অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৪
নন্দিনী নীলা
নিবিড় নিজের পকেটে থেকে আমার লকেট টা বের করে আমার দিকে ধরে বলল, ‘ এটাই তো খুঁজতে আসছো তাই না।’
আমি চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছি। বদমাইশটা নিজের পকেটে নিয়ে ঘুরছে আর আমি এটা রুমে খোঁজে মরতাছি। আমি কটমট চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ আমার লকেট ফেরত দিন।’
বলেই আমি লকেট নিতে এগিয়ে আসলাম। নিবিড় হাতের মুঠোয় বন্দি করে ফেলল।
আর বলল, ‘ বের হও আমার রুম থেকে। আমাকে বানোয়াট গল্প শুনিয়ে লাভ নাই। তোমার মতিগতি আমি দেখলেই ধরে ফেলি।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘ তো আমি জেনে শুনে কি নিজের বিপদ ডেকে আনব। গল্প তো বলতেই হতো।’
‘ আবার মুখে মুখে তর্ক করছো?’
‘ আমার জিনিস ফেরত দিন না হলে কিন্তু আমি….
‘ না হলে কিন্তু কি?’
আমি এদিকে ওদিক তাকিয়ে আছি। কি করা যায়। দূরে এক ছোট ফটো দেখলাম একটা মেয়ের আমি ভেবে নিলাম এটা এই বদমাইশ টার গার্লফ্রেন্ড আমি ফট করেই দৌড়ে গিয়ে ফটো টা হাতে নিয়ে বললাম,
‘ দিন নাহলে এটা কিন্তু ভেঙে ফেলব!’
আমি কথাটা জাস্ট নিবিড় কে ভয় দেখাতে বলছি যাতে নিবিড় আমার কথা শুনে আর আমার জিনিস টা ফেরত দেয়। কিন্তু জানি না কি হলো আমাকে ফটো ফ্রেম টা ধরতে দেখেই নিবিড়ের চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়। ও আমার দিকে চেয়ে খুব শান্ত গলায় বলে, ‘ ছোঁয়া ওটা যেখানে ছিল রেখে দাও।’
আমি উনার শান্ত গলা শুনে যেন আরেকটু সাহস পেয়ে যায়।
আমি বলে উঠি, ‘ নাহ আপনি আমার জিনিস ফেরত দিন আমি ও দিয়ে দেব না হলে এটা আমি…
আমির মুখ থেকে না শব্দটা শুনেই নিবিড় রাগে লাল হয়ে গেছে।
আমি নিবিড়ের ফেস দেখে কথা থামিয়ে দিয়েছি। নিবিড় আমার দিকে এগিয়ে আসছে রেগে। আমি ভয়ে আতকে উঠি। আমার হাত কাঁপতে থাকে আর যার ফলে আমার হাত ফসকে পরে যায় নিচে তা দেখে নিবিড় চিৎকার করে উঠল,ছোঁয়া বলে। আমি ফ্রেমটা দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। আমি ফ্রেম টার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ সরি আমি ইচ্ছে করে এটা ফালাইনি। ভুলে পরে গেছে..
