অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৩

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৩
নন্দিনী নীলা

নিবিড়ের ছোট চাচি এসে আমাদের চিৎকার করতে দেখে ধমক দিয়ে থামালো। আমি থেমে গেলাম। নিবিড়কে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে?
নিবিড় বলল, ওকে দেখে চিৎকার করেছি।
তিনি আমার দিকে চেয়ে বলল, ‘ ও দেখতে এতোটাই বাজে যে তুই ওকে দেখে ভূত দেখার মতো চেচালি।’
নিবিড় বলল, ‘ ও এই বাসায় কি করছে?’

‘ সেটা তোর কাকাকে জিজ্ঞেস কর। এই মেয়েকে বিয়ে করবে না বলে নাচানাচি করল। এখন তাকে বাড়ি এসে উঠিয়েছে‌।’
‘ কাকা নিয়ে এসেছে?’
‘ হুম।’
‘ কবে?’
‘ দুইদিন হয়ে গেলো।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিবিড় অবাক স্বরে বলল, ‘ দুইদিন ধরে আমার বাসায় আছে আর আমি জানি না কেন?’
‘ তুই কি বাসায় থাকিস।’
উনার মেয়ের ডাকে উনি চলে গেল। আমি নিজের কাজ করছি। আশা এসে দাঁড়িয়েছে পাশে। নিবিড় আশাকে কফি দিতে বলল।

আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন বলল আমি তার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না। ওই শয়তানটার দিকে তাকিয়ে কথা বুঝতে গিয়ে আমি অসাবধানতাবশত হাত দিয়ে ভাতের গরম হাঁড়ি স্পর্শ করে ফেললাম। সাথে সাথে হাত লাল হয়ে উঠল আমি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠি। আর্তনাদ করে ওঠি। নিবিড় চলে গেছে আশা আমার আর্তনাদ শুনে এগিয়ে এসে বলে, ‘ পাগল হয়েছ নাকি। গরম পাতিলে হাত দিয়েছো কেন?’

আমি ব্যাথায় চুপসে যাওয়া মুখে বলি, ‘ ভুলে দিয়েছি‌।’
আশা চলে গেল কফি নিয়ে আমি ঠান্ডা পানি দিয়ে হাত ধুয়ে কাজ করছি আর নিবিড় কে বকছি। লোকটা আমার জন্য বিপদজনক। আসলেই একটা না একটা ঝামেলা হবেই।

রান্না শেষ করে উপরে চলে এলাম। গোসল করে খেয়ে বাইরে এসে দেখি নিবিড়ের সেই চাচাতো বোন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমার রুমের দিকে উঁকি মারছে। ওকে দেখে আমার খুব রাগ হলো এতো বড় একটা মেয়ে সে কিনা ছোট পোশাক পরে আছে। এগুলো তো বাচ্চা দের পোশাক। ছোট স্কার্ট ও ফতুয়া ওরনাও নেয় নাই। বেয়াদব মেয়ে।

আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, ‘ এই মেয়ে তুমি আমার রুমের দিকে তাকিয়ে আছো কেন?’
মেয়েটা বলল, ‘ মেয়ে বললে কেন? আমার একটা সুন্দর নাম আছে।’
আমি বললাম, ‘ তোমার নাম কি?’
মেয়েটি বলল, ‘ মাহি।
‘ ও আচ্ছা।’

মাহি একাই আমার রুমে চলে গেল। আমি বিরক্তকর কন্ঠে বললাম, ‘ কি ব্যাপার মাহি তুমি আমার রুমে এসে ঢুকছো কেন?’
মাহি উত্তর না দিয়ে রুমে ঢুকে ঘোরাঘুরি করছে।

আমি রুমে ঢুকার পর মাহি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এমনি তোমার রুমটা দেখছি। তুমি এই পিচ্চি রুমে কিভাবে থাকছো? আমি হলে তো থাকতেই পারতাম না। আমার রুম দেখবে? চলো তোমাকে আমার রুম দেখাই।’
‘ তার দরকার নাই। আমি নিচে যাব না।’

‘সবাই তোমাকে বকবে ভাবছো এজন্য যাবেনা? এখন বাসায় কেউ নাই আমি একা। আব্বু আর কাকারা সবাই অফিসে আর আম্মু রা সবাই শপিংয়ে গেছে আমাকে বাসায় একা রেখে গেছে আর আশা ও তো টিভি দেখছে‌‌। তুমি এখন নিচে গেল ও বকার মত কেউ নাই।’

আমি রাজি হয়ে গেলাম। মাহির কথায় এখন আমার নিচে যাওয়া দরকার বাসায় যেহেতু কেউ নাই এখন যদি কোন ভাবে জানতে পারি নিবিড়ের রুম কোনটা তাহলে আমি লকেটটা খোঁজ করতে পারব।
মাহি আর আমি নিচে নামছি সিড়ি বেয়ে মাহি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ তুমি একা একা উপরে কিভাবে থাকো তোমার ভয় করে না? আমি একা থাকতেই পারি না।’

‘ একা থাকতে পারো না তাহলে কি এখনো আব্বু আম্মুর সাথে থাকো?’
‘থাকতাম এখন দাদুর সাথে থাকি রাতে।’
আমি মাহিকে বললাম, ‘ তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?’
‘ টেনে ।’

