অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৭

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৭
নন্দিনী নীলা

নিবিড় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে আর অন্ধকার রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ এক জোড়া হাত পেছনে থেকে ওকে জাপটে ধরে। কোন মেয়ে ওকে জরিয়ে ধরে আছে বুঝতেই মাথা গরম হয়ে যায় নিবিড়ের। মেয়েটা দুহাতে জরিয়ে ধরে পিঠে মাথা এলিয়ে দিয়েছে। ধাক্কা মেরে নিজের থেকে সরিয়ে হাত টেনে সামনে এনে দেখে আফিয়া।

রাগে নিবিড়ের চেয়াল শক্ত হয়ে উঠে।
তীব্র ক্রোধ নিয়ে বলে,”তুই আমার ফ্রেন্ড হয়ে এসব করছিস লজ্জা করছে না? কোন সাহসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছি?”
আফিয়া নিবিড়ের চোখে চোখ রেখে বলে,” আই রিয়েলি লাভ ইউ নিবিড়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

প্লিজ আমাকে গ্রহণ কর। দেখ এতদিন হয়ে গেছে ছোঁয়া কে তুই পা‌ওয়ার হলে পেয়ে যেতি। আমার মনে হয় ছোঁয়া বেঁচে নাই। অযথায় তুই এখনো আশা নিয়ে বসে আছিস। নিজের জীবনটা থামিয়ে রেখেছিস। আয় আমরা নতুন করে শুরু করি। তোকে এত ভালোবাসবো যে ওই মেয়ের কথা তোর মনেই পড়বে না! টাচ মি।”

বলতে বলতে আফিয়া নিবিড় একটা হাত আঁকড়ে ধরল। নিবিড় হাতে দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় দাঁতে দাঁত চেপে বলল,” লিমিট ক্রস করিস না আফিয়া। ছোঁয়াকে ভুলে যাব যার জন্য তাকে আমি আমার জীবনে রাখব‌ না। তোর সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করা ইচ্ছে করছে না। তাই লিমিটের মধ্যে থাক।”

আফিয়া অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে,”আমাদের বন্ধুত্ব ছয় বছর হয়ে গেল। আর ছোঁয়ার সাথে তার পরিচয় হয়েছে মাত্র কিছু দিনের। ওর জন্য তুই আমার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করার হুমকি দিস?”

নিবিড় বলল,” বন্ধুত্বের সম্পর্ক আমি কারো জন্য কখনোই নষ্ট করব না। সে আমার যত ভালোবাসার মানুষ হোক না কেন! কিন্তু তুই নিজে আমাদের সুন্দর সম্পর্কটা নষ্ট করছিস এসব করে। এমন চলতে থাকলে এই সম্পর্ক নষ্ট করতে আমি দুইবার ভাববো না। ভালো হয়ে থাক বন্ধুত্বের জন্য নিবিড় জান দিতে ভাবে না। সেটা তোরা সবাই জানিস।”

” আমি যে তোকে খুব ভালোবাসি।” অনুভুতি ভরা চোখে বলল।
নিবিড় রেগে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল আফিয়া কে তারপর কঠিন গলায় বলল,” তুমি ভালো কথা শোনার মেয়ে না।”
আফিয়া জড়জড়ি কেঁদে উঠল। তারপর কান্না গলায় বলল,,” তুই খুব কঠিন রে। সব ভালোবাসা ওই থার্ড ক্লাস মেয়েটার জন্য কেন?”

নিবিড় রেগে কিছু বলতে যাব তখনি একটা মেয়ের চিল্লাচিল্লি শুনে চমকে উঠে ওরা দুজনেই। নিবিড় আফিয়ার থেকে চোখ সরিয়ে পেছনে ফিরে তাকায়। এমন চিৎকার করছে কে? আফিয়া সহ অনেকেই কৌতুহল চোখে সেদিকে তাকিয়েছে।
এদিকে রাত্রি ওয়াশরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে সময় নিয়ে নিজের সিটে এসে বসেছিল।

পাশে বসা মেয়েটা হঠাৎ করে ওর কাঁধে মাথা দিয়ে দেয় ধাপ করে পরে ওর কাঁধে মাথাটা। চমকে পাশে তাকায় রাত্রি। মেয়েটার শরীর আগুনের মত গরম তাপমাত্রা এত বেশি যে ওর শরীর যেন পুড়ে যাবে এমন অবস্থা। ও ফ্যাল ফ্যাল করে কিছুক্ষণ ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

মেয়েটা অচেতনের মতো পড়ে আছে ও কয়েকবার শান্ত গলায় এই মেয়ে, এই মেয়ে, বলে ডাকছে! কারণ নামটা যেহেতু জানে না। তাই নাম বলে ডাকা হয়নি। ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে আছে তাকাচ্ছে না সারা ও দিচ্ছে না। এবার রাত্রি ভয় পেয়ে গেল। মেয়েটাকে প্রথম থেকে অসুস্থ মনে হয়েছিল।

