অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৬

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৬
নন্দিনী নীলা

রাজিব ছোয়াকে নিয়ে একটা ঠিকানায় এসেছে যেটা স্টেশন থেকে বেশি দূর নয়। নিরিবিলি একটা জায়গায় একটা টিনের ছোট ঘর। রাজিবের সাথে ছিল আরো দুইজন। রাজিব প্রথমে আমাকে বিয়ে করার চেষ্টা করলেও এখন আর সেই ইচ্ছা নাই। এখন তার মনে খারাপ ইচ্ছা সংযোগ হয়েছে।

আমাকে ঘরে বন্দী করে কোথায় যেন চলে গেল। সারাদিন আর রাজিবের কোন পাত্তা পেলাম না রাজিব ফিরে এলো বিকালে তাও মাতাল হয়ে। এসে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়তে চাইলো। এ পর্যন্ত আমি রুমের ভেতরে দরজা-জানলা ভাঙ্গার জন্য যুদ্ধ করেছি চিল্লাচিল্লি তো করেছি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিন্তু এটাতো সিনেমা না যে আমি চাইলাম আর দরজা-জানলা ভেঙে গেল বা নায়ক এসে আমাকে উদ্ধার করল। তেমন কিছুই হলো না ক্লান্ত হয়ে আমি ছোটখাটো একটা খাটে পড়ে রইলাম। এক ফোঁটা পানি পর্যন্ত রুমের ভেতর ছিল না গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছিল।

চোখ বন্ধ করে শুধু আমার একটা কথাই মনে হচ্ছিল যেদিন আমি নিবিড়কে ছেড়ে চলে এসেছিলাম তখন এমন একটা বিপদে পড়েছিলাম। সেই দিনও আমাকে একটা কঠিন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করতে হয়েছিল। কঠিন কিছুই করেছিলাম যা ভাবলে আমার হাত পা কেঁপে ওঠে। কতটা সাহসের মাধ্যমে কাজটা করেছিলাম কিভাবে করেছিলাম ভাবতে আমার হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠে।

নিজেকে রক্ষা করে আশ্রয় নিয়েছিলাম বাসে সেই বাসে আমার দেখা হয়েছিল সাদিয়ার মায়ের সাথে। অসুস্থ অবস্থায় সাদিয়ার মা বাসে অবস্থান নিয়েছিল। এত মানুষের মধ্যে কেউ তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। আমি যখন বাসে উঠে কোন সিট পাচ্ছিলাম না।

তখন সাদিয়ার মাকে দেখতে পেলাম এক জায়গায় বসে চোখ উল্টে পড়ে আছে। তার চোখ দুটো রক্তবর্ণ হয়েছিল। তাকে দেখে আমি বুঝে ফেলেছিলাম তার মাথায় রক্ত উঠেছে এই মুহূর্তে তার মাথায় পানি দিয়ে ওষুধ না খাওয়ালে তিনি স্টক করে মারা যাবে নিশ্চিত।

কোন কিছু না ভেবে ই ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে সাদিয়ার মাকে নিয়ে আমি নেমে পড়েছিলাম। নেমে কোন দিকে না তাকিয়ে রাস্তার পাশে পানির ট্যাবে থেকে পানি নিয়ে তার মাথায় ঘন্টা খানিকের মত পানি দিয়েছিলাম।তারপর ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে তাকে খাওয়ায়।

পাশে ছোট হোটেল থেকে তাকে ভাত খাওয়াই। আস্তে আস্তে তিনি কিছুটা সুস্থ বোধ করে কৃতজ্ঞতার চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমার উপর সন্তুষ্ট হয়ে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করে‌। আমি কোথায় যাচ্ছি ? বাড়ি কোথায়? কোথায় থাকি না বললেও তাকে আমি বলি। আমার যাওয়ার কোন জায়গা নাই উদ্দেশ্যহীন ভাবে রাস্তায় নেমেছি। কিছুক্ষণ আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।

