অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৫

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৫
নন্দিনী নীলা

কোথা থেকে কি হলো কিছুই বুঝতে পারলাম না। ভেতরে ঢুকে আমি টাকশি খেলাম। সোফায় বসে আছে তাহমিনা আপু তাকে ঘিরে আছে বাসার সবাই। আপু এখানে কি করছে কিভাবে এলো? সেটা আমার মাথায় ধরছে না। আমি ওদের দিকে যাচ্ছিলাম আমাকে তখন ইশারায় দূরে থেকে আশা চলে যেতে বলল। আমি বললাম কেন?

আশা হাত নাড়িয়ে বলল চলে যাও। তখন আমি দেখতে পেলাম আমার ওখানে যাওয়াটা সবাই পছন্দ করছেন না। আপু আমাকে দেখেন নি। আর দেখলাম নিবিড়ের মা আমার দিকে শাসানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টি দেখে আর পা বাড়াতে পারলাম না চলে এলাম।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি উপরে এসে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম নিবিড় কাউকে ফোন করছে আমার মনে হয় রাফসান কাকা কেই কল করছে। কাকা কে তো দেখলাম না।তাহমিন আপু এখানে আছে তিনি নিশ্চয় জানেন না।

কাকা যদি না জানে তাহলে আপু কে বাসায় নিয়ে আসলো কে? আর সবাই কি আপুকে চিনে আগে থেকেই! নাকি ওই নিবিড় আপুকে জোর করে নিয়ে আসছে। আমার মনে হয় উনার ই কাজ হবে এসব। এসব কাজ নিবিড় করেছে ভাবতে আমার রাগে আমার শরীর জ্বলে উঠলো।

উনি কোন সাহস এ কাকাকে কিছু না জানিয়ে এইভাবে আপুকে জোর জবরদস্তি করে বাসায় আনছে। এখন আবার বাসার সবার সামনে তাকে ফেলে বাইরে গিয়ে কাকাকে কল করছে সবাই মিলে যে আপুকে হেনস্থা করছে এইসবের পরে তো আপু কাকাকে আরো সহ্য করতে পারবে না।

নিবিড় অনেকক্ষণ ফোনে বকবক করে ফোনটা যখন হাতে নিলো তখন আমিও ওকে কল দিলাম।
রিসিভ করতে আমি রাগী গলায় বললাম,, ‘আপনি তাহমিনা আপুকে জোর করে এই বাসায় নিয়ে আসছেন তাই না। এভাবে জোর করে আনলে কি আপনার মনে হয় কাকার সাথে আপুর মিল করাতে পারবেন। কখনো পারবেন না‌। উল্টা আপুর মনে কাকার জন্য ঘৃণা তৈরি হবে।

ভালোবাসার দিয়ে তার অভিমান ভাঙাতে হবে। সেটাই করতে ছিল কাকা আর আপনি মাঝখানে এসে জোর করে সবকিছু উলটপালট করে দিলেন।’
নিবিড়ের দিকে থেকে আমি কোন আওয়াজ পেলাম না ফোনে। কিন্তু বাস্তবে এক বিরাট বড় ঝড় বয়ে গেল যেন এই কথাগুলো বলছিলাম ছাদে থেকে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে থেকে।

হঠাৎ করে নিবিড় ফোনটা নিয়ে সামনের সুইমিংপুলে ছুড়ে মারে। দেখে আমি চমকে উঠি। আমি উপর থেকে চিৎকার করে বলি,, ‘আরে আরে কি করছেন ওটা ফেলছেন কেন?’
নিবিড় আমার দিকে আগুন চোখে তাকিয়েছে আমি দূরে থেকেই বুঝতে পারছি। তিনি যে রেগে আগুন হয়ে আছে। আমি শুকনো ঢোক গিলে বললাম, ‘সরি আপনার যা খুশি তাই করুন।’

আমি ওখান থেকে চলে আসতে নিয়েছিলাম নিবিড় চিৎকার করে আমাকে বলে,, ‘স্টপ ওইখানেই দাঁড়াও।’
আমি থমকে দাড়িয়ে পড়ি। নিবিড় আমার দিকে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,, ‘ তুমি উপরে কি করছো? নিচে যে একজন আছে তাকে কি তুমি চিনতে পারো নাই?’

আমি বললাম, ‘চিনতে পারব না কেন অবশ্যই চিনতে পেরেছি?’
‘চিনতে যেহেতু পেরেছো তার কাছে না গিয়ে উপরে এসে ফালতু গল্প বানাচ্ছ কেন? ‘
‘আমি গল্প কখন বানালাম?’

‘দেখো ছো য়া তোমার সাথে আমি এখন কথা বলতে চাচ্ছি না। তুমি নিচে যাও। তার কাছে যাও আমার দিকে সব সময় ফালতু অভিযোগ না। না হলে তোমাকে আমি ফোনটার মতোই ওই সুইমিংপুলে এখন ছুড়ে মারবো।’
‘ হায় আল্লাহ বলেন কি আপনার মাথাটা গেছে!’

