লাগছে সব কিছু ধ্বংস করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।

ছোঁয়া কিভাবে পারলো ওর মনটা ভেঙে দিতে। ও কি এতো টাই ভুল চিনল ছোঁয়া কে? ওর চোখে যে ভালোবাসা দেখেছিল সেটা কি ভুল ছিল?
ছুটে এসেছে লিলি প্রাণপ্রিয় বান্ধবী কে এতদিন পর ফিরে পাওয়ার খবর শুনে এক মুহুর্ত থাকতে পারিনি। ছোঁয়ার সময়টা কেটে গেছে বিষন্নতার মাঝেও ভালো। ভিডিও কলে দীপার সাথে কথা বলেছে। দেখেছে নতুন অতিথি দীপার মেয়েকেও।
ছয় মাসের মেয়ে নিয়ে দীপাও আসবে দেখা করতে ছোঁয়া বলেছে ও নিজেই আসবে।

ছোঁয়া আর ভর্তি হয়নি শুনে মন খারাপ করল লিলি
। ছোঁয়া পিছিয়ে গেল ওর থেকে। দীপা পর্যন্ত শেষ পর্যন্ত এসে ভর্তি হয়েছে।
” আমার কি যে খুশি লাগছে দোস্ত তুই ফিরে এসেছিস। ভাইয়ার কি যে অবস্থা হয়েছিল পাগল হয়ে গেছিল তোর নিরুদ্দেশে। তোর উপর খুব রাগ করেছিলাম এমনটা কেন করেছিলি বল প্লিজ। ”

” আপন মানুষরুপী শত্রু দের ভালো থাকার জন্য।”
” মানে?”
” তাহমিনা চাচি নিবিড়ের মেজ চাচি চিনিস ত?”
” হুম। তোর পর সম্পর্কের আপন বোন।”
” পর সম্পর্কের পর বোন। তাকে খুশী রাখতে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। নিবিড় এর মা যে কতো বড় খেলোয়াড় ভাবতে পারবি না।”

” সব খুলে বল প্লীজ।”
” ভালো লাগছে না। পরে একদিন বলব। দোস্ত সামনে খুব ঝড় আসতে চলেছে। ঝড়টা থামানোর রাস্তা নাই। আমি কি করব।”
” কি হয়েছে তোর কাঁদছিস কেন বল আমাকে।”
” পারব না বলতে। নিবিড় খুব কষ্ট পেয়েছে ওকে একটু দেখে যাইস!”
“ভাইয়া তোর জন্য অনেক কষ্ট করেছে রে আর কষ্ট দিস না। এতো কষ্ট সহ্য করতে পারবে না।”
” আমি বোধহয় কষ্ট ছাড়া তাকে আর কিছু দিতে পারব না ”

” এতো রহস্য করতে পারিস ধুর তোর সাথে আমার দেখা করতে আসায় উচিত হয়নি। চলে তো গেছিলি সবাইকে ছেড়ে আমাদের তুই আপন ভাবিস নাকি। আমরা শুধু তোর চলার পথের সঙ্গী আপন হতে পারিনি।”
লিলি রাগ করে চলে গেল। চেয়েও ওকে থামাতে পারলাম না। কি হচ্ছে এসব সবাই এমন রাগ কেন করছে আমার সাথে। এই সব কিছু হয়েছে ওই মানুষটার জন্য। সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।

বিয়ে বন্ধ করা নিয়ে যে নিবিড় কিছুই করেনি সেটা বাড়ির লোকজনের এক্সপ্রেশন দেখে বুঝে গেলাম। তারা সবাই কাজে লেগে আছে। আশে পাশে নিবিড়ের মাকে দেখছি না।
ছোট চাচি মুখটা ভোঁতা করে ঘোরাঘুরি করছে। তাহমিনা চাচি ও কাজ ভালো করছে।
হাসিখুশি মুখটা দেখতে ভালো লাগলেও আমি তাকিয়ে আছি অসহ্য কর চোখে তার হাসি জাস্ট সহ্য হচ্ছে না যেন। এই মানুষটার মিথ্যা ভালোবাসার নাটক দেখে গলে গেলাম কেন?

রাফসান কাকা সব জানতে পারলে নিজেকে সামলাতে পারবে তো? কতো ভালো মানুষটা তার কেন এই বহুমুখী নারীকেই ভালো বাসতে হলো।
উফফ ভালো রা কেন ভালোর সঙ্গ পায় না।
নিবিড় কে চারপাশে খুঁজলাম আজ সারাদিন তার দেখা নাই‌। সেই যে সকালে গেল রাগ করে‌। দুপুরে আশা খাবার দিয়ে গেছিল। নিবিড়ের কথা জিজ্ঞেস করতে বলেছে বাইরে খাবার খাচ্ছে।
তারপর লিলি আসায় ওকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছিলাম।

আশাকে দেখতে পেলাম দৌড়ে আসছে বাইরে থেকে আমি ওকে নিবিড়ের কথা জিজ্ঞেস করব তার আগে আশা চিৎকার করে বলতে লাগল,,,” হায় আল্লাহ কি হ‌ইয়া গেল গো। আমাগো নিবিড় ভাইজান মাথা ফাটাইয়া আইছে। তাড়াতাড়ি আহেন”

আমি চমকে উঠলাম আশার কথা শুনে অতঃপর দৌড়ে এলাম। নিবিড়ের মাথায় ব্যান্ডেজ করা। সমস্ত ঘটনা নিবিড়‌ই গড় গড় করে বলল। গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিল হঠাৎ করে নাকি একটা বাইকের সাথে ধাক্কা লাগে। মাথায় জোড়ে বারি খেয়ে এই অবস্থা এরপর নিজেই ড্রাইভ করে হসপিটালে গিয়ে ব্যান্ডেজ করে এসেছে।

