অবাধ্য প্রেম পর্ব ২২

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২২
নন্দিনী নীলা

আমি এখন এই আমার এতগুলা ব্যাগ নিয়ে কোথায় যাব। বাসার পাওয়া তো মুখের কথা না। উনার সাথে রাগ দেখি এখন আমার কি লাভ হবে উল্টা বিপদ হবে। এখন ওনার সাথে ওনার বাসায় চলে যায়। যা হওয়ার হবে উনি নিয়ে এসেছে উনি সব সামাল দিক। আমাকে এখানে এখন থেকেই বাসার খোঁজ করতে হবে। বললেই তো পাওয়া যাবে না কয়েকদিন ঘুরতে হবে।

রাফসান কাকা তাদের এক লোককে ডেকে আমার ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার জন্য বলল। আমি ওনার পেছন পেছন ভেতরে এসে ঢুকলাম। ফিসফিস করে উনাকে বলতে লাগলাম, ‘ আমি আপনার সাথে আপনাদের বাসায় এসেছি এখানে কিন্তু আমার কোন হাত নাই।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি আপনাকে বাসা ঠিক করে দিতে বলেছিলাম। আমি বলি নাই আপনি নিজের বাসায় আমার জন্য একটা রুম ঠিক করে দিন। এখন যদি আপনার বাড়ির কেউ আমাকে কিছু বলে সেই সব কিছু সামাল আপনি দিবেন।’

রাফসান কাকা বলল, ‘ কেউ কিচ্ছু বলবে না চলো তো। আমাকে কেউ কিছু বলবে সেই সাহসী বাসায় কারো নাই‌।’
‘ কেন কাকা আপনি কি বাসার কর্তা নাকি?’
কাকা বললেন, ‘ না তেমন কিছুই না কিন্তু সবাই আমাকে একটু ভয় পায় তো তাই কিছুতেই কিছু বলার সাহস পায় না।’
‘ ওহ কিন্তু কাকা আপনাকে আমি কিন্তু একটু ও ভয় পাই না।’

‘ ও আচ্ছা। নিবি ও আমাকে ভয় পায় না। ‘
‘ নিবিটা আবার কে?’ বলেই আবার বলে উঠলাম, ‘ নিবিড় ‘
উনি বললেন ,, ‘ হুম।’

কলিং বেল বাজানোর দরকার পড়েনি দরজা খোলা আছে। আমি মাথা নিচু করে চুপচাপ ভেতরে এসেছি। যে যাই বলুক আমি কোনো কথা বলবো না। আমি শুধু ভাবছি নিবিড় আমাকে নিজের বাসায় দেখে কি রিয়েক্ট করবে। এই বাসায় এসে আমার একটা হেল্প হয়েছে। কাকা আমাকে অজান্তেই অনেক বড় উপকার করে দিয়েছে।

এবার আমার জিনিস টা আমি নিজে উদ্ধার করতে পারব। আর ওই নিবিড় কে শায়েস্তা করতে পারব। কাকা তো আছেই আমার পাশে ঠিক বাঁচিয়ে দেবে।
বাসার ভেতরে ঢুকতেই এই বাসার সব মানুষ আমার দেখে আর কাকার চমকানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

কাকার ছোট ভাইয়ের বউ তিনি তার ইয়া বড় মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছিল। তাঁর হাতে ছিল কাচের প্লেট তিনি আমাদের দুজনকে বাসার ভেতরে ঢুকতে দেখে ঠাস করে হাতের প্লেটটা নিচে ফেলে দেয়। কাঁচের প্লেটটা পড়ে ভাঙার যে শব্দটা সেই শব্দটাই অধিকাংশ মানুষ এই দিকে চলে আসে আর তখন সবাই তাকেও আমাদেরকে দেখে অবাক হয়ে যায়। তাদের রিঅ্যাকশন দেখে মনে হচ্ছে তারা ভেবেছে আমি আর কাকা লুকিয়ে বিয়ে করে এসেছি।

সবাই মুখে হাত দিয়ে আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। কাকার যে বয়স্ক মা তাকে তার বড় ভাইয়ের বউ মানে কাকার ভাবি। আমার মনে হয় এটাই নিবিড়ের মা দেখতে অনেকটা নিবিড়ের মতো।

তিনি উপরে গেল আর তার বয়স্ক মাকে ধরে নিয়ে এসে বলল, আম্মা দেখেন। আপনার মেজ ছেলের কি করেছে! একাই বিয়ে করে ব‌উ নিয়ে এসেছে।’

