অবাধ্য প্রেম পর্ব ২১

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২১
নন্দিনী নীলা

নিবিড় আমাকে ধমকে চলে গেল। এদিকে দেখি তাহমিনা আপুও রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আমার দিকে আসছে আমি ঢোক গিলে তার দিকে এগিয়ে গেলাম আমাকে রেখে চলে গেল। আমি হাঁ করে অটোর দিকে তাকিয়ে আছি‌। এটা কি হলো ?

রাগে মুখ রাফসান কাকার দিকে তাকিয়ে কোমরে হাত দিয়ে বললাম, ‘ আপু এতো রেগে আছে কেন? কি করেছেন?’
রাফসান কাকা বলল, ‘ আমি কিছুই করিনি। আমাকে দেখেই রাগে আগুন হয়ে গেছে। আর তুমি আমাকে সাহায্য করেছো তাই তোমার উপর রাগ করেছে।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘আপনার জন্য এতো সুন্দর বোনের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে গেল। আপনাকে আমি কেন যে হেল্প করলাম। আপুর রাগ ভাঙাব কি ভাবে?’
‘ এখন রেগে আছে কালকের আগে আর কথা বলতে যেও না।’
আমি নাক ফুলিয়ে বললাম, ‘ আমি কাল বাসা থেকে চলে আসব‌। মনে নাই আপনার।’

‘ হ্যা থাকবে না কেন? তোমার বাসা রুম সব ঠিক করে ফেলেছি ডোন্ট ওয়ারি।’
আমি বললাম, ‘ কোথায় কেমন বাসা ঠিক করেছেন? আপু তো চলেই গেছে চলেন আমি দেখব এখন গিয়ে।’
‘ এখানে থেকে অনেকটা দূর রাত হয়ে যাবে আমার উপর আস্থা রাখো। কাল সকালে এসে নিয়ে যাব তোমাকে!’
‘ আচ্ছা। আমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসেন ভাড়া নাই।’

রাফসান কাকা বলল, ‘ এখন একটা জরুরী মিটিং এ যেতে হবে তোমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিচ্ছি দাঁড়াও।’
বলেই গাড়ি ঠিক করতে রোডে চলে গেল। আমি ও এগিয়ে এসে দাঁড়ালাম।
অটো ঠিক করে আমাকে পাঠিয়ে দিল। একটু যেতেই কেউ একজন লাফিয়ে অটোতে উঠল। আমি চমকে উঠলাম। তাকিয়ে দেখি বদমাইশ নিবিড়। আমার দিকে শয়তানি চাহনিতে তাকিয়ে আছে।

আমি চিল্লিয়ে উঠে বললাম, ‘ আপনি আপনি এখানে কি করছেন? এভাবে কেউ গাড়িতে উঠে। আর আপনি গাড়িতে উঠলেন কেন? আপনার নিজেরই তো গাড়ি আছে আপনি আমাকে ফলো করছেন? কি উদ্দেশ্যে আপনি গাড়িতে উঠলেন আপনার মতলব তো আমার ঠিক লাগছে না।’

নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কুল ডাউন। আমি গাড়ি টাড়ি কিছুই নিয়ে আসিনি আজকে।’
‘কেন নিয়ে আসেননি। আমাকে জ্বালিয়ে মারার জন্য।’
‘জি না তোমাকে মেরে তো আর কোন লাভ নাই। আমি কাকাকে ফলো করতে করতে এসেছি। গাড়ি সাথে আনলে ধরা পড়ে যেতাম না।’

‘ তাহলে ভালো করেছেন।আমার সাথে আসলেন কেন? তখন আমার সাথে মিস বিহেভ করে আমাকে ধমক দিয়ে এখন আবার আমার সাথে গাড়িতে উঠলেন। আপনার কি লজ্জা শরম নাই?’
‘ আমার ছোটবেলা থেকে লজ্জা একটু বেশি।

