অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৭

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৭
নন্দিনী নীলা

নিবিড়ের কথা শুনে আমি হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে বললাম, ‘ আচ্ছা আপনার চা লাগবে? ‘
নিবিড় রেলিং এ ওঠে বসে পরল। আমি তা দেখে গালে হাত দিয়ে অবাক স্বরে বললাম, ‘ পরে যাবেন।’
নিবিড় আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমাকে অর্ডার করলো, ‘ চা দাও।’

আমি হাসিখুশি মুখে বললাম, ‘ ওয়েট আমি নিয়ে আসছি।’
নিবিড় ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, ‘ কোথা থেকে নিয়ে আসবে তুমি তো ফ্লাক্স এখানেই রেখেছো।’
‘ রুমে আরেকটা জিনিস ফেলে এসেছি দাঁড়ান কাপটা নিয়ে আসি।’
বলে আমি ফ্লাক্সটা হাতে নিয়ে রুমের দিকে হাটা ধরলাম নিবিড় আমাকে বাধা দিয়ে বলল, ‘ফ্লাক্স নিয়ে যাচ্ছো কেন? কাপটা নিয়ে আসো শুধু।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘না না, তার দরকার না আমি রুম থেকে না হয় একবারে ঢেলে নিয়ে আসবো আপনার জন্য।’
কিছু বলতে গিয়ে বলতে পারল না নিবিড়। আমি হেলে দুলে রুমের ভেতরে চলে এলাম তারপর দূরে থেকেই নিবিড় কে ডেকে উঠলাম,, ‘ আপনি একাই চা খেয়ে ভূতের সাথে আড্ডা দিন আমি ঘুমাই। আপনার সাথে আড্ডা দিয়ে আমি টাইম ওয়েস্ট করতে পারব না। এমনিতেই জ্বরে কাবু হয়ে আছি আপনার জন্য। এখন আমি আবার আপনার সাথে আড্ডা দেবো ভাবলেন কি করে কখনো না।’

বলেই ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলাম নিবিড় হতবাক চোখে আমার বন্ধ দরজা দিকে তাকিয়ে আছে।
নিবিড় বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে এইভাবে অপমান করবে হাসিমুখে সেটাও কল্পনাও করেনি ও। বিকেলে পানিতে ফেলানোর জন্য যে ছোঁয়া রেগে আছে সেটা নিবিড় জানতো। কিন্তু তারপর ওকেও পানিতে ফেলেছিল ও ভেবেছিল তারপর হয়তো বা রাগ কমে গেছে। কারণ এখানে আসার পর ছোঁয়ার সাথে কথা বলে ওর একটু মনে হয় নাই ছোঁয়া যে ভেতরে ভেতরে এখনো আগুন হয়ে আছে। সামনাসামনি এত হাসি খুশি শান্তভাবে কথা বলছিল যে ও ভেবেছিল যে হয়তোবা এখন ঝগড়া করতে চায়না।

তাই ও নিজেও আর ঝগড়া করা মত কিছু করেনি নিজের সুন্দরভাবে কথা বলেছে। এমনিতেই ওর নিজেরও ঘুম আসছিল না মাথাটা ভার হয়ে আছে। রাতে ভেজার জন্য এমন হয়েছে। ছোঁয়াকে ফেলে ভুল করেছে ও এখন বুঝতে পারছে‌ রাগের মাথায় থেকে কি করে ফেলে নিজেই বুঝতে পারেন। ভেবেছিল কালকে সরি বলে দেবে ছোঁয়া কে। কিন্তু উপরে এসে যখন দেখতে পেল ছোঁয়া না ঘুমিয়ে জেগে আছে। ও ভেবেছিল আজকের শত্রুর সাথে ঝগড়া না করে একটু মিত্র করা যাক। আড্ডা দেওয়া যাক এক ফাঁকে সরি বলে কেটে পড়বে।