তিনি ভাঙা গলায় বলল, ‘ রাফু বাপ আমার তুই এইডা কি করলি। এই মাইয়ারে বিয়া করবি না বলে কতো চিল্লাচিল্লি করলি শেষ এই মাইয়ারে একাই বিয়া ক‌ইরা নিয়া আইলি।’

তাদের সবার এমন ভুল ভাবনার জন্য আমার খুব জোর হাসি পেয়ে গেলো। আমি সবার সামনে হিহিহি করে হেসে উঠলাম। আমার হাসি দেখে সবাই আগুন চোখে আমার দিকে তাকালো আর একজন তো বলেই উঠল, ‘ কি বেয়াদব মেয়ে রে বাবা। সবার সামনে কি রকম নির্লজ্জের মত হাসছে। এই মেয়েটাকে রিজেক্ট করা ঠিক হয়েছিল আবার কেন এটাকে বিয়ে করতে গেল?’

প্রথমেই আমাকে দেখে প্লেট ফালিয়ে দেওয়া মহিলাটা বললো‌ আমি স্পষ্ট শুনলাম রাগী চোখে মহিলা টার দিকে তাকিয়ে আছি।
রাফসান কাকা কাকে যেন ডেকে উঠল।
তার ডাকে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে বলে, ‘ আইছি!’

‘ আশা যে রুমটা ঠিক করতে বলেছিলাম করেছিস?’
‘ হ করছি তো ক্যান।’
‘ ওই রুমে ছোঁয়া কে নিয়ে যা‌। ওর ব্যাগ রাশেদুল নিয়ে আসতেছে বলে দে।’
‘ আইচ্ছা’

সবাই হাজারটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে সব প্রশ্ন কে উপেক্ষা করে আমাকে আশা নামের মেয়েটার সাথে পরে পাঠিয়ে দিল। এক তলা দু তলা করে আমাকে ছাদের চিলেকোঠার রুমে নিয়ে এলো।
আমাকে রুমে এনে বলল, ‘ এই রুম আপনার জন্য ঠিক করাইছে স্যার।’
‘ ওওও আচ্ছা। তুমি কে?’

‘ আমি এই বাসায় কাজ করি। আপনেরে কি স্যার বিয়া ক‌ইরা আনছে?’
আমি আশার কথা শুনে হাসতে হাসতে খাটে বসে বললাম, ‘ তোমার কি আমারে দেখে মনে হয় আমি ওনাকে বিয়ে করব।’
‘ না মনে হয় না‌। কিন্তু সবাই তো তাই বলতাছিল তাই বললাম।’
‘ আমার পুরাতন বাসা থেকে বের করে দিছে। এজন্য আমি বাসা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কাকাকে বলছিলাম উনি বলল এখানে থাকার কথা।’

‘ তাই সবাই বলতাছে আপনারে বিয়া কইরা আনছে। আমিও তো তাই ভাবি। কয়দিন আগে বিয়ে নিয়ে কত তুলকালাম চলল স্যার তো বিয়া করবা না বলে কত কিছু করল। এখন আবার বিয়ে করতে যাইবো কেন?’
আমি আর কিছু বললাম না। আশা আমার নাম জিজ্ঞেস করে তারপর চলে গেলো আমাকে রেখে। আমি রুমটা দেখলাম রুমে একটা খাট একটা বালিশ আর একটা আলনা আছে। পুরাতন হয়তো এগুলো অনেক আগের আমার জন্য বের করে পাঠিয়েছে।

কাকা উপরে এলো এক ঘন্টা পর। আমি ততক্ষণে আমার জামা কাপড় জিনিসপাতি সব কিছু বের করে ঠিকঠাক করে রেখেছি।
কাকা এসে আমাকে বলল, ‘রুমটা খুব ছোট তোমার কি এখানে থাকতে কোনো সমস্যা হবে?’
আমি বললাম, ‘ছোট তাতে সমস্যা নাই। এটা আমার জন্য পারফেক্ট। আমি ছোট রুমে থাকতে অভ্যস্ত। কিন্তু সমস্যা আপনার এই পরিবারের সাথে থাকাটা।’

‘ওদের আমি সব বুঝিয়ে বলে দিয়েছি। কোন সমস্যা হবে তোমার। আর আমি তোমাকে উপরে পাঠিয়েছি তুমি একা এখানে নিজের মত থাকতে পারবে এজন্য। নিচে থাকলে তোমার ওদের সাথে সবসময়ই দেখা হতো আর যেহেতু তোমাকে ওরা আমার জন্য পছন্দ করেছিল সেজন্য আন‌ইজি ফিল হবে।’

