অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৫ শেষ অংশ

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৫ শেষ অংশ
নন্দিনী নীলা

রাজিব ছোঁয়ার কথা কানে নিল না। ওর মারধর বকাঝকা সবকিছুই হজম করল ঠান্ডা মাথায়। ওর মাথায় অন্য পরিকল্পনা ঘুরপাক খাচ্ছে। ছোঁয়াকে যেভাবে হোক এখান থেকে বুঝিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সামনে কাজী অফিস একবারে বিয়ে করেই গ্রামে প্রবেশ করবে। এমনটাই ওর পরিকল্পনা। রাজি করানোর জন্যও সর্বস্ব চেষ্টা করবে।

রাজিব হঠাৎ আমার হাত ধরে ফেলল। আমি চমকে উঠে ঝামটা মেরে হাত ছাড়িয়ে রাগে ফুসফুস করতে লাগলাম।
রাজিব আমার হাত ছেড়েই বলে উঠল,”ছোঁয়া তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না। আমাকে ছেড়ে যেও না। তুমি আমাকে বিয়ে করব। তোমার যা লাগে সব দিব। টাকা পয়সা সুখ শান্তি সাম্রাজ্য সবকিছু পাবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি তোমার গোলাম হয়ে যাব। তুমি উঠতে বললে উঠবো বসতে বললে বসবো। তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হ‌ও। আমাকে গ্রহণ করে নাও। আজকে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। বিয়ে করে আমার বউ করে নিয়ে যাব।”

রাজিবের সাহস দেখে আমি হতবাক। এখনো আমাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখছে। রাজিব কে ক্রস করে আমি কাউন্টারের দিকে যেতে লাগলাম টিকেট কাটার জন্য। রাজিব আবার আমার হাত ধরে আটকে দিল। রাগে আমি দ্বিতীয়বারের মতো আরেকটা চড় মারলাম। লোকটা কি পরিমাণ বেহায়া চর খেয়েও আমার হাতটা ছাড়লো না। রাগ আমার শরীর কেঁপে উঠলো। এবার হাতটা এত জোরে ধরেছে যে আমি ছাড়াতে ও পারছি না।

” আমার সাথে লুচ্চামি করতে আসছেন? হাত ছাড়ুন। না হলেই আমি কিন্তু চিৎকার চেঁচামেচি করব। সকাল বলে এখানে কিন্তু মানুষের অভাব পড়বে না। আশেপাশে তাকিয়ে দেখুন কত মানুষ আমার একটা চিৎকারে কিন্তু আপনি রাস্তায় গণধোলাই খাবেন।”

রাজিব আশেপাশে তাকিয়ে হতচকিত গেল। মানুষের অভাব নাই। থাকবে কি করে? সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে টিকিট কাটা হয়। কাউন্টারে ভিড় তবুও ট্রেনের টিকিট ঠিক সময় পাওয়া যায় না‌। তাই এখানে সব সময় ভিড় লেগেই থাকে। রাজিব হাত ছেড়ে দিল। কিন্তু আকুতি মিনতি করা গেল না।

এবার রাজিব দাঁতের দাঁত চেপে বলল,, ” তোর এত দেমাক কেন বিয়ে করতে চাইছি ভালো লাগছে না। যদি বিয়ে ছাড়া বিছানায় নেওয়ার কথা বলতাম তাহলে ঠিকই যাইতি। তোদের মতো মেয়েকে আমি ভালো করে চিনি। একেক সমস একেক জায়গায় গিয়ে তো এসব করেই বেরাস।

না হলে আত্মীয় পরিজন সবাইকে ছেড়ে এখানে পড়ে থাকবি কেন? তার উপর অন্যের বাড়িতে থাকিস‌। লেখিকা নন্দিনী নীলা যে বাড়িতে একটা যুবক পোলা আছে। আহিল কি এমনিতেই তোর জন্য পাগল হ‌ইছে। বিছানায় কয়বার গিয়েছিস? এখন আমার সাথে নাটক করিস। আমার সাথে এত ভাব দেখাস কেন তুই খুব রূপসীও ত না। তোরে আমি রাজিব বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি এটা তোর সাত কপালের ভাগ্য!”