আমার কথা শেষ করতে দিল না। নিবিড় এগিয়ে এসে ফট করে আমার গালে থাপ্পড় মেরে বসলো। আমি গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে নিবিড়ের দিকে তাকালাম। নিবিড় আমার হাত মুচড়ে ধরে ধাক্কা দিয়ে রুমে থেকে বের করে দিলো।
আমি বাইরে এসে পরলাম। নিবিড় আমার দিকে আমার লকেট টা ছুড়ে মারল।
আর বলল, ‘ তুমি আর আমার চোখের সামনে আসবে না কখনো।’
আমি লকেট হাতে নিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছি। নিবিড় ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিল আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি দরজার দিকে।
গালে চিনচিন ব্যাথা করছে বাবারে এতো শক্তি উনার শরীরে জানলে আমি ওই ফ্রেম টা হাতেই নিতাম না। ব্যাথায় আমার চোখ অশ্রু এসে ঠেকেছে। আমি সেসব পাত্তা দিলাম না। লকেট পেয়েছি এসেই খুশি আমি উপরে চলে এলাম।
মেয়েটাকে দেখে তো ছোট মনে হলো এতো বাচ্চা একটা মেয়ের সাথে উনি প্রেম করেন।
আমি তো ভাবছিলাম ওই আফিয়ার সাথে উনার ইটিশপিটিশ আছে।
এই বাসায় আসার পর আর তাহমিনা আপুর সাথে দেখা হয়নি। আমি কাকাকে বলে তার সাথেই গেছিলাম একদিন দেখা করতে তিনি ও এতে খুশি কারণ তিনি নাকি সারাদিন ঘুরেও আপুর সাথে কথা বলার সুযোগ পায়নি। আপু দেয়নি। এবার আমি থাকলে সব কিছুই হবে।
এজন্য আমাকে হাতিয়ার করে যাচ্ছে।
আর সফল ও হয়েছিল দেখা কথা সবই হয়েছে। আমি আপুর সাথে কথা বলতে গেলেই বেশিরভাগ কথা কাকাকে নিয়ে বলি। যাতে কাকার জন্য আবার তার মনে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।
যাইহোক সেদিনের ঘটনার পর থেকে আমি আর নিবিড়ের আশেপাশে ঘেঁষি না।
কলেজ অফ তাই এখন ফ্রী তে বাসায় বসে থাকি। মাঝে মাঝে মাহি আমার কাছে আসে। ও নিয়ে আসে নতুন জিনিস আমাকে এসেই দেখানো শুরু করে।
কাকার জন্য নাকি আরেক মেয়ে দেখছে। আমি শুনেই জোরে কি বলে উঠলাম।
আমাকে চিৎকার করতে দেখে আশা বলল , ‘ কি হয়েছে চিৎকার করলে কেন?’
আমি বললাম, ‘ বিয়ে কি ঠিক হয়ে গেছে?’
আশা বলল, ‘ সব ঠিক এখন রাফসান কাকু কিছু না করলেই হয়ে যাবে বিয়ে।’
আমি নখ কামড়াতে শুরু করে দিছি এই বিয়ে কাকা জীবনে করবে না আমি জানি। তাহমিনা আপু রাজি হয়ে গেলেই বিয়ে হতো বিয়ে খেতে পারতাম। নাহ আর ভালো লাগছে না কাকা আর কতো কাল একা থাকবে আমাকে একটা কিছু করতেই হবে।
আশা চলে গেছে। আমি তাহমিনা আপুর সাথে কথা বললাম। তারপর কল কেটে লিলিকে কল করলাম।
লিলি আমাকে খুব ঝাড়ল এটা অবশ্য আমার পাওনাই ছিল। কারণ এখনো দীপার বাসায় যায় নি। আমি কাল যাব সেটা বলে কল রাখলাম। রাতে নিচে চেঁচামেচি শুনে আমি নিচে আসলাম লুকিয়ে রান্নার ছুতোয়।
শুনতে পেলাম কাকার চেঁচামেচি। আমি এক পা দু’পা করে তার রুমে দিকে আসছি তখন এক ধাক্কা খেলাম নিবিড় এর মায়ের সাথে তিনি আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে আগুন চোখে আমার দিকে তাকালো আর গমগম গলায় বলল, ‘ কোথায় যাচ্ছ তুমি?’
আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ না মানে আসলে চেঁচামেচি হচ্ছে তাই..