‘একদম ভালো কাজ করেছেন। কিন্তু আমি রান্না করবো কোথায় উপরে তো আপনার রান্নার কোনো ব্যবস্থা নাই। আমি তো না খেয়ে মরে যাব।’
‘বাসায় রান্না হয়ে গেলে তুমি না হয় নিচে গিয়ে রান্না করো।’
‘ আচ্ছা। আর বাসা ভাড়া কত নিবেন? ওই বাসায় আমি তিন দিতাম তার বেশি দেব না কিন্তু বলে দিচ্ছি।’
‘ তোমার ভাড়া দিতে হবে না।’

‘ভাড়া তো দেবোই না হলে আবার বলে দেবে আমি আপনার সত্যিকারে ব‌উ না কাকা আমি এই বাসার কোন বউ ট‌উ না ভাড়া না দিয়ে ফ্রিতে আমি থাকতে পারবো না।’

এই বাসায় আশার আজ দুইদিন হয়ে গেল। কিন্তু আমার চির শত্রু নিবিড় কে আমি এখনো দেখতে পায়নি। রোমার সবার তীক্ষ্ণ চাহনি দেখে আমি নিবিড়ের রুমটাও খুজিনি। প্রথম দিন রান্না করতে পারেনি আশা আমাকে দুবার খাবার দিয়ে গেছে। দ্বিতীয় দিন থেকে আমি রান্না করেই খাই।

সবার রান্না কোন টাইমে হয়ে যায় সেটা আমাকে আশায় বলেছে তারপর আমি যাই। তাদের জন্য সকালে রান্না আমি করতে পারিনা। আটটার পর আমাকে রান্না ঘরে ঢুকতে হয় এর আগে তাদের রান্না হয়। দুই দিন কলেজে অফ ছিল বলে বাসার বাইরে বের হয়নি। আমার কাছে সামান্য কিছু ছিল সেগুলো আমি রান্না ঘরে রেখেছি।আশা কে বলে।

সকাল ৯ঃ০০ টার সময় আমি কলেজে চলে এলাম। আজকে রান্নার করতে পারিনি। আর কলেজে গেলে আমি রান্না করতে পারবো না। কারণ তাদের রান্না শেষ হওয়ার পর আমার রান্না করতে গেলে আমার আর কলেজ যাওয়া হবে না। আমাকে তাদের রান্নার আগে উঠে রান্না করতে হবে বিরক্তকর। খুব তাড়াতাড়ি একটা বাসার ঠিক করতে হবে। কম টাকায় বাসা পেলেই হয়।

কলেজে এসে আমি লিনিকে সব কিছু বলতেছি। ও সব শুনে বলল, ‘ জমের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিলে আর জায়গা পেলি না।’
‘কিছু করার নাই রে আমার খুব খিদে পেয়েছে চল দোকান থেকে কিছু খেয়ে আসি। আসার দিন বিশ দিনের পড়াটা হয়েছিল সেই টাকা দিয়েছে এজন্য হাতে টাকা আছে। আজকে কিছু বাজার করতে আর দরকারি কিছু কিনে নিয়ে যাব। আমার সাথে তুই যাবি।

‘ আচ্ছা। নিবিড়কে তুই একদিনও দেখি না?’
‘নারে দেখলাম না। আমি অবশ্য দেখব কি করে আমি দু দিনে একবার নিচে নেমেছিলাম। আর আজকে একদম বের হয়ে এসেছি কলেজে।’

‘ ওহ ওর থেকে সাবধানে থাকিস। আর শোন আমি ভেবেছিলাম আজকে দীপার শ্বশুর বাড়ি যাব।’
‘কেন সেখানে আবার কি হয়েছে?”
‘ কিছু হয়নি কালকে ফোন দিয়ে বলল তোকে নিয়ে যেন আজকে যায়।’
‘ আজকে আমি কোথাও যেতে পারব না কাল যাব নি।’
‘ আচ্ছা।’

ছুটির পর কলেজে আমি নিবিড়ের দেখা পেলাম নিবিড় আমাকে দেখলো কি না জানি না। কিন্তু বাসায় আসার পর আমি ফ্রেশ হয়ে রান্না করতে চলে আসি। বেশি করে রান্না করি যাতে একদম রাত কবার হয়ে যায়। আমি রান্না করতেছি তখন ওই নিবিড় রান্নাঘরে এসে আমাকে আশা নামে ডেকে বলে কফি দিতে। আমি ভ্রু কুঁচকে পেছন ফিরে বলি,,

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২১

‘ আমি আশা না। আমাকে আশা বলছেন কেন? আমি ছোঁয়া।’
নিবিড় আমাকে রান্নাঘরে দেখে চিৎকার করে উঠল। আমি নিজেও নিবিড়ের চিৎকার করা দেখে চিৎকার করে উঠলাম।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৩