দেখনা এক সাথে বসে ও কিন্তু মাঝখানে আমি আরো দুজন বসার মত জায়গা রেখে দিছি। আমি এত বড় দেহের একজন মানুষ হয়েও চিপকে আছি একপাশে। মেয়েদের সাথে টাচ লাগলেও আমি লজ্জায় লাল হয়েছে।’
বলে মেয়েদের মত লজ্জা পাওয়া শুরু করল। আমি এখন কি করব কি বলব বুঝতে পারছি না।‌ এতো অ্যাক্টিং করতে পারে এই মানুষটা।

আমি দাঁতে দাঁত চেপে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘এই শুনেন আপনাকে ইঞ্জিনিয়ারিং করতে বলেছিল কে? আপনি তো একজন ভালো অ্যাক্টার্স এত ভাল অ্যাক্টিং করতে পারেন। আপনার একজন অভিনেতা হওয়া উচিত ছিল।’
‘আচ্ছা অভিনেতা হয়ে যাব কিন্তু নায়িকা কিন্তু তোমাকে হতে হবে। যেহেতু তুমি প্লান টা দিয়েছে তোমাকে ও ওইখানে অংশগ্রহণ করতে হবে।’

‘ রাখেন রাখেন চলে আসছি। উফফ আল্লাহ বাঁচিয়েছে।’
আমি গাড়ি থেকে নামতেই নিবিড় ও গাড়ি থেকে আমার বাসার সামনে নেমে গেছে। অটোআলা চলে গেছে আমি নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করি,
‘আপনি এখানে নামলেন কেন?’

‘হবু কাকির সাথে দেখা করতে যাবো। কাকি আমার কাকার সাথে কি রাগ তাই না করেছে যে তোমার দিকে ও তাকালো না। তাকে কনভেন্স করতে হবে না।’
বলেই আমাকে রেখে চলে গেল কি ছেলেরা বাবা। আমি এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি বাইরে। নিবিড়কে বাইরে দেখছি না। আমি সাহস করে দরজা ধাক্কা দিলাম।

দরজা খুললোই না আমি ১০ মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে থেকে উপরে চলে গেলাম।
উপরে এসে বারান্দা থেকে দেখতে পেলাম নিবিড় চলে যাচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি নিচে এসে দরজা ধাক্কাতে লাগলাম।
পরদিন সকালে আমি সবকিছু গুছিয়ে মলিন মুখে বেরিয়ে এলাম আশেপাশে সবাই বিশেষ করে যাদের পড়াতাম কান্নাকাটি করল।

সবার সাথে একটা ভালো সম্পর্ক ছিল অনেক পছন্দ করত না। আবার অনেকে পছন্দ করত যাদের আমার হেল্প দরকার হতো। যাইহোক কমবেশি সবার সাথে একটা সম্পর্ক ছিল হয়ত তিক্ততার সম্পর্ক না হলে বন্ধুত্বের সম্পর্ক।
আমি ভাবছিলাম এখনো বোধহয় রাগ করে তাহমিনা আপু আসবে না। কিন্তু তিনি এসেছেন।
আমি মাথা নিচু করে বললাম, ‘ সরি আপু রাগ করে থেকো না প্লিজ।’

‘ এসব কথা বাদ। সাবধানে থাকিস। আর আমার সাথে দেখা করতে চলে আসিস।’
‘ ওকে আসবো।’
নিচ পর্যন্ত আমাকে দিতে আসছিল । কিন্তু মাঝ পথে থেমে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখলাম গেটের বাইরে রাফসান কাকা দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি নিয়ে। তাকে দেখেই আর গেল না আমাকে বিদায় দিয়ে চলে গেল।

গাড়িতে উঠে আমি বললাম, ‘ আচ্ছা এখান থেকে আমার নতুন বাসার দূরত্ব কতখানি? আমি কি প্রতিদিন একবার করে আপুর সাথে দেখা করতে আসতে পারবো?’
কাকা বললেন,, ‘ ২০০ টাকা খরচ হবে যদি ২০০ টাকা খরচ করে আসতে পারো এসো!’
আমি চমকে উঠে বললাম, ‘ বলেন কি তাহলে আমি তো টিউশনি করাতে পারবো না এখানে। আমার জীবন চলবে কিভাবে?’

