অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৬

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৬
নন্দিনী নীলা

গ্রামের মেয়ে আমি এজন্য সাঁতার আমি ভালই পারি কিন্তু এইখানে পড়ে যেন আমার জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছে। সাঁতার কাটতে ভুলে গেছি। ঠান্ডা আমার শীতল হয়ে আসছে আমি পানিতে পড়ে অনেকক্ষণ যাবৎ ভাবতে লাগলাম সাঁতার কিভাবে কাটতে হয়। কিছুই মনে করতে পারছি না আমি শুধু পানির মধ্যে দাপাচ্ছি সুইমিংপুলে পানি তো খুব গভীর হওয়ার কথা না। আমি হয়তো এখানে দাঁড়াতে পারব। আমি দাঁড়ানোর ট্রাই করলাম। কিন্তু ডুবে যাচ্ছি।

এদিকে নিবিড় পানির কাছে এসে চিৎকার করে বলল,, ‘ উঠতে পারছো না? আই থ্রট ইউ নিউ হাউ টু সুইম।’
নিবিড়ের সমস্ত কথা আমি শুনতে পাচ্ছি কিন্তু প্রতি উত্তর করতে পারছিনা। নিবিড় আবার বলে উঠল, ‘ শোন তোমাকে আমি এখান থেকে ওঠানোর ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু তোমাকে কথা দিতে হবে। তুমি আমাদের বাসা ছেড়ে চলে যাবে। এখানে আর থাকবে না।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি নিজেই ডুবে মরছি মরছি অবস্থা। সেই সময় নিবিড় আমাকে এই কথা বলছে। আমার খুব রাগ হলো আর অজান্তে আমি সাঁতার কেটে পরে চলে এলাম তারা দেখে নিবিড় অবাক গলায় বলল, ‘ তুমি সাঁতার পারো?’

‘ হা না পারার কি আছে?’
‘ তাহলে এতোক্ষণ পার না এমন ভাব করলে কেন?’
‘ আজব আমি পারি না ভাব কখন করলাম?’
‘ না উঠে হাবুডুবু খাচ্ছিলে কেন তাহলে?’

আমি নিবিড় কে পানির দিকে ইশারা করে বললাম ,, ‘ ওইদিকে দেখুন কেন হাবুডুবু খাচ্ছিলাম!’
নিবিড় ও বোকার মত তাকাতেই আমি নিজে সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা মেরে নিবিড়কে পানিতে ফেলে দিলাম। নিবিড়কে ফালানোটা আমার সাকসেস হলেও নিবিড় যে এত শয়তান জানতাম না কখন যে আমার হাতটা ধরে নিলো জানি না আমাকে সহ পানিতে পড়েছে। দ্বিতীয়বার পানিতে পরে হাবুডুবু খাচ্ছি।

‘ আমাকে সাথে নিয়ে পানিতে পরার এত ইচ্ছা বললেই হত এতো এতো নাটক করার কি ছিল। প্রথমেই যদি বলতা আমিতো নিজে থেকে নেমে যেতাম তোমাকে এতো কষ্ট করতে হতো না আমাকে ধাক্কা দিয়ে।’
আমি নাক পাটা ফুলিয়ে বললাম, ‘ আপনি আমাকে আবার পানিতে ফেললেন কেন?’

‘ আমি কোথায় ফেললাম তুমিই তো আমাকে নিয়ে পড়লে।’
‘ একদম মিথ্যা কথা বলবেন না। আমি কখনো আপনাকে নিয়ে পরলাম? আপনি আমাকে চিটারি করে টেনে নামিয়েছেন নিজের সাথে। আমি তো শুধু আপনাকে একা ফেলতে চাইছিলাম….
বলেই জিভে কামড় দিলাম। ঢোক গিলে বললাম, ‘ না মানে আসলে আমি….
নিবিড় বলল, ‘ নিজেই তাহলে স্বীকার করলে।’

‘ হ্যাঁ আমি আপনাকে ইচ্ছে করেই ফেলেছি। কিন্তু তার জন্য দায়ী আপনি আমাকে কেন এখানে নিয়ে আসলেন কি জন্য পানিতে ফেললেন বলেন?’
‘কোন কারনে অবশ্যই আনছিলাম। তুমি কি আমার কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করেছ?’
‘ আমি তো অনেকবার বলেছি আপনার কথা আমি শুনবো না। আমি আপনার সাথে কথাই বলবো না। তাহলে কেন আপনি আমাকেই কথা শোনাতে চান?’