তারপর তিনি আমাকে অফার করে যেহেতু আমার যাওয়ার কোন জায়গা নাই আমি যেন তার সাথেই যাই। তার বাসায় আমাকে আশ্রয় দিবেন কিন্তু তারাও খুব ধনী না যে আমাকে বসে খাওয়াতে পারবেন আমাকে কিছু করে নিজের খাবার নিজেকে জুটাতে হবে। আমি বলেছিলাম আমি আপনার বাসায় থাকলে ভাড়া দিয়ে থাকবো সাথে নিজের খরচ নিজেই চালাবো।

আমার এখন একটা থাকার জায়গা দরকার। আপনি হয়তো আমাকে সুযোগ সন্ধানী ভাববেন। আপনাকে সাহায্য করেছি এই একটা সুযোগের জন্য। এটা সত্যি আমার থাকার জায়গা দরকার আপনি বলা মাত্র আমি রাজি হয়েছি আমি সত্যিই খুব নিরুপায় হয়ে।

সাদিয়ার মা হেসে আমাকে নিজের সাথেই নিয়ে যায় তার দেশে চট্রগ্রাম। তিনি শুধু একটা কথাই বলে তুমি আজকে যে উপকার করেছ তোমার জন্য আমি এখনো বেঁচে আছি হয়তোবা আমি গাড়িতে মরে যেতাম আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে আশ্রয়টুকু না হয় আমি দিলাম।

কে জানত সেখানে গিয়েও আমার এমন একটা মুসিবতে পড়তে হবে।এমন এক শয়তানের হাতে পড়তে হবে।
রাজিব ফিরে আসে বিকেলে এসেই ঢুকে ঢুলতে লাগে মুখ দিয়ে বিশ্রী গন্ধে আমার পেট মোচার দিয়ে বমি আসতে চায়। এসে আমার উপর এক প্রকার ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়। রাগে ঘৃণায় আমি ধস্তাধস্তি শুরু করে দেই।

শয়তানটা মাতাল হয়ে আছে তবু শরীরের শক্তি কমে নাই। এমনভাবে চিপকে ধরে আছে। যখন নিজে হাত এলোমেলো ভাবে আমার শরীরে বিচরণ করতে চায় তখনই আমার মাথায় রক্ত চড়ে যায় বিশেষ করে যখন নিজের ঠোঁটে গিয়ে আনে আমার মুখের দিকে মন চায় বমি করে দেই শয়তানটার মুখে। নিজেকে রক্ষা করার জন্য সব সময় একটা ছুরি নিজের সাথে রাখতাম সেই চুরিটা ব্যবহার করি।

শয়তান তার গাল বরাবর একটা পোচ মারি একদম একটা ঠোঁট কেটে যায়। রাজিবের চিৎকার শুনে বাইরে থেকে আরও দুইজন দরজা খুলে ভেতরে আসে তাদের দেখে আমি চমকে উঠি। একজনের সাথে না হয় পারা যায় কিন্তু আমি তিনজনের সাথে পারবো কিভাবে?

ভয়ে আমার আত্মা শুকিয়ে আসে কি করব ভেবে পাইনা। হঠাৎ করে মাথায় বুদ্ধি খেলে। আমি ছুরি নিয়ে রাজিবের পেট বরাবর ঢুকিয়ে দেয়। দার কাটানো তুখোর ছুড়ি এটা, রাজিবের পেট দিয়ে গড়িয়ে রক্ত পড়ছে। কিন্তু শয়তানটা মরবে না কারণ আঘাতটা খুব গভীর ক্ষত হয়নি।

আমি মারার উদ্দেশ্যে দেইনি আঘাত করার উদ্দেশ্যে দিয়েছি। রাজিবের এই অবস্থা দেখে দুজনই হতভম্ব হয়ে রাজিবকে এসে ধরলো। সেই সুযোগে আমি ছুটে বেরিয়ে আসলাম সেখান থেকে। রাজিবের এমন অবস্থা করে এবার আমি উগড়িয়ে বমি করে দিলাম বাইরে এসে‌। হাত পা থর থর করে কাঁপছে মন চাচ্ছে এখানে শরীরটা ছেড়ে দেয়। এখানে নিজেকে ছেড়ে দেওয়া মানে বিপদ ঘাড়ে নেওয়া।