কিন্তু ওকে ফাঁকি দিয়ে ছোঁয়া আগে পালিয়েছে।
ও কি বেশি অসুস্থ নাকি বেশি জ্বর নাকি একা একা থাকছে একবার জিজ্ঞেস করবো? নিবিড় লাভ দিয়ে নেমে চিলেকোঠার দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। দরজায় টোকা মেরে বলল, ‘ ছোঁয়া তুমি কি বেশি অসুস্থ ডাক্তার লাগবে?’
কয়েকবার ছোঁয়া কে ডেকে যখন কোন সারা পেল না বিরক্ত হয়ে চলে গেল কিন্তু মনের মধ্যে টেনশন থাকলো বেশি অসুস্থ নাকি আবার অজ্ঞান টোজ্ঞান হয়ে গেল না তো।

পরদিন সকালে ছোঁয়ার খোঁজ নেবে ভেবে নিচে গিয়ে শুতেই ঘুমিয়ে পরল।
ঘুম ভাঙলো আবিরের ধাক্কা খেয়ে। চোখ কচলাতে কচলাতে বিরক্ত হয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,, ‘সাত সকালে আমাকে জ্বালিয়ে মারছিস কেন? সর এখানে থেকে একদম বিরক্ত করতে আসবি না তাহলে কিন্তু মার খাবি।’
‘ ভাই এখনো তোর কাছে সাতসকালে মনে হচ্ছে। বারোটা বাজে এবার তো উঠ একটু পর তো সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আবার ঘুমানোর টাইম হয়ে আসছে।’

নিবিড় বারোটা বাজে শুনেই লাফিয়ে উঠে বসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আসলেই তো বারোটা বাজে। ওর তো মনে হয়েছিল এখনো সকাল ছয়টা বাজে।
নিবিড় এতক্ষণ এত আগে উঠানোর জন্য আবিরকে ধমকাচ্ছিল এখন আবীরকে ধমক দিয়ে বলল,, ‘ তুই আমার আগে ডাকিস নি কেন কত বেলা হয়ে গেছে আজকে আমার একটা দরকারি কাজ ছিল সকালে।’

আবির বলল, ‘ এতক্ষণ বকতেছিলে আগে উঠিয়েছি বলে। আর এখন বকতেছো আগে উঠাইনি বলে তুমি কি সবকিছুতে আমাকে খালি বকার সুযোগ খোঁজ?’
‘ সর তো সামনে থেকে।’

আবিরকে সামনে থেকে সরিয়ে ওইভাবেই রুম থেকে বেরিয়ে আসতে ছিল নিবিড় পেছন থেকে আবির ডেকে উঠে বলল, ‘আরে ভাইয়া এমন ভাবে হাইফাই হয়ে কই যাচ্ছ? ফ্রেশ হবে না পোশাক পড়বে না?’
‘ তোর সেসব ভাবতে হবে না। নিজের কাজে যা তো‌!’

নিবিড় বের হতে গিয়ে আবার পাশের সোফা থেকে গেঞ্জি উঠিয়ে গেঞ্জি পরতে পরতে ছাদে চলে এলো। আবির শয়তান কম না পেছনে পেছনে এলো লুকিয়ে। নিবিড় কোন দিকে না থাকে একদম ছোঁয়ার রুমের সামনে এলো। কিন্তু রুমে তালা লাগানো দেখে চমকে উঠল।

‘জ্বর শরীরে রুমে তালা দিয়ে কোথায় গেল? শুক্রবার আজকে তো আর কলেজ নাই।’
বিরবির বলে করে বলছে আর তালা ধরে তাকিয়ে আছে তালার দিকে। আবির ভাইয়ার দিকে এগিয়ে এসে বলল, ‘ ভাবি আপু তো সেই সকালে কোথায় যেন চলে গেছে।’