‘ অনেক বড় হয়ে গেছে এখনো বাচ্চাদের মত বিহেভ করো কেন। তুমি ভালো পোশাক পরো। এসবে খুবই বাজে লাগছে।’
মাহি আমার কথায় পাত্তাই দিল না। নিজের রুমে গিয়ে লাফাতে লাফাতে সব দেখাতে লাগলো। রুম ভর্তি টেডি বিয়ার। জিনিস দিয়ে ভর্তি করে রেখেছে। আমি হাসি হাসি মুখ করে সবকিছু দেখছি আর সুন্দর বলছি। এই রুম দেখলে যে কেউ একটা দুই বছরের বাচ্চার নাম রুম বলবে। কিন্তু এখানে ১৫ বছরের বাচ্চা বসবাস।

মাহি নিজের ফোন এনে আমাকে কয়েকটা ছবি দেখালো। তারপর গেম খেলতে লাগলো আমার খুব বিরক্ত লাগছে বসে থাকতে।
আমি বললাম,,, ‘ আমি একটু আশার সাথে টিভি দেখে আসি। বাসায় যেহেতু কেউ নাই। তুমি গেইমস খেলো।’
বলে এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালাম না দ্রুত পায়ে নিচে চলে এলাম। আশা আমাকে দেখে টিভি অফ করে বলল,
‘ তুমি নিচে আসলে কখন?’

‘এইতো এইমাত্র আমাকে মাহি নিয়ে এসেছে। ও বলল আমাকে নাকি বাসাটা ঘুরে দেখাবে। বাসায় কেউ নাই। কিন্তু ও এখন গেমস খেলা মগ্ন হয়ে গেছে। বলল তোমাকে নিয়ে ঘুরতে। তুমি কি আমাকে বাসাটা ঘুরিয়ে দেখাবে? আসলে এত বড় আর এত সুন্দর বাসা তো আগে আমি দেখি নাই।

খুব ঘোরার ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু কেউ তো আমাকে পছন্দ করে না এজন্য আমি নিচে আসি না। তুমিও তো একবার ভুল করো উপরে যাও না একা একা আমার উপরে খুব খারাপ লাগে।’

আশা খুব দুঃখ প্রকাশ করে বলল ,’ কেমনে যাই বলো এক সেকেন্ড আমাকে ডেকে না পেলেই খুব বকাঝকা করে। এজন্য আমি সবার কাছাকাছি থাকি। আর এখন তোমার কথা ভুলে গেছিলাম এখন একটু সুযোগ পেয়েছি টিভি দেখার আমি তো টিভি দেখতে খুব পছন্দ করি। কিন্তু সবাই থাকলে তো আর তা হয়না।

আশা আমাকে সব রুম ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে কার রুম কোনটা বাইরে থেকেই দেখতে হচ্ছে। ভেতরে ঢুকতে পারছি না। ওই ভাবেই ঘুরছি। রাফসান কাকার পরের রুমটা নিবিড়ের। আমি রুমটার দিকে তাকিয়ে আছি। এই রুমটা খুঁজতেই তো আমাকে এতক্ষন সবার রুম দেখতে হলো মিথ্যা করে। আমার কোন ইচ্ছে ছিল না এই বাসা ঘুরে দেখার।
সিঁড়ির কাছে এসে আশার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ আমি পরবো এখন তুমি কি আমার সাথে যাবে?’

আশা বলল, ‘ তুমি তো পরবে এখন গিয়ে আর কি করব। আমি না হয় টিভি দেখি তুমি পড়ো পরে আসব নি।’
আশা চলে গেল দৌড়ে। এই মেয়ে তো টিভির পাগল । ভালোই হয়েছে এ চলে গেছে।

আমি নিবিড়ের রুমে চলে গেলাম। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। রুমে কেউ নাই অথচ এসির পাওয়ার হাই করে রুম ফ্রিজ করে রেখেছে। আমি এসি অফ করে দিলাম। আর কোন দিকে না তাকিয়ে আলমারি খুলে খোঁজা খুঁজি করতে শুরু করে দিলাম।

কিন্তু কিছুই পেলাম না এখানে আছে বলেও আমার মনে হয় না। ছোট টেবিলের ড্রয়াল খুলে চেক করতে যাব তখনই কেউ দরজা ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢুকলো। দরজা খুলে কেউ ভেতরে এসেছে এটা বুঝতে পেরে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল। বুক ধক করে উঠল। আমি কি ধরা পরে গেলাম নাকি। আমি যে হাত দিয়ে ড্রয়ার খুলতে গেছিলাম সেই হাতটা সরিয়ে ফট করে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে পেছনে তাকাতেই আমি কেঁপে উঠলাম ভয়ে।

নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে আছে অবাক দৃষ্টিতে। আমি ঢোক গিলে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছি। কি এক্সকিউজ দেবো বুঝতে পারছিনা। নিবিড় তো আমাকে এখন জিজ্ঞেস করবে আমি এখানে কি করছি আমি তার উত্তরে কি বলবো।
আমার আর একটু সচেতন হয়ে আশা উচিত ছিল। সবকিছুতে আমার তাড়াহুড়া তাইতো এভাবে ধরা খেয়ে গেলাম এখন আমার কি হবে?

আমি বেক্কেলের মতো হেসে ফেললাম নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে। নিবিড় আমাকে কিছু বলতে নিচ্ছিল আমি তাকে সুযোগ না দিয়ে বললাম, ‘ আচ্ছা এটা কি রাফসান কাকার রুম । আমি কখন থেকে তাকে খুঁজছি ও তার রুম খুঁজছি পাচ্ছি না।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২২

আপনি কাকার রুমে কেন এসেছেন কোন দরকার নাকি আমার মতো কাকাকে আপনার?’
আমি কথা শেষ করে নিবিড়ের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠলাম। নিবিড় রক্ত লাল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি শুকনো ঢোক গিললাম।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৪