চোখ বন্ধ করে একটু শ্বাস টেনে আমি স্টেশনে ফিরে আসি। কিন্তু তখনও বুঝতে পারি না ওই শয়তান ছেলে দুটো আমার পিছু করেছে। ছেলে দুটোকে পেছনে দেখে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে। মাগরিবের আজান পড়ে গেছে চারপাশে অন্ধকার হয়ে আসছে। কিন্তু আমি এবার স্টেশনে এত আলোর মাঝে লুকাবো কোথায়। ওরনা দিয়ে মুখ ভালো করে ঢেকে, ভিড়ের মাঝে ঢুকে যায়। কাউন্টারে এত লম্বা ভিড়। এই ভিড়ের মাঝে যে টিকিট কাটবো তার উপায় নাই। এদিকে জুহুরি নজরে আমাকে খুঁজছে ছেলে দুটো। আমি শুধু ভিড়ের ভেতরে ঢুকে ছোটাছুটি করছি।

এভাবে অনেকক্ষণ ছোটাছুটি করতে করতে আমার শরীরটা আবার নেতিয়ে পড়তে চাইলো পিপাসায় ভেতরটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। বমি করার জন্য গলাও জ্বলছে তার উপর হাত পাও ব্যাথা হয়ে গেছে। এখন বিশ্রাম নিতে চাচ্ছি শরীরটা। তখনই শব্দ করে ট্রেন এসে থামে স্টেশনে।

ট্রেনের ভেতর থেকে মাইকিং এর শব্দ এলো ট্রেন এখন আধা ঘন্টার জন্য বিরতি নিয়েছে। যারা টিকিট কেটেছে তারা উঠবে আর যারা ভেতরে যারা আছে তারা অনেকেই বাইরে এসে খাবার দাবার খাবে। আমার চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠলো যেন এই ট্রেনটা আমাকে বাঁচানোর জন্য এসেছে। আমি মুখটা ঢেঁকেই কোন দিকে না তাকিয়ে ট্রেনের ভিতরে উঠে পড়লাম। আমি যে টিকিট কাটি নাই সেদিকে মনোযোগ নাই। আগে ট্রেনে উঠি আগে বাঁচি নিজে। শয়তান দুটো চোখের আড়াল হই‌। কোথায় যাচ্ছি? কি হচ্ছে কোন দিকে মাথা ঘামালাম না!

আমি যেহেতু সবার পেছনের গলি দিয়ে ঢুকেছি এজন্য পেছনের একটা সিট খুঁজছি বসার জন।সবাই টিকেট মিলিয়ে মিলিয়ে বসছে। আমি এবার পরলাম বিপদে। আমার তো টিকেট নাই আমি কোথায় বসবো? আর বসলেও ত উঠে যেতে হবে। সব সিটেই তো একটা করে নাম্বার দেওয়া আছে।

এবার মনে পড়লো আমি তো টিকিট কাটি নাই সর্বনাশ। ঢোক গিলে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। আমি তো নামতে পারবো না। এত লম্বা সিরিয়ালে আমি টিকিট কাটতেও পারবো না। আর টিকেট কাটতে গেলেই ট্রেন মিস হয়ে গেল আমি আবার ওই শয়তান দুটোর হাতে পড়ে যাব। নাহ কিছুতে নামা যাবে না যেভাবে হোক এই ট্রেনে আমাকে যেতে হবে। সিট না পেলাম দাঁড়িয়ে যাবো দরকার পড়লে নিচে বসে যাব।

আমি একটা হ্যান্ডেল ধরে ঝিমুচ্ছি শরীর ব্যাথায় ক্লান্তিতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। আমি যে সিটের হ্যান্ডেল ধরে ঝিমুচ্ছি সেই সিটে একটা মেয়ে বসে আছে তার পাশের সিট ফাঁকা। মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ বলে উঠল,” তোমার কি শরীর খারাপ। দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে।”