নিবিড় হতবিহ্বল কন্ঠে বলল, ‘ হোয়াট? ভাবি আপু মানে কি পাগল কুকুরে কামড়েছে নাকি তোরে।’
‘ তার আগে বলো তুমি আপুকে খুজতেছো কেন? কি দরকার সাত সকালে তারে?’
‘ তুই আমাকে ফলো করা শুরু করছিস তুই আমার পেছনে পেছনে লুকিয়ে আসছিস কেন?
‘ লুকিয়ে আসবো কেন? আমি তো তোমার সাথে সাথে আসলাম।’

নিবিড় আবিরের কান মুচড়ে ধরে বলল, ‘ খুব পাজি হয়েছিস তাই না বড় ভাইয়ের পেছনে গোয়েন্দাগিরি করা।’
‘ ভাইয়া লাগছে ছাড়ো প্লিজ।আমি তো তোমাকে হেল্প করলাম খবরটা দিয়ে।’ ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে লাফাতে লাফাতে আবির বলল।

নিবিড় বলল, ‘ আমার পিছনে গোয়েন্দাগিরি করতে আসলে কান কেটে দিব।’
আবির আর্তনাদ করে বলল, ‘ আচ্ছা আসবা না ছাড়ো আমার কান।’
নিবিড় আবিরের কান ছেড়ে দিল আবির দৌড়ে নিচে চলে এলো।

সকালের দিকে জ্বর কমে আসে আমার। কাকা আমার সাথে দেখা করতে আসে আমাকে জানায় গতকাল রাতে নাকি তাহমিনা আপুর কথা নাকি বাসার সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে। সেদিন তাহমিনা আপুকে দেখেছে সবাই সবারই নাকি আপুকে পছন্দ হয়েছে। এই দিক থেকে কারোরই আপত্তি নাই তাদের বিয়েতে শুধু এখন তাহমিনা আপুকে রাজি করানোর পালা। আজকে নাকি বাড়ির কয়েকজন তাহমিন আপুর সাথে দেখা করতে যাবে। সেখানেকাকা আমাকেও নিয়ে যেতে চায়।
আমি যখন বলি,, ‘ তারা তো আমাকে পছন্দ করে না কাকা আমাকে কেন নিয়ে যেতে চান। আপনারাই যান আপু নিশ্চয়ই রাজি হয়ে যাবে দেইখেন।’

‘সেটা আমি দেখে নেব কেউ কিছু বলবে না তোমাকে। তুমি প্লিজ চলো তাহমিনার ওদের সাথে কথা বলতে আন‌ইজি লাগবে তুমি থাকলে ভালো লাগবে। ‘
এত করে অনুরোধ করলে কি আর আমি রাজি না হয়ে পারি। তাদের সাথে চলে আসি। এদিকে তাহমিনা আপু তো সেই খুশি রাফসান কাকার পরিবার তাকে কনভেন্স করানোর জন্য এত চেষ্টা করছে এটা সে সত্যি কল্পনা করেনি। এসব দেখে আপু খুশিতে কেঁদে দিয়েছে। আর ও মনে মনে রাজিও হয়েছে কিন্তু মুখে বলেনি।

আমি সবার আড়ালে একবার আপুকে জিজ্ঞেস করি, ‘ আপু এবার প্লিজ রাজি হয়ে যাও। সবার কতো চেষ্টা করছে দেখো সবাই চাই তুমি কাকার কাছে ফিরে যাও। আর কাকাও কত কষ্ট পাচ্ছে তুমিও কষ্ট পাচ্ছ। এবার সবাই একটু সুখে থাকো আর কতদিন কষ্ট করবে একা একা।’

‘ আমি চাইলেও আর উনাকে ফিরিয়ে দিতে পারবো না রে ছোঁয়া। উনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্য আমার আর নাই।’
‘ তারমানে তুমি রাজি। ‘

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৬

আপু লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল হ্যাঁ। আমিতো ইয়াহু বলা আপুকে জড়িয়ে ধরলাম। আপু বলল, ‘ চিৎকার করিস না সবাই আছে।’
‘কাকাকে খবরটা দিলে কাকা ত খুশি তে অজ্ঞান হয়ে যাবে।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২৮