এখন যদি মেয়েটার কিছু হয়ে যায় ও তো দোষের তলে পড়বে। চেনে না জানে না এ কোন বিপদে ফেঁসে গেল। কেন যে মেয়েটাকে সাহায্য করতে গিয়েছিলাম। নিজের কপাল নিজেই চাপড়াতেছে। কয়েকবার ডাকতেও সাড়া দিল না তখন চিৎকার করে ট্রেনে কর্তৃপক্ষকে ডাকতে লাগলো।

ভয়ে ওর হাতটা ঠান্ডা হয়ে আসছে। রাত্রি এমনতেই ভীতু টাইপের মেয়ে একটুতেও ভয় পেয়ে যায়। আর এখন মেয়েটার এ অবস্থা দেখে ভয় শেষ। আশেপাশের সিটের অনেকে ওকে উঁকি মেরে দেখছে। ও ঢোক গিলে তাকিয়ে আছে ভয়ার্ত মুখ করে। অনেকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে মেয়েটার? কি হয়? হ্যান ত্যান তা শুনে আরো গলা শুকিয়ে আসছে রাত্রির।

পাশ থেকে একজন বলল,” এই মাইয়া কতা ক‌স না ক্যান। এই মাইয়া অজ্ঞান ‌হ‌ইল কেমনে?”
রাত্রি ভয়ে কান্না করে দিয়ে বলল,” আমি কিছু জানি না। এই মেয়েকে আমি চিনি না আমার সিটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল শুকনো মুখে তাই আমি এখানে বসে রেস্ট করতে বলেছিলাম। কীভাবে কি হয়েছে আমি কিছু জানি না।”

পাশ থেকে একজন মহিলা বলল,” হায় হায় মাইয়া তুমি মিছা কথা বলো না ত। সত্যি ক‌ইরা ক‌ও মাইয়া ডার কি হ‌ইছে!!”
রাত্রি এক হাতে ছোঁয়াকে ধরে ভয়ে কাঁপা কাঁপি করছে।

নিবিড়ের সব ফ্রেন্ডরা সেখানে এসে উপস্থিত হয়। চিল্লাচিল্লি দেখে। ট্রেন কতৃপক্ষের লোক এসে গেছে তারা এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে। নিবিড় এসব ঝামেলা একদম পছন্দ করে না। তাই নিজের সিটে বসে কানে হেডফোন গুঁজে বসে র‌ইল। এদিকে সবাই ভীড় করে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে এজন্য তৌহিদ রা ঠেলাঠেলি করে একটু দেখল একটা সুন্দরী মেয়ের কাঁধে আরেকটা মেয়ে আছে। মেয়েটার মুখ দেখা যাচ্ছে না। ওরা চেয়েও মেয়েটার মুখ দেখতে পারল না। ঠেলাঠেলি করে ক্লান্ত হয়ে চলে এলো।

ইভা নিবিড় কে ধাক্কা দিয়ে বলল,” এতো কাহিনী হচ্ছে তুই সেসব না দেখে গান শুনছিস নিশ্চিন্ত মনে ?”
তৌহিদ বলল,” আমি ওই মাইয়া দেখে ক্রাশ খাইছি। কি সুন্দর করে কাঁদতে ছিল। অজ্ঞান মেয়ের মুখ ত দেখি নাই কিন্তু কাঁদুনি কে দেখে ফিদা হয়ে গেছি।”

তৌহিদের কথায় সবাই বিস্মিত গলায় বলল,” ওই মেয়ের লগে প্রেম করবি নাকি?”
তৌহিদ লজ্জা লজ্জা হাসল।
পাশ থেকে বলল,” ওরা আছে টেনশনে। আর তুই আছিস মাইয়া সুন্দর নিয়ে।”

তৌহিদ কিছু বলল না। ওর হাবভাব ভালো ঠেকছে না। তাতেই যার যা বুঝার বুঝা হয়ে গেল সবাই উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো।
ওপাশটা ফাঁকা হয়ে গেছে সবাই চলে গেছে ধমক খেয়ে। রাত্রি এক এক করে সব বলল ট্রেন কতৃপক্ষের লোককে। সে পানি এনে বলল মাথায় জলপট্টি দিতে। জ্বরের জন্য হয়ত অজ্ঞান হয়েছে‌। সামনের স্টেশনে থেকে ওষুধ নিয়ে খাইয়ে দিতে। রাত্রি অগত্যা তাই করতে লাগল। আশেপাশের সিট থেকে অনেক দাঁড়িয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে দেখছে এসব‌ কাহিনী।