রাজিব একের পর এক খারাপ আর জঘন্য কথা বলেই যাচ্ছে সে সব শুনে আমার শরীর ঘিনঘিন করে উঠল। তীব্র ঘৃনায় আমি থুতু মেরে দিলাম রাজিবের মুখে এবার রাজিব চেতে গেল। আমার চুলের মুঠি ধরে বলল,” বে* মাইয়া আমার মুখে থুতু দিলি‌। তোরে বিয়ে করবার চাইছিলাম। তা আর করুম না তোরে আমি বিয়া ছাড়া ভোগ করমু। শ* তোর লগে অনেক ভালো কথা ক‌ইছি আর না। চল আমার লগে।”

রাজিবের এমন ভয়ঙ্কর রুপ দেখে আমি থমকে গেলাম। এই লোকটা ত আমার ভাবনার থেকেও খারাপ। আমি চিৎকার করে উঠলাম সাথে সাথে কয়জন এগিয়ে এলো। রাজিব চুল ছেড়ে আমার হাত মুঠো করে ধরেছে। আমি গড়গড়িয়ে সব বলতে লাগলাম। লোকগুলোর থেকে সাহায্য পাওয়ার আশায়। কিন্তু আমার পোড়া কপাল রাজিব সব ভেস্তে দিল।
রাজিবকে একজন বলল,” কি মিয়া মাইয়া মানুষের লগে জরাজরি দাঁড়াও তোমার ব্যবস্থা করতাছি।”

সবাই এগিয়ে আসতে ছিল রাজিব তখন হাসিমুখে ঠান্ডা মাথায় বলে ওঠে,”আরে কি যে কন না চাচা মিয়া! এই এত মানুষের মধ্যে আমি মাইয়া মাইনষের লগে অসভ্যতামি করতে আসমু। আমার কি ভয় ডর বলে কিছু নাই। এইডা তো আমার বউ রাগ কইরা বাপের বাড়ি যাইতাছে তাই রাগ ভাঙ্গাইতেছি।”

আমি হা করে তাকালাম রাজিবের দিকে কি সুন্দর অবলীলায় মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছে।
“বিশ্বাস করবেন না চাচা এই লোকটা আমার স্বামী না। মিথ্যা কথা বলছে। আমার সাথে খারাপ আচরণ করছে আমি চিনি না উনাকে। আমাকে বাঁচান এই লোকটার হাত থেকে।”

রাজিব আমার হাত মুচরে ধরে হাসি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,” ব‌উ রাগ ক‌ইরো না তো। আর কত কইবা। বুঝছি তো যাও তোমারে শহর থেকে শাড়ি চুরি আইনে দিমু। তাও রাগ কইরা যেও না। অন্য মানুষের সামনে আমারে আর না চেনার ভান ধইরো না।”

কথাগুলো বলে আবার লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল,”আর কইয়েন না চাচা বউ রাগ করলেই এমন করে চইলা যাইবার চাই। আর আমারে চিনে না এসব কয়। একটু পরে রাগ ভেঙ্গে যাইবো তখন ঠিক হয়ে যাবে আপনাদের কাছে আমি ক্ষমা চাইতেছি। আমার অবুঝ বউ এর কান্ড কারখানা জন্য।”

লোক গুলো হাসা হাসি করে চইলা গেল আমি চিৎকার করে তাদের ডাকতাছি তারা উল্টা আমারে বলল,,”রাগ করো না। যাও স্বামীর লগে। রাগ থাইকো না। এসব তো ভালো না। এহন তো আমরা তোমার জামাইরে মারতাম পরে তো আমাগো তুমি ব‌ইকা দিতা।”

রাজিব যে এমন একটা প্ল্যান করে সবকিছু ভেস্তে দেবে সেটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। রাজিব আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,”কান্দো কেন বউ চোখের পানি দিয়া তো অবস্থা কাহিল। চলো যাই।”
তখনি একটা অটো এসে থামলে আমাকে টেনে হেচড়ে অটোতে উঠিয়ে উল্টো পথে রওনা হলো। আমি চিৎকার চেঁচামেচি করছি। অজানা ভয়ে আমার বুক কাঁপছে। এই শয়তান টার হাত থেকে আমি বাঁচতে পারব তো আল্লাহ!!