এইসব ঘটনা আমার জন্য ঘটেছে সেটা আমার বুঝতে বাকি রইলো না। আমার উপর রাগ করে নিবিড় অন্যমনস্ক হয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল। যার ফলস্বরূপ এই এক্সিডেন্ট। নিবিড় কে ধরে রুম পর্যন্ত পৌঁছে দিতে চাইলো কিন্তু নিবিড় হাত দিয়ে থামিয়ে বলল,,”এতটাও অচল হয়ে যাইনি যে নিজের রুম পর্যন্ত একা যেতে পারবো না। আমি একটু একা থাকতে চাই কেউ আমাকে ডিস্টার্ব করো না।”

বলেই গটগট পায়ে চলে গেল রুমে। নিবিড় রুমে ঢুকে দরজা আটকাতে যাবে তখনই আমি হুরমুড় করে রুমের ভেতর প্রবেশ করলাম। নিবিড় আমাকে আটকাতে গিয়েও আটকাতে পারল না আমি ওর হাতের নিচ দিয়ে নিচু হয়ে ভেতরে ঢুকে গেছি।
নিবিড় দরজা থেকে হাত সরিয়ে পেছনে ফিরে আমার দিকে তাকালো রাগী চোখে।

” এখানে কি করছো তুমি? বললাম না আমি এখন একা থাকতে চাই। বের হ‌ও রুম থেকে।”
“আপনার এক্সিডেন্ট কিভাবে হলো?”
“বাইরে যা বলার বলে এসেছি। এখানে আবার জিজ্ঞেস করার মানে কি?”
“মানে হলো আপনি মিথ্যা বলেছেন! আমি সত্যিটা জানতে এসেছি!”

“আচ্ছা মিথ্যে বলেছি। তোমাকে আমি সত্যিটা বলতে যাব কেন? কে হও তুমি আমার?”
” সেটা আমার বলতে হবে? আপনি জানেন না আমি আপনার কি হ‌য়?”
“নিজে কথা গোপন রাখতে পারো আমি পারব না কেন?”
আমি থতমত খেয়ে গেলাম।
” আপনি আমাকে ভুলে বুঝছেন!”

” সব সময় তো ভুল বুঝে আসলাম‌। সেই ভুল বুঝে আসার জন্য আজকে আমাকে এত খেসারত দিতে হচ্ছে। তুমি মেয়েটা এই আমাকে কখনোই ভালোবাসে নি। কিন্তু দেখো না আমার এই ভুল মনটা ভেবে বসেছে তুমি আমাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসো। কতটা বোকা আমি। আমি নিবিড় এতোটা বোকা কীভাবে হলাম? নিজের কাজে নিজেই লজ্জিত হয়ে যাচ্ছি।”

” বিয়েটা ধুমধাম বড় আয়োজন করে দিতে মানা করেছি। তার মানে এই না আমি আপনাকে ভালোবাসি না। সামান্য একটা কারণে আপনি ভেবে বসেছেন আমি আপনাকে ভালোবাসি না। বাহ,,,বিয়ে আমি আজ এই মুহূর্তে করতে চাই কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ ঘরোয়া ভাবে। যান আপনার বাবা চাচাকে সব কিছু রেডি করতে বলেন রাত নয়টায় মধ্যে আমি মিসেস নিবিড় হতে চাই।”

নিবিড় কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল,” আর ইউ ওকে?”
” আপনি যদি আমায় ভালোবেসে থাকেন তাহলে আজকেই আমাকে আপনার বিয়ে করতে হবে। না হলে কাল আমি আপনার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।”

” ছোঁয়া এতোটা কঠিন আচরণ করছো কেন? তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসি বলে কি তার সুযোগ নিচ্ছ?”
” তা তো নিচ্ছি‌ই ভালোবাসার সু্যোগ কে ছাড়তে চায়। এই সুযোগ নেওয়ার জন্য আমি সব সময় সুবিধাভোগী।”
” তুমি আমায় সত্যি ভালোবাসো তো?”
” আপনি যদি জানতে পারেন আমি খুব বড় একটা অন্যায় কাজ করেছি। তখনো কি এরকমই ভালবাসবেন আমাকে। নাকি ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেবেন?”

নিবিড় কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,” তুমি অন্যায় করতেই পারো না!”
” আমি সব কিছুই করতে পারি নিবিড়। বলেন ‌ সব পরিস্থিতিতে আমার পাশে থাকবেন ত? আপনার মনে ভালোবাসা এমন থাকবে ত?”

” তোমার মনের কথা আমায় বলো!”
” বলব সব বলব। আগে আমাকে আপনার করে নিন প্লিজ। মনে হচ্ছে আপনি হারিয়ে যাবেন।”
নিবিড় ছোঁয়ার মনের কথা জানার চেষ্টা করেও পারল না জানতে। ছোঁয়া নিজে থেকে না জানালে নিবিড়ের পক্ষে জানা সম্ভব না।

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৯

ছোঁয়া যে বিয়ে করবে সেটা অনুষ্ঠান করে হোক বা অনুষ্ঠান না করে হোক। ছোঁয়া কে নিজের করতে পারবে এটা ভেবে নিবিড় উত্তেজিত হয়ে বাইরে এসে খবরটা জানালো।
এদিকে ছোঁয়া মনে মনে ভাবছে,” ঝড় আসার আগে এই সুখ কি আমি নিতে পারব?”

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১০