নিবিড় আমার থেকে শান্ত দৃষ্টি ফেলে বলল, ‘ কাল তোমার প্রশ্নের জবাব দেব? এখন উপরে উঠে ভেতরে গিয়ে চেঞ্জ করে নাও।’
বলে নিবিড় আমার আগে উঠে গেল। আমি তো ও
উপরে এসে নখ কামড়াচ্ছে আর পায়চারি করছি। ভেজা শরীর নিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকবো কিভাবে? সবাই যদি জিজ্ঞেস করে আমি ভিজলাম কি করে? আর আমার আগে তো নিবিড় নিশ্চয়ই বাসার ভেতরে চলে গেছে দুজনকে ভেজা দেখলে তো আরো রঙ কিছু ভাবতে পারে।

আমি অনেকটা সময় ওইখানেই দাঁড়িয়ে আছি। এভাবে ভেজা শরীরে থাকার ফলে হাঁচি আসছে শীত শীত ও করছে।
অবশেষে বাসার ভেতরে ঢুকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম যে যা বলায় বলুক এইভাবে আমি কতখানি থাকবো আমাকে তো ভেতরে যেতেই হবে।

কি উত্তর দেয়া যায় সেসব ভাবতে ভাবতে যাচ্ছি। তখন দেখতে পেলাম নিবিড় বাসার বাইরে থেকে শুকনো পোশাক পড়ে ফোন টিপতে টিপতে এগিয়ে আসছে। আমি তো হা করে তাকিয়ে আছি। উনি ওদিকে থেকে আসছে কেন?
আমি শীতে কাঁপতে কাঁপতে ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ আপনি ভেতরে এখনো জাননি?’

নিবিড় আমার আওয়াজ পেয়ে ফোন থেকে মাথা তুলে আমাকে এখনো ভেজা পোশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে, ‘ এখন এইভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তোমাকে না বললাম ভেতরে গিয়ে চেঞ্জ করে নিতে?’
‘ আপনি বাইরে থেকে আসলেন কেন সেটা আগে বলেন?’

নিবিড় আমার দিকের আগে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে আমি নিজে আবার বলে উঠলাম, ‘ আমি তো ভাবছি আপনি ভিতরে গেছেন দুজনকে ভেজা পোশাকে দেখলে সবাই কি না কি ভাববে এজন্য আমি টেনশনের ভেতরে যেতে পারছি না।’
নিবিড় মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। নিবিড়ের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এমন বোকা বোকা কথা শুনলে মন চায় তাকে ধরে একটা আছাড় মারতে।

আমি শুকনো ঢোক গিলে আবার আমতা আমতা স্বরে বললাম, ‘ কি হয়েছে কি ভাবছেন?’
‘ তোমাকে এখন আমার কি করতে মন চাইছে জানো?’
‘ না তো।’

‘ আবার প্রশ্ন করছে তুমি যাতে বাসায় ঢুকতে পারো সমস্যা না হয়। এজন্য আমি বাইরে চলে গেলাম ফ্রেন্ডের বাসায় থেকে আমি পোশাক চেঞ্জ করে আসলাম। আর তুমি এখনো ভিতরে যাও নাই বাইরে দাঁড়িয়ে আছো। তুমি এবার বলো আমার তোমাকে কি করতে মন চাইতে পারে।’

আমার কথা চিন্তা করে নিবিড় বাসার বাইরে চলে গিয়েছিলে। কেমন যেন একটা শিহরণ বইয়ে গেল আমার মনে। আমি কাঁপা কাঁপা চোখে নিবিড় দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
নিবিড় কি যেন বলছে আমায় আমি সেসব শুনছি না আমি তো অবাক বৃষ্টিতে নিবিড় কে দেখছি। খুঁটিয়ে খুটিয়ে দেখছি। সব সময় এই মানুষটার সাথে ঝগড়া করি আজকে তাকে আমি গভীর দৃষ্টিতে লক্ষ্য করছি।

নিবিড়ের কোন কথার আমি উত্তর দিচ্ছি না বলে নিবিড় আমার বাহুতে ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলল,, ‘ হোয়াটস হ্যাপেন্ড! হাবলার মতো তাকিয়ে আছো কেন যাও ভেতরে যাও!’