‘ নতুন বাসার কাছাকাছি না হয় নতুন স্টুডেন্ট খোঁজ করা শুরু করে দিবা। বাসায় ও স্টুডেন্ট আছে তুমি চাইলে নিজের বাসায় পড়াতে পারো।’
‘ তাই তাহলে তো খুব ভালো হয়। কিন্তু আমি যে আপু কে বলেছিলাম প্রতিদিন না হলেও এক দুই দিন পর পর দেখা করব সেটার কি হবে?’

‘ তুমি বাসা ঠিক করতে বলেছ আমি করে দিছি। কিন্তু সবকিছুই সমাধান আমি কিভাবে দেব?’
আমি আর কিচ্ছু বললাম না উনাকে কিন্তু মনে মনে ঠিক‌ই গালিগালাজ করলাম।
একটা রাজপ্রাসাদের মত বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো। আমি গাড়ি থেকে নেমে গালে হাত রেখে চোখ বড় বড় হলে বাসার দিকে তাকিয়ে আছি।

কাকার দিকে বিস্ময়কর চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘ কাকা এ বাসা তো দেখে মনে হচ্ছে না ভাড়ার বাসা। এটা তো মনে হচ্ছে কোন মিনিস্টার এর বাসা। এই বাসায় আমার জন্য ভাড়া নিয়েছেন? কিভাবে সম্ভব! আর এখানে ভাড়া থাকে তো মনে হয় ভিআইপি মানুষ আমি এই বাসার ভাড়া দিমু কেমনে?’

রাগী চোখে কাকার দিকে তাকিয়ে আছি। এইভাবে আমাকে ঠকালো।এখন নিশ্চিত বলবে এ বাসায় তোমার জন্য ভাড়ায় নেয়নি।এই বাসা দেখানোর জন্য আনছে আমাকে নিয়ে আসছে। এখন বলবে তোমার জন্য কোন বাসা আমি ঠিক করিনি। তুমি তোমার জন্য বাসা ঠিক করে নাও।

আমি এসব ভেবে চিৎকার করে বললাম, ‘ এভাবে আমাকে ঠকালেন। আমার জন্য বাসার ঠিক না করে। ঘুরার জন্য নিয়ে আসছে। এখন আমি কোথায় যাব? হায় আল্লাহ কি সর্বনাশ হয়ে গেল। ‘

নিজে আহাজারি করে চিৎকার করতে লাগলো কাকা আমার কাছে এসে বলল, ‘আরে কি ব্যাপার এমন করছ কেন মানুষ কিন্তু খারাপ বলবে। এটা আমার বাসা। এখানে আমি থাকি। আর আমার পরিবার থাকে। এই বাসা আমাকে থাকার ভাড়া দেই না। কিন্তু তোমার জন্য আমি কোন বাসা খুজে পেলাম না কোথাও। তুমি যে বাজেট বলেছো এই বাজেটে আমি কোন বাসায় খোঁজে পাইনি। এজন্য ভাবলাম তুমি আমাদের বাসায় থাকো। তোমার টাকা দেওয়া লাগবে না। এখানে ফ্রিতে থাকতে পারো।’

আমি হত বিহ্বল হতাম তাকিয়ে বললাম, ‘ তাই আপনি নিজের বাসায় আমাকে নিয়ে আসবেন? আপনার পরিবারের সামনে আমি কিভাবে থাকবো! ও মাই গড তারা আমাকে দেখতে গিয়েছিলে আপনার জন্য ভুলে গেছেন?’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২০

আমি মনে মনে ভাবছি, শেষে কিনা নিবিড়ের বাসায় এসে পড়লাম। আমি এ কোন সাইকো কে বলেছিলাম বাসা ঠিক করতে। উনি নিজের বাসায় ঠিক করে ফেলব আমার জন্য আগে জানলে জীবনে তার আশায় বসে থাকতাম না। নিজেই বাসা খোঁজ করতে বেরিয়ে পরতাম।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২২