‘ তাই চলে এসেছো ফাজিল মেয়ে যাও এখান থেকে এটা আমাদের পারিবারিক ব্যাপার তুমি এখানে আসবে না।’
‘ আচ্ছা সরি আমি যাচ্ছি।’
উনি আবার আমাকে ডেকে বলল,, ‘ তোমার সাথে আমার ইমপর্টেন্ট কিছু কথা আছে। কাল আমার রুমে এসো একবার।’
আমি মাথা নেড়ে চলে এলাম।
পরদিন দীপার বাসায় আসলাম আমরা দুজন। প্রথম যাচ্ছি তাই মিষ্টি, ফল নিয়ে যাচ্ছি। আমি মিষ্টি কিনেছি আর বাকি জিনিস লিলি কিনেছে।
দীপা আমাদের সাথে রাগ করে আছে কল ধরে না তাই বাসা খোঁজ করতে শ্রাবণ ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ করতে হয়েছে তার সাথেই বাসার ভেতরে গেলাম।
দীপাকে দেখলাম শাশুড়ি জা সবার সাথে রান্না ঘরে আমাদের দেখেই চলে এলো। ও এসেই গম্ভীর গলায় বলল, ‘ না আসলেও পারতি। পর হয়ে গেছি আমার কাছে আসবি কেন?’
আমি আর লিলি দীপাকে জাপ্টে ধরে সরি বলতে লাগলাম।
দীপা আমাদের ধাক্কা দিচ্ছে সরাতে কিন্তু আমরা তো সরব না। যতক্ষণ ওর রাগ না কমে।
‘ সরি দোস্ত ক্ষমা করে দে। খুব ঝামেলায় ছিলাম রে আমার বাসা ঠিক করা নিয়ে।
দীপা বলল, ‘ আমাকে ছাড় এমন করে ধরে রাখলে আমি দম বন্ধ মরে যাব।’
‘ তোর রাগ কমেছে?’
‘ নাহ!”
‘ তাইলে ছাড়ছি না।’
‘ মেরে ফেলতে আসছিস।’
‘ হুম!’
‘ আমার সাথে কিন্তু আরেকজন মরবে। তোরা কি আমার জন্য আরেকজন কে মেরে ফেলবি।’
আমি আর লিলি ওকে ছেড়ে বললাম, ‘ তোরে একা ধরেছি মরলে তুই একা মরবি আরেকজন আসল কই থেকে?’
দীপা লজ্জা পাওয়া কন্ঠে বলল, ‘ আমি প্রেগন্যান্ট।’
আমি আর লিলি একে অপরের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললাম, ‘ কিহহহ সত্যি?’
‘ হু এজন্য তোদের আসতে বলেছি। সুখবর দিতে। আর জানিস এই খবর জানার পরই আমার শশুর বাড়ির সবাই আমাদের মেনে নিছে।’
‘ বাহ দারুন তো। এক সাথে দুইটা খুশির খবর।’
লিলি বলল, ‘ এজন্য তো তোরে সুন্দর লাগছে। প্রেগন্যান্ট হলে কি মানুষ সুন্দর হয়ে যায় না কিরে!’
আমি বললাম, ‘ আগে তো লজ্জা পেতি না এখন শশুর বাড়ি এসে লজ্জা বতি হয়ে গেছিস?’
দীপার সাথে সারাদিন থাকা হলো। আসব আসব করেও আসতে দেয় না থাকতেই হবে বলে। অনেক জোর জবরদস্তি করে সন্ধ্যায় বের হলাম। লিলি আর আমার রাস্তা ভিন্ন ও তো ভয়ে আছে ওর মায়ের জন্য। আমার কোন ভয় নাই যেহেতু পরিবার নাই। আমি তো স্বাধীন।
সারে সাতটা বেজে গেল আসতে আমার। বাসার ভেতরে ঢুকব তখন দেখলাম নিবিড় আমার দিকে রাগী চোখে চেয়ে আছে। আমি তাকে ক্রস করে বাসায় ঢুকব তখন নিবিড় আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,’ কোথায় ছিলে?’
আমি তেরা কথা বলতে গিয়ে ও বললাম না বললাম, ‘ দীপার বাসায় গেছিলাম। কেন?’
অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৩
‘ ভেতরে যাও।’
বলেই নিবিড় বাসার বাইরে চলে গেল। আমি কিছুই বুঝলাম না।