আমি মাথা নেড়ে পেছনে ঘুরে হাঁটতে শুরু করলাম। কিছু দূরে গিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখিয়ে নিবিড় আবার বাইরের দিকে চলে যাচ্ছে। বাসার ভেতরে এসে দেখি তাহমিনা আপু চলে যাবার জন্য বের হচ্ছে আমাকে ভেজা শরীরে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখে জিজ্ঞেস করে ওঠে, ‘ছোয়া তুই এই সময় ভিজে আসলে কোথা থেকে?’

আমি ঢোক গিলে বলি, ‘ বাগানের দিকে গেছিলাম ভুল করে সুইমিং পুলে পড়ে গিয়েছিলাম।’
আমার কথা শুনে অধিকাংশ মানুষ এখানকার হেসে উঠল।
আপু বলল, ‘তুই ঠিক আছিস?’

‘ হুম শুধু রাতে পানিতে পড়ার জন্য শীত করছে।’ বলতেই আমি হাঁচি দিয়ে উঠলাম।
‘ঠান্ডাও তো লাগিয়ে ফেলছিস! সাবধানে যাবিনা।’
‘ তুমি কি চলে যাচ্ছ আপু?’
‘ হুম।’

পাশে রাফসান কাকা দাঁড়িয়ে বলছে, চলো তোমাকে আমি পৌঁছে দিয়ে আসি। আর ছোঁয়া তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। এভাবে থাকলে ত অসুস্থ হয়ে যাবে।’
আমি সম্মতি জানিয়ে আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ আচ্ছা আপু তাহলে তুমি যাও পরে তোমার সাথে কথা বলবো নি।’
বাসার প্রত্যেকটা মেম্বার আমার দিকে সার্কাস দেখার মতো তাকিয়ে আছে আমি সবার থেকে এক নজর তাকিয়ে দ্রুত পায়ে উপরে চলে এলাম।

মাথা ঝিমঝিম করে রাত দুটো আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ফ্লাক্সে আমি চা ভরে রেখেছিলাম। হাঁচি দেওয়ার জন্য আমি আদা চা খেয়েছি যাতে ঠান্ডা না লাগে এখন তো মনে হচ্ছে জ্বর চলে আসবে। এক কাপ চা নিয়ে আমি রুমের থেকে বেরিয়ে ছাদের মাঝামাঝিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি। অন্ধকার পরিবেশ।

পরিবেশটা সুন্দর রোমাঞ্চকর। যেহেতু আমি এত ভুতে ভয় পাই না তাই এখানে আমার মোটেই খারাপ লাগছে না। উল্টো দারুন লাগছে। মৃদু মিত বাতাস বইছে আমার জ্বরের শরীরে এই বাতাসটা শীতের দিনের মতো কাটা দিয়ে উঠছে। বাতাসে আমার প্রত্যেক টা লোক খাড়া হয়ে যাচ্ছে। আর আমার মনে হচ্ছে আমি শীতের দিনে যেমন কুয়াশাচ্ছন্ন শীতল রাতে ধোঁয়া ওঠা চা খাচ্ছি শরীরটা চাঙ্গা করার জন্য। কিন্তু ডিফারেন্স একটাই আমার কাছে এই চা টা বিষের মত লাগছে আর কিন্তু সেই সময়কার চাটা লাগে অমৃতার মত থাকে।

জ্বরের মুখে চা একদম তিতা বিষ লাগছে।
পেছন থেকে একটা ভরাট গলায় আওয়াজ আসলো, ‘ মাঝরাতে এখানে দাঁড়িয়ে ভূতদের সাথে চায়ের আড্ডা বসিয়েছো নাকি? ‘

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৫

এমন মধ্যরাতে কারো আচমকা কন্ঠ শুনে আমি চমকে পেছনে তাকিয়ে নিবিড় কে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললাম,, ‘ হ্যাঁ তাই। আপনিও আমার মতো ভূতের সাথে আড্ডা দিতে আসছেন?’
নিবিড় বলল, ‘ হ্যা। আমাকেও এক কাপ দাও তো। না হলে তো জমবে না আড্ডা।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৭