আমি বললাম,” কিছুটা অসুস্থ।”
” দাঁড়িয়ে আছো কেন? সিটে গিয়ে বসো।”
আমি মিথ্যে বললাম,” খুব খারাপ লাগছে সিট খোঁজার শক্তি পাচ্ছি না।”

মেয়েটা আমার দিকে মায়া ভরা দৃষ্টিতে দেখে বলল,” আমার পাশে বসো। আমার সাথে যার যাওয়ার কথা ছিল সে আসেনি। এজন্য আমি দুইসিটে একা যাচ্ছি তুমি এখানেই বসো। পরে ভালো লাগলে নিজের সিটে গিয়ে বসো।”
আমি আর এক সেকেন্ড ওয়েট করলাম না থপ করে বসে পরলাম।

মেয়েটার দিকে ক্লান্তি ময় হাসি নিক্ষেপ করে ধন্যবাদ দিয়ে সিটে গা এলিয়ে দিলাম। দুই মিনিট যেতেই খিদের জ্বালায় বমি এলো মেয়েটা আমার অবস্থা বুঝে ঝটপট উঠে বেরিয়ে এলো আমাকে জানালার পাশে বসতে দিল। আমার দিকে মেয়েটা এবার নাক সিঁটকায় তাকিয়ে আছে।

বমি করা দেখলে সবার ই এমন অবস্থা হয় মেয়েটা আমাকে সাহায্য করে এবার বিপদে পরেছে ভাবছে। আমি সিটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছি। মেয়েটার যত‌ই ঘৃনা লাগুক আমি উঠে ভদ্রতা দেখানোর মতো অবস্থায় নাই এখন রেস্ট করা দরকার। মেয়েটা কাঁচুমাচু মুখ করে কিছু ক্ষণ আমার পাশে বসে থেকে উঠে কোনদিকে যেন চলে গেল আমি এক পলক চেয়ে চোখ বুজে র‌ইলাম।

এদিকে ছোঁয়ার পাশে বসা মেয়েটার নাম রাত্রি। মেয়েটা ছোঁয়ার বমি করা দেখে অবস্থা কাহিল। এসব ও একদম দেখতে পারে না তাই ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল। আর সোজা হাঁটতে লাগল। তখনি কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেল। একটা ছেলে ওর দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। ও ছেলেটাকে দেখেই ক্রাশ খায়। ও ড্যাবড্যাব করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।

নিবিড় নির্লজ্জ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,” সাইট প্লীজ। সরে দাঁড়ান আমি যাব।”
রাত্রি লজ্জিত মুখে মাথা নিচু করে সরে দাড়াতেই নিবিড় গটগট পায়ে হেঁটে নিজের সিটে চলে আসে। ছোঁয়াকে পাস করে। ওদের দুই সিট পরেই নিবিড়ের সিট। নিবিড় নিজের সিটে বসতেই সবাই বাইরে থেকে চলে আসে। হাতে এক গাদা খাবার। মনে হচ্ছে এই ট্রেনে একমাস থাকবে আর ওরা একমাস এর খাবার নিয়ে আসছে।

” আজীবন ট্রেনেই থাকবি মনে হচ্ছে এতো খাবার কে খাবে?”
” সবাই মিলে খাব। তখন না আবার কম পড়ে যায়।” তৌহিদ বলে উঠলো।
আফিয়া স্পিড হাত বাড়িয়ে নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। ইভা চিপসের প্যাকেট ছিঁড়ে খাচ্ছে। আর সবার দিকে এগিয়ে দিচ্ছে।

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৫ শেষ অংশ

নিবিড় ওদের থেকে কোন কিছু নিলো না ও পকেটে থেকে সিগারেট বের করে বসা থেকে উঠে দরজার কাছে এসে দাঁড়াল। দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে আর অন্ধকারে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ এক জোড়া হাত পেছনে থেকে ওকে জাপটে ধরে। কোন মেয়ে ওকে জরিয়ে ধরে আছে বুঝতেই মাথা গরম হয়ে যায়।

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৭