‘একটা কথা বললে আমি কিন্তু সত্যি তোমাকে সুইমিংপুলে ছুড়ে মারবো।’
আমি ভয়ে পালিয়ে এলাম‌। নিচে এসে জানতে পারলাম উল্টা কাহিনী। তাহমিন আপুকে নাকি নিবিড়ের আম্মু বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছে। রাস্তায় নাকি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। সেখান থেকে নাকি নিবিড়ের মা বাসায় নিয়ে আসছে। এই বাসার কেউ তাহমিন আপুকে চিনে না কিন্তু তাহমিনা আপু এই বাসার সবাইকে চেনে তিনি আমাকে বলেছিল।

জ্ঞান ফেরার পর থেকে নাকি বাসা থেকে চলে যেতে চাইছিল কিন্তু কেউ যেতে দিচ্ছিল না। সবাই একটু রেস্ট নিয়ে যেতে বলছে কারণ অজ্ঞান হয়েছিল কিন্তু শুনছেন না তাহমিনা আপু এজন্য সবাই থাকে তোষমোদ করছে আর আমি কত কিছুই না ভেবেছিলাম।

আমি কাছে যেতেই অবাক সুরে বলল,, ‘ ছোঁয়া তুই এখানে?’
আমি আমতা আমতা সুরে বললাম,, ‘ আপু আমি এই বাসায় ভাড়া থাকি।’
আপু বলল, ‘ ও আচ্ছা।’

বাসার সবাই তো অবাক আমি আপুকে চিনি এজন্য। নিবিড়ের ছোট চাচী আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এই মেয়ে তুমি উনাকে চিনো কিভাবে? আপু বলছ এটা তোমার কেমন আপু?’

আমি কিছু বলতে যাব তখনি রাফসান কাকা আর নিবিড় বাসার ভেতরে এসে ঢুকলো। রাফসান কাকা তো নিজের বাসায় তাহমিন আপুকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠেছে। আমার দিকে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে, ভেবেছে আমি হয়তো আপুকে নিয়ে এসেছি কায়দা করে। কাকার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে আমার খুব হাসি পেল‌ ।

কিন্তু আমি হাসলাম না নিজের হাসিটা নিজের মধ্যে চেপে রেখে তাহমিনা আপুর দেখে দিকে তাকিয়ে গড়গড় করে বলে লাগলাম,, ‘ আপু শুনলাম তুমি নাকি রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলে। আমাদের এই আন্টি (নিবিড়ের মাকে উদ্দেশ্য দেখিয়ে দিলাম) নাকি তোমাকে উদ্ধার করে এনেছে।

আর তুমি এখন তাদের কথা না শুনে রেস্ট না নিয়ে এই শরীরে চলে যেতে চাইছ রাস্তায় তো গিয়া আবার অজ্ঞান হবে। ভালো হয়েছে তুমি তোমার এই ছোট বোনের কাছে চলে এসেছো। আজকে তুমি আমার কাছে থেকে যাও কাল না হয় চলে যেও।’

ইচ্ছে করেই সমস্ত কাহিনী টা বলে দিলাম যাতে কাকার মাথায় সবটা ভালোমতো সেট হয়। আর তিনি সব যেন বুঝতে পারে উল্টাপাল্টা কথা বলে আমাকে না কেস খাইয়ে দেয়।

রাফসান কাকা হয়তো সব বুঝতে পেরেছে তিনি বাসার অন্যদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলে সবাই এবার এই কাহিনীটা বলতে লাগলো। আমি এক কোনায় দাঁড়িয়ে মিটি মিটিয়ে হাসছি। নিবিড় আমাকে সবার অগোচরে টেনে বাইরে নিয়ে আসলো আমি চিৎকার দিতে যাব যাব এমন অবস্থা।

চিৎকার দেইনি সবাই যদি এটা দেখতে পায় তাহলে উল্টা আমাকেই সবার সামনে খারাপ বলবে। তাদের বাড়ির ছেলের দোষ তাদের চোখে আসবে না এমনিতেই বাসায় সবাই কেমন যেন একটা।

‘আপনার কি মাথা স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে। আপনি আমাকে ওইভাবে সবার সামনে থেকে টেনে নিয়ে আসলেন কেন?মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি কিছু নাই।‌অসভ্য ছেলে নিজের চরিত্র যে ঢিলা সেটা সবসময় প্রমান না করলে হয় না তাই না।’
নিবিড় আমার হাত আরো জোরে মুচড়ে ধরে বলল, ‘ লিমিট ক্রস করবে না। না হলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না!’

‘আগে নিজে লিমিট ক্রস করা বন্ধ করুন। নিজের সীমার মধ্যে থাকুন। একদম আমার সাথে গলা উঁচু করে কথা বলতে আসবেন না। আমি আপনার কেনা না আর আমার উপর আপনার কোন অধিকার নাই। ‘
‘ ছোঁয়া স্টপ দিস।’

আমি চুপ করবো কেন সব সময় এক রকম তাই না। তখন আমাকে ধমকি নিচে পাঠিয়েছিল এখন আবার এসেছে ধমকানোর জন্য নিয়ে। আমার ধমক আমি শুনতে যাব কেন।
আমি বললে উঠলাম,’ করবো না আমি চুপ। বেশ করেছি কথা বলেছি আরো বেশি করে কথা বলব।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৪

আমার বলতে দেরি হলো কিন্তু আমার উপর ঘূর্ণিঝড় আসতে দেরি হলো না। শয়তানের বাচ্চা নিবিড় কখন আমাকে সুইমিং পুলে কাছে এনে ঠেকিয়েছিল জানিনা ওর আমার দু কাঁধে ধাক্কা মেরে সুইমিং পুল এ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল।
আচমকা পড়ে যাওয়াতে আমি ভয় আর রাত তার মধ্যে পানি ঠান্ডা সব মিলিয়ে ঠান্ডা পানিতে পরে আমি চিৎকার করে উঠলাম।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৬