আফিয়া রাগ করে এক কোন বসে আছে। মুখে রা নাই। ওর দৃষ্টি নিবিড়ের দিকে ও এক দৃষ্টিতে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে। নিবিড় ওর চোখের তীক্ষ্ণ চাহনি দেখে আর টিকতে পারল না উঠে দাঁড়াল।
” ক‌ই যাস?”
নিবিড় বলল,” হাঁটাহাঁটি করে আসি বসে থেকে কোমর ধরে গেছে।”

বলেই উঠে সিটের বাইরে এসে দরজার সামনে এসে ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করতে লাগে। আরেকটা সিগারেট ফুঁকতে লাগল। শেষ হতেই গ্যাঞ্জাম লাগা সিটটার দিকে তাকায়। কেন জানি যাওয়ার ইচ্ছে জাগে মনে। নিবিড় সিগারেট বাইরে ফেলে এগিয়ে আসে সিটটার কাছে।প্যান্টের পকেট দুই হাত গুজে কাছে এসে দাঁড়ায়।

ছোট একটা বালতি পানি বসে থাকা মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে থাকা মেয়েটার মাথায় পানি দিচ্ছে প্লাস্টিকের একটা গ্লাস দিয়ে। কারো মুখ ভালো করে দেখা যাচ্ছে না।
নিবিড় দাঁড়িয়ে ইতস্তত বোধ করে জিজ্ঞেস করে,,” কি হয়েছে পানি দিচ্ছেন কেন?”

রাত্রি পুরুষালি কন্ঠ শুনে চমকে মাথা উঁচু করে দেখে কিছুক্ষণ আগে যার উপর ক্রাশ খেয়েছিল সেই ছেলেটা ওর সামনে দাড়িয়ে ওর সাথে কথা বলছে।
রাত্রি লজ্জিত গলায় বলে,” জ্বর প্রচুর, আবার সেন্সলেস হয়ে গেছে। তাই মাথায় পানি দিচ্ছি।”

” মেডিসিন দিছেন?”
” নাই।”
নিবিড় কি যেন ভেবে বলল, ” আমার কাছে আছে নিয়ে আসব?”
রাত্রির চোখ মুখ উজ্জ্বল করে বলে,” প্লিজ দিন অনেক উপকার হবে। চিনি না জানি না মেয়েটাকে মায়া দেখাতে গিয়ে ফেঁসে গেছি আমি।”

নিবিড় নিঃশব্দে নিজের সিটে এসে ব্যাগ নিচে নামিয়ে ভেতরে প্যারাসিটামল খুঁজতে লাগে।
প্রয়োজনীয় ওষুধ কিছু ওর ব্যাগেই থাকে সব সময়। নিবিড় কে কিছু খুঁজতে দেখে ওর ফ্রেন্ডরা সবাই জিগ্গেস করেছে ও এক কথায় উত্তর দিয়েছে।

আফিয়া এসব দেখে বলল,” সবার প্রতি দরদ উথলে পড়ে। শুধু আমার উপর নাই।”
নিবিড় পলক তুলে আফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,” যা ট্রেন থেকে ঝাঁপ দে।”
আফিয়া চোখ কপালে তুলে বলল,” হোয়াট?”
নিবিড় বলল,” হাত পা ভেঙে আয় আদর যত্ন দেখাবনি।”

আফিয়া বলল,” এই ট্রেন থেকে লাফালে আমি কি আর আদর যত্ন নেওয়ার মত অবস্থায় থাকব? সোজা উপরে চলে যাব।”
নিবিড় আর কিছু বলল না। ওষুধ হাতে নিয়ে হাঁটা ধরল।এবার নিবিড়ের সাথে ইভা আর তৌহিদ আসে।
নিবিড় এসেই কোনদিকে লক্ষ্য না করে ওষুধ এগিয়ে দেয় রাত্রির দিকে। এদিকে রাত্রি তখন ছোঁয়ার মাথাটা নিজের কোলের উপর নিয়ে যত্ন সহকারে মাথা মুছে দিচ্ছিল।

তখনি নিবিড় ওষুধ দেয়। রাত্রি মিষ্টি হেসে ধন্যবাদ জানিয়ে ওষুধ ধরতে যায়। ও ফ্যালফ্যাল করে নিবিড়ের দিকে চেয়ে আছে। নিবিড় কে দেখলেই ওর প্রেম প্রেম পায়। কি ভালো লোকটা যেচে সাহায্য করল। আর সবাই মজা লুটল আর ওকে প্রশ্ন করে ভয় পাইয়ে দিছিল। কিন্তু এই লোকটা কি ভালো।

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৬

তখন ওকে এতো জোরে ধমক দিয়েছিল যে রাত্রি খুব ভয় পেয়েছিল। কিন্তু এখন একটুও ভয় লাগছে না। ও হা করে তাকিয়ে আছে। রাত্রির এমন হা করে তাকিয়ে থাকা দেখে নিবিড় বিরক্ত হলো। বিরক্তে ওর নাক মুখ কুঁচকে এলো।

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৭ শেষ অংশ