ট্রেনে যাওয়ার নাম শুনেই নাক কুঁচকে ছিল আফিয়া। কিন্তু সবার সামনে না আর করতে পারেনি। এখান থেকে অর্ধেক রাস্তা ট্রেনে যাবে তারপর জিপ‌। পাহাড়ি রাস্তায় জিপে করে যাওয়াটাই সুবিধাজনক‌। সবাই যার যার সিটে বসে পড়েছে নিবিড়ের সাথে বসেছে আফিয়া। ব্যাপারটা নিয়ে নিবিড় অসন্তুষ্ট হলে মুখে প্রকাশ করল না। ট্রেন ছেরেছে সন্ধ্যা সাত টায়।

পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভোর হয়ে যাবে। রাতে ট্রেন ভ্রমণ করার মজাই আলাদা। সারা রাত ট্রেনে কাটিয়ে ভোরের জিপে করে একদম বান্দরবান ঠিক করা হোটেলে পৌঁছে যাবে। লেখিকা নন্দিনী নীলা ওপাশে পাহাড়ী রাস্তায় সন্ধ্যার পর চলাফেরা করা রিক্স এজন্য ওরা ভোরে যাতে বান্দরবান পৌঁছাতে পারে সেই ব্যবস্থা করে কেটেছে। রাতে ভালো ঘুম হয় নাই।

সারাদিনও ঘুমাতে পারিনি নিবিড়। বাসার সবার সাথে আজ ভালো ভাবে কাটিয়েছে। ঘরে পড়ে থাকে নি।আর ইদানিং ঘুম যে না চোখে ধরাই দেয় না। এজন্য ঘুমায় ও নি। কিন্তু ট্রেন এ আসার পরে চোখ ভর্তি ঘুম ওর নেমে এলো।। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। এসেই কার সাথে কোন কথা বলল না নিবিড়। চোখ বন্ধ করে মাথায় এলিয়ে দিয়ে রইল। সবাই আড্ডা মাস্তি করছে নিবিড় একায় চোখ বন্ধ করে আছে ওকে দুই তিনবার খোঁচা দেওয়া হয়েছে।

ও ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে শুধু বলেছে,”ডোন্ট ডিস্টার্ব মি!”
ওর চোখ মুখ দেখেই সবাই বুঝতে পেরেছে এজন্য আর কেউ ডাকেনি ঘুমাতে দিয়েছে। কিন্তু একজন বলে উঠলো,” সারাদিন ঘুমিয়ে তো আসবি এখন সবাই একটু মজা করব আর তুই এখানে পড়ে পড়ে ঘুমাবি।”

নিবির কি আর উত্তর দেওয়ার পরিস্থিতি আছে ও ত চোখ বন্ধ করে পড়ে আছে। কিন্তু বেশি সময় ঘুমিয়ে থাকতে পারলো না। কারণ বসে আর কতক্ষণ ঘুমানো যায়। কাধ গলা ব্যথা হয়ে আসছে। ঘুমের মাঝে কয়েকবার আফিয়া ওর মাথা টেনে কাঁধে নিতে চেয়েছে কিন্তু ও ধমক দিয়েছে।

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৫

এজন্য আর সাহস করেনি ও আফিয়া ধমক খেয়ে ওর পাশে থেকে উঠে ইভার পাশে গিয়ে বসেছে। পরের স্টেশনে ট্রেন থামতে সবাই নেমে হালকা-পাতলা খাওয়া-দাওয়া জিনিস কিনতে লাগল। কেউ কেউ হোটেল থেকে খেয়ে আসল। নিবিড় বাইরে গেল না ও ওয়াশ রুমে থেকে চোখে মুখে পানি দিয়ে এলো। পকেট থেকে রুমাল বের করে মুছতে মুছতে এগিয়ে আসছিল তখনই কারো সাথে ধাক্কা খায়। বিরক্তিকর মুখে তাকাতেই দেখে একটা মেয়ে ওর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

অবাধ্য প্রেম দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৬