অবাধ্য প্রেম পর্ব ২০

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২০
নন্দিনী নীলা

কালকে মাসের শেষ দিন তো কালকে আমাকে সবকিছু নিয়ে এখান থেকে চলে যেতে হবে সবকিছু বলতে এখানে আমার তেমন কিছুই নাই। টুকটাক যা আছে সেগুলোই নিয়ে যেতে হবে কিন্তু যাব কোথায়?

এদিকে রাফসান কাকা আমাকে একটু আগে ফোন দিয়ে বলেছে আজকে যেন আমি তাহমিনা আপুর সাথে যেভাবেই হোক তার সাথে মিট করিয়ে দিতে। একথা বললে কি আমার সাথে যাবে। আর কাকা আমাকে এসব গোপন রাখতে বলেছে। আমি তাকে কি বলে বাসা থেকে বের হব সেটা ভাবছি। কাকার নাম্বার থেকে আবার কল আসলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি বিরক্তকর গলায় বললাম রিসিভ করে, ‘আবার কেন ফোন করেছেন?’
কাকা বলল, ‘ প্লিজ ছোঁয়া যেভাবেই হোক ওকে নিয়ে একটু আসো আমার ওর সাথে কিছু ইম্পরট্যান্ট কথা আছে। আমাদের মিট করাটাই জরুরী। আর ওকে আমার কথা বললেও কখন আসবে না। তুমি আমার কথা ভুলেও বলবানা। কিছু একটা বলে ওকে নিয়ে আসো।’

‘ ধ্যাত আমি মরি নিজের জ্বালায়। আপনি আসছেন আরেক ঝামেলা নিয়ে।’
আমার বিরক্ত অসহ্যকর কন্ঠ শুনে রাফসান থেমে গেল‌। জিজ্ঞেস করল, ‘ কি হয়েছে?’
আমি বললাম, ‘ জেনে কি করবেন আপনি কি আমাকে সাহায্য করতে পারবেন। পারবেন না। পারলেও করবেন না। জানি আপনারা সবাই একইরকম। আপনাকে আমি আমার সমস্যার কথা বলে আর..

আমার কথা শেষ করতে দিল না রাফসান কাকা বলে উঠল, ‘ বলো হেল্প তো করতে পারি। তুমি আমার এত বড় হেল্প করছো তোমার জন্য আমি এইটুকু করতে পারব না।’
আমি বলে উঠলাম,,, ‘ আমি আপনাকে কি হেল্প করছি আমি এখনো কিন্তু তাহমিনা আপুর সাথে আপনার সেটিং করায় দেই নাই। তাই আগেই এত পাম দেওয়া লাগবো না।’

‘ দাও নাই দিবা তো।’
‘ কইছে দিমু দিমু না আমি কাউরে হেল্প করি না।’
‘আচ্ছা না করলে তা বল তোমার কি হেল্প দরকার যদি আমি করতে পারি তো চেষ্টা করব।’

তখন আমার মনে হলো উনার থেকে আমার হেল্প নেওয়া দরকার কারণ উনার জন্য আজকে আমি বাসা ছাড়া হচ্ছি। উনার সাথে যদি আমার বিয়ে ঠিক না হতো তাহলে মামী আমার পেছনে পড়তো না। আর না বিয়েটা ভাঙতো তাহলে জসিম আসতো না। আর মামি আমাদের বাসায় এসে সবার সাথে মিস বিহেভ করতো। আর আমাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হতো সব দোষের মূল উনি। তাহলে ওনার থেকে আমি সাহায্য নেব না কেন?

আমি গরগর করে সবকিছু বললাম আর সব বলার সময় ভালো করে উনার দোষ দেখিয়ে দিলাম উনি যেন পরে আবার পাল্টি খেতে না পারে।
সব শোনার পর উনি বললেন,’ আচ্ছা আমি দেখছি তোমাকে বাসা খোঁজে আমি দেবো। তুমি কালকে সবকিছু নিয়ে চলে এসো। আমি তোমাকে নিয়ে যাব ।’

‘বললাম আর বাসা ঠিক হয়ে গেল?’
‘ হুম। তুমি ঠিক সময় তাহমিনা কে নিয়ে এসো প্লিজ।’
আমি বললাম, ‘ আচ্ছা তা নিয়ে আসবো নি‌। বাসা ঠিক করতে না পারলে কিন্তু আপনাদের আবার আমি জন্মের আলাদা করে দিব।’
বলেই আমি ফোন রেখে দিলাম।

তাহমিনা আপুকে অনেক ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য রাজি করালাম। আমার মেইন টপিক ছিল কালতো চলে যাবো তারপর তো চাইলেও আর প্রতিদিন যেখানে খুশি যেতে পারব না তোমার ছোট্ট বোনের সাথে একটু বেড়াতে গেলে কি হয়।

‘আমার এখন কোথাও যেতে ভালো লাগেনা রে বয়স হয়ে গেছে না। ঠিক সময় বিয়ে করলে তোর থেকে বড় বড় আমার ছেলে মেয়ে থাকতো কিন্তু ভাগ্যে তো সেসব নাই এজন্য এখনো আইবুড়ো হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি।’
আমি বললাম, ‘এসব বলে লাভ নাই তোমাকে যেতেই হবে।’

‘আচ্ছা যাব নি কিন্তু আমাকে কেন সাজাবি সেটাইতো বুঝতে পারছিনা।মনে হচ্ছে বিয়ে করতে যাচ্ছি। ‘
‘তোমাকে তো সবসময় সাজগোজ ছাড়াই দেখি তাই ভাবলাম আজকে একটু তোমাকে সাজিয়ে দেখি। তোমাকে সাজলে কেমন লাগে। তুমি তো এখনো যে সুন্দরী আছো আগে কতোই না সুন্দর ছিলে‌ । আর আমাকে দেখো বুড়ি হয়ে গেছি তুমি তো এখনও যথেষ্ট স্মার্ট।’

‘ তোমার চোখে এটা কারণ তুমি আমাকে পছন্দ করো। কিন্তু বাকি সবার চোখে তা নয়।’
‘এমনিতে কালকে কথাটা ভেবে আমার মন খারাপ তুমি এসব বলে আমার মনটা আর খারাপ করো না চলো তৈরি হবে।’
আপু আর কিছু বলতে পারলো না‌। রাফসান কাকার কথা মতো জায়গায় চলে এলাম আমরা‌। আপুকে রেখে আমি একটু সরে এলাম তখন রাফসান কাকাকে তার কাছে পাঠিয়ে দিলাম। আমি আর যাব না তারা দুজন নিজেদের মতো করে কথা বলুক।

আমি একটু দূরে এসে দাঁড়িয়ে দেখছি আপু আমাকে খুঁজছে। তখনই রাফসান কাকা তার সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি। তখন‌ই কেউ একজন আমার এই সুন্দর মনোযোগটা নষ্ট করে দিয়ে কানের কাছে কথা বলে উঠলো,

‘ বাহ কাকি তো পুরোনো বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার জন্য শাড়ি পরে এসেছে। কাকাও একদম পাঞ্জাবি পরে এসেছে। কি রোমান্টিক তাই না‌!’
আমি চমকানো চোখে পেছনে তাকিয়ে দেখি নিবিড় বড় বড় চোখ করে সামনে তাকিয়ে আছে। আমি পেছনে ঘুরতে আমার দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে চোখ টিপলো।

আমি কোমরে হাত দিয়ে বললাম, ‘আপনি এখানে কি করছেন? আপনি আমাদের ফলো করছেন তাই না। এত বড় সাহস আপনার আপনি আমাদের ফলো….

আমার কথা অফ করে দিয়ে শয়তান নিবিড় আমার মুখে হাত দিয়ে বলল, ‘ স্টপ । এমন করে চিল্লাচ্ছো কেন? তোমার চেঁচামেচির জ্বালায় তো আমার কাকা কাকি প্রেম ও করতে পারবে না। চলো এখান থেকে। তাদেরকে একটু একা সময় কাটাতে দাও। বাচ্চা মেয়ে বড়দের প্রেম দেখছো লুকিয়ে লজ্জা করে না।’

বলে আমাকে সেখান থেকে টেনে নিয়ে আসলো। আমি তো রাগে আগুন হয়ে আছি।
ঝামটা মেরে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, ‘ আপনার সাহস তো কম না আপনি আমাকে এখানে টেনে নিয়ে আসলেন কোন সাহসে? আমি যা খুশি তাই করব আপনার কি? একদম আমার উপর অধিকার দেখাতে আসবেন না। আমি ওইখানে যাব এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো যা খুশি তাই করব।’

‘ আচ্ছা যাও না করেছে কে। ওখানে না গিয়ে তুমি লুকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন?’
‘ আমার মন চাইছে তাই।’

‘আমাকে কি যেন বল চরিত্রহীন, নির্লজ্জ বাজে ছেলে। কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে তোমার থেকে কম। লুকিয়ে লুকিয়ে আরেকজনের রোমান্স দেখার ইচ্ছা তোমার। এর থেকে নিজে রোমান্স করে দেখো অন্যের টা দেখতে যাও লজ্জা করে না।’
আমি রাগে ফুঁসছি। মন চাচ্ছে এখানেই নিবিড় কে চিবিয়ে খেয়ে ফেলি এত বড় কথা বললে আমাকে।
এই ভাবে অপমান করল।

নিবিড় শয়তানি চাহনিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ উনারা গুরুজন ওনাদের রোমাস না দেখে আসো আমরা ও রোমান্স করি। জায়গাটা খুব সুন্দর তাই না। শুনেছি কাকারা নাকি আগে এখানেই কাকিকে নিয়ে এসে প্রেম করতো। তোমার যেহেতু বয়ফ্রেন্ড নাই আমারও গার্লফ্রেন্ড নাই আসো আমরা দুজনে একদিনের জন্য গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড হয়ে যায়। জাস্ট ইনজয়।’
রাগে আমার হাত উঠে গেল আমি ঠাস করে কে চড় মারতে গেলাম কিন্তু পারলাম না নিবিড় আমার হাত খপ করে ধরে ফেলেছে। ধরে শান্ত হয়নি একদম মুচড়ে ধরেছে আমি আহ করে উঠলাম।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৯

নিবিড় আমার দিকে এতক্ষণ তাকিয়েছিল একভাবে আর এখনই ওর চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেছে ও দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘ আমার দিকে হাত উঠানোর সাহস করবে না মাইন্ড ইট।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২১